নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।
তার আসল নাম হয়তো তার নিজেরই মনে নেই । কেউ ডাকে পণ্ডিত, কেউ রাষ্ট্র বিজ্ঞানী, কেউ ডাকে অটো আবার কেউ ডাকে পাগলা বিজ্ঞানী বলে । যে যে নামে ডাকে ডাকুক, তাতে কুতুব আলীর কিচ্ছু যায় আসে না । সে এসবের ধার ধারে না । যার মাথায় বড় বড় চিন্তা প্রপেলারের মতন ঘুরপাক খায় তার কি এসব তুচ্ছ বিষয় ভাবার সময় আছে ? তার মতে অত পড়ালেখার কি দরকার বাপু ! লিখতে পড়তে আর দরকারি দৈনন্দিন হিসেব নিকেশ জানলেই হোল । বিশ্ববিদ্যালয়ে সে রাজনীতি নিয়ে পড়ালেখা করেছে । সে নিয়মিত ক্লাস করতো, শিক্ষকের লেকচার হা করে শুনত । কিন্তু বাড়ি ফিরে যে পড়া তা তার ধাতে সইতো না । তাই চূড়ান্ত ফলাফলে সে ৩য় শ্রেণী পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েও গর্ব করত । নাটক সিনেমাতেও তার নেশা ছিল । শহরে তিনটা সিনেমা হলে প্রতি সপ্তাহে মুক্তি প্রাপ্ত তিনটি সিনেমা একদিনেই দেখে সাবাড় করতো । তবে তা সপ্তাহে ওই একদিনই, বাকি ছয় দিন সে নিয়মিত ক্লাস করতো । বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার সময় একেক জনের মাথায় একেক আইডিয়া ঢুকিয়ে দিতো । মাঝে মাঝে আল্লাহ রসুলের দর্শন নিয়েও সে আলোচনা করত ।
তার এক বন্ধু ছিল নাম আওয়াল । উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ছাত্র । সে একদিন কইল, কুতুব তোর তো এরিস্টটলের মত বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান আছে, আচ্ছা কুতুব ক তো দেখি, লোহার টুকরা পানিতে ফেললে ডুবে যায় কিন্তু লোহার তৈরি জাহাজ ডোবে না কেন ? কুতুবে কইল, সব আল্লাহ্র লিলাখেলা বন্ধু ! কুতুবের আরেক বন্ধু ছিল, নাম মানিক, সেও উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ! তারে একদিন কুতুব কইল, দোস্ত, সেদিন আওয়াল কইল যে, এরিস্টটল নাকি অনেক জ্ঞানী আছিল, মেলা কিছু জানতো, সত্যি নাকি ? আওয়াল কইল, হ সে যেমন তোর রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক আবার প্রাণী বিজ্ঞানের জনকও সে । তাছাড়া রসায়নশাস্ত্র, অধিবিদ্যা, রাজনীতি, পদার্থবিদ্যাসহ সবক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন তিনি । কুতুব চমকে উঠে বলে, কস কি ? রসায়নও ?
তার পর থেকে যে কি হোল কুতুবের, সে রসায়ন বিদ্যা সহ নানা বিষয়ের উপর জ্ঞান নিতে লাগলো । তার কাছে রাষ্ট্র বিজ্ঞান কে কোন সাবজেক্টই মনে হোল না । সে ভাবল এর চেয়ে রসায়ন শাস্ত্র অনেক ভালা ! একদিন তো রসায়ন ল্যাবে গিয়ে হুলস্থুল কাণ্ড বাধিয়ে ফেলেছিল । ল্যাবে তখন দুএক জন রসায়ন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র বসে গল্প করছিল । সে দেখল, একটা ফানেলের ভিতর পানি বুদবুদ করছে । পাশে একটা জারের গায়ে লেখা H2SO4 । গল্পেরত একজনকে জারটা দেখিয়ে বলল, ছোট ভাই, এইডা কি ? ছেলেডা জবাব দিল, ওটা সালফিউরিক এসিড । এই জারটার পাশেই আরেকটা পাত্রে সে দেখল, সাদা দানাদার গুড়ো গুড়ো একটা কিছু । হঠাৎ তার কি মনে হোল, ওই দানাদার জিনিসের পাত্র খুলে কিছুটা বুদবুদ ওঠা ফানেলের মধ্যে ঢেলে দিল । দেখল বুদবুদ ওঠা পানির রং পরিবর্তন হয়ে ধীরে ধীরে বেগুনী বর্ণ ধারণ করলো । এমন অভূতপূর্ব ঘটনা দেখে সে অভিভূত হোল । গবেষণায় তার আগ্রহ দ্বিগুণ বেড়ে যেতেই সালফিউরিক এসিডের জারটা খুলে ফানেলের মধ্যে একটু ঢেলে দিতেই ধোঁয়া উঠতে শুরু করল, প্রথমে সাদা পরে কালো ! পুরো ল্যাব অন্ধকার ! আড্ডারত ছেলে দুটো ভয়ে দৌড়ে পালাল । কুতুব দাঁড়িয়ে রইল কুতুবের মত । হঠাৎ জোরেশোরে একটা আওয়াজ হোল । ছোট খাটো বিস্ফোরণের আওয়াজ । কুতুবের আর কিছু মনে নেই, জ্ঞান ফিরলে সে নিজেকে আবিস্কার করল হস্পিটালের বিছানায় ।
যাই হোক বিশবিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে চাকরির জন্য অনেক ঘুরেছে সে কিন্তু হয়নি । গ্রামের কেজি স্কুলে মাস্টারি করতে গিয়ে দেখল, র্যাট মানে যে ইঁদুর এটাই তার মনে নেই । অংকে তেমন সমস্যা নেই তার, ওয়ান থেকে ফাইভ পর্যন্ত অঙ্কের সমাধান সে কিনে নিয়েছে শহরের পুরাতন বইয়ের দোকান থেকে । সে ভাবতো, এখানে একটা রসায়নের ল্যাব থাকলে মন্দ হত না । কিন্তু বিপত্তি হোল, পোলাপানের আবার রসায়ন কি ? এই কথা ভেবে প্রিন্সিপালকে আর বলার সাহস পেল না সে । ফোর ফাইভের সাধারণ বিজ্ঞান বইয়ে একটু ধারণা দেওয়া থাকলেও গবেষণার কিছু পেল না কুতুব ।
জীবনের রসায়ন নিয়ে যে বিজ্ঞানে আলোচনা করা হয় তাই হল প্রাণরসায়ন বা জীবরসায়ন । এইডা সে রসায়ন শাস্ত্র পড়ে জেনেছে । সে ভাবল, জৈব ও অজৈব রসায়নের মত যৌন রসায়ন নামে একটি আলাদা শাখা থাকলে ভাল হতো । মানুষের জন্য তো এটি কম প্রয়োজনীয় নয় ! এই বিষয়ে সে গবেষণা শুরু করে দিল । নারী পুরুষের পারস্পারিক রসায়ন, সন্তান উৎপাদন, সন্তান ধারণ ইত্যাদি নিয়ে বিস্তর গবেষণা করার পরে একদিন তার বাবা একজন অপরিচিত মেয়ের সাথে হুট করে তার বিয়ে দিয়ে দিলেন । প্রাণ রসায়নের সরঞ্জাম নাগালে পেয়ে বছর দেড়েকের মাথায় একটি সন্তান তার গবেষণা লব্ধ হোল । ভালই কাটছিল দিনকাল । করোনা কালে এসে সবকিছু কেমন যেন দ্রুত পাল্টে যেতে লাগলো । দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকায় প্রথমে গেল চাকরি, তার পর তিন বছরের সন্তান সহ পাশের বাড়ির অপরিপক্ষ যুবকের হাত ধরে পালাল তার প্রাণ রসায়ন !
নির্ঝঞ্ঝাট মানুষ এখন কুতুব আলী । গবেষণাই এখন তার একমাত্র কাজ । স্কুল যে কবে খুলবে তার কোন ঠিক নেই । তাই কেজি স্কুলের চাকরিটাও ফিরে পাবার সম্ভাবনা কম । যে করোনা তার এত সর্বনাশ করলো, তার একটা বিহিত না করতে পারলে কুতুব আলীর শান্তি নেই । বলতে ভুলেই গেছি, তার বাড়িতে ছোট খাট একটা গবেষণাগার ইতিমধ্যেই সে বানিয়ে নিয়েছে । তার আরেক বন্ধুর নাম রঘুনাথ । বাজারে তার ঔষধের দোকান আছে । তার কাছে গিয়ে কুতুব করোনার ঔষধ চাইল । উদ্দেশ্য ঔষধ নিয়ে এসে বাড়িতে নিজ গবেষণাগারে বসে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করা । রঘু কইল, তোর কি করোনা হইছে ? হইলে হাসপাতালে যা ! আমার কাছে করোনার ওষুধ নাই !
পাশেই হোমিয় প্যাথিক ডাক্তারের চেম্বারে গিয়েও করোনার ঔষধ মিলল না । ভাবল, সরকার করোনার টিকা দিতাছে । এর এক ফাইল টিকা পাইলে নিয়ে এসে নিজ গবেষণাগারে গবেষণা করে দেখা যেত, কোন রসায়নের কোন কোন যৌগ যোগে উহা তৈরি ?
কবি ও লেখকঃ রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
বিষয় শ্রেণীঃ রম্য ও গদ্য কার্টুন
ছবি কৃতজ্ঞতাঃ গুগল
১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ।
০২ রা জুন, ২০২১ সকাল ৮:৪০
রুদ্র আতিক বলেছেন: আপনার অনুসন্ধান সফলতার মুখ দেখুক । অনুপ্রাণিত হলাম, ধন্যবাদ
২| ০১ লা জুন, ২০২১ রাত ৮:৩২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: রম্য গল্প ভালো লাগলো। কুতুব আলী চরিত্রটাও ভালো লাগলো। আশা করি কুতুব আলী গবেষণা করে করোনার ওষুধ বানাতে পারবে।
০২ রা জুন, ২০২১ সকাল ৮:৪২
রুদ্র আতিক বলেছেন: পারলে ভালই হত, দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমরা ইউরোপের দেশ গুলোতে রপ্তানি করতে পারতাম । অনুপ্রাণিত হলাম, ধন্যবাদ
৩| ০২ রা জুন, ২০২১ রাত ১:১৫
রাজীব নুর বলেছেন: লেখালেখি ছাড়া আপনি আর কি করেন? বাংলাদেশে তো লেখালেখি করে জীবন চলে না।
০২ রা জুন, ২০২১ সকাল ৮:৫৩
রুদ্র আতিক বলেছেন: বই পড়ি, তাস খেলি ! পাশাপাশি চাকরি আর সংসার । জীবিকা জোটে না বলেই, লেখাটা পেশা নয় নেশা করেছি ! ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা জুন, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:০১
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অসাধারণ আপনার লেখনিশক্তি। ব্লগের আরেকজন শক্তিধর লেখকের সন্ধান পেলাম। শুভেচ্ছা আপনাকে।