নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান

ব্লগ সার্চম্যান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর কিছু কথাঃ

১০ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:২০


নওয়াব বাহহদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের টাঙ্গাইলস্থ ধনবাড়ীর একজন নবাব। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তিনি অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। সে সময় তিনি শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তার দৌহিত্র মোহাম্মদ আলী বগুড়া পাকিস্তানের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাছাড়াও তার এক পুত্র সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী পুর্ব পাকিস্তান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। নওয়াব সাহেব ১৮৬৩ সালের ২৯শে ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীর বিখ্যাত জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার আড়াইশ বছর আগে নওয়াব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর পিতা শাহ সৈয়দ খোদা বক্স বর্তমান টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীতে বসতি স্থাপন করেন। নওয়াব আলী চৌধুরী শৈশবে গৃহ শিক্ষকের কাছে আরবী, ফার্সি, ও বাংলায় বিশেষ শিক্ষা লাভ করেন। তার আনুষ্ঠানিক লেখাপড়া শুরু হয় রাজশাহীর কলেজিয়েট স্কুলে এবং পরবর্তিতে কলকাতার বিখ্যাত সেন্ট জোভিয়ার্স কলেজ থেকে তিনি এফ.এ. পাশ করেন।১৮৯৫সাল থেকে ১৯০৪সাল পর্যন্ত নওয়াব সাহেবের কর্মতৎপরতা ছিল প্রধানত সাহিত্য এবং সংস্কৃতি কেন্দ্রিক। ১৮৯৫ সালে মিহিরও সুধাকর পত্রিকা একত্রিত হয়ে সাপ্তাহিক মিহির সুধাকর নামে আত্মপ্রকাশ করে। নওয়াব আলী চৌধুরী এর মালিক ছিলেন। সেজন্য একটি প্রেস ক্রয় করে তিনি কলকাতায় তার নিজ বাসভবনে স্থাপন করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, পন্ডিত রেয়াজউদ্দিন আহমদ আল মাশহাদী, কবি মোজাম্মেল হকের সাহিত্য প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর দান ছিল অপরিসীম। ফলে উল্লেখিত লেখকগন তাদের বিভিন্ন প্রকাশনায় নওয়াব আলী চৌধুরীর নামে উৎসর্গ করেন।

শিক্ষানুরাগী অনন্য জমিদার নওয়াব আলী চৌধুরী বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার রচিত গ্রন্থ সমূহ
ঈদুল আযহা (১৮৯০ সাল)
মৌলুদ শরীফ (১৯০৩ সাল )
ভারনাকুলার এডুকেশন ইন বেঙ্গল (১৯০০ সাল)
প্রাইমারি এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস্‌ (১৯০৬ সাল )

টাঙাইলের ধনবাড়ীর নবাব এস্টেটের ৭০০ বৎসর পুরোনো মসজিদ। প্রায় চারশত বৎসর পূর্বে এই মসজিদের সংস্কার করা হয়। তারপর থেকে মসজিদটি এই অবস্থায়ই আছে

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব এস্টেটের বৈঠকখানা। বৃটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তৎকালীন পূর্ব বঙ্গ সফরে এলে এই ভবনেই নবাব সাহেবের সাথে তার বৈঠক হয়। এই ঘরটিতে আসবাব পত্র এখনও ঠিক সেভাবেই সাজানো আছে যেভাবে সেদিনের বৈঠকের সময় সাজানো ছিল।
১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন থেকে তার রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রবর্তকদের প্রবল বাঁধার মুখে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয়ে পুর্ব বাংলা এবং আসাম নামক একটি মুসলিম প্রধান প্রদেশ জন্ম লাভ করলে নওয়াব আলী চৌধুরী একটা সর্বভারতীয় মুসলিম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গঠন করার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। তিনি মুসলমানদের অনগ্রসরতার জন্য অশিক্ষাকে দায়ী করেন। ১৯০৫ সালের যেদিন বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় সেদিনই ঢাকার নর্থব্রুক হলে তার ও ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহের উদ্দোগে প্রাদেশিক রাজনৈতিক সংগঠন গঠিত হয়। তিনি বংগ ভঙ্গ সম্পর্কে বলেন প্রদেশ রক্ষার জন্য যুদ্ধ করিয়াছি এবং যদিও সে চেষ্ঠা সফল হয় নাই তথাপিও পুর্ব বঙ্গে যাহারা আমাদের প্রতিপক্ষ ছিলেন তাহারা পর্যন্ত স্বীকার করিবেন যে আমরা যাহার জন্য চেষ্ঠা করিয়াছিলাম তাহাই ঠিক এবং বঙ্গভঙ্গ রদ হওয়াতে ওই প্রদেশের হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়েরই ক্ষতি হইয়াছে।
নবাব এস্টেটের অফিস ভবন, টাঙ্গাইল, ধনবাড়ী।
১৯১১ সালের ২৯শে আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে নবাব সলিমুল্লাহ এবং নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবী জানান। ১৯১২ সালের ৩১শে জানুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জের ঢাকায় অবস্থান কালে নওয়াব সলিমুল্লাহ এবং নওয়াব আলী সহ ১৯ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বঙ্গভঙ্গ রদের ফলে মুসলমানদের যে সমূহ ক্ষতি হচ্ছে সে কথা তুলে ধরেন। এ লক্ষ্যে ১৩ সদস্য বিশিষ্ট নাথান কমিটি গঠিত হলে নওয়াব আলী চৌধুরী এর অন্যতম সদস্য হন। এর অধীনে ছয়টি সাব কমিটি গঠিত হলে তিনি ৬ টি বিভাগের সদস্য নিযুক্ত হন। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আর্থিক সংকটের কারনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ চাপা পড়ে যায়। সে সময় নওয়াব আলী চৌধুরী ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি বিষয়টি আবার ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় আবার উপস্থাপন করেন। ১৯২০ সালের ১৮ই মার্চ ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে পরিনত হয় এবং ২৩শে মার্চ তা গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। লর্ড হার্ডিঞ্জ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নয় বছর পর ১৯২১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস শুরু হয়। ১৯২২ সালে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করেন। তাছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা গেলে নিজ জমিদারীর একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫,০০০ টাকা প্রদান করেন।
নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।২০০৩ সালের ৯ই জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস. এম. এ. ফায়েজের সভাপতিত্বে সিন্ডিকেটের এক সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিনেট ভবনের নাম সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর সিনেট ভবন করা হয়।
নওয়াব আলী চৌধুরী অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী । শিক্ষাবিস্তারে তার আন্তরিকতার জন্য সে সময় তাকে শিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। ১৯২৯ সালের ১৭ই এপ্রিল ইন্তেকালের পুর্ব পর্যন্ত তিনি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এদেশে নওয়াব আলী চৌধুরী ৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে জমি এবং আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। ১৯১০ সালে তিনি নিজস্ব এলাকা ধনবাড়ীতে নওয়াব ইনস্টিটিউট নামের একটি হাই স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। তাছাড়া সোনাতলা, কোদালিয়া, গফরগাঁও, পিংনা, জঙ্গলবাড়ি, হয়বতনগরসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহায়তা করেন।

নওয়াব আলী চৌধুরী কর্তৃক ১৯১০ সালে ধনবাড়ীতে প্রতিষ্ঠিত নওয়াব ইনস্টিটিউশন এর গেট
নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১১ সালের রংপুর অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলার পক্ষে প্রথম সোচ্চার হয়ে বলেছিলেন বাংলা আমাদের মাতৃভাষা, মাতৃস্তনের ন্যায়, জন্মভূমির শান্তি নিকেতনের ন্যায় বাংলা ভাষা। বাংলাভাষা আমাদের নিকট প্রিয়, কিন্তু হতভাগ্য আমরা, প্রিয় মাতৃভাষার উন্নতিকল্পে আমরা উদাসীন। অধঃপতন আমাদের হবে না - তো কার হবে? তৎকালীন প্রতিকূল পরিবেশে একজন জমিদার হয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বাক্ষর রাখেন। ১৯২১ সালে বাংলাভাষাকে প্রদেশের সরকারি ভাষা করার জন্য লিখিত প্রস্তাব পেশ করেন।
নওয়াব আলী চৌধুরীর কবর
সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯২৯সালের ১৭ এপ্রিল, বাংলায় ১৩৩৬, ১ বৈশাখ দার্জিলিংয়ে বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ইডেন ক্যাসেলে ইন্তেকাল করেন।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪৪

আহা রুবন বলেছেন: অনেক কিছু জানা হল।

১০ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:০৩

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য । শুভ রাত্রি ।

২| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:৩০

লেখা পাগলা বলেছেন: দারুন শেয়ার করছেন ভাই । ১ম পেলাচ +

১০ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৬:৫৭

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ লেখা পাগলা ভাই ।

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:৪৫

নতুন বিচারক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই শেয়ার করার জন্য ।

১০ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৬:৫৮

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ নতুন বিচারক ভাই ।

৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৭:০৩

নাইম রাজ বলেছেন: অনেক ভালো লাগল ।

১১ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:৫৫

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ নাইম রাজ ভাই ।আপনাকে আমার ব্লগে প্রথম দেখলাম মনে হয় ।নতুন ব্লগার হলে আমার ব্লগে স্বাগতম ।
এবং শুভেচ্ছা থাকল ।

৫| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৬

প্রামানিক বলেছেন: অনেক কিছু জানা হলো। সময় পেলে ধনবাড়ি বেড়াতে যাবো।

১১ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১:৫৯

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামানিক ভাই । যাওয়ার সময় সম্ভব হলে আপনার খরচে আপনার সঙ্গে আমারে নিয়েন ভাই ।আমিও একটু ঘুরে আসমুনি ।ভালো থেকেন শুভকামনা থাকল ।

৬| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১:০৬

ঠ্যঠা মফিজ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সার্চম্যান । সত্যিই আপনি একজন সার্চম্যান । অফুরন্ত সুন্দর একটি তথ্য দিলেন ।

১১ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:০১

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

৭| ১০ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১০:৪১

হুমম্‌ বলেছেন: ++++++++++

১১ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ২:০২

ব্লগ সার্চম্যান বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.