নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবী কাব্যময় । জীবন ও প্রকৃতির সর্বত্রই কবিতা । যে কবিতা বোঝে না, কবিতা শুনতে বা পড়তে ভালবাসে না- কবিতা আছে তার জীবনেও । তাই কবিতাই আমার সাধনা, অনুপ্রেরণা আর ভালো লাগা ।
রাস্তার পাশের টং দোকানটা খোলা দেখে কুতুব ভাবল একটু চা-টা খেয়ে নিলে মন্দ হয় না । দোকানে প্রবেশের পূর্বে ফাঁকা রাস্তার দুদিক ভালো করে দেখে নিলো সে । মালবাহী ট্রাক, অটো, সি.এন.জি ও রিক্সা ছাড়াও মোটর সাইকেল প্রায়শই চলতে দেখা গেলেও দুপুরের এই সময়টাতে রাস্তা একটু ফাঁকাই থাকে । লকডাউনের কড়াকড়ির জন্য আজ একটু বেশিই ফাঁকা । করোনা মহামারীর কথা ভাবলেই কুতুবের মনটা বিষিয়ে ওঠে । দেশে তো কুতুবের অভাব নাই । কিন্তু করোনার প্রতিষেধক বানানোর মত কুতুব আজও পাওয়া গেল না ! এসব ভাবতে ভাবতে কুতুবের চা প্রায় শেষ হয়ে এলো । এমনই মুহূর্তে দোকানের সামনের রাস্তা দিয়ে পুলিশের পিকআপ ভ্যান ঢুকে দোকানদারকে দোকান বন্ধ করতে বলে সামনের দিকে চলে গেল । কুতুবের হৃদ কম্পন শুরু না হলেও এ যাত্রা বেঁচে গেছি বলে মনে মনে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে দোকানীকে চায়ের দাম দিয়ে বেরিয়ে সদর রাস্তায় এসে দাঁড়ালো । দোকানীও ভাবল কিছু যখন কইলো না, তাইলে দোকান বন্ধ কইরা কাম নাই ! একটু পরেই পুলিশের পিকআপ ভ্যান আগের রাস্তা দিয়ে ফিরে এসে দেখল সেই চায়ের দোকান তখনো খোলা । ৩/৪ জন পুলিশ সদস্য লাঠি হাতে দ্রুত নেমে দোকানীর পাছায় এক ঘা দিতেই ও মারে, গেলাম রে বলে চিৎকার দিয়ে দোকানী কুতুবের সামনে দিয়েই দিলো ভো দৌড় । ভেতরে দুজন কাস্ট্রমার ছিল, একজনের হাতে চা আরেক জন বসে মনের সুখে চা আর সিগারেট একসাথেই চালিয়ে যাচ্ছিল । আচমকা পুলিশের এহেন আক্রমনে তারা দিশেহারা হয়ে দৌড় দিতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে একজন একশো টাকা জরিমানা গুনল । লুঙ্গি পরা আরেক জনের দৌড়ে পালানোর সময় পড়ে গিয়ে লুঙ্গি খুলে গেল । সে বেচারা উঠে কুতুবের সামনে দিয়ে যখন প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলো তখন তার পরনে লুঙ্গি ছিল না দেখে কুতুব নিজের লুঙ্গির গিঁঠ পরোখ করতে গিয়ে আবিস্কার করলো সে লুঙ্গি নয় প্যান্ট পরে বেরিয়েছে ।
কুতুব নিজেও কোন দিকে দৌড় দিবে কিনা তা ভাবতেই সামনে একটা রিক্সা এসে দাঁড়াতেই সে টুপ করে উঠে পড়লো । রিক্সা কিছুদূর যেতেই পূর্বাভাস ছাড়াই আষাঢ়ের বৃষ্টি শুরু হোল । পলিথিন দিয়ে ঢাকতে ঢাকতেই সে অনেক খানি ভিজে গেল । গন্তব্যে পৌঁছে যখন সে রিক্সাওয়াকে জিজ্ঞেস করলো, চাচা কত দিমু ? রিক্সাওয়ালা বলল, ত্রিশ টাকা ! কুতুব আলী ভাবল, ভাড়া তো দশ টাকা, কিন্তু ত্রিশ টাকা চায় কেন ? সে মনে মনে অংক কষতে শুরু করে দিল, যদি লকডাউনের কারনে দশ টাকা এবং বৃষ্টির জন্য দশ টাকা ভাড়া বৃদ্ধি করা হয় তাহলে অরিজিনাল ভাড়া সহ মোট রিক্সা ভাড়া ত্রিশ টাকা । হিসেব মিলে গেছে দেখে কুতুব কিছু না বলে ত্রিশ টাকা ভাড়া দিয়ে নেমে গেল ।
বাড়িতে ফিরে সেদিন কুতুবের খুব দ্রুত ঘুম পাচ্ছিলো । ইদানিং সে তার বউকে বেগমজাদি বলে ডাকে, বেগমজাদিকে সংক্ষেপে সারাদিনের বৃত্তান্ত বলে সে ঘুমাতে চাইলো । কিন্তু বেগমজাদি অত তাড়াতাড়ি তাকে ঘুমোতে দিলো না । সে জিজ্ঞেস করলো, পুলিশ তোমারে কিছু কয় নাই ? পুরো ঘটনা খুলে বলার পরেও একই প্রসঙ্গ যখন আবার আসে কেবল তখনই কুতুব গুল মারতে থাকে । স্বভাব সুলভ হেসে জবাব দিল সে, আরে না আমারে কি কইবো ? তাছাড়া প্রায় সব তো পরিচিতই ! একজন তো আমারে দেখেই সালাম দিল ! আরেক জন কয়, ভাই কই গেছিলেন, চা খেয়ে যান !
বেগমজাদিও বুঝল কুতুবের গুল মারা শুরু হয়ে গেছে । অগত্যা সে তাকে ঘুমাতে দিল । ঘুমিয়ে পড়তেই কুতুব স্বপ্নের রাজ্যে চলে গেল । কুতুবের এক সহকর্মী একদিন তাকে একজোড়া খরগোশ উপহার হিসেবে দিল । কুতুব বাজারে গিয়ে ভালো খাঁচা কিনে আনলো । খালের ওপাড় থেকে নিজেই কিছু কচি ঘাস তুলে আনলো । মেলা পরিশ্রম করে খরগোশ বেচারাদের থাকা খাওয়ার বন্দোবস্ত করে কুতুব বারান্দার চেয়ারে বসে একটু জিরিয়ে নেবার সময় তন্দাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল । বেগমজাদি ভাবল, এই সুযোগে খরগোশ দুটোকে একটু খাবার দেওয়া যাক । কিন্তু খাবার দিতে গিয়েই ঘটলো বিপত্তি ! যেই না বেগমজাদি খাঁচার দরজা খুলেছে অমনি খরগোশ দুটো খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ির বাইরে চলে গেল । কুতুবের কানে এসে লাগলো, ওগো, খরগোশ ছুটে গেছে ! সম্বিৎ ফিরে পেয়ে কুতুব বলল, কোন দিকে গেছে ? বেগমজাদি হাতের তর্জনী দিয়ে ওই দিকে ইশারা করতেই কুতুব সেই দিকে ছুটে গেল ! পথে যাকে পেল তাকেই জিজ্ঞেস করলো, কেউ খরগোশ দেখেছে কিনা ! ছুটতে ছুটতে কখন যে তার পরনের লুঙ্গি খুলে পড়ে গেছে তা তার জানা নাই । লোকজন বিশেষত মহিলারা যখন তাকে দেখে পালাতে শুরু করলো তখন সে টের পেল তার পরনে লুঙ্গি নাই । দ্রুত পাশের হিন্দু পাড়ার একটি ঘরে ঢুকে দেখল, টিনের বেড়ার সাথে ঝুলছে রাধা-কৃষ্ণের ছবি । ছবিখানা টান দিয়ে খুলে নিয়ে লজ্জাস্থানের সামনে ধরে আবার ছুটতে শুরু করলো । লোকজন প্রথমে রাধা-কৃষ্ণের ছবি দেখল, তার পর কুতুবকে । নানা জনের নানা মত, আলোচনা, সমালোচনা । কিন্তু কুতবের জিজ্ঞাসা, কেউ দেখেছে কি না ? ছুটতে ছুটতে ছবিখানার সামনের কাঁচ ভেঙ্গে গেল । আরও ছুটতে ছুটতে রাধা-কৃষ্ণের ছবি খানাই পড়ে গেল, থাকল শুধু কাঠের ফ্রেম ! লোকজন আবার তাকে দেখে পালাতে শুরু করলো । কুতুব ছুটতে ছুটতে জেলে পাড়ায় এসে এক হিন্দু বিধবা নারীর সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে জিজ্ঞেস করলো, দাদী তুমি দেখছো ?
বিধবা নারী প্রথমে কুতুবের মুখের দিকে তাকাল, তারপর নিচের দিকে ! ভালো করে পরোখ করে সে বলল, দেখমু না ক্যা, তোর দাদা বাইচা থাকতি কত দেখছি ! কিন্তু তোর মতন এই রহম ফেরেমে বান্ধা জিনিস দেহি নাই ! ক্যারে কুতুব, ফেরেমডা কি কাঠের না পেলাস্টিকের ?
কবি ও লেখকঃ রুদ্র আতিক, সিরাজগঞ্জ
২৩ আষাঢ়, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ ।
বিষয়শ্রেণীঃ রম্য ও গদ্য কার্টুন
ছবিঃ নিজ ।
১০ ই জুলাই, ২০২১ বিকাল ৪:০১
রুদ্র আতিক বলেছেন: মনে থাকবে, ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৮
prachurja বলেছেন: লক ডাউনে বাহিরে বের হলে তো কিছুটা সমস্যায় পড়তে হবেই।
বিশেষ করে যখন কঠোর লক ডাউন চলছে, তখর তো বাহিরে বের হলেই পুলিশ তাড়া করবেই।
কঠোর লক ডাউনের সময় খুব পয়োজন না হলে বাহিরে বের না হওয়াটাই উচিত।
prachurja