![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজকাল দাম বাড়ার সাথে সাথে কিছু কিছু জিনিসের কদরও আপনা আপনি বেড়ে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদ স্যার রবার্ট গিফেন গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন, মোটা কাপড়, মোটা চাল ইত্যাদি পণ্যের (গিফেন দ্রব্য) দাম বাড়লে, কদর এবং চাহিদা বেড়ে যায়। মানে, চাহিদা বিধি সেখানে কার্যকর হয়না, হয় তার উল্টোটা। চলতি সময়ে, সেরকমই কিছু ‘পণ্যে’র প্রতি একদিকে যেমন দেশপ্রেমিকদের ঘৃণা বাড়ছে, তার বিপরীতে আবার আরেক ধরনের ‘দেশপ্রেমিক’(?) জনতার প্রেম ততোই বাড়ছে। এরকমই দুটি নতুন ‘পণ্যে’র নাম আজ আপনাদের বলি। আপনারা সবাই এই ‘পণ্য’ দুটির সাথে খুবই ভালোভাবে পরিচিত। ইসলামী ব্যাংক বালাদেশ লিমিটেড আর ছাত্র শিবির (সংগঠণটির সাথে ‘ইসলামী’ শব্দটি যোগ করে, ইসলামকে কলঙ্কিত করতে চাইনা)। আপনারা কেউ কেউ হয়তো ভাবছেন যে, আমার মাথার তার এবার হয়তো সত্যিই ছিঁড়েছে। যা খুশি ভাবতে পারেন। কারণ ভাবনার পথ এখনো খোলা আছে।
যদি ভাবনার জগৎটা ব্লগের জগতের মতো হতো, তাহলে আমি এই কথা বলার দুঃসাহসটাও দেখাতাম না। আমার, আপনার, সবার ভাবনার এই জগৎটাও তাহলে বন্ধ হয়ে যেতো (ভাবনার জগৎ বন্ধ করার ধারনাটা Ashif Entaz Rabi ভাইয়ের ফেইসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া)। সবে মাত্র আমারব্লগ.কম-কে বন্ধ করা হয়েছে। হয়তোবা আরো কতগুলো বন্ধ হবার অপেক্ষায় আছে। কারণ এগুলো গণমানুষের দাবির কথা বলে। যেখানে সেখানে, যখন তখন ব্লগাররা উচিৎ কথা বলে। উচিৎ কথা সবারই তেতো লাগে। এই জন্যই মনে হয় বলা হয়ে থাকে ‘উচিৎ কথায় বন্ধু বেজার’। কিন্তু জামাত-শিবির নিষিদ্ধ হয়না। কারণ এদেরকে পুঁজি করে রাজনীতির মাঠ গরম রাখা যায়, এদের ইস্যু করে নির্বাচনে ভোট চাওয়া যায়-পাওয়া যায়।
এতো গেলো রাজনীতির মাঠের কথা। সরকারি দল, বিরোধী দল, অমুক দল, তমুক দলের কথা। এবার আমাদের ‘জাতির বিবেক’ কিছু মিডিয়ার কথা বলি। একদিকে দেশপ্রেমিক জনগণ জামাত-শিবির নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন করে, গণজাগরণ মঞ্চ কর্মসূচি দেয়, রুমী স্কোয়াডের সদস্যরা আমরণ অনশন করে, অন্যদিকে এটিএন বাংলা তাদের নিউজে ইসলামী ব্যাংক বিরতি নেয়। প্রথম আলো পুরো এক পৃষ্ঠা জুড়ে রঙিন বিজ্ঞাপন ছাপে। আব্দুন নূর তুষার (সাবেক ছাত্রলীগ নেতা) টাকার বিনিময়ে উপস্থাপনা করে ইসলামী ব্যাংকের অনুষ্ঠান, বলিউডের নায়িকা দীপিকা পাড়ুকোন কাজ করে শিবিরের ব্র্যান্ড এ্যাম্বাসেডর হিসেবে। কারণ পৃথিবীটাই নাকি টাকার গোলাম। আর এসবের কতগুলোতো মাত্র প্রতিষ্ঠান আর কিছু human thing (human being নয়) ছাড়া আর কিছু নয়। তাছাড়াও লেনদেনের নিয়মটাই হচ্ছে ‘আপনিও কিছু লেন, আমাকেও কিছু দেন= লেনদেন’।
আজকের দিনের এই কর্পোরেট দুনিয়ায় টাকা পয়সা ছাড়া কিছুই হয়না। আর এই পয়সা রোজগারের জন্য যে যার মতো পারছে, হন্যে হয়ে ছুটছে। তারা শুধু নিজেরাই ছুটছে না, ‘পৃথিবী’ নামক গ্রহটার চার পাশে ঘুরাতে শুরু করেছে কৃত্রিম উপগহও। যাদের চোখ আছে, তারা ছুটছে অন্ধের মতো; আর যাদের চোখ নেই (থেকেও নেই) তারা ছুটছে কৃত্রিম চোখ লাগিয়ে- উদ্ভ্রান্তের মতো। সুতরাং, এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের টাকার পেছনে ছুটাতেও দোষের কিছু থাকার কথা নয়। আর টাকার পেছনে ছুটতে গিয়েই এদের কাছে কদর বাড়ছে এসব গিফেন দ্রব্যের (ইসলামী ব্যাংক ও জামাত-শিবির)।
একটা বিষয় সচেতন পাঠকদের সবাই লক্ষ্য করে থাকবেন। আজকাল প্রথম আলো জামাত-শিবিরের ক্যাডারদের ‘ক্যাডার’ বা ‘দুষ্কৃতকারী’ বলে সম্বোধন করেনা, সম্বোধন করে ‘শিবির কর্মী’ বলে। অথচ অন্য রাজনৈতিক দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে এই শব্দটি দেদারছে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুধু তাই না, শিবির ক্যাডারদের সম্মানও ইদানিং এক ধাপ বেড়ে গেছে প্রথম আলোর কাছে। এখন শিবিরের কোনো নাশকতার ছবিও যদি তারা ছাপে, সেখানে শিবির-ক্যাডারদের সম্বোধন করা হয় ‘আপনি’ বলে, সসম্মানে। লেখাটির সাথে ২ এপ্রিল ২০১৩ মঙ্গলবারের কয়েকটি ছবি সংযোজন করলাম। ছবিগুলোর নিচের বর্ণনা দেখলেই এর প্রমাণ পাবেন। অথচ কিছুদিন আগে পর্যন্তও এমনটি ছিলোনা। এই হলে কি আর লেনদেন চলে! প্রথম আলোর শ্লোগানটা মনে পড়ছে- ‘বদলে যাও, বদলে দাও’। তবে এর সাথে আমার যোগ করতে ইচ্ছে করছে- ‘সবকিছু বদলে দেওয়া ভালো না। সত্যটাকে কখনোই বদলে দিওনা’। তাহলে তা ‘মিথ্যা’য় পরিণত হবে। আর যদি এটাও হয়েই যায়, তাহলে নচিকেতার গানের কথাটা লিখেই শেষ করবো। তিনি কোনো এক গানের শেষ লাইনটা লিখেছেন “ভালো দাম পেলে এরা বাপকেও দেবে বেচে”।
লেখাটি প্রথম আলো ব্লগে পোস্ট করেছিলাম; ছাপাও হয়নি। মুছে দেওয়া হয়েছে।
©somewhere in net ltd.