নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মো: আওয়াল হোসেন টুটুল

টুটুল

সৎকাজে ১০০% বিশ্বাসী।

টুটুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলতি পথের গল্প

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৬



হাটবাজারের ক্যানভাসারের চিৎকার চেচামেচির মতো একটা তীব্র আওয়াজে আমার আমার তন্দ্রালু চোখ খুলে গেলো। গলাবন্ধের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে উচ্চমূল্যের শার্ট। গায়ে দামি ব্লেজার। সদ্য-কালি-করা, নিজের প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত করার মতো চকচকে দামি শ্যু পায়ে। চোখে মোটা কালো ফ্রেমের ভারি চশমা পরা। এক লোক উচ্চবাচ্য করে চলেছেন প্রায় তারই সমবয়স্ক আমার পাশের সিটে বসা ভদ্রলোকের সাথে। দ্বিতীয়জনকে ‘ভদ্রলোক’ কি ‘অভদ্রলোক’ সম্বোধন করা সমীচীন আমি নিজেই বুঝে উঠতে পাচ্ছিনা। ক্লিন শেভ্‌ড। গায়ে জড়ানো বেশ পুরোনো, ববলিন উঠা ব্লেজার। অযত্ন-অবহেলায় সেটা আরো অপরিষ্কার লাগছে। পরনে জিন্সের রঙচটা প্যান্ট। মাথা ভর্তি কবি নজরুল-স্টাইলের একগাদা ঝাঁকড়া কুকড়ানো রুক্ষ চুলের মস্ত এক ডালি। চাহনিটা এত করুন যে মনে যেনো চোখের পলক পড়লেই শিশিরের মতো টপ করে অশ্রু ঝরে পড়বে। সব মিলিয়ে চেহারায় দারুণ একটা আর্ট আছে।
আমি তাদের তর্কের বেশি কিছু শুনতে পাইনি। প্রথমোক্ত ভদ্রলোকের চেচামেচিতে ট্রেনের সিটে হেলান দিয়ে আমার সদ্য বুজে আসা চোখ মেলতেই শুনলাম ‘অসভ্যতার একটা সীমা থাকা উচিৎ। তোর মতো কপর্দকশুন্যকে আমি এই কামরা থেকে জুতিয়ে বের করতে পারি, জানিস...’ এছাড়া যে বাক্যগুলো তিনি প্রয়োগ করলেন, সেসব বাক্য আমার গল্পে স্থান না দেয়াই আমার মতে যৌক্তিক মনে হয়। কামরার সব যাত্রী তখন দুই ভদ্রলোকের বচসা উপভোগ করছেন। ‘বচসা’ বলা ভুল হবে। কেননা প্রথমোক্ত ব্যক্তি এই যে এতগুলো গালমন্দ করলেন, প্রত্যুত্তরে দ্বিতীয়জন একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। অন্য যাত্রীদের দু এতজনকে বলতে শুনলাম ‘সত্যিইতো মানুষের চোখের দৃষ্টি এত খারাপ থাকবে কেনো’। আবার কেউ বললেন ‘এসব বিষয় নিয়ে কি মানুষ পথে ঘাটে ঝগড়াঝাটি করে! এসব হচ্ছে মান সম্মানের বিষয়’। আমার সামনের সিটে বসা বোরকা পরা এক নারী বললো ‘বেডিরও মন অয় কুনো দুষ আছে, নাইলে সারা গাড়ি ভরা এত মেয়া মানুষ থাকতে ওই বেডির লগে ক্যাল্লাইগ্যা অসব্বতা করবো এই বেডা’। এতক্ষণে ভদ্রলোক তার সিটে গিয়ে বসেছিলেন। এই নারীর কথায় তিনি দ্বিগুণ তেজে উঠে এসে আমার পাশের সিটের যাত্রীকে বললেন, ‘এই হারামজাদা! আমার স্ত্রী তোকে কী ক্ষতি করেছে, বল! ওই মহিলা কী বলেছে শুনলিতো! তোর সাথে কি আমার স্ত্রীর আগের শত্রুতা আছে যে তুই এমন হেনস্থা করছিস আমাদের’?
আমার সহযাত্রী এতক্ষণ একটি কথাও বলেননি। এমনকি রাগান্বিত ভদ্রলোকের চোখের দিকে তাকিয়েও দেখেননি। স্বচ্ছ সরল দৃষ্টি সামনে মেলে তিনি এমনভাবে বসেছিলেন যেনো তার আশেপাশে কিছুই হয়নি, কিছুই ঘটেনি। তার প্রতিপক্ষের প্রশ্নে এবার তিনি তার চোখে চোখ রেখে বললেন, ‘শত্রুতা হয়তো ছিলোনা, কিন্তু বন্ধুত্ব যে ছিলোনা, তা আপনি কি জানেন নাকি! আর আপনার স্ত্রী আমার ক্ষতি কিছুই না করুক, ভালো কিছুতো অবশ্যই করেছে’। এবারও দৃষ্টিতে তার সরলতা। ‘শুধু আপনাকে এটুকুই বলি, আপনার স্ত্রীর নাম সিঁড়ি, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ছাত্রী। যদি আরো কিছু জানতে চান, বলতে পারি...’। বলতে বলতেই তার হাসভরা মুখটা করুণ হয়ে এলো। সত্যি সত্যিই এবার ভদ্রলোকের চোখ থেকে একফোঁটা জল তার ময়লা ব্লেজারের ওপর পড়লো। সাথে সাথে তা শুষে নিলো পিপাসিত ব্লেজারের শুষ্ক কাপড়। এতক্ষণ আমার কাছে অহেতুক বাগড়া পাকানোটা বিষময় লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো যে-ধাক্কাধাক্কি চেচামেচি থেকে বাঁচার জন্য প্রথম শ্রেণিতে ওঠা, সে আশায় গুড়ে বালি। যাত্রীদের মধ্যেই লেগে গেছে! কিন্তু এবার চমক লাগলো। জানি- কারো ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলা ঠিক হবেনা। তবে শুনতে তো বাধা নেই।
ভদ্রলোকের স্ত্রী এবার সিট থেকে ওঠে এসে ভদ্রলোককে এক হাতে টান দিয়ে বললেন, ‘এই তুমিও কি পাগল হলে নাকি। কোন অচেনা যাত্রীর সাথে অকারণ তর্ক করছো! আশেপাশের যাত্রীরা কী মনে করছে! এই ভদ্রলোক কি আমাকে কিছু কলেছেন নাকি! আমার দিকে তাকিয়ে দুবার মৃদু হেসেছেন শুধু। তাতে কী এমন হলো তোমার যে মেজাজ বিগড়ে গেলো’! তার স্বামী আরো কিছু বলতে চাচ্ছিলেন, কিন্তু ভদ্রমহিলা তাকে নিরস্ত করলেন। ভদ্রমহিলার কোলের শিশটিাকে দেব শিশু বললে বাড়িয়ে বলা হবেনা। এই দেব শিশুটা মনে হচ্ছে ঝগড়া দেখে খুবই মজা পাচ্ছিলো। হয়তো এখনো কথা বলতে শেখেনি। তবে মায়ের কোলে বসে আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছিলো নানা ধরণের শব্দ করে আর হাতে তালি দেবার মতো খেলা খেলে।

বন্ধুদের কেউ কেউ বলেছিলো যে গল্পটা এভাবে শুরু না করলেও পারতাম। হ্যাঁ, আমিও জানি, পারতাম। যখন লেখক কিছু লেখেন, তিনি সেটার স্রষ্টা; তিনি যেভাবেই চাইবেন, সেভাবেই সেটা হতে বাধ্য। তবে এমনও কিছু বিষয় আছে যার সামান্যতম পরিবর্তন মানেই, সম্পূর্ণটাতেই পরিবর্তনের আঁচ লাগাতে হয়। তখন পুরো বিষয়টাই তার খাঁটিত্ব হারায়; নকল বা মেকিতে পরিণত হয়। আমি সবসময় বিশ্বাস করি, সামান্য মিথ্যা মানে পুরোটা সত্য নয়। যা সত্য নয়, তা মিথ্যা। সুতরাং সত্য হতে হবে নিখাঁদ সত্য; আংশিক সত্য মানে পুরোটা মিথ্যা।
তত্ত্ব কথা থাক। এবার সত্য কথা বলি। কমলাপুর থেকে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী তিস্তা এক্সপ্রেস-এ রিটার্ন-টিকিট (ফিরতি টিকেট) কেটেছিলাম ঢাকায় যেদিন পৌঁছেছিলাম সেদিনই। ইউনিভাসিটির হল থেকে ভোরবেলা ঘুম থেকে একটা সিএনজি নিয়ে একদম সিগনালবিহীন অবস্থায় পনেরো মিনিটেই স্টেশানে পৌঁছে গেলাম। যানযটবিহীন রাস্তায় এতো দ্রুত পৌঁছে মনে হলো, আমি ঠিকঠাক পৌঁছেছি তো! অভ্যাস জিনিসটা এরকমই। একটা অনিয়ম, অনাচার বা অনভ্যাস অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে, অনিয়ম আর অনাচারটাকেই ঠিক বলে মনে হয়, সঠিকটাকে মনে হয় ভুল।
চার নাম্বার প্ল্যাটফর্মে যখন পা রাখলাম, তখনো সূয্যি মামা জাগেনি। ট্রেনের কামরার দরজাও বন্ধ। ট্রেনের দুপাশের কোনো পাশেই বগি নাম্বার লেখা ছিলোনা। বগি নাম্বার খুঁজতে ছয়শো মিটার লম্বা ট্রেনটাকে আমার এপার ওপার করতে হলো। আমার বগিতে আমিই প্রথম যাত্রী। দ্বিতীয়, আমার পাশের সহযাত্রী। বেশভূষা দেখে তাকে প্রথমে পাগল ভেবেছিলাম। আমার ভুল ভাঙতে দেরি হয়নি। ভদ্রলোক সিটে বসার আগেই মানিব্যাগ থেকে টিকিট চেক করেই সিটে বসলেন। সুতরাং এই ব্যক্তি আর যাই হোক, অন্তত পাগল না, বুঝলাম।
বাংলাদেশের ট্রেনগুলো সাধারণত সঠিক সময়ে ছাড়েনা। প্রায়ই যাত্রীদের মজা করে বলতেদা শুনি ‘ছয়টার ট্রেন কয়টায় ছাড়বে, ভাই’! কিন্তু আজ তার ব্যতিক্রম হলো। সাতটা বিশের ট্র্রেন, ঠিক সাতটা বিশেই হর্ন বাজলো। চিরাচরিত বাঙালির যা স্বভাব! সময় থাকতে তাড়া নেই। ট্রেনের হর্ন বাজানোর সাথে সাথেই সব হুড়মুড় করে বগিতে ওঠতে শুরু করলো। স্বাভাবিকভাবেই প্রথম শ্রেনির কামরাতেও একটা প্রচণ্ড হট্টগোল বেঁধে গেলো। জানতাম এ ভীড় স্থায়ী হবে না। প্রথম শ্রেণিতে দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করার অনুমতি নেই। বিষয়টা এই- ব্যস্ততার সময়টাতে ট্রেনে উঠে কোনো রকমে দাঁদানো, পরে যার যার বগিতে চলে যাওয়া। এসব হট্টগোল আর অব্যবস্থাপনা দেখে স্যুট-টাই পরা প্রথমোক্ত ভদ্রলোক এমন বাণী ছাড়তে শুরু করেছিলেন যেন তিনি বক্তৃতা করে সব অব্যবস্থাপনা দূর করে দেবেন।

উত্তেজিত ভদ্রলোক এখন বিভোর ঘুমে। তার স্ত্রীও হয়তোবা! অথবা হয়তো ঘুমানোর ভান করছেন। ট্রেন গফরগাঁও স্টেশানে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস-এর সাথে ক্রসিংয়ে পড়ার ফলে কিছুটা সময় দেরি হলো। পুরোটা সময়ই আমার মনটা কেমন যেনো আঁকুপাঁকু করছিলো- কী করে এদের কাহিনীটা শুনা যায়! আষাঢ়ের আকাশ ফেটে বিদ্যুৎ চকানোর মতো, মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি খেলে গেলো। এতো সহজ একটা উপায় থাকতেও এতোটা সময় আমি ভেবে মরছিলাম যে কী করে সহযাত্রীর সাথে গল্প শুরু করা যায়! মাঝে মাঝে এমন কিছু সময় আসে যখন খুব সহজ কিছু বিষয়ও মাথায় ধরেনা। মিনিটি বিশেক পর ট্রেন আবার চলতে শুরু করলো। এবার আমি বললাম, ‘এক্সকিউজ মি! ভাইয়া, আপনি কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছেন? কোন্‌ হলে থাকতেন’?
- আপনিও কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র? বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নের মাধ্যমেই উত্তর দিলেন।
- জ্বি!
- কোন্ সাবজেক্টে পড়ছেন? যে-আমি ভেবেছিলাম যে কিছু প্রশ্ন করে গল্পটা সমন্ধে কিছু জানবো, সেই আমিই পড়ে গেলাম প্রশ্নজালে- ভাবলাম। ‘কোন্ সাবজেক্টে পড়ছেন- বললেন না তো’!
- ও, আচ্ছা! জ্বিনা, ভাইয়া। আমার স্টুডেনশিপ শেষ। তবে আমি ইংরেজির ছাত্র ছিলাম... ভাইয়া আপনি?
- তাহলে আর আপনাকে ‘আপনি’ বলে আর ডাকা গেলো না। তুমি আমার ডিপার্টমেন্টের ছোট ভাই। বলেই তিনি ‘আপনি’থেকে ‘তুমি’তে নেমে এলেন।
- ভাইয়া, ওই ভদ্রলোকের সাথে কী সমস্যা হয়েছিলো?
- কি ব্যাপার! লেখালেখির অভ্যাস আছে নাকি? বলে তিনি শিশুর সরলতায় হাসলেন। বললেন, হুঁম! সব বিষয়ে লেখকদের আগ্রহ একটু বেশি থাকে আর অন্তর্দৃষ্টি একটু তীক্ষ্ণই হয়। আমারও আর বুঝবার বাকি রইলো না যে তিনিও লেখালেখিতে সিদ্ধহস্ত। ‘বাদ দাও! পাগলের সাথেতো আর পাগল হওয়া যায়না। পাগল তার প্রলাপ বলবে আর অন্যরা তা শুনবে- এটাইতো স্বাভাবিক, নয় কি’? আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নড়লাম। ‘শোনো আমরা যারা এই ক্যাম্পাস থেকে শিক্ষালাভ করেছি, তারা এমন কিছু শিক্ষা বাস্তব জীবন থেকে লাভ করেছি যা অন্যরা সারা জীবন পুস্তক থেকেও লাভ করতে পারেনা। তুমি যেহেতু জানতে চাচ্ছ, আমি তোমাকে বলবো।
- আপনার নামটা কী ভাইয়া!
- আরে পরিচয় যেহেতু হয়েছে, নামতো অবশ্যই জানতে পারবে। আমার নাম সোপান।
‘বাহ! ব্যতিক্রমী নামতো’! মনে মনে বললাম। কারণ, ‘নামটা খুব সুন্দর’ বা ‘ব্যতিক্রমী নাম’ এইসব বাক্য ছোটোদের খুশি করার জন্য ভালো কাজে লাগে; বড়দের বললে নিজেকেই বোকা বোকা লাগে।

কলা ভবনের গেইট দিয়ে দোতলায় উঠতে যাচ্ছিলো সোপান। একটা প্রাইভেট কারের হালকা ধাক্কা লেগে গেটের পাশে বসার আসনের মতো পাকা বেলকনির স্থানটাতে কাৎ হয়ে পড়ে গেলো সে। ডান হাতে টাল সামলাতে গিয়ে কুনুইয়ের নিচে কিছুটা কেটে গেলো। ফুল হাতা শার্টের ভিজে রক্ত বেরুতে লাগলো। মুহূর্তের মধ্যে ছাত্র ছাত্রীর ভিড় জমে গেলো। উত্তেজিত ছেলেপেলে ড্রাইভারকে মারতে উদ্যত হলো। গাড়ি থামানোর সাথে সাথে গাড়ি থেকে এক ছাত্রী দ্রুত নেমে এলো। একই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীর ড্রাইভার বলে আর কেউ তাকে আঘাত করলো না। মেয়েটা নেমেই ড্রাইভারকে বললো, ‘আরে বোকার মতো দাঁড়িয়ে কী দেখছো! ভেতর থেকে টিস্যু-বক্সটা নিয়ে আসো। ইস! ভাইয়া, খুব বেশি লেগেছে দেখছি। অনেকটা কেটে গেছে’। ফুলস্লিভ শার্টের বোতাম খুলে উপরের দিকে উঠাতে উঠাতে বললো সে। ব্যথায় কুঁচকে উঠলো সোপান। ‘কীভাবে যে ড্রাইভ করে না লোকটা। দেখেশুনে সাবধানে চালাবে না’! ‘আপা আমিত দেইখ্যা শুইন্যা আস্তে আস্তেই চালাইতাছিলাম...’ টিস্যু প্যকেটটা ডান হাতে বাড়িয়ে দিতে দিতে ড্রাইভার বললো। ‘না, আপা, ড্রাইভারের কোনো দোষ নেই। দোষটা আমারই। আমিতো আসলে চোখে দেখতে পাইনা। আমারই আরেকটু সাবধানে চলা উচিৎ ছিলো’। মেয়েটা ভাবলো এটা অভিমানের কথা। ক্ষতস্থানের রক্তটুকু মুছে সে বললো, ‘ঔকে ঔকে! উঠনতো, গাড়িতে উঠুন!
-আরে না! এই সামান্য কাটার জন্য মেডিক্যালে যেতে হবেনা...’
সে আরো কিছু বলতে যাচ্ছিলো। কছিু বলার সুযোগ না দিয়ে সে সোপানকে এক প্রকার ঠেলে গাড়িতে উঠাতে উঠাতে বললো, ‘এই ড্রাইভার, মেডিক্যালে সেন্টারে চলো’।
জমায়েত ছাত্র ছাত্রীর ভীড়ের মধ্য থেকে বিভিন্ন কথা শুনা গেলো। কেউ বললো, ক্যাম্পাসের ভেতর রিক্সা ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনই চলাচল করতে দেওয়া উচিৎ নয়। কেউ বললো রিক্সা কেনো, কোনো প্রকার যানবাহনই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া উচিৎ নয়।
গাড়ি থেকে নামার সময় ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে দিলো। সোপান কিন্তু গাড়ি থেকে তৎক্ষণাৎ নামলোনা। নামলোনা যে ঠিক তা নয়; নামতে পারলো না। হাতড়ে হাতড়ে সাবধানে নামতে চেষ্টা করেও, কী যেনো ভেবে ইতস্তত করে মেয়টাকে বলল, ‘আমাকে একটু নামতে সাহায্য করবেন, প্লিজ! আসলে হল থেকে কলা ভবন পর্যন্ত পথ আসা যাওয়া করতে করতে একেবারেই পরিচিত হয়ে গেছে। অপরিচিত জায়গায় গেলে একটু সমস্যায় পড়তে হয়। এখন আঁচ করতে পাচ্ছিনা’। মেয়েটা এবর প্রথম বুঝতে পারলো যে সোপান আসলেই অন্ধ ছিলো। ‘ও মাই গড! ভাইয়া আপনি কি চোখে দেখতে পানানা? আই এ্যাম সরি! আমি বিষয়টা বুঝতেই পারিনি’। গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে সোপানকে ধরে মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে গেলো সে। আঘাত ততো মারাত্মক ছিলোনা। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ডাক্তার সোপানকে ছেড়ে দিলো। আবার গাড়ি চড়ে মেয়েটা বললো, ‘ভাইয়া কি তাহলে হলে চলে যাবেন? নাকি কলা ভবনেই যাবেন’?
- না, আমাকে কলা ভবনেই যেতে হবে। আজ আমার ফাইনাল ইয়ার পরীক্ষার ভাইভা।
- হায় হায়! তাহলে তো আপনার আরো ঝামেলা হয়ে গেলো।
-ঝামেলাতো কিছুটা হলোই...
কথা বলতে বলতেই গাড়ি কলা ভবনের গেইটে পৌঁছে গেলো। ভাইভা কক্ষের সামনে পৌঁছে সে, বললো, ‘ভাইয়া, আমি তাহলে আসি। বেস্ট অফ লাক’। সোপান একবার ভাবলো মেয়েটার নামটা জানা হলো না। পিছু থেকে ডাকবে কিনা। আবার ভাবলো ‘না, যেখানকার ঘটনা, সেখানে মাটি চাপা পড়াই ভালো; বাড়তে দেয়া উচিৎ না’। ভাবতে ভাবতেই সে মেয়েটার গলা শুনতে পেলো। ‘ও, আচ্ছা ভাইয়া, আপনার নামটাতো জানলাম না’। বলেই সে নিজের নামটাই আগে বললো। ‘আমার নাম সিঁড়ি। আমি এবার বাংলা বিভাগে ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি’। ভাইয়া আপনার নামটা?
-আমার নাম সোপান।
-ভাইয়া আপনার মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে যাই, মাঝে মাঝে কথা বলা যাবে। ভাইয়া, আমার মোবাইল নাম্বারটা আপনাকে দিয়ে যাই, যে কোনো প্রয়োজনে, যে কোনোসময় কল দেবেন, আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো আপনার জন্য কিছু করতে। বারোটা সময় আমার একটা ক্লাস আছে ভাইয়া। আমি তাহলে এখন আসি। পরে কথা হবে।’ বলেই সোপানের হাতে সোবাইল নাম্বারের চিরকুটটা ধরিয়ে দিয়ে সে দ্রুত চলে গেলো। সোপানের সহপাঠীরা এ নিয়ে তার সাথে বেশ কিছুক্ষণ মজা করলো।
যদিও ভাইবাতে কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছিলো, কিন্তু দুর্ঘটনার দুঃসংবাদে যে সে অভিযোগ থেকে বিনা জেরায় ছাড়া পেয়েছিলো, সেটা সহজেই অনুমেয়।

বর্ষার ভেজা এক পড়ন্ত বিকেলে সোপানের মোবাইল বেজে ছলছিলো। আধো ঘুম আধো তন্দ্রা ভেঙ্গে ফোন রিসিভ করতেই অপর প্রান্তে কাঁদো কাঁদো নারী কণ্ঠ। ‘সোপান ভাইয়া’! আবার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না।
-আরে সিড়ি! কী হয়েছে তোমার! কাঁদছো কেনো?
-ভাইয়া, আমার মা আজ কিছুক্ষণ আগে মারা গেছেন।
-ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন! সে কী বলবে, কী সান্ত্বনা দেবে কিছুই বুঝতে পারলো না। ‘কী বলছো! কীহয়েছিলো উনার!
-ম্যাসিভ হার্ট এ্যাটাক করেছিলো। ভাইয়া, আপনি একটু আমাদের এখানে দ্রুত আসতে পারবেন?
-হ্যাঁ! অবশ্যই! তোমাদের বাসাটা কোথায়...?
সেদিনই সোপান জানলো যে সিঁড়ির বাবা বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব। অনেক বেশি আশ্চর্য হয়েছিলো সোপান। এই ভেবে যে এতো বড়লোকের একজন মেয়ের আচরণ এতো সহজ সরল, এতো মধুর ও মার্জিত হতে পারে। সমাজের উঁচুতলার মানুষ সম্পর্কে ধারণাটাই তার পাল্টে গিয়েছিলো সেদিন। আবার এর বিপরীত ভাবনা ভাবতেও বেশিদিন তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি।
এই শোকের আবেশের মধ্যে সিঁড়ির বাবা তাকে আলাদা করে ডেকে নিয়ে বললেন, ‘তোমার নামই কি সোপান?’
-জ্বি।
-সিঁড়ি আমাকে তোমার সমন্ধে সব বলেছে। তোমাদের পরিচয় থেকে আজ পর্যন্ত সব। যাকগে, আজ তোমাকে এখানে ডেকে আনার পেছনে একটা কারণ আছে। সিঁড়ির মা ছিলো খুবই পরোপকারী মানুষ। মৃত্যুর আগে ও ওর চোখ দুটো মরনোত্তর দান করে গিয়েছিলো। আমরা হাতে আর ঘণ্টা দুয়েক সময় পাবো। তোমার কোনো আত্মীয় স্বজন আছে যারা তোমার চক্ষু অপারেশনের খরচটা যোগাতে পারবে?
সোপানের বুকের মধ্যে কে যেনো প্রচণ্ড একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ধাক্কা দিলো। সে একটু চিন্তা করে থতমত খেয়ে বললো, ‘স্যার, আমারতো ওরকম কেউ নেই। আসলে আমার পরিবারের অবস্থা...’
-ঔকে ঔকে! থাক আর বলতে হবেনা। সোপানকে থামিয়ে দিয়ে বললেন সিঁড়ির বাবা। ভদ্রলোকের চোখেমুখে বিরক্তি নাকি প্রশান্তি বুঝা গেলোনা।

পরের চার বছরের কাহিনী না বললেও পাঠক বুঝে নিতে পারবেন। আগে বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে টেপরেকর্ডারে রেকর্ড করে তাকে পড়া তৈরি করতে হতো, পরীক্ষার সময় সাহায্য নিতে হতো শ্রুতলেখকের। মাঝে মাঝে সিঁড়িই সোপানের পড়া তৈরি করতে সাহায্য করতো। এখন আর সোপানকে টেপ রেকর্ডারের সাহায্যে রেকর্ড করে পড়াশোনা করতে হয়না। নিজের পড়া সে নিজেই পড়তে পারে। নিজেই দিতে পারে নিজের পরীক্ষা। অবশ্য এ ব্যাপরে, বিশেষ করে বর্ণমালাগুলো চিনতে, প্রথম প্রথম সিঁড়িই তাকে সাহায্য করেছে। তবুও ড্রাইসেল-চালিত তার পুরোনো সে টেপ রেকর্ডারটা সে যত্ন করে রেখে দিয়েছে। মাঝে মাঝে সে ওটাতে অল্প ভলিউমে খবর বা গান শুনে থাকে। জোরে শুনলে মেস মেম্বাররা, এমনকি বন্ধুরাও তাকে ‘ব্যাকডেটেড’ বলে। তারা বলে, ‘এখন হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির যুগ। এখন কি সেই আদিকালের যন্তপাতি চলে নাকি’! সে তাদের সাথে তর্কে যায়না। সে ভাবে যেসব জিনিস বা বিষয়ের সাথে কারো অনুভূতির যোগসাজস থাকে, তার স্পর্শ মনে প্রাণে অপার একটা আনন্দ এনে দেয়। সে এখন আর ইউনিভার্সিটির হলে থাকেনা। মেসে উঠেছে। সোপানের মা-বাবা পরলোকগমন করেছেন দুবছর হতে চললো। একটার পর একটা চাকরিতে আবেদন করে যাচ্ছে। কিন্তু ভাইভাও দিয়ে ফেলেছে প্রায় আট থেকে দশটা। কিন্তু চাকরি যেনো হীরার হরিণ। তার নাগাল সাধারণের মধ্যে নেই। সোপানের একটা অভ্যাস ছিলো সে কখনো তার পরীক্ষার রোল কাউকেই দিতোনা। এর পেছনে কোনো যুক্তিতর্কেও জড়াতোনা কারো সাথে। এদিকে সিঁড়ির পরিবার থেকেও তাকে বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছে। তার বাবা অল্প কিছু দিনের মধ্যেই অবসরেই যাবেন। অবসরে যাওয়ার আগেই তিনি একমাত্র মেয়ের ঘর সংসার গুছিয়ে দিয়ে যেতে চান। অথচ সিঁড়ি তার আর সোপানের চাওয়া পাওয়ার কথা সাহস করে কোনোদিন তার বাবাকে বলতেই সাহস করেনি। সংসারে আপন মা-ও নেই যে, তাকে দিয়ে সব বলাবে, ম্যানেজ করাবে। সিঁড়ি মনে মনে ভাবে মা যে কী জিনিস আর কত আপন, মা’র অভাব না থাকলে কেউ কোনোদিনই বুঝতে পারবেনা। যে-সৎমা সংসারে আছে, তার অবস্থানই পরিবারে নড়বড়ে। সিঁড়িতো মাঝে মাঝে তার মায়ের প্রতি বাবার আচরণ দেখে রীতিমতো অবাক হয়। সিঁড়ির বাবা স্ত্রীর সম্মানতো দূরে থাক, তাকে পরিবারের সদস্য বলেই মনে করেন বলে মনে হয় না। বরং তার প্রতি ভদ্রলোকের আচরণ যেনো সংসারের রক্ষিতার মতো। তার সৎমায়ের কথা ভাবতে গিয়ে সিঁড়ি নিজেকে বড় অসহায় ভাবে সংসারে। এ ভাবনা থেকে তার মধ্যে এক প্রকার ভীতিও কাজ করে। এই কর্তৃত্বপরায়ণ বাবার কর্তৃত্বে কি কখনও তার লালিত স্বপ্নকে কবর দিতে হবে! সে জানে সোপান প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভালো কিছু করার জন্য। হয়তো অচিরেই ভালো কিছু হয়েও যাবে। তাই সে তার বাবার চিন্তা ধারার কথা ততোটা গুরুত্বের সাথে সোপানকে জানায়নি। সে ভাবতো আজ বাদে কাল সোপানের ভালো কিছু হবে। তখন একেবারে তাকে সাথে নিয়েই বাবার মুখোমুখি হবে সে। এখন সোপনের চাকরি বাকরি কিছু নেই, কোন মুখে সে তাকে নিয়ে বাবার সামনে দাঁড়াবে। বাবা কোনো প্রশ্ন করলে পাল্টা সদুত্তর দেবার মতো অবস্থাও এখন হয়নি। দু একদিন সোপানের সাথে বিষয়টা নিয়ে যে আলোচনা হয়নি, তাও নয়। সোপান বলেছিলো, তুমি যা ভালো মনে কর, তাই হবে। তোমার জন্যই আজ আমি পৃথিবীর আলো দেখতে পাই। তোমার কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমি সব করতে রাজি। শুধু এমন কিছু করতে বলোনা যাতে আমার ব্যক্তিত্ব ও আত্মসম্মান বিসর্জন দিতে হয়। সিঁড়ি ভাবতো পৃথিবীতে বাবা-মার কাছে আর্থিক নিরাপত্তার তাদের কন্যার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই এই মুহূর্তে তার বাবাও কোনোভাবেই সোপানকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবে না।

২০০৭ সালের ১৬ নভেম্বর। আগেরদিন প্রলয়ঙ্করী সিডরের আঘাতে তছনছ দেশের উপকূলীয় অঞ্চল। শুধু উপকূলীয় এলাকাই নয়। সারা দেশই কমবেশি আক্রান্ত সে আঘাতে। আজ দুদনি ধরে সারা ঢাকা শহর বিদ্যুৎহীন, রান্না-বান্না নেই, খাবার নেই, পানি নেই, গোসল নেই, বাথরুম টয়লেটে গিয়ে শান্তি নেই। টিভি নেই, খবরের কাগজ নেই। এমনকি ভালোভাবে পাওয়া যাচ্ছেনা মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও। এই নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, এই নেই। মনে হয় সমগ্র দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এক শহর ঢাকা। দোকানগুলোতে মিনারেল ওয়াটার পর্যন্তও পাওয়া যাচ্ছেনা। এ যেনো অনেকটা মরুভূমির দেশের মতো। এ রকম পরিস্থিতিতে কারো মেজাজ ভালো থাকতে পারে না। সোপানের মেজাজও ভালো ছিলোনা। কিন্তু তার সে পুরোনো রেডিওতে আজ বিকেল পাঁচটার খবর শোনার পর সোপানের মনটা অনেক ভালো। ইচ্ছে করছে লাফ দিয়ে সে যেনো আকাশটা ছুঁয়ে ফেলে। কৈশোরের অনুভূতির মতো অনুভূতিগুলো কাজ করলে নিশ্চয়ই সে আজ আনন্দে লাফাতো। খবর শুনেই সে বেরিয়ে যেনো কোথায় গিয়েছিলো। কাউকে বলেনি। রাত আটটার আগে আগে কয়েক কার্টন মিষ্টি নিয়ে ফিরেছে। মেসের সবাইকে মিষ্টি খাইয়েছে। মা-বাবা বেঁচে থাকলে মিষ্টিটা নিশ্চয়ই মা-বাবার মুখেই আগে দিতো। কিন্তু কারণটা সে কাউকেই বলেনি। এমনকি সিঁড়িকেও বলেনি। সিঁড়িকে সে মোবাইলে শুধু এটুকুই বলেছে যে, বিশেষ একটা আনন্দের খবর আছে। আগামিকাল সে এসে মিষ্টি খাওয়ার পরই তার সামনা সামনি সবাইকে সে জানাবে আনন্দ-সংবাদটা।
পরদিন সিঁড়ির আসার কথা ছিলো পূর্বাহ্ণে। সকাল গড়িয়ে দুপুর পেরুলো। সে এলোনা। মোবাইল বন্ধ। সোপান ভাবলো হয়তো দ্যিুৎ ছিলোনা বলে চার্জ নেই মোবাইল বন্ধ হয়ে গেছে। অথবা নেটওয়ার্কের সমস্যার জন্য হয়তো পাওয়া যাচ্ছেনা। বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা। সন্ধ্যার পর আর থাকতে পারলো না সোপান। বুকভরা শঙ্কা আর চাকরি হওয়ার সুখ বুকে নিয়ে সে সিঁড়িদের মহল্লায় পা রাখলো। কিন্তু ততক্ষণে বড্ড দেরি হয়ে গেছে। সিঁড়িদের বাড়ির মোড়টা পেরুতেই তাদের বাড়ির আলোকসজ্জা করা অবয়ব চোখে পড়লো। তার বুকের মধ্যে ধক করে একটা ধাক্কা লাগলো। কয়েক পা সামনে এগুতেই বর আর কনেকে নিয়ে বিয়ের গাড়ি সোপানকে অতিক্রম করলো। আলো ঝলমলে গাড়ির গ্লাসের ফাঁকে সে দেখলো কনের চোখের অশ্রুধারা। কনের নাম সিঁড়ি।
এরপর, আজকের আগে সিঁড়ির সাথে তার আর মুখোমুখি দেখা হয়নি। খাওয়ানো হয়নি তাকে মিষ্টিও। যে-সুখবরের জন্য সে মিষ্টান্নের আয়োজন করেছিলো, তার আর সে চাকরিতে যোগদানও করেননি। বাকিটা পথ তিনি আমাকে তার জীবনের এ গল্প শুনিয়ে এসেছেন। নান্দিনা স্টেশানে তিনি বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। এতক্ষণে মনে পড়লো যে তার ঠিকানা কিংবা মোবাইল নাম্বার কোনোটাই নেওয়া হয়নি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৪৫

নামহীন মুসাফির বলেছেন: ভাগ্যের পরিহাস বলেও একটা কথা থাকে। কার ভাগ্যে কী আছে, কে জানে? আপনার লেখা অনেক ভালেো লেগেছে।

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৩৮

টুটুল বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন- শুভকামনা রইলো নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.