নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মো: আওয়াল হোসেন টুটুল

টুটুল

সৎকাজে ১০০% বিশ্বাসী।

টুটুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

জঙ্গীবাদ- পরাণের গহীন ভিতর

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৩

মৌলবাদ আমাদের অস্থি-মজ্জায় বদ্ধমূল হয়ে গেঁথে গেছে। আমরা অনেকেই নিজেদেরকে ভদ্র, সুশীল, প্রগতিশীল, আধুনিক, ধর্মরিপেক্ষ, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তচিন্তা কিংবা মুক্তমনা বলে দাবি করি। আমরা যে আসলে অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনায় বিশ্বাসী, এ কথা প্রমাণ করার জন্য ‘চা খানা আর মাঠে ময়দানে’ অসাম্প্রদায়িক কথাবার্তার তুবড়ি ছুটাই। কথা বলতে বলতে আমাদের সম্মুখে-বসে-থাকা সুধীজনের মুখমণ্ডল আর গায়ের জামা ভিজে যায় আমাদের মুখ থেকে ছিটে যাওয়া থুথুতে।
আমার প্রশ্ন হলো- এই যে মৌলবাদ-বিরোধী এতো আলোচনা-সমালোচনা, টক শো-মিষ্ট শো, প্রচার-প্রচারণা যারাই চালাই, চালাচ্ছি, তারা কি প্রকৃতটপক্ষেই মৌলবাদের বিপক্ষে কায়মনবাক্যে সোচ্চার? নিশ্চই না। আমি, তুমি, আমরা সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মৌলবাদের কাছে মাথা নত করছি।
বর্তমান বাংলাদেশে আওয়ামী-শাসিত সরকারকে মনে করা হয় (এবং সরকারের কর্তাব্যক্তিগণ মুখে বুলিও আওড়ান) মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ বিরোধী। এ কথা যারা বিশ্বাস করবেন, তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। সরকার কোনো মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে নয়; বরং আর অন্য আট দশটা রাজনৈতিক দলের মতো ধর্মকে পুঁজি করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চায়। এ কথা ঠিক, যে-দেশে শতকরা ৮০ ভাগের বেশি জনগণ ধর্মান্ধ (ধর্ম-বিশ্বাসী নয়), সে-দেশে সরকারে টিকে থাকার কৌশল হিসেবে এর চেয়ে মোক্ষম অস্ত্র কী-ই বা হতে পারে! তবে এটা যদি শুধু সরকারে টিকে থাকার কৌশল হতো, তবে ভয়ের তেমন কিছু ছিলো না। কিন্তু সরকারের কর্তাব্যক্তিদের আচরণ ও নীতিনির্ধারন দেখে স্পষ্টতই বোঝা যায়, তারা মৌলবাদি গোষ্ঠীর কাছে কতোটা হীনবল। মৌলবাদিরা সরকারের নীতিনির্ধারকদের ‘পরাণের গহীন ভিতর’ ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
বিপরীত চিন্তার লোকজন বলতে পারেন, এ কথা সত্য নয়; সরকার মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের বরুদ্ধে। কিন্তু ‘শুধু কথায় চিড়ে ভেজে না’, বাবা। ইংরেজিতে একটা কথা আছে- smart is, what smart does অর্থাৎ নান্দনিক কাজকর্মই হচ্ছে নন্দন। সচেতন জনগণ ও বুদ্ধিজীবী মহল সরকারকে বিবেচনা করে থাকে, তাদরে কাজকর্ম দিয়ে; কথা দিয়ে নয়। ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলন সরকারের মধ্যে এমন এক ভীতির সঞ্চার করেছে, যা সরকারের নীতিনির্ধারকেরা মুখে স্বীকার না করলেও, কাজে কর্মে তাদের হুকুম-আহকাম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন।
হেফাজতের তেরো দফা রক্ষার্থে সরকার প্রথম পদক্ষেপেই প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কারের নামে হেফাজতি-সিলেবাস কায়েম করেছে। পাঠ্যপুস্তক থেকে সরিয়ে দিয়েছে অমুসলিম একাধিক লেখকের লেখা। প্রথিতযথা শিক্ষাবিদ, বৃদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজ ও সমাজের সচেতন মহলের প্রবল-প্রতিবাদের মুখেও সরকার তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। যুদ্ধক্ষেত্রে হেফাজত প্রত্যক্ষ জয় লাভ করতে পারেনি। কিন্তু পরোক্ষভাবে চুড়ান্ত বিজয়টা আসলে তাদেরই হয়েছে। এ পর্যন্তই থেমে যায়নি সরকার-হেফাজত-প্রেম কাহিনী। হেফাজত-প্রীতির নিদর্শনস্বরূপ সরকার সম্পূর্ণ আদিম, অবৈজ্ঞানিক, যুগের অনুপযোগী-শিক্ষা ব্যবস্থা, ক্বওমী মাদ্রাসার শিক্ষাকে সম্মান (Honour’s) মর্যাদা দিয়েছে। একটা ক্বওমী মাদ্রাসায় কী পড়ানো হয় আর কী শেখানো হয়, সচেতন মহলের সবাই জানেন। এর চেয়ে আর কতোটুকু নিচে নামলে মানতে হবে যে, বর্তমান সরকারও মৌলবাদ-জঙ্গীবাদের সমর্থক?
যাক, শাসকেরা নিজ স্বার্থে অর্থাৎ ক্ষমতা ধরে রাখার স্বার্থে কালেভদ্রে চাকরের পা চাটতেও নাকি দ্বিধা করে না। নির্বাচন সামনে। এ চিত্রও আমরা হামেশাই দেখতে পাবো। মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ যদি শুধু সরকারের মধ্যে শেকড় গেঁড়ে বসতো, তাতেও ভীতির এমন কিছু ছিলো না। মৌলবাদের শেকড় এখন আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা থেকে শুরু করে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, উঁচু-নীচু, বুদ্ধিজীবী কিংবা খেটে খাওয়া মানুষ সবার মাঝেই শেকড় গেড়ে বসেছে।
আমার গ্রাম, যেখানে অনেক শিক্ষিত লোকের বাস, আছেন কবি, সাহিত্যিক, উচ্চ পদস্থ সরকারী-বেসরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী। এলাকার চেয়ারম্যান ও সমমনা অন্য কয়েকজন মিলে বৃহৎ একটা অখণ্ড, একক সমাজকে ভেঙ্গে তিন টুকরো করেছেন- শুধু মসজিদভিত্তিক রাজনীতিকে কেন্দ্র করেই। নতুন মসজিদগুলোতে কোনো উৎসব-পার্বনে গ্রামে বেশি লোক সমাগম হলেই মাইক লাগিয়ে ভিক্ষের আসর জমে। চলে ভোর থেকে গভীর রাত অব্দি। এ ভিক্ষা চলোকালে আশপাশের মানুষের ঘুম হারাম, শান্তি-স্বস্তি সব হারারাম। শিক্ষিত, মার্জিত-রুচিসম্পন্ন, প্রগতিশীল, মুক্তচিন্তার অনেকেই আছেন, যাঁরা চান না এভাবে মসজিদকে কেন্দ্র করে ভিক্ষাবৃত্তি চলুক। অথচ মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ আমাদের এই তৃণমুলের আত্মার ভেতরেও কতটুকু ভয়ের সঞ্চার করেছে দেখুন, গ্রামের একজন মানুষও প্রকাশ্য এর প্রতিবাদ করার সাহস করেন না।
আমার পরিচিত একজন কবি আছেন, যিনি নিজেকে জঙ্গীবাদের ঘোরতর বিরোধী বলে প্রচার করে থাকেন। স্থানীয় একটা সাপ্তাহিকে তিনি লেখালেখিও করে থাকেন। হয়তো তিনি আমার বাবার বয়সের কাছাকাছি হবেন। একদিন আমার এক সিনিয়র-সহকর্মীর রেফারেন্সে তার কাছে কয়েকটি কবিতার কপি পাঠালাম। তারও কয়েকদিন পর, তাকে মোবাইল করে যে-প্রক্রিয়া পেলাম, তার সারসংক্ষেপ এ রকমঃ-
‘দেখুন, আপনার লেখা আমি পড়েছি। আপনার লেখার হাত ভালো। ভাষার ব্যবহার, উপমা-উৎপ্রেক্ষা, ভাষার গতিময়তা সবই ঠিক আছে। কিন্তু আপনার দু একটি লাইন নিয়ে আমার আপত্তি আছে’। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘কী রকম’? উত্তরে উনি ভাইয়াকে নিয়ে লেখা একটা কবিতার রেশ টেনে বললেন, ‘আপনি আপনার বাইয়াকে যতোটা ওপরে উঠিয়েছেন, সেটাতো শির্‌কের পর্যায়ে পড়ে’। আমি অনেকটাই হতভম্ব মতো হয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম। উনি আমাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ‘দেখুন, আপনার চিন্তাধারার সাথে তো আর আট দশটা মানুষের চিন্তাধারা মিলবে না। আপনি হয়তো লিখেছেন, আপনার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, অন্য অর্থে, কিন্তু মৌলবাদীরাতো আর কবিতা বোঝেনা’।
বলার ছিলো অনেক কিছুই, একবার বলতে ইচ্ছেও করলো ‘আর আট দশটা মানুষের সাথে আপনার তুলনা কেনো করছেন? তাহলে আর আট দশটা মানুষের সাথে আপনার তফাৎটা কোথায়’? তবু বললাম না। শুধু ভাবলাম- আমরা তো সবাই মজিদ আর হুজুর কেবলা’র দেশের মানুষ!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: এলোমেলো ভাবে কী বোঝাতে চাইলেন? লেখা পড়ে মনে হচ্ছে বাংলাদেশে ইসলামিক শরীয়াহ আইন জারি হয়েছে...

২| ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৩

রাজীব নুর বলেছেন:
জীবনে কখনো হারামি মানুষের সাথে মিশি নাই। এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি। সে ভুলের মাশুলও দিচ্ছি। উদ্ধারের উপায় কি?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.