নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুরা আল ফাতিহা সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যাঃ

০৮ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৫০


সূরা আল ফাতিহা আমাদের মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১ নম্বর সূরা । ফাতিহা শব্দটি আরবি ফাতহুন শব্দজাত যার অর্থ উন্মুক্তকরণ। এটি আল্লহ'র তরফ থেকে বিশেষ উপহার। সূরা ফাতিহা অন্যান্য সূরার ন্যায় বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে শুরু। আল ফাতিহা সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে বিধায় মক্কী সূরা হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে।
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيم
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِين
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহ তা' আলার যিনি সকল সৃষ্টি জগতের পালনকর্তা।
الرَّحمـنِ الرَّحِيم
যিনি নিতান্ত মেহেরবান ও দয়ালু।
مَـالِكِ يَوْمِ الدِّين
যিনি বিচার দিনের মালিক।
إِيَّاك نَعْبُدُ وإِيَّاكَ نَسْتَعِ
আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং শুধুমাত্র তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি।
اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيم
আমাদেরকে সরল পথ দেখাও।
صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّين
সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে। - আমিন

এই সূরার বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্য রেখেই এর এই নামকরণ করা হয়েছে। যার সাহায্যে কোন বিষয়, গ্রন্থ বা জিনিসের উদ্বোধন করা হয় তাকে ‘ফাতিহা’ বলা হয়। অন্য কথায় বলা যায়, এ শব্দটি ভূমিকা এবং বক্তব্য শুরু করার অর্থ প্রকাশ করে।
সুরাটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুওয়াত লাভের একেবারেই প্রথম যুগের সূরা। বরং হাদীসের নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, এটিই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর নাযিলকৃত প্রথম পূর্ণাঙ্গ সূরা। এর আগে মাত্র বিছিন্ন কিছু আয়াত নাযিল হয়েছিল। সেগুলো সূরা ‘আলাক্ব’, সূরা ‘মুয্‌যাম্‌মিল’ ও সূরা ‘মুদ্‌দাস্‌সির’ ইত্যাদিতে সন্নিবেশিত হয়েছে।

আসলে এ সূরাটি হচ্ছে একটি দোয়া। যে কোন ব্যক্তি এ গ্রন্থটি পড়তে শুরু করলে আল্লাহ প্রথমে তাকে এ দোয়াটি শিখিয়ে দেন। গ্রন্থের শুরুতে এর স্থান দেয়ার অর্থই হচ্ছে এই যে, যদি যথার্থই এ গ্রন্থ থেকে তুমি লাভবান হতে চাও, তাহলে নিখিল বিশ্ব-জাহানের মালিক আল্লাহর কাছে দোয়া এবং সাহায্য প্রার্থনা করো।

মানুষের মনে যে বস্তুটির আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা থাকে স্বভাবত মানুষ সেটিই চায় এবং সে জন্য দোয়া করে। আবার এমন অবস্থায় সে এই দোয়া করে যখন অনুভব করে যে, যে সত্তার কাছে সে দোয়া করছে তার আকাংখিত বস্তুটি তারই কাছে আছে। কাজেই কুরআনের শুরুতে এই দোয়ার শিক্ষা দিয়ে যেন মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে, সত্য পথের সন্ধান লাভের জন্য এ গ্রন্থটি পড়, সত্য অনুসন্ধানের মানসিকতা নিয়ে এর পাতা ওলটাও এবং নিখিল বিশ্ব-জাহানের মালিক ও প্রভু আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানের একমাত্র উৎস--- একথা জেনে নিয়ে একমাত্র তাঁর কাছেই পথনির্দেশনার আর্জি পেশ করেই এ গ্রন্থটি পাঠের সূচনা কর।এই বিষয়টি অনুধাবন করার পর একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, কুরআন ও সূরা ফাতিহার মধ্যকার আসল সম্পর্ক কোন বই ও তার ভূমিকার সম্পর্কের পর্যায়ভুক্ত নয়। বরং এ মধ্যকার আসল সম্পর্কটি দোয়া ও দোয়ার জবাবের পর্যায়ভুক্ত। সূরা ফাতিহা বান্দার পক্ষ থেকে একটি দোয়া। আর কুরআন তার জবাব আল্লাহর পক্ষ থেকে। বান্দা দোয়া করে, হে মহান প্রভু! আমাকে পথ দেখাও। জবাবে মহান প্রভু এই বলে সমগ্র কুরআন তার সামনে রেখে দেনঃ এই নাও সেই হিদায়াত ও পথের দিশা যে জন্য তুমি আমার কাছে আবেদন জানিয়েছ।

এই সূরাটি কোরআনের একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সূরা।
প্রথমতঃ এই সূরা দ্বারাই পবিত্র কোরাআন আরম্ভ হয়েছে এবং এই সূরা দিয়েই সর্বশ্রেষ্ঠ এবাদত নামায আরম্ভ হয়। অবতরণের দিক দিয়েও পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এটিই প্রথম নাযিল হয়। সূরা ইকরা মুয্‌যাম্মিল এবং 'মুদ্দাস্‌সিরের ক'টি আয়াত অবশ্য সূরা আল ফাতিহার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সূরারূপে এ সূরার অবতরণই সর্বপ্রথম। যে সকল সাহাবী (রাঃ) সূরা আল ফাতিহা সর্বপ্রথম নাযিল হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন তাদের সে বক্তব্যের অর্থ বোধহয় এই যে পরিপূর্ণ সূরারূপে এর আগে আর কোন সূরা নাযিল হয়নি। এই জন্যই এ সূরার নাম ফাতিহাতুল কিতাব বা কোরআনের উপক্রমণিকা রাখা হয়েছে। সূরা আল ফাতিহার মাধ্যমে সমগ্র কোরআনের সারমর্ম সংহ্মিপ্তকারে বলে দেয়া হয়েছে। কোরআনের অবশিষ্ট সূরাগুলো প্রকারান্তরে সূরা ফাতিহারই বিস্তৃত ব্যাখ্যা। তাই এই সূরাকে সহীহ হাদীসে উম্মুল কিতাব উম্মুল কুরআন কোরানে আযীম বলেও অভিহিত করা হয়েছে।হযরত রসূলে কারীম (সাঃ) এরশাদ করেছেন যে
যার হাতে আমার জীবন মরণ আমি তাঁর শপথ করে বলছি সূরা আল-ফাতিহার দৃষ্টান্ত তাওরাত, ইনজীল, যাবুর প্রভৃতি অন্য আসমানী কিতাবে তো নেইই এমনকি পবিত্র কোরআনেও এর দ্বিতীয় নেই।
ইমাম তিরমিযী আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে রসূলে কারীম (সাঃ) আরো বলেছেন যে
সূরায়ে ফাতিহা প্রত্যেক রোগের ঔষধবিশেষ।

সুরা আল ফাতেয়ার সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা
সূরা আল-ফাতিহার প্রথমে বর্ণনা করা হয়েছে যে এই সূরার প্রথম তিনটি আয়াতে আল্লাহ্‌র প্রশংসা ও তারীফের বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর তফসীরে একথা সুস্পষ্ট হয়েছে যে তারীফ ও প্রশংসার সাথে সাথে ঈমানের মৌলিক নীতি এবং আল্লাহ্‌র একত্ববাদের বর্ণনাও সূহ্মভাবে দেওয়া হয়েছে। তৃতীয় আয়াতে এর দুইটি শব্দে তারীফ এবং প্রশংসার সাথে সাথে ইসলামের বিপ্লবাত্মক মহোত্তম আকীদা যথা কিয়ামত ও পরকালের বর্ণনা প্রমাণসহ উপস্থিত করা হয়েছে। চতুর্থ আয়াতের এক অংশে তা'রীফ ও প্রশংসা এবং অপর অংশে দোয়া এবং প্রার্থনা করা হয়েছে। মানবজীবন তিনটি অবস্থায় অতিবাহিত হয় যেমনঃ অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যত। পূর্বের তিনটি আয়াতের মধ্যে الْحَمْدُ للّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ এবং الرَّحْمـنِ الرَّحِيمِ - এ দুইটি আয়াতে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে অতীতে সে কেবল মাত্র আল্লাহ্‌র মুখাপেক্ষী ছিল আর বর্তমানেও সে একমাত্র তারই মুখাপেক্ষী। অস্তিত্বহীন এক অবস্থা থেকে তিনি তাকে অস্তিত্ব দান করেছেন। পরবর্তী আয়াতে مَـالِكِ يَوْمِ الدِّينِ - এর মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে ভবিষ্যতেও সে আল্লাহ্‌র মুখাপেক্ষী। প্রতিদান দিবসে আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো সাহায্য পাওয়া যাবে না। একজন বুদ্ধিমান এবং বিবেকবান ব্যক্তি মনের গভীরতা থেকেই এই স্বতঃস্ফুর্ত স্বীকৃতি উচ্চারণ করছে যে আমরা তোমাকে ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করি না। সে মৌলিক চাহিদাই إِيَّاكَ نَعْبُدُ তে বর্ণনা করা হয়েছে। অভাব পূরণকারী একক সত্তা আল্লাহ্‌ সুতরাং নিজের যাবতীয় কাজে সাহায্যও তার নিকট প্রার্থনা করবে। এ মৌলিক চাহিদাই বর্ণনা وإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ এ করা হয়েছে। মোটকথা এর চতুর্থ আয়াতে একদিকে আল্লাহ্‌র তারীফ ও প্রশংসার সাথে একথারও স্বীকৃতি রয়েছে যে ইবাদত ও শ্রদ্ধা পাওয়ার একমাত্র তিনিই যোগ্য। অপরদিকে তার নিকট সাহায্য ও সহ্যয়তার প্রার্থনা করা এবং তৃতীয়তঃ আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত না করার শিক্ষাও দেয়া হয়েছে। শেষ তিনটি আয়াতে মানুষের দোয়া ও আবেদনের বিষয়বস্তু এবং এক বিশেষ প্রার্থনা পদ্ধতি শিক্ষা দেয়া হয়েছে। তা হচ্ছে

اهدِنَــــا الصِّرَاطَ المُستَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنعَمتَ عَلَيهِمْ غَيرِ المَغضُوبِ عَلَيهِمْ وَلاَ الضَّالِّينَ

আর্থাৎ

আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, সে সমস্ত লোকের পথ যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয় যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।

এই তিনটি আয়াতে কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যেমনঃ সরল পথের হেদায়াতের জন্য যে আবেদন এই আয়াতে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে । এর আবেদনকারী যেমনিভাবে সাধারণ মানুষ সাধারণ মুমিনগণ তেমনি আওলিয়া ও গাউস কুতুব এবং সকল নবী রাসূলগণও বটে। কোরআনের শিক্ষায় স্পষ্টতঃই এই তথ্য ব্যক্ত হয়েছে যে সৃষ্টির প্রতিটি স্তর এমনকি প্রতিটি অণু পরমাণু পর্যন্ত নিজ নিজ অবস্থানু্যায়ী প্রাণ এবং অনুভূতির অধিকারী। স্ব-স্ব পরিমন্ডলে প্রতিটি বস্তুর বুদ্ধি বিবেচনা রয়েছে। অবশ্য এই বুদ্ধি ও অনুভূতির তারতম্য রয়েছে। কোনটাতে তা স্পষ্ট এবং কোনটাতে নিতাস্তই অনুল্লেখ্য। বুদ্ধি ও অনুভূতির ক্ষেত্রে এই তারতম্যের জন্যই সমগ্র সৃষ্টিজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষ এবং জ্বিন জাতিকেই শরীয়তের হুকুম আহকামের আওতাভুক্ত। কারণ সৃষ্টির এই দু'টি স্তরের মধ্যেই বুদ্ধি ও অনুভূতি পূর্ণ মাত্রায় দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাই বলে একথা বলা যাবে না যে একমাত্র মানুষ এবং জ্বিন জাতি ছাড়া সৃষ্টির অন্য কোন কিছুর মধ্যে বুদ্ধি ও অনুভূতির অস্তিত্ব নেই।কেননা আল্লাহ্‌ সূরা বনী ইসরাঈলে এরশাদ করেছেনঃ

এমন কোন বস্তু নেই যা আল্লাহ্‌র প্রশংসার তসবীহ্‌ পাঠ করে না কিন্তু তোমরা তাদের তসবীহ্‌ বুঝতে পার না।

আল্লাহ্‌ সূরা আন নূরে এরশাদ করেছেনঃ

তোমরা কি জান না যে আস্মান ও জমিনের যা কিছু রয়েছে সকলেই আল্লাহ্‌র পবিত্রতা বর্ণনা এবং গুণগান করে? বিশেষতঃ পাখীকুল যারা দুইপাখা বিস্তার করে শূন্যে উড়ে বেড়ায় তাদের সকলেই স্ব-স্ব দোয়া তসবীহ্‌ সম্পর্কে জ্ঞাত এবং আল্লাহ্‌ তা'আলাও ওদের তসবীহ্‌ সম্পর্কে খবর রাখেন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:০৯

নাবিক সিনবাদ বলেছেন: ভালো লাগলো।

০৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ৮:১৬

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ নাবিক সিনবাদ ভাই ।

২| ০৮ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:১৭

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: ধন্যবাদ ভ্রাতা। অনেক সুন্দর এবং দামি পোস্টটা করার জন্যে...

০৯ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ আব্দুল্লাহ তুহিন ভাই ।

৩| ০৯ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৬

কল্লোল পথিক বলেছেন: সুন্দর পোস্ট।

০৯ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ কল্লোল পথিক ভাই ।

৪| ০৯ ই জুন, ২০১৬ রাত ৯:৫৫

মহা সমন্বয় বলেছেন: কিছু কিছু সূরা পড়তে অনেক ভাল লাগে। সূরা ফাতিহা অন্যতম।

১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ৩:১৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: খাবারে যেমন লবন না থাকলে স্বাদের অপূর্ণতা থেকে যেত কুরআনেও এই সূরাটি না থাকলে মনে হয় একই অবস্থা হতো ভাই ।

৫| ১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:০৯

মহা সমন্বয় বলেছেন: এ জন্যই তো এ সূরাকে বলা হয় সকল সূরার মা

১৪ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.