নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।
আমি যখন দেশের স্বনামধন্য একটা ঔষধ কোম্পানিতে কাজ করতাম তখন থেকেই মনে হতো আমরা যেন এখনো ক্রীতদাস ! সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যে অবধি, কোন দিন অনেক রাত অবধি এমন কি ছুটির দিনেও কাজ করে যাচ্ছি । মাস গেলে সর্বসাকুল্যে ন্যূনতম বেতন ! শুধু ঐ বেতনটাই নির্ধারিত ছিল, কাজ বা কর্ম ঘণ্টা নয় । আমি বিক্রয়, বিতরণ ও আইটি বিভাগে অফিসেই বসতাম বলে মাস গেলে বেতনও পেতাম ঠিকঠাক । কিন্তু আমার ডিপোতে থাকা এম.পি.ও আর ডেলিভেরি ম্যান যারা ছিল তাদের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক । সে সময় একজন এম.পি.ও এর ন্যূনতম বেতন ছিল ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা, আর একজন ডেলিভেরি ম্যান এর ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা মাত্র ! অথচ রোজ তাদের ক্লিন শেভ আর স্যুট-টাই দেখে বাইরের মানুষ জন আকাশ কুসুম ভাবতো । আমার ভীষণ কষ্ট হত যখন দেখতাম মার্কেটে আউটস্ট্যান্ডিং থাকায় মাস শেষে একজন এম.পি.ও বা ডেলিভেরি ম্যান এর বেতন আটকিয়ে দেওয়া হতো । তখন অফিস থেকে বের হয়ে এক কাপ চা যে খাবে এমন পয়সাও অনেকের পকেটে থাকতো না । কি নির্মম ! ভাবুন একবার । যেন শাঁখের করাতের মতো তাদের অবস্থা ! বাকী না দিলে দোকানী ঔষধ নেবে না, বাকী পড়ে থাকলে সে মাস শেষে বেতন পাবে না ! ব্যাটা ক্রীতদাস কোথাকার ! আমার কাছে তখন থেকে নিজেকে বা বিশেষত তাদেরকে আধুনিক ক্রীতদাস মনে হতো ।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাবমতে বর্তমানে বিশ্বে ২ কোটি ৭০ লক্ষ মানুষ নানাভাবে আধুনিক দাসত্বের শিকার । সংস্থাটির মতে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও বাংলাদেশেই রয়েছে ১ থেকে দেড় কোটি আধুনিক দাস । আমার মতে এই আধুনিক ক্রীতদাসের সংখ্যা আরও কয়েক গুন বেশি । ধনতান্ত্রিক দানব গণতন্ত্রের ছব্দবেশ ধারণ করে ধোঁকায় ফেলেছে মানুষকে । ধনতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণকারী পুঁজিপতি শোষকদের বিষাক্ত ছোবলে খুবলে খেয়েছে মানবিক বোধ । এইসব মুনাফালোভী শয়তানদের নির্মিত অর্থনৈতিক কাঠামোর জন্য প্রতিনিয়ত দেশে দেশে পেশা ও জীবিকা হারিয়ে অসহায় মানুষ সস্তায় শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে ।
আমাদের দেশের টেক্সটাইল বা গার্মেন্টস কারখানায় ৫০০০ থেকে ৭০০০ টাকায় শ্রমিকরা যে কাজ করছে তা সস্তায় শ্রম বিক্রির প্রকৃষ্ট উদাহরণ । দেশের মফস্বল এলাকার শিল্প কারখানা গুলোতে একজন শ্রমিক একই কাজ করে ৩০০০ থেকে ৫০০০ হাজার টাকায় মাসিক মুজুরি নিতে বাধ্য হচ্ছে । এদের কোন অধিকার নেই, নেই শ্রমিক ইউনিয়ন । কেউ এসব নিয়ে কথা বললেই চাকরীচ্যুত হয়ে তাকে হারাতে হবে জীবিকা অর্জনের অবলম্বন । রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে শুরু করে উন্নত বিশ্বও জানে যে এসব শিল্প কারখানায় শ্রম শোষণ হচ্ছে । ঐক্যবদ্ধ ভাবে সমগ্র বিশ্বের মুনাফাখোর মানব-দানব যেন শ্রমের প্রকৃত মূল্য দিতে নারাজ । মুনাফালোভী শিল্পপতি, রাষ্ট্রযন্ত্র আর উন্নত বিশ্ব শোষণ আর বঞ্চনার উদ্দেশ্যে এই সব শ্রমজীবী মানুষদের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে জন্ম দিয়েছে আধুনিক দাসত্ববাদের । তাহলে কি মানুষ এভাবে এখনো ক্রীতদাস ?
সমসাময়িক কালে আমার সোনার দেশের প্রবৃদ্ধি ও মাথা পিছু আয় বেড়েছে । গণমাধ্যমে ফলাও করা এসব খবর জনমনে স্বস্তি দিয়েছে ঠিকই তবে নিজের ঝোলায় যখন হাত দিয়েছে তখন বোধসম্পন্নরা বুঝেছে যে তারা উন্নয়নের ফাঁদে পড়েছে । বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০১৬ অনুযায়ী দেশে প্রতিনিয়ত দরিদ্র মানুষের আয় কমছে । জরিপ বলছে, ৫ বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে দরিদ্র ৫ শতাংশ পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ । পরিসংখ্যানে এই সব ক্রীতদাসদের দরিদ্র বলে সম্বোধন করা হয় ।
কাগজে কলমে শ্রম নীতি, শিল্প নীতি ইত্যাদি থাকলেও দেশীয় কল-কারখানা গুলোতে এসব মানা হয় না । হলেও সীমিত ভাবে মানা হয় বাধ্য হয়ে । এসব আইন ও নীতি যথাযথ ভাবে মানা হলে শ্রমিকদের অধিকার অনেকাংশেই প্রতিষ্ঠিত হতো । কিন্তু শ্রমিককে ক্রীতদাসে পরিণত করবার লক্ষ্যে শিল্প মালিক ও রাষ্ট্র যেখানে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বদ্ধ পরিকর সেখানে অধিকারের কথা ভাবা বাতুলতার নামান্তর । বাংলাদেশে পকেট ও প্যাকেট সংস্কৃতি কিভাবে যে মানুষকে ক্রীতদাসে পরিণত করছে সে ফিরিস্তি আরেক দিন দেব ।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কিছু ড্রাইভারদের সাথে আমার বেশ ভাব ছিল, এখনো আছে । তাদের দুর্দশার কথা শুনলে মনের মধ্যে এখনো ক্রীতদাস শব্দদ্বয় অজান্তেই উচ্চারিত হয় । সকাল সন্ধ্যা ডিউটি করে বস যদি বলে রাতেও থাকতে হবে বা সারা রাত ধরে কোথাও যেতে হবে, কেমন লাগে তখন ? অনেকের কাছেই শুনেছি এই অতিরিক্ত কাজের জন্য তাদের অতিরিক্ত কোন পাওনা নেই । তথাকথিত বস ও মালিকগণ এভাবেই তদের জিম্মি করে ক্রীতদাসে পরিণত করেছে ।
দাসপ্রথা একটি অনুমোদিত সামাজিক ও আইনানুগ ব্যবস্থা । বাংলা পিডিয়া মতে শুধু আইন পুস্তক ও প্রশাসনিক গ্রন্থেই নয়, এ প্রথা সব ধর্মেই স্বীকৃতি ছিল । প্রাচীনকালে সমাজের শক্তিশালী শ্রেণি তাদের উৎপাদন ও প্রাধান্য অব্যাহত রাখতে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলতর শ্রেণির লোককে দাসে রূপান্তর করত । ২১ শতকে এসে ভোল পাল্টানো সমাজের শক্তিশালী শ্রেণি নব্য উদারতাবাদের খোলসে আদিম কায়দায় শোষণ অব্যহত রেখে আধুনিক দাসত্ববাদের জন্ম দিয়ে আমাদের পরিণত করেছে পুনরায় ক্রীতদাসে । আদি থেকে বর্তমান এই প্রক্রিয়া চলমান । ভবিষ্যতেও এহেন প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে কোন পূর্বাভাস নেই । তাই অতীতের ক্রীতদাসদের মতো ভবিষ্যতের ক্রীতদাসরাও বর্তমানের আমাদের মতোই স্বভয়ে উচ্চারণ করবে, এখনো ক্রীতদাস !
এই সব দেখে শুনে ভাবতে ভাবতে খুব খারপ লাগে । ক্রীতদাস হতে কারই বা ভালো লাগে বলুন ! যখন খারাপ লাগে তখন ক্ষেপে গিয়ে উচ্চারণ করি প্রিয় কবিতা গুলোর কিছু বাক্য । এই মুহূর্তে মনে পড়ছে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্ত তুর্কি কবি ও নাট্যকার নাজিম হিকমতের 'জেলখানার চিঠি' কবিতার নিম্নোক্ত কয়টি লাইনঃ-
'কৃষ্ণপক্ষ রাত্রে কোথাও আনন্দ সংবাদের মত
ঘড়ির টিক্ টিক্ আওয়াজ,
বাতাসে গুন্ গুন্ করছে মহাকাল,
আমার ক্যানারীর লাল খাঁচায়
গানের একটি কলি,
লাঙ্গল-চষা ভূঁইতে মাটির বুক ফুঁড়ে
উদগত অঙ্কুরের দুরন্ত কলরব
আর এক মহিমান্বিত জনতার বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত
ন্যায্য অধিকার ! '
রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
৪ বৈশাখ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ
ছবিঃ ইন্টারনেট ।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:১১
রুদ্র আতিক বলেছেন: শুধু চাকুরীজীবী নয় প্রতিটা স্বল্প আয়ের মানুষেরই শান্তি নাই ! অনেক কষ্ট । ধন্যবাদ
২| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৪৮
অজ্ঞ বালক বলেছেন: লেখাটা অতীব সুন্দর হইসে। এবং যুগোপযোগী। এইদেশে চাকরি করা মানেই চাকর হইয়া থাকা। যে এই কথাটা মাথায় ঢুকাইয়া করতে পারবো, সেই সফল। আর ঘাড়ত্যাড়া সব্বাই কচুপোড়া খায় দিনশেষে।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:১৩
রুদ্র আতিক বলেছেন: সত্যি, কেন যে মানুষ বড় বড় চাকর হওয়ার অভিলাষে বড় বড় ডিগ্রী নেয় ! মাথায় ঢোকে না ! ধন্যবাদ
৩| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:৫৩
এম.জে. রহমান বলেছেন: একমত, তবে ট্রেড ইউনিয়ন করে লাভ হবে না ক্ষতি হবে , ভাগিদার বাড়বে , শোষকের সংখ্যা বাড়বে , শ্রমিকের লাভ নাই।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:২০
রুদ্র আতিক বলেছেন: সহমত, তবে তা মন্দের ভাল বৈকি ! ধন্যবাদ
৪| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:১৬
পবিত্র হোসাইন বলেছেন: আমরা রোবট হয়ে গেছি।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:২৩
রুদ্র আতিক বলেছেন: সমস্যা হল, রোবটের অপারেটিং সিস্টেম, ব্যাটারি আর অপারেটর ভালো না । ধন্যবাদ
৫| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১০:২৫
মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সবাই চায় স্বাধীনভাবে চলতে।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:২৬
রুদ্র আতিক বলেছেন: কিন্তু স্বাধীনতা সর্বত্রই শৃঙ্খলিত ! আমার সোনার দেশে একটু বেশিই ! ধন্যবাদ
৬| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:২৫
বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: পৃথিবীটা কঠিন গরীবের জন্য...
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৩:২৮
রুদ্র আতিক বলেছেন: গরীবের আবার কঠিন-তরল ! ধন্যবাদ
৭| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৫
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আর ভাল্লাগে না।
১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ বিকাল ৫:০০
রুদ্র আতিক বলেছেন: এত সব দেখে শুনে কার ভালো লাগে বলুন ! ধন্যবাদ
৮| ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ১১:২৫
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: শুধু চাকুরীজীবী নয় প্রতিটা স্বল্প আয়ের মানুষেরই শান্তি নাই ! অনেক কষ্ট । ধন্যবাদ
আসলে দরিদ্র দেশে এরকমই হয়।
কেন যে আল্লাহ আমাকে এই দরিদ্র দেশে পাঠালেন??!!!
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই এপ্রিল, ২০১৯ সকাল ৯:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: বাংলাদেশে চাকরীজীবিদের শান্তি নাই। অনেক কষ্ট।