নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এবং সৌরভ ও একটি রাফখাতা

আনিসুজ্জামান সৌরভ

একজন আপাদমস্তক ইতিবাচক বাঙালি। স্বপ্ন দেখি একটি মেঠোপথের, একটি গ্রামের কিংবা রোজ বিকেলে ভিড় জমে যাওয়া কোন পাঠাগারের। ভালোবাসি প্রিয় মানুষের হাসিমুখ, শৈশবের ব্রহ্মপুত্র। ধর্মান্ধতা আর লোকদেখানো সমাজ সংস্কার ঘৃণা করি। লক্ষ্য একটাই সারাজীবন তরুণ হয়ে অসহায় মানুষের পাশে হাঁটতে চাই।

আনিসুজ্জামান সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি ভালো আছি ,খুব ভালো

১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৮:১৪

আজকে একটু বেশী সময় নিয়ে বসেছি কিছু লিখবো । লেখালেখিটা এখন আমার নিত্য নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছ। তাই প্রায় রজনীতেই না লিখতে পারার আক্ষেপ আমাকে নিদ্রাহীন রাখে। আমিও কম যায় না। কত কিছু মনে আসে, ভাবি আর স্বপ্নের মেলবন্ধনে উড়িয়ে দিতে চাই আমার আপন সত্তাকে।

আসলে মৃত্যুর কথা আজকাল বড্ড বেশি মনে হয় । মনে হয় খুব দ্রুতই আমি নিজেকে সবকিছুর থেকেই আড়াল করে নিবো । যদিও আমার বিশ্বাস নিজে আড়াল করে ফেলার ক্ষমতা আমার নেই। কেননা আমি আসলে বড্ড বেশী ভীতু। সমাজ সংসার থেকে পালিয়ে বাঁচবার জন্য আসলে এইসব ভেবে বেড়াই। ভাবাটা একেবারে অমূলকও নয় । এক কঠিন যন্ত্রণা কাঁধে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি । এর থেকে পরিত্রাণের উপায় আমার কিংবা আমার পরিবারের জানা নেই।

তারবিহীন ফোনের ওপারে শ্রদ্ধাস্পদ বাবা আমার করুণ কণ্ঠস্বর শোনে এক অজানা আতঙ্কে কেঁপে উঠেন । আমিও আর নতুন কোন শরীর খারাপের গল্প এই মানুষটার সাথে বলতে চাই না। ইচ্ছেও করে না। নিজেই এই কঠিন যন্ত্রণার ভাগ আমি কাউকেই দিতে পারবো না। শুধু শুধু মনোবেদনা বাড়িয়ে কী লাভ?

আমার গ্রামের যে দৃশ্য আমার চোখে এখনো ভেসে বেড়ায় তার অনেক কিছুই এখন আর আগের মত নেই। জায়গা বদল হয়নি কিন্তু পাল্টেছে দৃশ্যপট। কেবল আমার মা ও তার ভালোবাসা বদলায় নি। মায়েরা বদলায় না কেন যেনো। আমার মা আমাকে কখনো বকে না। আমার এই ক্ষুদ্র বর্ণিল জীবনে মায়ের নরম মুখচ্ছবি কখনো কঠিন হতে দেখিনা। ১৪ বছর বয়সে যখন আমি স্বার্থপরের মতো গ্রামের শিকলটা ছিঁড়ে আসি, তখনও দেখি রাস্তার ওপারে নরম মুখ, জল ঢাকার ব্যর্থ চেষ্টা তাঁর মাঝে। নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হতে থাকে। আর হয়তোও চাইলেই বাড়ি ফিরতে পারব না। ফিরব শুধুই অতিথি হয়ে।

ছোটবেলায় যে মানুষটির আমি মৃত্যু কামনায় মসজিদে মোম দেবার মানত করতাম অদ্ভুতরকমভাবেই এই মানুষটিই আমার জীবনের সেরা বন্ধু হয়ে উঠছে। কিন্তু এক কঠিন বাস্তবতা আমাকে বারবার তার কাছে থেকে দূরে সরিয়েছে, এখনো সরাচ্ছে। আমি সত্যি অপদার্থ । নাহয় কেনইবা এই বাস্তবতাকে উপেক্ষা করে তার সামনে যাচ্ছি না। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে গলা জড়িয়ে ধরে চোখের কোণে বৃষ্টি নামাই। আর কানে কানে চুপিসারে বলি ভাইয়া তোকে খুব বেশি ভালোবাসিরে...

প্রতিবার বাড়ি আসার সময় রাস্তা থেকে আমাকে নামতে দেখেই দৌড়ে আসা মানুষটাও আমাকে ভীষণরকম মিস করে। বাবার মুখে আমার বাড়ি আসার কথা শুনে হয়তো অধীর আগ্রহে আমার অপেক্ষা করে থাকে। হয়তো ভাবে তার ছোট ভাইয়াটা ঢাকা থেকে তার জন্য কিছু একটা নিয়ে আসবেই। কিন্তু আমি বরাবরই ভাই হিসেবে ব্যর্থতার পরিচয় দিই। আশ্চর্যরকমভাবেই এই মেয়েটি কখনোই মন খারাপ করে না বরং আশায় বুক বাঁধে অন্য কোন ফিরে আসার।

যে মানুষটাকে নিয়ে আমার গর্বের কোন শেষ নেই, যার প্রতিটি কথা আমার কানে সদা উপদেশের মত বেজে উঠে, যার সাথে একদিন কথা না বললে আমার হৃদকম্পন বেড়ে যায়,যার ভালবাসামাখা শাসন এখনো বড্ড বেশি নস্টালজিক করে তোলে, সে আর কেউ নয় আমার একমাত্র মেডিকেল পড়ুয়া আদরের বুড়ি। ইদানিংকালে বুড়ির সাথে আমার সম্পর্ক ক্রমশই এক অজানা পথের দিকে বেঁকে যাচ্ছে। সে আর সেই ছোটটি নেই, নিজের পথ চলার রাস্তাটা দিয়ে একা চলতে শিখে গেছে। পরিবারের বাইরেও নিজের এক জগত গড়ে তুলেছে। সেই জগতে হয়তো আমার ঠাই নেই। হবার কথাও নয়। তাকেও যে নিজের থেকে কতটা বেশিই ভালবাসি বলতে পারিনি।

আমার এই বিবর্ণ দেহে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল না বহু আগেই। কেবল জীবনের রেসে ছুটেছি আর ছুটেছি। জানি অন্তরাত্মার ক্রন্দন শোনার জন্য কোটি মানুষ অপেক্ষা করে নাই। উপরের বর্ণনাকৃত মানুষগুলোই আমার জীবনের অনুপ্রেরণা। যারা অবিরত স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে জীবনস্রোতে ফিরে আসার।

২৭ আগস্ট ২০১৪,এই দুনিয়া বরাবর একটা সুইসাইড নোট লিখেছিলাম চলে যাবার, পারিনি। প্রতিশোধ বোধের নেশায় তখন উন্মত্ত আমি, নিজেকে আশ্বস্ত করে একরাশ ঘৃনাদৃষ্টি ছুড়ে দিয়েছিলাম মৃত্যুর উপর। আজ মনে হচ্ছে কঠিন যন্ত্রণা নিয়েও পৃথিবীতে বেঁচে থাকাই আসলে চরম ও পরম স্বার্থকতা। চোখের সামনেই কত মানুষকে দেখছি বাঁচার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে । কতজনেই বাঁচতে পারে?

তবুও বলবো - আমি ভালো আছি ,খুব ভালো ।


শনিবার, মে ‎২৩, ‎২০১৫ সময় ০৫:৫৬:০৩ ভোর
ওয়াদুদ ভিলা
কলেজ রোড, ময়মনসিংহ

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ৯:৫৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: নিজের কষ্টের কথা আপনজনদের সাথে শেয়ার না করাই ভাল । কারন সেই কষ্টের কথা জানলে তারাও তো কষ্ট পাবে।
আপনার সব কষ্টের অবসান হোক এই কামনায় করি।অনেক শুভ কামনা রইল আপনার জন্য।

২| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:২৮

আনিসুজ্জামান সৌরভ বলেছেন: কথাগুলো লিখেছিলাম ২ বছর আগে। আল্লাহ রহমতে এখন অনেকটাই সুস্থ। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন লেখালেখিতে আবার নিয়মিত হতে পারি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.