নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।
কুতুব আলীকে দেখেনি বা তার নাম শোনেনি, এমন লোক এই তল্লাটে খুঁজে পাওয়া মুশকিল । আপনারাও তাকে কম বেশি চেনেন সবাই । এই কদিন আগেইতো কুতুবরে নিয়ে রসায়ন রচিত হল । ইতিমধ্যেই তার নাম ভোলার কথা নয় কারো । কুতুব আলী কেমন মানুষ তার কিঞ্চিৎ ধারণা সবারই আছে । যাই হোক, এক কথায় কুতুব আলী বিশেষ কেউ নয়, মানুষ । মানুষ হলেও অন্যদের তুলনায় সে অন্য কিছিমের মানুষ । এই মানুষ নিয়েও তার নিজস্ব সংজ্ঞা আছে, আছে মতামত । ফুরসৎ পেলে সেসব অন্য সময় বয়ান করা যাবে । আজ বরং তার অন্য রকম কিছিম নিয়ে স্বল্প বিস্তর গল্প করা যাক ।
সিলেবাসের পড়া কুতুব আলীর বরাবরই অপছন্দের । তার মতে দেশের পাঠ্য পুস্তক অযৌক্তিক ও অদরকারি বিষয়ে ঠাঁসা । অনেকটা ফিকশন বইয়ের মত । ননফিকশন বইয়ের মত জ্ঞান অর্জনের জন্য অতুলনীয় তার কাছে দ্বিতীয়টি নেই । পাশা পাশি বাছাই করা কবির কবিতা আর দৈনিক সংবাদ পত্র তার নিত্য দিনের খোরাক । কিন্তু তাই বলে পরীক্ষায় তো আর ফেল করা যাবে না ! বাধ্য হয়ে তাকে ওই ফিকশনের কিছুটা পড়তেই হত । কিন্তু সময় কোথায় ? মাথায় বড় বড় চিন্তা আর ননফিকশনের জ্ঞান আহরণ করতেই তো দিন সাবাড় ! তার উপর বন্ধুদের আড্ডা-উৎপীড়ন উপেক্ষা করে পাশের পড়ায় মনযোগী হওয়া তো চারট্টিখানি কথা নয় ! কিন্তু ফেল করা যাবে না, এই চিন্তা তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য করতো । একদিনের ঘটনা বলি, কুতুব আলী মেসের একটা অব্যবহৃত কিচেনে একাই থাকতো । সেখানে ফ্লোরে বিছানা পাতা, পাশেই ছোট টেবিল মত একটা আসবাবে কিছু ফিকশন বই, ডায়রি আর কলম রাখা ।
কিচেনের উপর দিকে চার পাশের দেয়ালের সাথে পাকা তাক । তার উপরে বিছানো কাঁথার উপরে একটা বালিশের উপর সিলেবাসের ফিকশন বই রেখে কুতুব পড়ায় মগ্ন । পিছনে ছোট্ট একটা টেবিল ফ্যানও চালু আছে । নিচে দরজা খোলা । সোহেল এসে কুতুব কুতুব করে কয়েকবার ডাক দিলেও কুতুব চুপ । তার এই গোপন আস্তানার কথা ফাঁশ করা যাবে না । এরপর এলো সুজন, ডাকাডাকি করে রুমে ঢুকে বিছানায় পড়ে থাকা সিগারেটের প্যাকেট পরোখ করে মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিয়ে সেও চলে গেল, শালা গেল কই, বলে সগক্তি করতে করতে । এর পর পলাশ, পূর্ব পাশের গেট দিয়ে ঢুকে মামা মামা বলে চিল্লাতে চিল্লাতে রুমে এসে উঁকি দিয়ে কুতুবের দেখা পেল না । মানিক এসে উঁকি দিয়েই ছুটল আওয়ালের রুমের দিকে । এসব দেখে কুতুব মজা নিচ্ছে উপড় থেকে কিন্তু সাড়া শব্দ নেই । পাগল নাকি ? এই আস্তানার কথা কাউরে জানানো যাবে না । এমনি ভাবে কয়েকদিন চলার পর, টিকটিকি মামুন আস্তানার সন্ধান পেয়ে গেল । কুতুব আর যায় কোথায়, এককান, দুকান করে পাঁচ কান হয়ে গেলে একে একে কুতুবরে সবাই তুলো ধুনা করে ছাড়ল ।
এরই মধ্যে কুতুব উদ্ভাবন করে ফেললো যে, পড়া মনে রাখার জন্য মাঝে মাঝে পড়ার স্থান পরিবর্তন করা হলে পড়া মনে থাকে ভাল । এরপর পরীক্ষার সময় গুলোতে মেসের সবাই কুতুবের পড়ার নানান কিছিমের স্থানের আবিস্কার লক্ষ্য করল । একদিন তাকে দেখা গেল, টেবিলের উপর বসে চেয়ারে বই রেখে পড়তে । একদিন দেখা গেল, বিছানার উপর পা দিয়ে মেঝেতে শুয়ে কুতুব পড়ছে । আরেক দিন, দেখা গেল বাইরে দেয়াল রং করার মইয়ের উপরে উঠে সে পড়ছে । আন্ডার ওয়্যার পরে ব্যালকনিতে কাঠের চেয়ারে বসেও তাকে পড়তে দেখা গেল ।
সবাই ভাবল, এর মাথা একেবারেই গেছে ! অন্যের কথায় কুতুবের কিচ্ছু যায় আসে না । কারন কুতুব জানে, তার এই উদ্ভাবিত নানা কিছিমের পড়া সামনের পরীক্ষায় অভাবনীয় ফল দেবেই দেবে । যেই কথা সেই কাজ । সত্যি সত্যি কুতুব সেইবার পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাস পেয়েছিল ! রেজাল্টের পর নানান জনের নানা মত । পলাশ বলল, মামা তুমি যে রেগুলার পত্রিকা পড়, এই রেজাল্ট কিন্তু তারই ফল ! মোহাম্মদ বলল, না না, ভায়রা যে রেগুলার ক্লাস করত তার ফল ! মামুন বলল, নারে বাল, তুই ওরে চেনস ? এটা বিয়াইয়ের চুপে চুপে পড়ার ফল ! কুতুব মনে মনে হাসে, কিন্তু তার উদ্ভাবনের কথা কাউরে বলে না ।
কবি ও লেখকঃ রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
বিষয় শ্রেণীঃ রম্য ও যাপিত কার্টুন
৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ।
১৩ ই জুন, ২০২১ রাত ৩:২৬
রুদ্র আতিক বলেছেন: এই ব্যক্তির মতই কুতুবের আছে এক জোড়া চোখ ! তবে সেই সময় কুতুবের মুখে অমন দাঁড়ি ছিল না ! অনুপ্রাণিত করবার জন্য ধন্যবাদ ...
২| ১৩ ই জুন, ২০২১ রাত ১১:২৮
জটিল ভাই বলেছেন:
খুব ভালো। চালিয়ে যান
১৪ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৩:১৩
রুদ্র আতিক বলেছেন: অনুপ্রাণিত করবার জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই জুন, ২০২১ রাত ২:৫৩
আমি সাজিদ বলেছেন: ছবির এই ব্যক্তিই কি কুতুব?
প্লাস।