![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গাইরে মুজতাহিদ ব্যক্তি (ইজতেহাদ করার সক্ষমতা রাখেন না এমন ব্যক্তি) এমন মুজতাহিদ ব্যক্তির- যার মুজতাহিদ হওয়া শরীয়তের দলিল দ্বারা প্রমাণিত- ইজতেহাদি মাসআলায় দেয়া সিদ্ধান্তকে কোনরূপ দলীল তলব না করে কেবল এ সুধারণার ভিত্তিতে মেনে নেয়া যে, তিনি অবশ্যই সিদ্ধান্তটি শরীয়তের দলিলের আলোকেই দিয়েছেন। এবং ওই মুজতাহিদের মাযহাব উসূল ও ফুরু (মূলনীতি ও প্রদত্ত সিদ্ধান্ত) এর আকারে সংকলিত হয়ে মুকাল্লিদের কাছে পৌঁছেছে।
তাকলিদের এ সংজ্ঞাটি থেকে আমরা যে বিষয়গুলো জানতে পারি, তা হল-
01। যিনি মুজতাহিদ নন কেবল তিনিই তাকলিদ করবেন। তবে যিনি মুজতাহিদ তার তাকলিদ করার কোন প্রয়োজন নেই।
02। তাকলিদ কেবল মুজতাহিদ ব্যক্তিরই করা হবে। যিনি মুজতাহিদ নন তার তাকলিদ করা হবে না। তবে যিনি মুজতাহিদ হবেন তার মুজতাহিদ হওয়াটা শরীয়তের দলিলের ভিত্তিতে প্রমাণীত হতে হবে। উল্লেখ্য যে, শরীয়তের দলীল চারটি, (ক) কুরআন। (খ) সুন্না্হ। (গ) ইজমা। (ঘ) কিয়াসে শরয়ী। (সূরা নিসা আয়াত 59 নং তাফসীর দ্রষ্টব্য, তাফসীরে কাবির) ইমাম আবু হানিফাসহ চারও ইমামের মুজতাহিদ হওয়া ইজমা দ্বরা প্রমাণিত।
03। তাকলিদ কেবল ইজতিহাদি মাসআলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। যে সকল মাসআলায় শরীয়তের স্পষ্ট নস বিদ্যমান সেক্ষেত্রে তাকলিদ বৈধ নয়। ইজতেহাদি মাসআলাগুলো কয়েক প্রকার।
(ক) যে সকল মাসআলায় কুরআন সুন্নাহর কোন নস বিদ্যমান নেই। (যেমন হাদীস শাস্ত্রের পরিভাষা ও উসূল সমূহ।)
(খ) নস আছে তবে বিরোধপূর্ণ। যেমন, নামাজে আমীন আস্তে বলা ও জোরে বলা। রফউল ইয়াদাইন করা বা না করা। ইত্যাদি।
(গ) যে সকল মাসআলায় কুরআন সুন্নাহর নস আছে কিন্তু এর শরয়ী ও পরিভাষাগত পরিচয় পাওয়া যায় না। যেমন অযুর বিধান সংক্রান্ত আয়াত তো রয়েছে, কিন্তু সেখানে বিধৃত চেহারার সীমা কি, হাত বলতে কতটুকুকে বোঝানো হয়েছে? এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোন বর্ণনা নেই।
(ঘ) যে সকল মাসআলায় কুরআন সুন্নাহর নস বিদ্যমান কিন্তু তা দ্ব্যাথবোধক। যেমন ‘কুরু’শব্দটি।
(ঙ) যে সকল মাসআলায় কুরআন সুন্নাহর নস বিদ্যমান কিন্তু এর হুকুম বীর্ণত নয়। অর্থাৎ এ নির্দেশ দ্বারা কি বোঝানো হয়েছে। বিষয়টি ফরজ? ওয়াজিব? নাকি সুন্নাত? তা স্পষ্ট নয়। (যেমন কুরআনুল কারীমের অনেক আয়াতে আমর বা নির্দেশ বাচক ক্রিয়া ব্যবহৃত হয়েছে। এ নির্দেশের বিধান কি? ফরজ? ওয়াজিব? না অন্য কিছু?
04। মুজতাহিদের কাছে অবশ্যই ওই মাসআলার দলিল বিদ্যমান থাকে। মুকাল্লিদ কেবল তা সুধারণার কারনে জানতে চান না। এমন নয় যে মুজতাহিদ কোনরূপ দলীল ছাড়া কোন মাসআলা বর্ণনা করে দিবেন? এটা অবশ্যই মুজতাহিদের শান নয়।
05। যে মুজতাহিদের তাকলিক করা হবে তার মাযহাবটি সংকলিত হতে হবে। এতে তার মাযহাবের মূলনীতি যেমন থাকবে তেমনি সে মূলনীতির আলোকে দেয়া সিদ্ধান্তগুলো বিদ্যমাণ থাকবে। সুতরাং যে সকল মুজতাহিদের মাযহাব সংকলিত হয়নি তাদের তাকলিদ করা যাবে না। হাসান বসরি, দাউদ জাহেরি প্রমুখ যদিও মুজতাহিদ ছিলেন কিন্তু তাদের মাযহাব সংকলিত হয়নি। সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে হযরত মুআজ, যায়েদ বিন সাবেত, আবদুল্লাহ বিন আব্বাস, আবদুল্লাহ বিন মাসউদ খোলাফায়ে রাশেদা প্রমুখ সাহবায়ে কেরাম যদিও মুজতাহিদ ছিলেন কিন্তু তাদের মাযহাব স্বতন্ত্রভাবে মূলনীতি ও প্রদত্ত সিদ্ধান্তসহ সংকলিত হয় নি। (যদিও সাহাবায়ে কেরামের দেয়া ফতোয়াগুলো বিভিন্ন হাদিসের গ্রন্থে সংকলিত হয়েছে। এবং ইমাম চতুষ্টয়ের মাযহাবের মধ্যে তা প্রবেশ করেছে) সুতরাং যেহেতু তারা মুজতাহিদ হওয়া সত্ত্বেও তাদের মাযহাব সংকলিত হয়নি তাই তাদের তাকলিদও করা হয় না।
উল্লেখ্য যে, যিনি মুজতাহিদও নন, এবং তাকলিদও করেন না, তাকে গাইরে মুকাল্লিদ বলে। যেমন একটি দেশে একদল শাষক হন বাকীরা হয় শাষিত। এ দু’দল নিয়েই দেশের অধিবাসী। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি শাসকও নন এবং নিজেকে শাসিতও মনে করেন না, তাকে বলা হয় রাষ্ট্রদ্রোহী। এ হল শরীয়তের ক্ষেত্রে গাইরে মুকাল্লিদদের অবস্থান। সুতরাং হে বন্ধু সময় থাকতে বোঝার চেষ্টা করুন।
বি.দ্র. উপরে বর্ণিত (ক থেকে ঙ পর্যন্ত ) বিষয়গুলোতে আমল করার জন্য তাকলিদ ও ইজতেহাদ ব্যতিত অন্য কোন সহিহ হাদিস ভিত্তিক পথ থেকে থাকে তবে দয়া করে জানাবেন।
©somewhere in net ltd.