নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দি গ্রেট আলেক্সান্ডার এর আরো কথা আছে

১৭ ই জুন, ২০১৬ রাত ১:৫৮


দি গ্রেট আলেক্সান্ডার
সমরাভিযান থেকে ফিরে এসে ফিলিপ তার সেনাপতি আত্তালোসের ভ্রাতুষ্পুত্রী ক্লিওপাত্রা ইউরিদিকেকে বিবাহ করেন। ক্লিওপাত্রার যে কোন সন্তান পিতা মাতা উভয়ই দিক থেকে ম্যাসিডোনিয় হওয়ায় সেই বিবাহের ফলে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে আলেকজান্ডারের অবস্থান কিছুটা অসুরক্ষিত হয়ে পড়ে কারন আলেকজান্ডার পিতার দিক থেকে ম্যাসিডোনিয় হলেও মাতার দিক থেকে এপাইরাসীয় ছিলেন। বিবাহের সময় মদ্যপ অবস্থায় আত্তালোস ফিলিপ এবং ক্লিওপাত্রার মিলনের ফলে একজন বৈধ উত্তরাধিকারীর কথা উল্লেখ করলে দৃশ্যতঃ ক্ষুব্ধ আলেকজান্ডার তার মাথায় পানপাত্র ছুড়ে মারেন কিন্তু মদ্যপ ফিলিপ আত্তালোসের পক্ষ গ্রহণ করলে আলেকজান্ডার দোদোনা শহরে তার মাতুল এপাইরাসের রাজা প্রথম আলেকজান্ডারের নিকট তার মাতা অলিম্পিয়াসকে রেখে ইলিরিয়ার রাজার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করেন । যদিও কয়েকমাস পূর্বে আলেকজান্ডার ইলিরিয়াকে একটি যুদ্ধে পরাজিত করেন তবুও ইলিরিয়ায় তাকে স্বাগত জানান । যাই হোক ফিলিপ রাজনৈতিক এবং সামরিকভাবে প্রশিক্ষিত পুত্রকে ত্যাজ্য করতে কখনোই রাজী ছিলেন না ফলে দেমারাতোস নামক পারিবারিক বন্ধুর মধ্যস্থতায় ছয় মাস পরে আলেকজান্ডার ম্যাসিডনে ফিরে যান।পরের বছর পারস্যের কেয়ারিয়া অঞ্চলের সত্রপ পিক্সোদারোস তার জ্যেষ্ঠা কন্যার সঙ্গে আলেকজান্ডারের জ্যেষ্ঠ সৎভাই আররিদাইওসের বিবাহের প্রস্তান দেন।
পঞ্চদশ শতকের চিত্রে আলেকজান্ডারের অভিষেক
ফিলিপের উত্তরাধিকারী হিসেবে আররিদাইওসের নাম বিবেচিত হওয়ার আশঙ্কায় আলেকজান্ডার করিন্থ শহরের একজন অভিনেতা থেসেলাসকে পিক্সোদারোসের নিকট পাঠিয়ে বার্তা দেন যে তিনি যেন তার কন্যার সঙ্গে দ্বিতীয় ফিলিপের অবৈধ সন্তান আররিদাইওসের বিবাহ না দিয়ে আলেকজান্ডারের সঙ্গে বিবাহের সিদ্ধান্ত বিবেচনা করেন। ফিলিপ এই ঘটনার কথা শুনে সেই বিবাহ প্রস্তাব নাকচ করে দেন এবং থেসেলাসকে বন্দী করেন।৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এপাইরাসের রাজা প্রথম আলেকজান্ডারের সাথে নিজ কন্যা ক্লিওপাত্রার বিবাহের সময় দ্বিতীয় ফিলিপ তার দেহরক্ষীবাহিনীর প্রধান পাউসানিয়াসের হস্তে খুন হন।পালানোর সময় পাউসানিয়াসকে হত্যা করা হয়। ম্যাসিডোনিয়ার সম্ভ্রান্ত এবং সেনাবাহিনীর সমর্থনে আলেকজান্ডার মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ম্যাসিডোনিয়ার শাসক হিসেবে সিংহাসনলাভ করেন।আলেকজান্ডার সিংহাসনলাভ করেই তার সম্ভাব্য শত্রুদের সরিয়ে দিতে শুরু করেন। তিনি প্রথমেই ম্যাসিডনের পূর্বতন রাজা চতুর্থ আমুনতাসকে হত্যা করেন। দ্বিতীয় ফিলিপকে হত্যার অভিযোগে হেরোমেনেস এবং আরহাবিয়াস নামক দুইজন সম্ভ্রান্ত ম্যাসিডোনীয়কে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। আলেকজান্ডারের মাতা অলিম্পিয়াস তার সতীন ক্লিওপাত্রা ইউরিদিকের দুই সন্তান ইউরোপা এবং কারানোসকে হত্যা করলে ক্লিওপাত্রা ইউরিদিকে সম্ভবত আত্মহত্যা করেন। আলেকজান্ডার এশিয়া মাইনর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাপতি আত্তালোসকেও হত্যার নির্দেশ দেন। আত্তালোস দ্বারা পূর্বের অপমানের প্রতিশোধের কারণেই তিনি সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন । মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধীতে পরিণত হওয়ায় আলেকজান্ডার আররিদাইওসের কোন ক্ষতি না করেই ছেড়ে দেন।দ্বিতীয় ফিলিপের মৃত্যুরে সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই থিবস ও এথেন্স এবং থ্রেস বিভিন্ন রাজ্যে বিদ্রোহ শুরু হলে আলেকজান্ডার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে শুরু করেন। তিনি ৩০০০ ম্যাসিডোনিয় অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে থেসালি অভিমুখে দক্ষিণে যাত্রা করেন। থেসালির সেনা অলিম্পাস পর্বত এবং ওসা পর্বতের মধ্যবর্তী গিরিখাতে অবস্থান করছিল। আলেকজান্ডার তার বাহিনীকে ওসা পর্বত আরোহণ করতে নির্দেশ দেন। পরের দিন থেসালির সেনা তাদের পশ্চাতে আলেকজান্ডারের বাহিনীকে দেখতে পেয়ে দ্রুত আত্মসমর্পণ করেন।

আলেকজান্ডারের বাহিনী দ্রুত পেলোপোনেসের দিকে দক্ষিণাভিমুখে যাত্রা করে। থার্মোপাইলি শহরে তাকে স্বর্গীয় মৈত্রী সঙ্ঘের নেতা হিসেবে গ্রহণ করা হয়। তারপর তিনি করিন্থ অভিমুখে যাত্রা করলে এথেন্স শান্তির জন্য আবেদন করেন এবং আলেকজান্ডার বিদ্রোহীদের ক্ষমা করেন। সেই শহরেই দার্শনিক ডায়োজেনিসের সঙ্গে তাঁর বিখ্যাত আলাপটি ঘটে।সেই শহরে তাকে পারস্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়।এশিয়া অভিযানের পূর্বে আলেকজান্ডার তার উত্তর সীমান্ত সুরক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। ৩৩৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দের বসন্তকালে তিনি বেশ কিছু বিদ্রোহ দমন করতে অগ্রসর হন। অ্যাম্ফিপোলিস থেকে পূর্বদিকে যাত্রা শুরু করে তিনি হিমাস পর্বতের পাদদেশে থ্রেসের সেনাবাহিনীকে পরজিত করেন। তারপর ম্যাসিডোনিয়ার সেনা ট্রিবাল্লি রাজ্যে পৌঁছে লিগনিয়াস নদীর তীরে সেই রাজ্যের সেনাবাহিনীকে পরজিত করেন। তারপর তিনদিন টানা যাত্রা করে আলেকজান্ডার দানিয়ুব নদীর তীরে গেটাই জনজাতির সম্মুখীন হন এবং রাতের বেলা নদী পার হয়ে তাদের ওপর অতর্কিতে আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করেন। সেই সময় ইলিতিয়ার রাজা ক্লেইতোস এবং তাউলান্তিওইর রাজা গ্লাউকিয়াস আলেকজান্ডারের কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করলে ম্যাসিডোনিয়ার বাহিনী পশ্চিমে যাত্রা করে সেই দুই রাজাকে পরাজিত করলে তার রাজ্যের উত্তর সীমান্ত সুরক্ষিত হয়।
নেপলস প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহালয়ে রক্ষিত ইসাসের যুদ্ধের চিত্র
আলেকজান্ডারের উত্তরদিকের অভিযানের সময় থিবস এবং এথেন্স পুনরায় বিদ্রোহ ঘোষণা করলে তিনি দক্ষিণে যাত্রা করেন। থিবস আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং পরাজিতও হন আর আলেকজান্ডার থিবস নগরীকে ধ্বংস করেন। সেই পরিণতিতে এথেন্স সমর্পণ করে ও গ্রিসে সাময়িক ভাবে শান্তি স্থাপিত হয়। তারপর আলেকজান্ডার আন্তিপাত্রোসকে রাজপ্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করে এশিয়ার অভিযানে মনোনিবেশ করেন।

৩৩৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ম্যাসিডোনিয়া ছাড়াও থ্রেস ও ইলিরিয়া এবং পাইওনিয়া থেকে আনুমানিক ৪৮,১০০ পদাতিক, ৬,১০০ অশ্বারোহী ও ১২০টি জাহাজে ৩৮,০০০ নাবিক নিয়ে আলেকজান্ডারের বাহিনী হেলেস্পোন্ট পার করেন। আলেকজান্ডার এশিয়ার মাটিতে একটি বল্লম ছুঁড়ে ঘোষণা করেন যে তিনি দেবতাদের নিকট হতে এশিয়াকে উপহার হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ৮ই এপ্রিল গ্রানিকাসের যুদ্ধে প্রাথমিক সাফল্যের পর আলেকজান্ডারের নিকট পারস্যের প্রাদেশিক রাজধানী সার্দেয়িস আত্মসমর্পণ করেন। তারপর তিনি ইওনিয়ার তীর বরাবর বিভিন্ন শহরকে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রদান করেন। পারস্য সেনাবাহিনীর অধিকৃত মাইলিটাসে শহরটি অধিকার করতে তাকে রণকুশলতার পরিচয় দিতে হয়। আরো দক্ষিণে হালিকার্নাসসোসে আলেকজান্ডার তার প্রথম ব্যাপক অবরোধ পরিচালনা করেন এবং ধীরে ধীরে পারস্য সত্রপ ওরোন্তোবাতেস ও রোডসের মেমনন সমুদ্রপথে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। আলেকজান্ডার কেয়ারিয়ার শাসনভার আদার ওপর ন্যস্ত করেন।

হালিকার্নাসসোস হতে আলেকজান্ডার পাহাড়ী লাইকিয়া এবং প্যামফিলিয়ার সমতল ভূমি বরাবর চলতে থেকে সকল উপকূলীয় শহর দখল করেন। প্যামফাইলিয়া থেকে সামনে আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর না থাকায় আলেকজান্ডার ভূমির দিকে অভিযান শুরু করেন। তের্মেসোসে আলেকজান্ডার পিসিদিয়া দখল করলেও তেমন ধ্বংসযজ্ঞ করেন নাই। প্রাচীন ফিজিয়ার রাজধানী গর্দিওনে পৌঁছলে আলেকজান্ডার একটি অসমাধেয় গিঁট খোলেন যা একমাত্র এশিয়ার শাসকের দ্বারাই করা সম্ভব বলে প্রবাদ প্রচলিত ছিল। সেই গিঁটটি তিনি তার তলোয়ার দিয়ে কেটে ফেলেন।

৩৩৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনী নিয়ে টরাস হতে সিসিলিয়া পৌঁছন। দীর্ঘ সময় অসুস্থ থাকার পর তিনি সিরিয়ার দিকে রওনা হন। তৃতীয় দারিয়ুসের বিশাল সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হতে না চেয়ে তিনি সিসিলিয়া ফিরে আসেন এবং ইসাসের যুদ্ধে তিনি তৃতীয় দারিয়ুসকে পরাজিত করেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তৃতীয় দারিয়ুস তার মাতা সিসিগম্বিস ও স্ত্রী, দুই কন্যা এবং ব্যক্তিগত সম্পদের বেশির ভাগ ফেলে নিজের প্রাণ বাচিয়ে পালিয়ে যান। দারিয়ুস আলেকজান্ডারকে একটি সান্তি চুক্তি প্রেরণ করেন যেখানে তিনি তার জমি ও তার পরিবারের মুক্তিপণ হিসেবে ১০,০০০ মুদ্রা প্রদানের কথা বলেন । কিন্তু আলেকজান্ডার নিজেকে এশিয়ার অধিপতি ঘোষণা করে তার এই প্রস্তাব নাকচ করে দেন। তারপর আলেকজান্ডার সিরিয়া এবং লেভ্যান্টের উপকূল বরাবর যাত্রা করেন। ৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তায়ার অবরোধ করে বহুকষ্টে শহরটি দখল করতে সক্ষম হন। তিনি শহরের কর্মক্ষম সকল পুরুষকে হত্যা করে নারী এবং শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দেন।তায়ার ধ্বংস করার পর মিশর অভিমুখী অধিকাংশ শহর দ্রুত সমর্পণ করেন। আলেকজান্ডার জেরুজালেম শহরের কোন ক্ষতি না করে দক্ষিণে মিশরের দিকে যাত্রা শুরু করেন।কিন্তু গাজা শহরে তাকে প্রচন্ড বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। পাহাড়ের ওপর অবস্থিত সুরক্ষিত সেই শহর অধিকার করতে তিনবার চেষ্টা করে সফল হলেও আলেকজান্ডার তার কাঁধে গুরুতর ভাবে আহত হন।টায়ারের মতোই গাজা শহরের সকল কর্মক্ষম পুরুষদের হত্যা করে নারী এবং শিশুদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়।
লুভর সংগ্রহালয়ে সংরক্ষিত প্রাচীন হায়ারোগ্লিফ লিপিতে লিখিত আলেকজান্ডারের নাম

৩৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার মিশর অভিমুখে যাত্রা করলে তাকে মুক্তিদাতা হিসেবে স্বাগত জানানো হয়।লিবিয়ার মরুভূমিতে সিওয়া মরুদ্যানে তাকে দেবতা আমুনের পুত্র হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আলেকজান্ডারের স্বর্গীয় ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করতে মুদ্রায় তার প্রতিচ্ছবিতে তার মাথায় ভেড়ার শিং থাকত।মিশরে থাকার সময় তিনি আলেকজান্দ্রিয়া প্রতিষ্ঠা করেন।৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিশর ত্যাগ করে আলেকজান্ডার পূর্বে মেসোপটেমিয়া অভিমুখে যাত্রা করে গাউগামেলার যুদ্ধে তৃতীয় দারিয়ুসকে পরাজিত করেন। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দারিয়ুস আবার পলায়ন করলে আলেকজান্ডার তাকে আরবেলা পর্যন্ত ধাওয়া করেন। গাউগামেলার যুদ্ধ উভয় প্রতিপক্ষের মধ্যে অন্তিম যুদ্ধ ছিল। তৃতীয় দারিয়ুস হাইগমতান পাহাড়ে আশ্রয় নিলে আলেকজান্ডার ব্যাবিলন অধিকার করেন।ব্যাবিলন থেকে আলেকজান্ডার অন্যতম হাখমানেশী রাজধানী সুসাতে যান এবং সেই শহরের প্রবাদপ্রতিম কোষাগার দখল করেন। তারপর সেনাবাহিনীর একটি বড় অংশ শাহী সড়ক হয়ে পারস্যের রাজধানী পার্সেপোলিস পাঠিয়ে দেন। অন্যদিকে নিজে কয়েকজন বাছাই করা সৈন্য নিয়ে সোজা পথে শহরর দিকের রওনা হন। সেই জন্য তাকে আরিওবার্জানেসের নেতৃত্বে পারস্য সেনাকে পরাজিত করে পারস্য দ্বার দখল করতে হয়েছিল। পার্সেপোলিস পৌঁছে পরবর্তীতে বেশ কয়েক দিন ধরে আলেকজান্ডার তার সেনাবাহিনীকে শহরের সম্পদ লুঠ করতে দেন। সেই শহরে পাঁচ মাস থাকাকালীন প্রথম জারক্সেসের প্রাসাদে আগুন ধরে শহরের অধিকাংশ ভস্মীভূত হয়ে যায়।

হাখমানেশী সাম্রাজ্যের পতন
আলেকজান্ডার এরপর তৃতীয় দারিয়ুসকে মিদিয়া এবং পার্থিয়া পর্য্যন্ত ধাওয়া করেন। সেই সময় তৃতীয় দারিয়ুস বেসাস নামক তার ব্যাক্ট্রিয়ার সত্রপ দ্বারা বন্দী হন। আলেকজান্ডারের আগমণে বেসাস তাকে হত্যা করে নিজেকে তৃতীয় দারিয়ুসের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেন এবং মধ্য এশিয়ায় পিছু হঠে আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন। আলেকজান্ডার রাজকীয় সম্মানে পূর্বতন হাখমানেশী সম্রাটদের পাশে তৃতীয় দারিয়ুসের দেহাবশেষ সমাধিস্থ করেন। মৃত্যুর পূর্বে দারিয়ুস তাকেই সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী ঘোষণা করেছেন বলে তিনি দাবী করেন।আলেকজান্ডার বেসাসকে একজন বিদ্রোহী হিসেবে গণ্য করে তাকে পরাজিত করতে বেরিয়ে পড়েন। আর সেই অভিযানের ফলে মধ্য এশিয়ায় তিনি বেশ কয়েকটি আলেকজান্দ্রিয়া নগরী স্থাপন করেন। সেই অভিযান চালাতে গিয়ে আলেকজান্ডার মিদিয়া, পার্থিয়া, আরিয়া, দ্রাগগিয়ানা, আরাকোসিয়া, ব্যাক্ট্রিয়া এবং সিথিয়া জয় করেন। ৩২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সোগদিয়ানার স্পিটামেনেস নামক জনীক আধিকারিক বেসাসের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করে তাকে প্রথম টলেমী সোটেরের হাতে তুলে দিলে বেসাসকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পরে যখন আলেকজান্ডার যখন জাক্সার্টেস অঞ্চলে একটি অশ্বারূঢ় যাযাবর সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন স্পিতামেনেস সোগদিয়ানায় বিদ্রোহ শুরু করেন। আলেকজান্ডার জাক্সার্তেসের যুদ্ধে সিথিয়াবাসীদের পরাজিত করে গাবাইয়ের যুদ্ধে স্পিতামেনেসকে পরাজিত করলে স্পিতামেনেস নিজের সৈন্যদের দ্বারা নিহত হন।


আন্দ্রে ক্যাস্টেইনের তুলিতে ক্লাইটাসের হত্যা
সমস্যা এবং ষড়যন্ত্র
পারস্য জয়ের পর আলেকজান্ডার তার সভায় পারস্যের বেশ কিছু পোশাক এবং হস্তে চুম্বন ও দেবতাদের প্রতি ভূমিতে উল্লম্ব ভাবে শুয়ে সম্মান প্রদর্শন ইত্যাদি রীতিনীতির প্রচলন করেছিলেন। গ্রিকদের মনে সেই কারণে অসন্তোষের জন্ম হয় যে আলেকজান্ডার তার প্রতি এই সব রীতির প্রদর্শন করিয়ে নিজেকে দেবতার আসনে উন্নীত করতে চেয়েছেন। আর সেই অসন্তোষের ফলে আলেকজান্ডারকে সেই রীতি বন্ধ করতে হয়।আলেকজান্ডারকে হত্যার ব্যাপারে একটি ষড়যন্ত্র আবিষ্কৃত হয় যে কারনে ফিলোতাস নামক তার এক সেনানায়ককে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছিল। ভবিষ্যতে প্রতিশোধ নেয়া থেকে রুখতে হাইগমতান অঞ্চলে রাজকোষের দায়িত্বে থাকা ফিলোতাসের পিতা পার্মেনিয়নকেও আলেকজান্ডারের আদেশে হত্যা করা হয়। তারপর মরকন্দ অঞ্চলে মদ্যপ অবস্থায় বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে আলেকজান্ডার স্বহস্তে তার সেনানায়ক ক্লেইতোসকে হত্যা করেন ।পরবর্তীকালে মধ্য এশিয়ার অভিযানের সময় তাকে হত্যার একটি দ্বিতীয় ষড়যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়। তার সভার ঐতিহাসিক ক্যালিস্থেনিস সেই ষড়যন্ত্রে অভিযুক্ত হন যদিও তার লিপ্ত থাকার ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

ভারত অভিযান
ম্যাসিডনের রাজা আলেকজান্ডারের ভারতবর্ষ আক্রমণ ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। পারস্য বিজয়ে পর শুরু হয় তার ভারত আগ্রাসন। খ্রিস্টপূর্ব ৩৩১ অব্দে তিনি পারস্য সাম্রাজ্য আক্রমণ করেন। সে সময় সিন্ধুনদ পারস্য সাম্রাজ্যের সীমানা ছিল। আলেকজান্ডারের ভারতবর্ষ আক্রমণের প্রাক্কালে উত্তর ও পশ্চিম ভারত পরস্পরবিরোধী অনেকগুলো রাজ্যে বিভক্ত ছিল। তাদের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বহিরাক্রমণ ঠেকানো সম্ভব ছিল না। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৮ অব্দের মধ্যে সমগ্র পারস্য এবং আফগানিস্তান আলেকজান্ডারের দখলে আসে। তাপর আলেকজান্ডার খ্রিস্টপূর্ব ৩২৭ অব্দে হিন্দুকুশ পর্বত অতিক্রম করে ভারত অভিমুখে অগ্রসর হন। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে তিনি ভারত নাম ভূখণ্ডে পদার্পণ করেন। আলেকজান্ডার পুষ্কলাবতীর রাজা অষ্টককে পরাভূত করেন। অশ্বক জাতিও তার নিকট পরাভূত হয় তক্ষশীলার রাজা তার নিকট স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করেন। ঝিলাম রাজ পুরু বীরত্বের সঙ্গে যুদ্ধ করে পরাভব মানতে বাধ্য হনঅ তারপর আরেকজান্ডার রাভি নদীর উপকূলবর্তী রাজ্যসমূহ দখল করেন এবং বিপাশা নদী পর্যন্ত অগ্রসর হন। সেই স্থলে তার রণক্লান্ত সেনাবাহিনী দেশে প্রত্যাবর্তনে উণ্মুখ হয়ে পড়লে আলেকজাণ্ডার ভারত অভিযান বন্ধ করে গ্রিসে প্রত্যাবর্তন শুরু করেন। প্রত্যার্তনের পথে তিনি বেলুচিস্তান এবং পাঞ্জাব অধিগত করেন্ ঝিলাম ও সিন্ধু নদের অন্তবর্তী সকল রাজ্য তার অধিগত হয়। ভারত ভূঘণ্ডে আরেকজাণ্ডার প্রায় ১৯ মাস অবস্থান করেছিলেন। তিনি ভারত ত্যাগের পর প্রায় দুই বৎসরকাল তার বিজিত অঞ্চলসমূহে গ্রিক শাসন বজায় ছিল। ভারত থেকে প্রত্যাবর্তনের কিছুদিন পর খ্রিস্টপূর্ব ৩২৩ অব্দে ব্যবিলনে তার অকাল মৃত্যু হয়। অন্যদিকে চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের নেতৃত্বে মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা পাঞ্জাবে গ্রিক শাসনের অবসান ত্বরান্বিত করেন।

আলেকজান্ডার এবং গঙ্গারিডই
সম্রাট আলেকজান্ডার সুদূর গ্রিস থেকে একের পর এক রাজ্য জয় করে ইরান আফগানিস্তান হয়ে ভারতের পাঞ্জাবে পৌছে যায়। সুদর্শন তরুণ সম্রাটের চোখে সারা পৃথিবী জয়ের স্বপ্ন। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী সেনাবাহিনীর অধিকারি তিনি। বিখ্যাত ইরান সম্রাট দারায়ুস থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম ভারতের পরাক্রমশালী রাজা পুরু পর্যন্ত কেউ তার সামনে দাড়াতে পারে নাই। তখন তার সামনে মাত্র একটা বাধা আর তা হলো বিপাশা নদীর ওপারের গঙ্গারিডই রাজ্য। ভারতের মূল ভুখন্ড। সেটুকু করতলগত হলেই সমগ্র ভারত তার দখল হয়ে গেল। যে স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন গ্রিক রাষ্ট্র মেসিডোনিয়া থেকে, তা পরিপূর্ণতা পাবে।অন্যদিকে গঙ্গারিডই রাজ্যের রাজা তার বিশাল বাহিনী নিয়ে নদীর এপাড়ে আলেকজান্ডারকে প্রতিহত করতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। গঙ্গারিডই সম্পর্কে প্রাচীন গ্রিক এবং ল্যাটিন ঐতিহাসিকগণের লেখায় তথ্য পাওয়া যায়।মেগাস্থিনিস ৩৫০ খ্রিষ্টপূর্ব ও ২৯০ খ্রিষ্টপূর্ব আলেকজান্ডারের সেনাপতি এবং বন্ধু সেলুকাসের রাজত্বকালে গ্রিক দূত হিসাবে ভারতে এসেছিল। তিনি লিখেন‘গঙ্গারিডাই রাজ্যের বিশাল হস্তী বাহিনী ছিল। সেই বাহিনীর জন্যই সে রাজ্য কখনই বিদেশি রাজ্যের কাছে পরাজিত হয় নাই। অন্য রাজ্যগুলি হস্তী বাহিনীর সংখ্যা এবং শক্তি নিয়া আতংকগ্রস্ত থাকিত । ভারতের সমূদয় জাতির মধ্যে গঙ্গারিডাই সর্বশ্রেষ্ঠ। সেই গঙ্গারিডাই রাজার সুসজ্জিত এবং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত চার হাজার হস্তী বাহিনীর কথা জানিতে পারিয়া আলেকজান্ডার তাহার বিরূদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হইলেন না’ - ডিওডোরাস ।

গঙ্গাড়িডই রাজ্যের প্রকান্ড সেনাবাহিনী বর্ণনার ক্ষেত্রে ভারতীয় এবং ধ্রুপদী ইউরোপীয় রচনাগুলির উল্লেখে প্রচুর মিল খুজে পাওয়া যায়। ডিওডোরাস এবং ক্যুইন্টাস কার্টিয়াস রুফাস উভয়েই উল্লেখ করেছেন নন্দরাজের সেনাবাহিনীর বিভিন্ন বিভাগ সম্বন্ধে। যথাঃ পদাতিক সৈন্য ২ লক্ষ, অশ্বারোহী সৈন্য ২০ হাজার, রথ ২ হাজার, এবং তিন থেকে চার হাজার হাতি। ধ্রুপদী গ্রিক এবং ল্যাটিন বর্ণনায় রাজার নাম আগ্রাম্মেস। তিনি ছিলেন নীচকূলোদ্ভব নাপিতের পূত্র। হিন্দু পুরাণে তিনি মহাপদ্মনন্দন এবং বৌদ্ধ শাস্ত্র মাহাবোধিবংশে উগ্রসেন, অর্থ এমন এক ব্যক্তি যার প্রকান্ড এবং পরাক্রান্ত সেনাবাহিনী’ আছে। হেমচন্দ্রের পরিশিষ্টপর্ব নামক জৈন গ্রন্থেও মহাপদ্মনন্দকে বলা হয়েছে নাপিত কুমার। পুরাণে বলা হয়েছে শূদ্রোগর্ভোদ্ভব। আরও বলা হয়েছে সর্বক্ষত্রান্তক নৃপঃ অর্থাৎ সকল ক্ষত্রিয়কে নিধন করে সিংহাসনে বসেছিল।

সেই পর্যন্ত আলোচনায় গঙ্গারিডাই নামের পরাক্রান্ত রাজ্যের প্রমাণ পাওয়া গেল। যেটা ছিল পাঞ্জাব পর্যন্ত সমূদয় গঙ্গা অববাহিকায় নিয়ে গঠিত ভারতের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালি রাজ্য। বিজিত স্থানীয় ছোট ছোট ভূস্বামীরা আলেকজান্ডারকে জানাল অপর পাড়ের দেশটির ঐশ্বর্যের কথা ও অপরাজেয় সৈন্যবাহিনীর কথা।তারপর পৃথিবী বিখ্যাত সে অসীম সাহসী বীর করণীয় আলোচনার জন্য নিজের সেনাবাহিনীর সাথে পরামর্শে বসলেন এবং গঙ্গাড়িডই জয় করার জন্য উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সৈন্যরা এমনিতেই বছরের পর বছর যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত। তাছাড়া নদীর ওইপাড়ের ভয়াবহ সেনাবাহিনীর মোকাবেলায় অপরাগতা প্রকাশ করল। বিচক্ষণ সেনাপতি সৈন্যদের পক্ষ হয়ে জানাল সৈন্যরা কেউ বিপাশা পার হয়ে নিজের জীবন দিয়ে আসতে রাজী নয় । তারা পিতামাতা ও স্ত্রী, সন্তান এবং জন্মভুমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব। সেভাবে সৈন্যদের অনাগ্রহের ফলে পাঞ্জাবের বিপাশা নদীর অপর পাড়েই গ্রিক বাহিনীর বিজয় রথ থেমে যায়। আলেকজান্ডার তারপর গ্রিক বাহিনীকে মেসিডোনিয়ার দিকে ফিরতি যাত্রার নির্দেশ দেন।

আলেকজান্ডার এর শক্তিশালী ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য তার বাবার সান্নিধ্যে গঠিত। তার মায়ের খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল এবং তিনি আলেকজান্ডারকে বিশ্বাস করতে উৎসাহিত করতেন যে পারস্য সাম্রাজ্য জেতাই তার নিয়তি। বিভিন্ন ধর্মে আলেকজান্ডার বা তার সাথে তুলনীয় সমসাময়িক ব্যক্তির উল্লেখ পাওয়া গেছে। আর সেসব নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতামত প্রচলিত আছে। পবিত্র কুরআন শরীফে উল্লিখিত জুলকারনাইন ই আলেকজান্ডার ছিলেন কীনা তা নিয়েও মতপার্থক্য আছে।আলেকজান্ডার ৩২৩ খ্রিষ্টপূর্ব জুন মাসের ১১ অথবা ১২ তারিখে ব্যাবিলনে দ্বিতীয় নেবুচাদনেজারের প্রাসাদে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সময় তার বয়স ছিল ৩২ বছর।

তথ্যসূত্র উইকি পিডিয়া

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৪:২৬

ঝালমুড়ি আলা বলেছেন: অনেক কিছু জানা হলো আপনার পোস্টের মাধ্যমে ।

১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:০৩

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাই ঝালমুড়ি আলা ।

২| ১৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ৯:৪৬

কল্লোল পথিক বলেছেন:




সুন্দর পোস্ট।
পোস্টে ++++++++

১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:০৪

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই কল্লোল পথিক।

৩| ১৭ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১১:২২

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: অনেক তথ্যযুক্ত পোস্ট পোস্টির জন্য লেখককে ধন্যবাদ ।

১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:০৫

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: পাশে থেকে অনুপেরনা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই ঠ্যঠা মফিজ ।

৪| ১৭ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৪২

মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার ইতিহাস তুলে ধরেছেন।

১৭ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৫:০৬

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ মামুন ইসলাম ভাই ।

৫| ১৮ ই জুন, ২০১৬ ভোর ৪:৪২

ঈশান আহম্মেদ বলেছেন: ইতিহাস পড়তে ভালো লাগে না।তবুও পড়লাম।ভালৈ লাগলো।লেখকের ধন্যবাদ এত ভালো একটা পোস্ট দেবার জন্য।

১৯ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:২৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: আপনি পড়েছেন জেনে খুশি হলাম । অনেক ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.