নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিম্বারের আহবান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান

আবু সাঈদ মুহাম্মদ নু’মান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূরা আলাম নাশরাহ : একটি ব্যতিক্রমি তাফসীর

২৮ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:১৫


আমি কি আপনার বক্ষকে উন্মোচিত করিনি?

আমি কি আপনার বক্ষকে উন্মোচিত করিনি? যাতে আপনার বক্ষ প্রশস্ত হয়েছে, উন্মোচিত হয়েছে, সকল প্রকার সংকীর্ণতা থেকে অবমুক্ত হয়েছে? যার ফলে আপনার হৃদয়ে ̶
- কোনো জটিলতা নেই।
- কোনো উদ্বেগ নেই।
- কোনো উৎকণ্ঠা নেই।
- কোনো চিন্তা নেই।
- কোনো পেরেশানী নেই।
বরং আপনার বক্ষকে আমি নূর ও জ্যোতি দিয়ে, আনন্দ ও উচ্ছ্বাস দিয়ে পরিপূর্ণ করছি।
আমি কি আপনার বক্ষকে বিশাল করিনি? হিকমত ও প্রজ্ঞা দিয়ে, ঈমান ও ইয়াকীন দিয়ে, রহমত ও দয়া দিয়ে, কল্যাণ ও অনুগ্রহ দিয়ে পূর্ণ করিনি?
আপনার বক্ষকে প্রশস্ত করেছি, ফলে ̶
- আচার-আচরণে,
- স্বভাব-বৈশিষ্ট্যে,
- শরাফত ও ভদ্রতায় পৃথিবীর সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন।
মানুষের ভুল-ভ্রান্তি ক্ষমা করেছেন। তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি মার্জনা করেছেন। দোষ ও লজ্জাকে গোপন রেখেছেন। নির্বোধ ও অর্বাচীন লোকদের রূঢ় আচরণ সহ্য করেছেন। অজ্ঞ ও মূর্খ মানুষগুলোকে এড়িয়ে চলেছেন। দুর্বল অসহায়দের প্রতি দয়া দেখিয়েছেন।
আমি আপনার বক্ষকে উদার করেছি। ফলে ̶
- দানশীলতায় আপনি বৃষ্টির ন্যায়।
- মহানুভবতায় সমুদ্রের ন্যায়।
- স্নেহ-মমতায় আপনি প্রভাতের সুমিষ্ট বাতাসের ন্যায়।
ভিক্ষুককে দান করেন। প্রার্থীকে প্রদান করেন। যারা হাত পাতে তাদের হাত খালি ফিরিয়ে দেন না। যারা আশা করে তাদেরকে বঞ্চিত করেন না।
আমি আপনার বক্ষকে ঔদার্যতায় ভরপুর করেছি। ফলে তাতে প্রশান্তিদায়ক শীতলতার আবেশ ছড়িয়েছে। যার ফলে আপনার হৃদয়ে রূঢ় ও মন্দ কথার উত্তাপ ছড়ায় না। আহতকারী বাক্যের দহন তেজোদীপ্ত হয় না। বরং সেখানে ক্ষমা ও সহনশীলতার, মার্জনা ও সহিষ্ণুতার আবির ছড়ায়।
আমি আপনার বক্ষকে উন্মোচিত করেছি। তাইতো আপনি ̶
- বেদুঈনদের অশোভন আচরণে ধৈর্য ধরেছেন।
- নির্বোধদের বোকামিতে সবর করেছেন।
- অহংকারীদের অহমিকায় সহনশীলতা দেখিয়েছেন।
- দুষ্টলোকদের মন্দাচার সহ্য করেছেন।
- দাম্ভিকদের উপেক্ষায়, হিংসুকদের ঘৃণায়, পরশ্রীকাতরদের বিদ্বেষে, নিকটজনদের রূঢ় আচরণে ধৈর্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন।
আমি আপনার বক্ষকে প্রশস্ত করেছি। ফলে আপনি ̶
- বিপদের মুখেও হাস্যমুখর।
- কষ্টের মুহূর্তেও সহাস্যবদন।
- প্রলয়ংকরী ঝড়ের মুখেও আপনি বিচলতাহীন।
- দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মাঝেও আপনি শঙ্কাহীন।
বিপদ-মুসিবত আপনাকে ঘিরে নিয়েছে কিন্তু আপনি স্থির-প্রশান্ত। কালের দুর্বিপাক, সময়ের দুর্যোগ আপনাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিতে উদ্যত হয়েছে, কিন্ত আপনি ছিলেন অটল-অবিচল। বিপদের ঝড় এসেছে প্রলয়ংকরীরূপে, কিন্তু আপনাকে টলাতে পারেনি। দুর্যোগের তুফান এসেছে প্রমত্ত দাপটে কিন্তু আপনাকে হেলাতে পারেনি। আপনি ছিলেন অজেয়, দুর্লঙ্ঘনীয়। কারণ ̶
- আপনার হৃদয় উদার।
- আপনি জাগ্রত অন্তরের অধিকারী।
- আপনার আত্মা প্রাণবন্ত।
- আপনি প্রাচুর্যময় বক্ষের অধিকারী।
আমি আপনাকে দরাজদিল করেছি। ফলে আপনার হৃদয়ে ̶
- রূঢ়তা ও কঠোরতার কোনো ছোঁয়া ছিল না।
- নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার কোনো স্পর্শ ছিল না।
- নৃশংসতা ও বর্বরতার কোনো ছায়া ছিল না।
বরং আপনার হৃদয় ছিল ̶
- মায়া-মমতায় ভরপুর।
- ¯েœহ-ভালোবাসায় টইটম্বুর।
- আদর-সোহাগে পরিপূর্ণ।
আপনি ছিলেন দয়া ও রহমতের কান্ডারি। কোমলতা ও মমত্বের অধিকারী। সহনশীলতার সবক আপনার কাছ থেকেই শিখতে হয়।। দানশীলতার শিক্ষা আপনার সীরাত থেকেই নিতে হয়। ক্ষমা ও মহত্বের পাঠ আপনার জীবনচরিত থেকেই লাভ করতে হয়।


وَوَضَعْنَا عَنْكَ وِزْرَكَ
আমি আপনার ভার অপসারণ করেছি।

আমি আপনার সকল পাপ মোচন করে দিয়েছি। আপনার সকল ভুল-ভ্রান্তি মাফ করে দিয়েছি। সকলপ্রকার গুনাহের পঙ্কিলতা থেকে আপনাকে পবিত্র করেছি।
- আপনি পূর্বাপর সকল গুনাহ থেকে মুক্ত-ক্ষমাপ্রাপ্ত।
- আপনি এখন পূত-পবিত্র।
- সকলপ্রকার গুনাহ ও ভুল থেকে সম্পূর্ণ বিধৌত।
আপনার ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করা হয়েছে। আপনার সকল প্রচেষ্টা গ্রহণীয় হয়েছে। আপনার সকল আমল স্বীকৃত হয়েছে। আপনার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আপনি ̶
- প্রতিদানে সিক্ত।
- প্রতিফল লাভে ধন্য।
- মোবারক হোক এ ক্ষমাপ্রাপ্তি।
- ধন্য হোক এ সফলতা।
- চোখ জুড়াক এ সাফল্যে।



الَّذِي أَنْقَضَ ظَهْرَكَ
যা আপনার জন্য অতিশয় কষ্টদায়ক ছিল।
এ বোঝা আপনার স্কন্ধমূলকে ভারাক্রান্ত করেছে। আপনাকে শ্রান্ত-পরিশ্রান্ত করেছে। আপনার পিঠকে বাঁকা করে দিয়েছে। আপনাকে দুর্বল করে ছেড়েছে। এখন আমি ̶
- আপনার এ বোঝাকে অপসারণ করেছি।
- এ ক্লান্তিকে দূর করে দিয়েছি।
- আপনাকে এ ভার বহন থেকে মুক্ত করে দিয়েছি।
- এ ভার বহনের কষ্ট থেকে আপনাকে প্রশান্তি দিয়েছি।
এ শুভ সংবাদে আনন্দিত হোন। এ দান গ্রহণ করুন। এ অনুদানে প্রীতার্থ হোন।
وَرَفَعْنَا لَكَ ذِكْرَكَ
আমি আপনার খ্যাতিকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছি।

আপনার খ্যাতিকে আমি সুউচ্চ করেছি। আপনার প্রশংসা ও স্তুতিকে আমি উন্নীত করেছি। আমার নামের সাথে আপনার নামকে জুড়ে দিয়েছি। যেখানেই আমার নাম উচ্চারিত হবে, সেখানে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আযানে ও নামাযে, খোতবায় ও ওয়াজে সর্বত্র আমার নামের সাথে আপনার নাম উচ্চারিত হবে। এরচেয়ে বড় মর্যাদা আর কি হতে পারে? এর চেয়ে সম্মান আর কী চাই?
মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ইথারে আপনার নামের সুর-লহরি ছড়িয়ে পড়বে। প্রতিটি নামাযীর জবানে আপনার নাম উচ্চারিত হবে। প্রতিটি হাজ¦ীর, সকল গাজীর মুখে থাকবে আপনার নামের জয়গান। খতীবের খুতবায় থাকবে আপনার নাম। বক্তার বক্তৃতায় থাকবে আপনার আলোচনা। এরচেয়ে বড় আর কোন মর্যাদা আপনার চাই?
আপনার আলোচনা ছিল ̶
- ইনজীল ও তাওরাতে।
- মূসার ‘ফলকে’ ইবরাহীমের সহীফায়।
- শীছ ও ইদরীসের প্রত্যাদেশ বার্তায়।
- আসমানী সকল গ্রন্থে।
প্রতিটি সভায় আপনার নাম উচ্চকিত হবে। পল্লি ও শহরে আপনার নামের জয়ধ্বনি হবে। প্রতিটি মাহফিলে আপনার প্রশংসা হবে। প্রতিটি জনসমাবেশে বারবার আপনার নামের ডংকা বাজবে।
আমি আপনার আলোচনাকে সমুন্নত করেছি। ফলে তা ̶
- সূর্য-কিরণের ন্যায় বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে।
- বাতাসের ন্যায় দিক-দিগন্তে প্রবাহিত হয়েছে।
- আলোর ন্যায় দ্বীপ-দ্বীপান্তরে বিকশিত হয়েছে।
আরব-আজম আপনাকে চেনে। প্রতিটি শহর-নগর আপনাকে জানে। প্রতিটি গ্রাম-পল্লি আপনার সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করে।
- আপনার নাত গেয়ে মুসাফিরের কাফেলা এগিয়ে যায়।
- আপনার নামের প্রশংসা করে রাতের গল্প সমাপ্ত হয়।
আপনিই সকল মজলিসের আলোচ্য বিষয়। সকল ঘটনার মূল ঘটনা। জীবনের মহান সংবাদ।
আমি আপনার নামকে উচ্চকিত করেছি।
- কালের বিবর্তনে আপনার নাম হারায়নি, হারাবেও না।
- সময়ের পালাবদলে আপনার প্রশংসা ম্লান হয়নি, হবেও না।
- অমরত্বের সারণি থেকে আপনার নাম মুছে যায়নি, মুছবেও না।
- ইতিহাসের পাতা থেকে এ নাম বিস্মৃত হওয়ার নয়।
- অস্তিত্বের দস্তাবেজ থেকে এ নাম বিলুপ্ত হওয়ার নয়।
এ নাম চির অক্ষয়, এ প্রশংসা চির অম্লান।
- সকল মানুষ বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাবে, কেবল আপনি ব্যতীত।
- সকল নাম-যশ বিলুপ্তির ভাগাড়ে নিপতিত হবে কেবল আপনার নাম-যশ ব্যতীত।
পৃথিবীর মঞ্চে যারা মহত্ত্বের চমক দেখিয়েছে, তাদের মহত্ত্বও ফিকে হয়ে যাবে, কেবল আপনার মহত্ত্বই থাকবে দীপ্তিমান।
ইতিহাসে যারা আজও স্মরণীয় হয়ে আছে, আমার কাছে মর্যাদার আসনে বরিত হয়েছে, তা কেবল আপনারই আনুগত্যের কারণে। আজও যাদের নাম শোনা যায় তা কেবল আপনারই অনুসরণের কারণে।
- কোথায় ওইসকল দেশ ও রাষ্ট্র? কোথায় তাদের চমক-ধমক? ধ্বংসের বালুচরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তাদের সকল সুকৃতি। কিন্তু আপনার সুবৃত্তি আজও কীর্তিমান।
- কোথায় আজ পৃথিবীর রাজ-রাজন্যরা, কোথায় তাদের জৌলুস? বিলুপ্তির তেপান্তরে হারিয়ে গেছে তাদের সকল কীর্তি। অথচ আপনার কীর্তি আজও অম্লান।
দুনিয়ার রাজা-বাদশাদের সকল সম্মান-ইজ্জত ধুলোয় মিশে গেছে, কিন্তু আপনার মান-সম্মান আজও মহিয়ান।
সুতরাং পৃথিবীবাসী যদি আপনার চেয়ে ̶
- প্রশস্ত হৃদয়ের,
- সুউচ্চ মর্যাদার,
- সুপ্রংশসিত যশ-খ্যাতির,
- সুন্দরতম স্মৃতি কীর্তির,
- মহৎ আদর্শের
আর কাউকে খুঁজে না পায়, তাতে বিস্ময়ের কী আছে?
- নামাযী যখন তাশাহহুদ পড়ে, আমার নামের সাথে আপনার নামও উচ্চারণ করে।
- আবেদ যখন রাতের তিমিরে তাহাজ্জুদে দাঁড়ায়, আমার সাথে আপনাকেও স্মরণ করে।
- খতীব যখন খোতবা দেওয়ার জন্য মিম্বারে আরোহণ করে, আমার নামের সাথে আপনার নাম উচ্চৈস্বরে তুলে ধরে।
সুতরাং আপনার রবের প্রশংসা করুন। কারণ, আমিই আপনার নামকে সমুন্নত করেছি।

فَإِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا *إِنَّ مَعَ الْعُسْرِ يُسْرًا
কষ্টের সাথেই তো স্বস্তি রয়েছে। অবশ্য কষ্টের সাথেই স্বস্তি রয়েছে
আপনার সামনে যখন সকল পথ অবরুদ্ধ হয়ে যাবে, সকল উপায় নিষ্ফল প্রমাণিত হবে, সকল চেষ্টা ব্যর্থ হবে, অবস্থা খুবই সংকীর্ণ হয়ে আসবে, মনে রাখবেন, আশুমুক্তি তখন অতি সন্নিকটে। অচিরের স্বস্তির দরজা খুলে যাবে। সুখের পায়রা ডানা মেলবে।
দুঃখিত হবেন না, হতাশায় পড়বেন না ̶
- অসচ্ছলতার পরই সচ্ছলতা রয়েছে।
- অসুস্থতার পরই রয়েছে সুস্থতা।
- বিপদের পরই রয়েছে বিপদমুক্তি।
- সংকীর্ণতার পরই রয়েছে প্রশস্ততা।
- দুঃখের পরই রয়েছে সুখ।
অতি স্বল্প সময়ের ব্যবধানে আপনার ও আপনার অনুসারীদের সামনে স্বস্তির বদ্ধ কপাট খুলে যাবে। এরপর আসবে ̶
- অবারিত রিযিক।
- অকল্পনীয় নুসরত।
- অচিন্তনীয় সম্মান।
খুলে যাবে বিজয়ের দুয়ার। আসবে সফলতার হাতছানি। বইবে সুখের সুমিষ্ট বাতাস। তবে একটি নয়, আসবে দুটি স্বস্তি। দুটি সমৃদ্ধি।
এটিই চিরন্তন বাস্তবতা। অমোঘ নীতি। প্রতিটি কষ্টের সাথেই রয়েছে মিষ্ট। প্রতিটি দুঃখের পরই রয়েছে সুখ। রাতের আঁধার চিরে প্রভাতের আলো ফুটে। কষ্টের নীলিমাছোঁয়া পাহাড়ের পেছনে প্রশান্তির সবুজ প্রান্তর হাসে। দিগন্তবিস্তৃত মরুভূমির দূরপ্রান্তর পেরিয়ে ফুলেল উদ্যানের সমারোহ।
- রশিকে যখন বেশি পাকানো হয়, তখন তা ছিড়ে যায়।
- রাতের আঁধার যত গাঢ় হয়, এ আঁধার দূরীভূত হওয়ার সময় তত নিকটতর হয়, সুবেহ সাদিকের আলো তত কাছে আসে।
- বিপদ যখন ঘনীভূত হয়, তখন তা কেটে যায়।
হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তি একদিন ফিরে আসবেই। রোগ-শোকে কাতর ব্যক্তি অচিরেই হাসবেই।
- বিপদ কেটে যাবে।
- বন্দি মুক্তি পাবে।
- দরিদ্র সচ্ছল হবে।
- ক্ষুদার্থ ব্যক্তি খাবার পাবে, তৃপ্ত হবে।
- পিপাসার্ত ব্যক্তি পানি পাবে, পরিতৃপ্ত হবে।
- উদ্বেগ দূর হবে।
- উৎকণ্ঠা চলে যাবে।
- মলিন বদনে সুখের হাসি ফুটবে।
অচিরেই আল্লাহ তায়ালা কষ্টের পর সুখ দিবেন।
এ সূরাটি নবীজির ওপর যখন অবতীর্ণ হয়, তখন তিনি ছিলেন সংকীর্ণ অবস্থায় ̶
- শত্রুররা তাকে কুকুরের ন্যায় খাবলে খাওয়ার জন্য উদ্ধত।
- প্রতিপক্ষ তখন তাঁকে নাজেহাল করার জন্য উন্মুখ।
- লোকেরা তাকে প্রত্যাখ্যান করছে, কেউ তাঁর পাশে এসে দাড়াচ্ছে না।
- চতুর্দিকে কেবল চক্রান্তের জাল বিস্তার হচ্ছে।
- ষড়যন্ত্রের পর ষড়যন্ত্র পাকানো হচ্ছে।
এমনই মুহূর্তে তাঁর প্রয়োজন একটু সান্ত¡নার। কিছুটা আশ্বাসের। সুতীব্র-ভাবে তিনি প্রয়োজন অনুভব করছেন এমন কারে ̶
- যে তাঁকে অভয় দিবে।
- তাঁর সাহস যোগাবে।
এমন পরিস্থিতিকে সামনে রেখে এ বাক্যগুলো তাঁর জন্য ও কেয়ামত পর্যন্ত আগত তাঁর সকল অনুসারীর জন্য সত্য প্রতিশ্রুতি, শ্রেষ্ঠ শুভ বার্তা ও উপমাহীন পুরস্কার নিয়ে অবতীর্ণ হলো।
اشْتَدِّيْ أزْمَةُ تَنْفَرِجِيْ * قَدْ آذَنَ لَيْلُكِ بالْبَلَجِ
হে বিপদ! যতপার কঠিন হও, অচীরেই তুমি নিঃশেষ হবে। ঐ দেখ তোমার রাত সুবহে উম্মিদের ঘোষণা করছে।
فَإِذَا فَرَغْتَ فَانْصَبْ
অতএব, আপনি যখনই অবসর পাবেন একান্তে ইবাদাতে মশগুল হবেন
আপনি যখন আপনার জাগতিক প্রয়োজন থেকে ফারেগ হবেন, আপনার ব্যক্তিগত কাজ থেকে অবসর হবেন, তখন ̶
- আমার ইবাদতে আত্মনিয়োগ করুন।
- আমার আনুগত্যে মনোনিবেশ করুন।
- অধিক পরিমাণে আমার জিকির করুন।
- আমার কাছে প্রার্থনা করুন।
আপনার ওপর অর্পিত জনগণের জিম্মাদারী আদায় করে, তাদের হক বুঝিয়ে দিয়ে, তাদের জিজ্ঞাসা ও চাহিদা পূর্ণ করে যখন অবসর হবেন, তখন ̶
- আমার মহত্ত্ব ও বড়ত্বের মিহরাবে প্রবেশ করুন।
- আমার আযমত ও মহিমার দুয়ারে দ-ায়মান হোন।
- আমার নৈকট্যে আসুন।
- আনুগত্যের কপাল জমিনে ঠেকিয়ে দিন।
সাফল্য ও সফলতায় আপনাকে ভরে দিব। আপনি লাভ করবেন মুক্তি ও নিরাপত্তা।
আপনি যখন পরিবার-পরিজন থেকে, পুত্র-কন্যা থেকে, সাথি-সঙ্গী ও সাহাবীদের থেকে অবসর হবেন, তখন ̶
- আমার সাথে একান্তে একাকিত্বে অতিবাহিত করার জন্য একটি সময় নির্ধারণ করুন।
- আপনার চাওয়াগুলো আমাকে বলুন।
- আপনার কামনাগুলো আমাকে জানান।
- আপনার প্রয়োজনগুলো আমাকে অবহিত করুন।
- যতবেশি সম্ভব আমার কাছে প্রার্থনা করুন।
- আমাকে ডাকুন, আমার পবিত্রতা বর্ণনা করুন।
- আমার কাছেই কামনা করুন।
- আমার কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
- আমার কৃতজ্ঞতা আদায় করুন।
- আমার স্মরণে আত্মনিয়োগ করুন।
আপনি যখন আদেশ-নিষেধ থেকে ফারেগ হবেন, নসীহত ও উপদেশ থেকে অবসর হবেন, শিক্ষাদান ও দীক্ষাদান থেকে অবকাশ পাবেন, জিহাদ ও মুজাহাদা থেকে মুহলত পাবেন, তখন ̶
- আমার দরবারে আসুন, যাতে আমার শক্তি থেকে আপনার শক্তি বাড়াতে পারেন।
- আমার সাহায্য থেকে আপনি আরো সমৃদ্ধ হতে পারেন।
- আমার রিযিক থেকে আপনি পাথেয় গ্রহণ করতে পারেন।
- আমার উন্মোচন থেকে আপনি অন্তর্দৃষ্টি ও দূরদৃষ্টি লাভ করতে পারেন।
আপনি আপনাকে নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার পরিবর্তে আমাকে নিয়ে ব্যস্ত হবেন, এটাই যুক্তিযুক্ত। আপনার অবসর আমার জন্য উৎসর্গ করবেন এটাই বাস্তবসম্মত। আপনি আপনার যত কাছের, আমি তার চেয়ে বেশি কাছের। অন্যের তুলনায় আমিই আপনার অবসর সময়ের অধিক হকদার।
অবসর সময় আনুগত্য ও ইবাদতে কাটানোর ব্যাপারে তাঁর প্রতি ও তাঁর উম্মতের প্রতি এ উপদেশ কতই-না চমৎকার! এ সময়কে জিকির ও শুকরের মাধ্যমে পূর্ণ করার এ নসীহত কতই-না কল্যাণময়! যাতে ̶
- আল্লাহ তায়ালার রেজামন্দি হাসিল হয়।
- অন্তরের স্থিরতা ও বিপদ-মুক্তি অর্জিত হয়।
- উত্তম পরিণাম ও সুন্দর প্রতিফল লাভ হয়।
- পবিত্র মাল ও উত্তম হাল, আনুগত্যপূর্ণ দুনিয়া ও জাহান্নামমুক্ত পরকাল পাওয়া যায়।

وَإِلَى رَبِّكَ فَارْغَبْ
আপনার প্রতিপালকের প্রতি মনোনিবেশ করবেন

একমাত্র আপনার রবের প্রতি মনোনিবেশ করুন। অন্যের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করবেন না। কোনোকিছুর প্রতি মনোযোগ দিবেন না। কেবলমাত্র ̶
- তাঁর দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন।
- তাঁর ওপরই ভরসা করুন।
- তাঁর কাছেই আশা করুন।
আশা-আকাক্সক্ষা কেবল তাঁর কাছেই করতে হয়। কারণ ̶
- আনুগত্যশীলকে প্রতিদান দেওয়ার।
- অবাধ্যকে শাস্তি দেওয়ার একমাত্র অধিকারী তিনিই।
চরম কাক্সিক্ষত বস্তু কেবল আল্লাহর কাছেই রয়েছে। তাঁর অধিকারেই রয়েছে
- সকল ধনভান্ডারের চাবি।
- সকল বিষয়ের সফলতার কুঞ্জি।
প্রার্থনা কেবল তাঁর কাছেই করা হবে। ভিক্ষার হাত কেবল তার কাছেই পাতা হবে। তাঁর কাছেই আশা-আকাক্সক্ষার বুক বাঁধা হবে। কারণ তিনিই একমাত্র এর উপযুক্ত, হকদার।
إلَيْكَ وَإلا لا تشدُّ الرَكَائِبُ * وَمِنْكَ وإلا فالْمُؤمَّلُ خَائِبُ
وَفِيكَ وَإلا فالْغَرَامُ مُضَيَّع * وَعَنْكَ وَإلا فالْمُحدِثُ كَاذِبُ
কেবল আপনার দিকে সফর হবে। কেবল আপনার কাছেই প্রত্যাশা করা হবে, নতুবা প্রত্যাশী আশাহত হবে।
আপনার ব্যাপারে ভালোবাসা হবে, নতুবা ভালোবাসা ব্যর্থ হবে। কেবল আপনার সম্পর্কেই আলোচনা হবে, নতুন বক্তা মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হবে।
এ বাক্যগুলো রাসূলুল্লাহ সা.-এর ওপর এমন কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে অবতীর্ণ হয়েছে, যখন তিনি জীবনের সবচেয়ে নাজুকতম মুহূর্ত অতিবাহিত করছেন। সময়ের তিক্ততা ঢোক ঢোক গিলছেন। কালের যন্ত্রণায় দগ্ধ হচ্ছেন।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.