নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

মক্কা বিজয়ের আংশিক ইতিহাস ।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৫


নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ৬৩০সালে রক্তপাতহীনভাবে মক্কা নগরী দখল করেন । ইতিহাসে এই ঘটনা মক্কা বিজয় নামে খ্যাত হয়ে আছে এবং থাকবে । ঐতিহাসিকদের মতে মক্কা বিজয় ইসলামের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় যদিও তবে আল কুরআনে হুদাইবিয়ার সন্ধিকেই প্রকাশ্য বিজয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে । মূলত প্রকৃতপক্ষে হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং মক্কা বিজয় দুটিই মুহাম্মদের অতুলনীয় দূরদর্শীতার ফল । হুদাইবিয়ার সন্ধির মাধ্যমে যে বিজয়ের সূত্রপাত হয়েছে তার চূড়ান্ত রূপই চিল মক্কা বিজয়। এই বিজয়ের ফলে মুসলমানদের পক্ষে আরবের অন্যান্য এলাকা বিজয় করা সহজ হয়ে যায় । হুদাইবিয়ার সন্ধি মোতাবেক সন্ধির পরবর্তী বছর মুহাম্মদ ২০০০ জন সাহাবা নিয়ে মক্কায় উমরাতুল ক্বাযা পালন করতে আসেন এবং সে সময়ই তিনি মক্কার কুরাইশদের মধ্যে নেতৃত্বের শুন্যতা লক্ষ্য করেন । তাদের ক্ষাত্রশক্তির সঠিক পরিমাপ করতে পেরেছিলেন তিনি । এবং এরজন্যই তিনি অপেক্ষায় ছিলেন মক্কা বিজয়ের জন্য। এর এক বছরের মাথায়ই তিনি সেটাকে সম্পন্ন করার জন্য মনস্থির করে ফেলেন ।

হুদাইবিয়ার সন্ধির অল্প কিছুদিন পরেই ইসলাম ব্যাপক ভাবে প্রসারিত হতে শুরু করে যা কুরাইশদের শঙ্কিত করে তোলেন । তারা দেখতে পায় এভাবে চলতে থাকলে মক্কায় তার দক্ষিণাঞ্চরের গোত্রগুলো অচিরেই ইসলাম গ্রহণ করবেন । তাই তারা তায়েফের সাকীফ গোত্র এবং হুনায়নের হাওয়াজিন গোত্রদ্বয়ের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে মদীনা আক্রমণের পরিকল্পনা করেন । কিন্তু ১০ বছরের এই চুক্তির কারণে তারা আক্রমণ করতে পারছিলেন না । তাই তারা প্রথমে চুক্তি বাতিলের ষড়যন্ত্র শুরু করেন । সন্ধির চুক্তিমতে বনু বকর গোত্র কুরাইশদের সাথে এবং বনু খুযাআ গোত্র মদীনার ইসলামী সরকারের সাথে মৈত্রীসূত্রে আবদ্ধ হন । এই দুটি গোত্রের মধ্যে অনেক আগে থেকেই শত্রুতা চলছিল । এর কারণ অনেকটা এরকম ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বে বনু হাদরামি গোত্রের জনৈক এক ব্যক্তি বসবাসের উদ্দেশ্যে খুযাআ গোত্রের এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় খুযাআ গোত্রের লোকেরা তাকে হত্যা করেন । এবং এরপর বনু বকরের লোকেরা খুযাআ গোত্রের এক ব্যক্তিকে হত্যা করেন । এর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য আবার খুযাআ গোত্রের লোকেরা বনুবকরের একাংশ বনু দায়েলের সরদার আসওয়াদের তিন সন্তান সালমা ও কুলসুম এবং যুবাইরকে হারাম শরীফের সীমানার কাছে হত্যা করেন । তখন থেকেই বনু দায়েল তথা সমগ্র বনু বকরের সাথে বানু খুযাআর বিরোধ চলে আসছিলো যা ইসলামের আবির্ভাবের ফলে অনেকটা থেমে যায় । কিন্তু হুদাইবিয়ার সন্ধির পর আবার বনু বকর সুযোগ খুঁজেন । এরই জের ধরে একদিন বুন দায়েল পরিবারের প্রধান নাওফেল ইবনে মুয়াবিয়া বনু খুযাআ গোত্রের মুনাব্বিহ নামক এক ব্যক্তিকে ওয়াতির নামক জলাশয়ের নিকট ঘুমন্ত অবস্থায় হত্যা করেন । এবং এতে পূর্ব শত্রুতা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে যার কারনে দুই গোত্রেরের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয় ।

কুরাইশরা সন্ধি বাতিলের জন্য একে একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন । তারা ভেবেছিলো বিস্তারিত তথ্য মুহাম্মদের কাছে পৌছাবেনা । তাই তারা রাতের অন্ধকারে বনু বকরের পক্ষে যুদ্ধেও অবতীর্ণ হয় । খুযাআ গোত্রের উপর রাতের অন্ধকারে নিরস্ত্র অবস্থায় আক্রমণ করা হয় এবং নিরুপায় হয়ে তারা হারাম শরীফে আশ্রয় গ্রহণ করেন । খুযাআর লোকেরা বলে যে তারা হারাম শরীফে প্রবেশ করেছে যেখানে রক্তপাত নিষিদ্ধ । কিন্তু নাওফেল সবকিছু অমান্য করেন কুরাইশ এবং বনু বকরকে নিয়ে হারাম শরীফের অভ্যন্তরে ঝাপিয়ে পড়েন । সে সময় খুযাআ গোত্রের প্রচুর লোককে হত্যা করেন । তা ছিল হুদায়বিয়ার একটি চুক্তির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ।
এই ঘটনার পর খুযাআ গোত্রের আমর ইবনে সালিম এবং বনু কাব গোত্রের এক ব্যক্তিসহ মোট ৪০ জন উষ্ট্রারোহীকে নিয়ে মুহাম্মদের কাছে এসে সব ঘটনা বিবৃত করে এবং তার সাহায্যের জন্য আবেদন করেন । মুহাম্মদ তাদেরকে সাহায্য করা হবে বলে আশ্বাস দেন এবং তখনই মক্কা বিজয়ের ব্যাপরে মনস্থির করেন । খুযাআর লোকেরা তখন মক্কায় ফিরে যান । এর পরপরই মুহাম্মদ এই হত্যাকান্ডের কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে এবং তিনটি শর্তারোপ করেন কুরাইশদের কাছে একজন দূত প্রেরণ পাঠান । কথা ছিলো এই শর্তত্রয়ের যেকোন একটি মেনে নিতে হবে তাদের । শর্তত্রয় ছিল খুযাআ গোত্রের নিহতদের রক্তপণ শোধ করতে হবে । অথবা
কুরাইশদের কর্তৃক বনু বকরের সাথে তাদের মৈত্রীচুক্তি বাতিল ঘোষণা করতে হবে ।বা এই ঘোষণা দিতে হবে যে হুদাইবিয়ার সন্ধি বাতিল করা হয়েছে এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত । কুরাইশদের পক্ষ হতে কারতা বিন উমর তৃতীয় শর্তটি গ্রহণ করেন । পরবর্তীকালে তারা অবশ্য এর জন্য অনুতপ্ত হয়েছিল । যাইহোক এভাবেই ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধি রদ হয়ে যায় ।
প্রকৃতপক্ষে সন্ধিচুক্তি অগ্রাহ্য করে বনু বকরকে সহযোগিতা করাটা ছিল প্রচন্ড অন্যায় এবং চুক্তি বাতিলের সিদ্ধান্তটিও যে তদরুপ অন্যায় এবং নির্বুদ্ধিতার পরিচায় দিয়েছে তা কুরাইশ নেতারা অচিরেই বুঝতে পারেন । তাই তারা চুক্তি নবায়নের জন্য শীঘ্রই তাদের অন্যতম নেতা আবু সুফিয়ানকে মদীনায় প্রেরণ করেন । আবু সুফিয়ান কাজটি সহজে আদায় করে নেয়ার লক্ষ্যে প্রথমেই তার কণ্যা উম্মে হাবীবার গৃহে যান । উল্লেখ্য আছে উম্মে হাবীবা ছিল মুহাম্মদের স্ত্রীদের একজন । কিন্তু হাবীবার গৃহে যেয়ে আবু সুফিয়ান কোন সুবিধা করতে পারেননি । এমনকি উম্মে হাবীবা তাকে বসতেও দেননি । কারণ হিসেবে উম্মে হাবীবা বলে যে তার গৃহের বিছানাটি আল্লাহর রাসূলের । পিতা হিসেবে আবু সুফিয়ান শ্রদ্ধেয় হলেও মুহাম্মদের বিছানায় একজন নাপাক মুশরিক বসুক তা সে চাননা । আবু সুফিয়ান এতে মনক্ষুণ্ণ হয়ে বেরিয়ে আছেন । মুহাম্মদের কাছে সে সন্ধি নবায়নের প্রস্তাব পেশ করলে মুহাম্মদ কোন উত্তর দিলেন না । তারপর আবু সুফিয়ান একে একে আবু বকর ও উমর এবং সবশেষে মুহাম্মদ আলীর কাছে যান । আবু বকর এবং উমর তাদের অপারগতার কথা প্রকাশ করেন আর মুহাম্মদ আলী তামাশা করে বলেন যে আবু সুফিয়ান যেন কারো উত্তরের অপেক্ষা না করে মদীনার মসজীদে নববীতে তার প্রস্তাবের কথা ঘোষণা করে চলে যায় । উপায়ন্তর না দেখে আবু সুফিয়ান তা ই করেন এবং মক্কায় ফিরে যায় । সন্ধি নবায়নের সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয় । আর এদিকে মুহাম্মদ মক্কা বিজয়ের জন্য অতি গোপনে প্রস্তুতি নেন । মক্কা অভিযানের পূর্বে মূতার যুদ্ধে যাবার প্রস্তুতির কথা প্রকাশিত হয়ে পড়ায় অনেক ক্ষতি হয়ে যায় । তাই মুহাম্মদ মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি সর্বোচ্চ গোপনীয়তার মাধ্যমে শুরু করেন । তিনি কাউকে বলেননি কোথায় অভিযানে বের হচ্ছেন । এমনকি তার ঘনিষ্ঠ সহচর আবু বকর অথবা তার যে স্ত্রী আছেন তাদেরকেও তিনি কিছু বলেননি । তবে একটি উপায়ে তা প্রায় প্রকাশিত হয়ে পড়েছিল । হাতিব ইবনে আবী বালতা নামক একজন সাহাবী যিনি বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তিনি অনুমান করেন যে নবী মক্কা অভিমুখে যাবেন । তিনি অনুমানভিত্তিক এই সংবাদ একটি পত্রের মাধ্যমে কুরাইশদের জানানোর উদ্যোগ নেন এবং একজন মহিলার মাধ্যমে তা মক্কা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । কিন্তু ওই মহিলা মক্কা পৌছানোর পূর্বেই নবী এই সংবাদ জেনে যান এবং তিনজন সাহাবীকে সেই পত্রটি উদ্ধারের জন্য পাঠান । এই তিনজন হলেন মুহাম্মদ আলী ও যুবায়ের এবং মিকদাদ । তারা মক্কা অভিমুখে রওযায়ে খাখ নামক স্থানে উক্ত মহিলার সন্ধান পেয়েযান । প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে তাদের হুমকির মুখে সে চিঠিটি দিয়ে দেন । এটি মদীনায় আনার পর জানা যায় যে তা হাতিবের লিখা । প্রকৃতপক্ষে হাতিব ইসলামের প্রতি বিদ্বেষের বশে নয় বরং নির্বুদ্ধিতার কারণে কেবল কুরাইশদের সহানুভূতি আদায়ের জন্য এই পত্র লিখেছিলেন । তাই তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল ।

সম্পূর্ণ ভাবে গোপনে মক্কা অভিযান শুরু করা হল । বনু সুলাইম ও বনু আশজা এবং বনু মুযায়না ও বনু গিফার এবং বনু আসলাম গোত্রের অনেকেই প্রস্তুতি নিয়ে মদীনা থেকে মুহাম্মদের সাথে বের হন । এই দলের সাথে খালীদ বিন ওয়ালিদও ছিলেন । আবার অনেকেই পথেরমধ্যে মিলিত হন । এভাবে মুসলমানদের মোট সৈন্যসংখ্যা হয়েছিল ১০০০০ জন । মুসলিম বাহিনী ৮ম হিজরী সালের ১০ রমযান তারিখে মদীনা থেকে মক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন । তখন মুসলমানদের সবাই রোযা রেখেছিল এবং কাদীদ নামক স্থানে কুদাইদ এবং উসফান নামক এলাকার মধ্যবর্তী একটি ঝর্ণার নিকট আসার পর তারা রোযা ভঙ্গ করেন । এরপর ঐ রমযানে আর কেউ রোযা রাখেনি । ১২ দিন চলার পর মুসলিম বাহিনী মার উজ জাহরান নামক গিরি উপত্যকায় পৌছেন । এখানেই এশার নামায আদায়ের পর মুসলিম বাহিনী শিবির স্থাপন করেন । পরে দশ হাজার মুসলিম নিয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মক্কার দিকে রওয়ানা হলেন । রাসূল (সাঃ) মক্কার নিকটে এসে ছাউনী ফেলেন । মুসলিম সেনাদের শক্তি সামর্থ আন্দাজ করার জন্য কুরাইশ সরদার আবু সুফইয়ান গোপনে গোপনে সেই ছাউনীর কাছে আসেন । মুসলিম প্রহরীগণ তাকে গ্রেফতার করেন এবং রাসূলের সামনে নিয়ে যান । ইসলামের দুশমনের মধ্যে আবু সুফইয়ান ছিলেন প্রথম কাতারের একজন । তিনি রাসূল (সাঃ) কে গোপনে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করে ছিলেন একাধিকবার । ইসলামের সেই বড়ো দুশমন আজ রাসূলের হাতের মুঠোয় । চারদিকে নাঙ্গা তলোয়ার । রাসূলের (সাঃ) নির্দেশ পাওয়ার অপেক্ষায় মুসলিমরা উন্মুখ । আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাকে ক্ষমা করে দিলেন । মুক্ত করে দেবার নির্দেশ দেন প্রহরীকে । আবু সুফইয়ান এই সব বিশ্বাস করতে পারছিলেন না । যখন বন্ধন খুলে দেয়া হলো তখন তার অন্তর কেদে উঠলো । এতো দিনের অন্যায় কাজ গুলোর স্মৃতি তার হৃদয়ে তীরের মতো বিধতে লাগলো । অনুশোচনায় ভরে উঠলো তার মন । মুক্তি পেয়েও আবু সুফইয়ান মক্কায় ফিরলেন না । তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন । রাসূলের পাশে থেকে বাকী জীবন ইসলামের সৈনিকরূপে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিলেন ।

এবার শহরে প্রবেশে করলেন । পেছন দিক থেকে একদল যোদ্ধা প্রবেশ করবে । এই দলের সেনাপতি করা হলো খালিদ ইবনু ওয়ালিদ (রাঃ) কে সামনের দিক থেকে প্রবেশ করবে আরেক দল । এই দলের পরিচালায় থাকলেন রাসূল (সাঃ) নিজেই । খালিদের (রাঃ) বাহিনীর সাথে ছোট্ট একটি সংঘর্ষ হয় । একদল মুশরিক তীর ছুড়ে তিন জন মুসলিমকে শহীদ করেন । পাল্টা আক্রমণ ১৩ জন প্রাণ হারায় । বাকীরা পালিয়ে যায় । রাসূলের (সাঃ) পরিচালিত বাহিনীর সামনে আসেননি কেউ । বিনা বাধায় মুসলিম বাহিনী শহরে প্রবেশ করেন । মক্কায় প্রবেশ করেই আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মক্কা বিজয়ের ঘোষণা দেন । এবং নবী রাসুল আরো বলেনঃ যারা আপন ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকবে তারা নিরাপদ । যারা আবু সুফইয়ানের ঘর প্রবেশ করবে তারও নিরাপদ । যারা কাবা গৃহে আশ্রয় নেবে তারাও নিরাপদ ।

ছবি তথ্যসূত্র ইন্টারনেট

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩০

আজমান আন্দালিব বলেছেন: সুবহানাল্লাহ। বেশ ভালো লাগলো মক্কা বিজয়ের ইতিহাস জেনে।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৪

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আপনাদের ভালো লাগায় পোস্ট দিতে মনযোগ জাগে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.