নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট সোনা মসজিদ এর পরিচিতি

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৭

ছোট সোনা মসজিদ বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকন্ঠে ফিরোজপুর গ্রামে এ স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিলো, যা বর্তমান বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অধীনে পড়েছে। সুলতান আলা-উদ-দীন শাহ এর শাসনামলে যতদূর সম্ভব ১৪৯৩ সাল থেকে ১৫১৯ সালের ভিতরে ওয়ালী মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি এই মসজিদটি নির্মাণ কাজ করেছিলেন। মসজিদের মাঝের দরজার উপর প্রাপ্ত এক শিলালিপি থেকেই এ ধরনের তথ্য জানা যায়। তবে লিপির তারিখের অংশটুকু ভেঙ্গে যাওয়ায় নির্মাণকালের সঠিক তথ্য জানা যায়নি। এটি কোতোয়ালী দরজা থেকে মাত্র ৩ কি.মি. দক্ষিণে। মসজিদটি মুসলিম স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন। এটি হোসেন শাহ স্থাপত্য রীতিতেই তৈরী।এই মসজিদটিকে বলা হতো গৌড়ের রত্ন।এর বাইরের দিকে সোনালী রঙ এর আস্তরণ ছিলো । সূর্যের আলো পড়লে এ রঙ সোনার মত ঝলমল করত। প্রাচীন গৌড়ে আরেকটি মসজিদ ছিলো যা বড় সোনা মসজিদ নামে পরিচিত। এটি তৈরি করেছিলেন সুলতান নুসরত শাহ। সেটি ছিলো আরও বড়। তাই স্থানীয় লোকজন এটিকে ছোট সোনা মসজিদ বলে অবহিত করতো আর গৌড় নগরীর মসজিদটিকে বলতো বড় সোনা মসজিদ।মসজিদটি উত্তর দক্ষিণে ৮২ ফুট লম্বা এবং পূর্ব পশ্চিমে ৫২.৫ ফুট চওড়া। উচ্চতা ২০ ফুট। এর দেওয়ালগুলো প্রায় ৬ ফুট পুরু। দেওয়ালগুলো ইটের কিন্তু মসজিদের ভেতরে এবং বাইরে এরা পাথর দিয়ে ঢাকা। তবে ভেতরের দেওয়ালে যেখানে খিলানের কাজ শুরু হয়েছে সেখানে পাথরের কাজ শেষ হয়েছে। মসজিদের খিলান ও গম্বুজ গুলো ইটের তৈরী।
মসজিদের চারকোণে চারটি বুরুজ আছে। ওগুলোর ভূমি নকশা অষ্টকোণাকার। বুরুজগুলোতে ধাপে ধাপে বলয়ের কাজ আছে। বুরুজগুলোর উচ্চতা ছাদের কার্নিশ পর্যন্ত।
মসজিদের পূব দেওয়ালে পাঁচটি খিলানযুক্ত দরজা আছে। খিলান গুলো বহুভাগে বিভক্ত । ওগুলো অলংকরণে সমৃদ্ধ। উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালে আছে তিনটি করে দরজা। তবে উত্তর দেওয়ালের সর্ব পশ্চিমের দরজাটির জায়গায় রয়েছে সিঁড়ি। এই সিঁড়িটি উঠে গেছে মসজিদের অভ্যন্তরে উত্তর পশ্চিম দিকে দোতলায় অবস্থিত একটি বিশেষ কামরায়। কামরাটি পাথরের স্তম্ভের উপর অবস্থিত। মসজিদের গঠন অনুসারে ওটিকে জেনানা মহল বলেই ধারণা করা হয়। তবে অনেকের মতে ওটি জেনানা মহল ছিলো না । ওটি ছিলো সুলতান অথবা শাসনকর্তার নিরাপদে নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা করে তৈরি একটি কক্ষ অর্থাৎ বাদশাহ্ কা তাখত্।
মসজিদটির অন্তর্ভাগঃ
মসজিদটির অভ্যন্তরভাগ কালো ব্যাসাল্টের ৮টি স্তম্ভ দ্বারা উত্তর দক্ষিণে তিনটি আইল ও পূর্ব পশ্চিমে পাঁচটি সারিতে বিভক্ত। ওই পাঁচটি সারির মাঝের সারিটি ১৪'৫" চওড়া আর বাকি সারিগুলো ১১'৪" চওড়া। পূব দেওয়ালের পাঁচটি দরজা বরাবর মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে পাঁচটি মিহরাব। এদের মধ্যে মাঝেরটি আকারে বড়। প্রতিটির নকশাই অর্ধ বৃত্তাকার। মিহরাবগুলোতে পাথরের উপর অলংকরণ রয়েছে। সর্ব উত্তরের মিহরাবটির উপরে দোতলার কামরাটিতেও একটি মিহরাব রয়েছে।
মসজিদের অভ্যন্তরের ৮টি স্তম্ভ ও চারপাশের দেওয়ালের উপর তৈরি হয়েছে মসজিদের ১৫টি গম্বুজ। মাঝের মিহরাব এবং পূর্ব দেওয়ালের মাঝের দরজার মধ্যবর্তী অংশে ছাদের ওপর যে গম্বুজগুলো রয়েছে সেগুলো বাংলা চৌচালা গম্বুজ। এদের দুপাশে দুসারিতে তিনটি করে মোট ১২টি গম্বুজ রয়েছে। ওগুলো অর্ধ বৃত্তাকার গম্বুজ। এই মসজিদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বাইরের যে কোনো পাশ থেকে তাকালে কেবল পাঁচটি গম্বুজ দেখা যায় । পেছনের গম্বুজগুলো দৃষ্টিগোচর হয় না।
মসজিদটির অলংকরণঃ
পুরো মসজিদের অলংকরণে মূলত পাথর ইট ও টেরাকোটা এবং টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। এদের মাঝে পাথর খোদাই এর কাজ করা বেশি। মসজিদের সম্মুখভাগ বুরুজসমূহ দরজা ইত্যাদি অংশে পাথরের উপর অত্যন্ত মিহি কাজ রয়েছে । যেখানে লতাপাতা ও গোলাপ ফুল এবং ঝুলন্ত শিকল ও ঘণ্টা ইত্যাদি খোদাই করা আছে। ফ্যাসাদ গুলোতে দুই সারিতে প্যানেলের কাজ রয়েছে নিচেরগুলো ওপরের প্যানেলগুলোর চাইতে আকারে বড়। দরজাগুলোর মাঝের অংশে সে প্যানেলগুলো অবস্থিত। দরজাগুলো অলংকরণযুক্ত চতুষ্কোণ ফ্রেমে আবদ্ধ। খিলানগুলো পাথর খোদাই এর অলংকরণযুক্ত। দুটি খিলানের মধ্যভাগেও পাথরের অলংকরণ রয়েছে। মাঝের দরজাটির উপরে একটি শিলালিপি পাওয়া যায়। ক্রেইটন এবং কানিংহামের বর্ণনা থেকে পাওয়া যায় । একসময় বাইরের দিকে পুরো মসজিদটির উপর সোনালী রঙের আস্তরণ ছিলো । মতান্তরে কেবল গম্বুজগুলোর ওপর। গম্বুজগুলোর অভ্যন্তরভাগ টেরাকোটা সমৃদ্ধ।
মসজিদটির অপরাপর স্থাপনা সমূহঃ
মূল মসজিদের আঙ্গিনায় প্রবেশের পথে একটি তোরণ আছে। এর বাইরের দিকটি পাথর দিয়ে ঢাকা ছিলো। এটি ২.৪ মিটার চওড়া। উচ্চতা ৭.৬ মিটার। তোরণটি মসজিদের মাঝের দরজা বরাবর অবস্থিত।
তোরণের সামান্য পূবে বাঁধানো মঞ্চের ওপর উত্তর ও দক্ষিণ বরাবর দুটো কবর রয়েছে। দুটি কবরই কালো পাথরের উপরে উঠে যাওয়া সিঁড়িসদৃশ স্তরযুক্ত সবচেয়ে উঁচুতে যে স্তরটি রয়েছে তা ব্যারেল আকৃতির। তাতে পবিত্র কুরআন শরীফের কিছু আয়াত এবং আল্লাহুর নাম লেখা রয়েছে। তবে কবর দুটি কার তা জানা যায়নাই । তবে ধারণা করা হয় নির্মাতা ওয়ালী মোহাম্মদ এবং তার স্ত্রীর হবে । আবার কানিংহ্যামের অনুমান অনুসারে এ দুটি ছিলো ওয়ালী মোহাম্মদ ও তার পিতা আলীর। মঞ্চটি পূর্ব ও পশ্চিমে ৬.২ মিটার এবং উত্তর দক্ষিণে ৪.২ মিটার চওড়া। উচ্চতা ১ মিটার। এর চার কোণে পাথরের চারটি কলাম রয়েছে।
মূল মসজিদের উত্তর দিকে একটি দিঘি আছে এককালে এতে বাঁধানো ঘাট ছিলো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.