নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আই এ্যাম গুড ফর নাথিং।

বাংলার এয়ানা

আই এ্যাম গুড ফর নাথিং।

বাংলার এয়ানা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঠগী: ২০ লক্ষ নিরীহ মানুষের প্রাণ নেওয়া এক খুনী সম্প্রদায়

০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:১২

ঠগীরা ১৩ শতাব্দী থেকে ১৯ শতাব্দী পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৬০০ বছর ধরে পুরো ভারত জুড়ে ত্রাস চালিয়েছে গিনেস বুকে রেকর্ড এর তথ্য মতে এই সুদীর্ঘ সময়ে তারা ২০ লাখের বেশি নিরীহ মানুষ খুন করেছে। একজন ঠগী মাসে গড়ে আট থেকে দশ জনকে খুন করতো। বাহরাম বলে এক নিষ্ঠুর ঠগীর নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ৯৩১ জন মানুষকে সে খুন করেছিল বলে দাবি করে এবং পরবর্তীতে ঐ নাম গিনেস বুক অব রেকর্ডে ওঠে।

১২৯০ সালে জালালউদ্দিনের রাজত্বকালে দিল্লিতে প্রায় এক হাজার ঠগ ধরা পড়ে। ওদের ধরার কারণ ছিল তারা সুলতানের এক প্রিয় দাসকে হত্যা করেছিল। এতে সুলতানের মনে ক্রোধের সঞ্চার হয়েছিল। তবে আশ্চর্যজনকভাবে সুলতান তাদের কোনো শাস্তি না দিয়ে মুক্তি দিয়েছিলেন।

মুক্তি দেয়ার আগে সুলতান তাদের সবার পিঠে নিজের মুদ্রার গরম ছাপ দিয়ে দেন এবং শর্ত দেন তারা যেন দিল্লিতে আর ফিরে না আসে। এরপর সেই ঠগীরা উত্তর, দক্ষিণ ভারত থেকে শুরু করে বাংলা সহ পুরো ভারত ছড়িয়ে পড়ে। ঠগীদের সবচেয়ে বর্বর সময় ছিল ১৭ ও ১৮ শতক। শুধুমাত্র ১৮৩০ সালেই ঠগীদের শিকার হয়েছিল প্রায় ৩০ হাজার নিরীহ মানুষ।
ঠগীরা দলবেঁধে পথ ভ্রমণ করত তারা এমন সব পদ্ধতিতে ভ্রমণ করতো যেন তারা কোনো তীর্থযাত্রী কিংবা কোনো বণিক দল ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছে। ঠগীদের দল ছিল বিশাল, এক একটি দলে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ এক একটি দলে তারা ঘুরে বেড়াত। তারা পথ চলতে পথে বণিক বা পথচারী দেখলে তাদের সঙ্গে ভাব করতো।

যেহেতু বড় দলের সঙ্গে পথ চলতে রাস্তায় ঝুঁকি কম হবে তাই পথচারি বা বনিক দল তাদের সাথে পথযাত্রা করতে সম্মতি দিতো। আর সেই দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তারা নিশ্চিন্তে পথ চলতো, বিশ্রাম নিতো, খাবার খেতো আর সুযোগ বুঝে ঠগি’রা শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। এছাড়াও বণিক দলের উপর নিজেদের চর লাগিয়ে রাখতো আগে থেকে, তারা কোথায় যাবে। কি পরিমাণ অর্থ সম্পত্তি হাতে আছে ইত্যাদি ইত্যাদি।

হত্যা করার ক্ষেত্রে ঠগীরা কিছু নিয়ম মেনে চলতো। তারা কখনোই ঘুমন্ত অবস্থায় কাউকে হত্যা করত না। হত্যা করার আগে হয়তো তারা শিকারের সামনে চেঁচিয়ে উঠতো সাপ সাপ বলে আর শিকারের ঘুম ভেঙে যেত। আর তখন তিন থেকে চার জন শিকারির হাত পা মাটিতে চেপে ধরতো, আর সবচেয়ে পাঁকা ঠগী রুমাল দিয়ে ফাঁস দিয়ে হত্যা করতো। খুন করার সময় ঠগীরা কোনো রক্তপাত ঘটাতো না, এটা তাদের নিয়মের বাহিরে। ঠগী দলে একজন দলপতি থাকতো। দলপতিদের বলা হতো জমাদার। ঠগীদের আলদা নিজস্ব ভাষাও ছিল। সেই ভাষা ঠগী ছাড়া আর কেউই বুঝতে পারতো না।

খুন করার পর ঠগীরা তাদের শিকারকে কবর দিতো বা কোনো কুয়োর ফেলে দিতো। কবর দেয়ার পর সমাধির উপরে তারা এক ভোজের আয়োজন করতো গুঁড় দিয়ে। সেই ভোজে মন্ত্রপুত গুঁড় খেতে দেওয়া হতো, শুধুমাত্র যারা হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করতো তারাই সেই মন্ত্রপূত গুড়ের ভোগ পেত। অন্যরাও ভোগ পেত তবে সেটি মন্ত্রপূত গুঁড় নয়, সাধারণ গুঁড়।

ঠগীদের মধ্যে হিন্দু, মুসলমান, ব্রাহ্মণ, শিখ সব ধর্ম ও শ্রেণীর মানুষ ছিল। ভারতবর্ষে হাজার বছর ধরে ধর্ম, জাত-পাত নিয়ে টানাপোড়ন থাকলেও ঠগীদের মধ্যে ছিল না। তাদের সব ধর্ম ছিল একটাই তারা ঠগী। ঠগীদের নিজস্ব দেবী ছিল ভবানী। সনাতন ঠগী ছাড়াও সব ধর্মের ঠগীরাই এই দেবীকে মানতো ও বিশ্বাস করতো। আর তারা এটাও বিশ্বাস করতো তারা যা করছে দেবী ভবানীকে সন্তুষ্টি করার জন্যই করছে। ঠগীরা যখন কাউকে খুন করার জন্য ঠিক করতো, তারা তাকে খুন করতোই।

শিকারের কাছে টাকা পয়সা না থাকলেও তারা খুন করতো। তারা বিশ্বাস করতো দেবী খুনের আদেশ দিয়েছে আর খুন না করলে দেবীর আদেশ অমান্য করা হবে। একবার এক ঠগী দল ১২ জনের একটি দলকে খুন করার জন্য প্রায় ২০০ মাইল পথ হেটেছে। কারণ ছিল একটাই তাদের খুন করার জন্য নিশানা করেছিল, আর সেটা তাদের সম্পন্ন করতেই হবে। সাধারণ মানুষদের মতো ঠগীদেরও স্ত্রী, সন্তান নিয়ে সংসার ছিল। বেশিরভাগ ঠগীর ক্ষেত্রেই তারা যে ঠগী এ কথা তাদের পরিবারের কেউ জানতো না। ঠগী স্ত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ জানতো।

তবে তারা সমাজে স্বাভাবিকভাবেই বসবাস করতেন। ঠগীরা কখনো নিজের অঞ্চলের কারো কোনো ক্ষতি বা কোনো রকমের অপকর্ম করতো না। তারা তাদের পরিবার ও সমাজ থেকে হাজার মাইল দূরে গিয়ে অপকর্ম চালাতো। তবে এ কথা ঠগীদের পরিবারের সদস্য বা সমাজের মানুষেরা জানতো না। তারা জানতো সে হয়তো বা বিদেশে চলে গেছে বা চাকরি করছে কিংবা বাণিজ্য করছে। ছয় মাস কিংবা বছরে একবার তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতো।

বেশিরভাগ ঠগীরা তাদের সন্তানদের বয়স ১৪ থেকে ১৫ পেরোলেই তাদেরও এই পথে নিয়ে আসতো। আস্তে আস্তে সে বালক ছেলেটিও পাকা ঠগী হয়ে উঠতো। আর এই প্রক্রিয়া চলতো প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। ঠগীরা যে কেবল ব্যবসায়ী কিংবা পথিকদেরকেই নিজেদের শিকার বানাত তাই নয়। বহু রাজ পরিবারের সদস্যরাও ঠগীদের শিকার হয়েছে। এই ধরনের শিকারের ক্ষেত্রে তারা আরো চতুরতা অবলম্বন করতো। যেহেতু তারা সন্ন্যাসী কিংবা বণিক সেজে লুটপাট চালাত তাই অপরিচিত হওয়ায় তারা রাজ সদস্যদের দলের কাছাকাছি খুব একটা ঘেঁষতে পারতো না।

ঠগীদের খুন করার অস্ত্র ছিল রুমাল, হলুদ কাপড়ের অতি সাধারণ এক অস্ত্র, তবে খুবই কার্যকরী। রুমাল এর মাঝে তারা রুপোর টাকা বেঁধে রাখতো আর সেটাই হয়ে উঠতো অব্যর্থ মরণ ফাঁস। ঠগীদের এই ত্রাসের সমাপ্তি হয় ইংরেজদের মাধ্যমে। ঠগীদের ব্যাপারে ইংরেজরা শুরুতে খুব একটা মাথা ঘামায়নি। তারা তাদের আট দশটা সাধারণ ডাকাত দলই মনে করতো। তবে ইংরেজদের টনক নড়ে ১৮২০ সালের দিকে। তখন তারা প্রচুর গণকবর আবিষ্কার করে। একেকটি গণকবরের মৃতের সংখ্যা ছিল ৫০ বা তারও বেশি।

ব্রিটিশ সরকার ঠগীদের নিমূর্ল করার জন্য উইলিয়াম স্লিমাঙ্কে দায়িত্ব দেয়। স্লিম্যান তখন বেঙ্গল আর্মির অফিসার ছিলেন এবং অত্যন্ত বিচক্ষণ ব্যক্তি। ভারতে আসার পর তিনি ঠগীদের নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করেছেন। ঠগীদের ব্যাপারে তিনি এতোটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিল যে তার সহকর্মীরা তার নাম দিয়েছিলো ঠগী স্লিম্যান। শুরুর দিকে স্লিম্যান কিছুতেই অন্যান্য দুস্কৃতিকারীদের থেকে ঠগীদের পৃথক করতে পারছিলেন না, কারন ঠগীরা অত্যন্ত নিপুণ কৌশলে অপরাধ ঢেকে রাখছিল।




স্লিম্যান গুপ্তচর নিয়োগ করলেন, গঠন করলেন বিশেষ পুলিশ বাহিনী ও আলাদা বিচার আদালত। পাশাপাশি ঠগীদের অপরাধস্থল বিশ্লেষণ করে তৈরি করলেন মানচিত্র এবং অপরাধের দিনক্ষণের একটি তালিকা তৈরি করলেন যাতে পরবর্তী হত্যার সময়কাল আঁচ করা যায়। নিজের লোকদের ব্যবসায়ীর ছদ্মবেশে অস্ত্রসহ সেসব স্থানে পাঠাতে থাকেন। তারপর ১৮৩০ সালে শ্লিমানের গুপ্তচরদের দক্ষতায় ঠগীরা দলে দলে ধরা পড়তে থাকে। এদের কারো কারো মৃত্যুদণ্ড, কারো যাবজ্জীবন জেল, কারো বা দ্বীপান্তর দিয়ে এদের দমন করতে সক্ষম হন। এই ঠগীদের বিনাশ করতে গিয়ে স্লিম্যান ঠগীদের ভাষাও শিখে ফেলেছিলেন।



মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪৩

বিটপি বলেছেন: ইংরেজদেরকে বেনিয়া লুটেরাদের জাত বলা হলেও কয়েকটি কারণে ইংরেজ শাসনামলের প্রতি ভারতবর্ষ কৃতজ্ঞ থাকবে - তার একটি হল ঠগী দমন। একজন উইলিয়াম স্লিম্যানের দিত রাত গবেষণা এবং নির্ঘুম অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে বলতে গেলে প্রায় অসাধ্যকে সাধন করা হয়েছে। সুশাসনের ক্ষেত্রে স্লিম্যান একটা অসাধারণ নজীর হয়ে থাকবেন।

০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৪৬

বাংলার এয়ানা বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ৯:৫৯

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
- এটি সম্ভবতো কপি-পেস্ট করা পোস্ট।

৩| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:০৭

নূর আলম হিরণ বলেছেন: শ্রীপ্রান্থের ঠগি বই থেকে বেশিরভাগ উধৃত। বইটি বেশ ধারুন ভাবে লিখেছেন শ্রীপ্রান্থ। একবার পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা মুশকিল।

৪| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:২৭

শেরজা তপন বলেছেন: এদের নিয়ে বলিউডে ছবি ও সিরিয়াল হয়েছে!
@বিটপির সাথে সহমত।

০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:৩৪

বাংলার এয়ানা বলেছেন:


কিছুদিন আগে একটি তেলুগু ফ্লিম দেখলাম এই ঠগী কাহিনী নিয়ে।

৫| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:২৬

আরইউ বলেছেন:



লাইন বাই লইন কপি-পেস্ট করেছেন তথ্যসূত্র ছাড়া!

https://www.mukhosh.net/thuggee-a-organised-gangs-of-professional-robbers-and-murderers-in-india/
https://statewatch.net/post/31842

৬| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:৪৭

রানার ব্লগ বলেছেন: ঠগীদের নিয়ে আরো অনেক ভয়ানক গল্প আছে !!!!

কপি পেস্টের দোষে দুষ্ট হলে দয়া করে সুত্র হিসাবে লিংক খানা দিন !!!!

৭| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ১:৪৭

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
নেট ঘেঁটে পাওয়া তথ্য দিলাম।

৮| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ দুপুর ২:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: ঠগী ছিলো সমাজে অবহেলিত সম্প্রদায়।

৯| ০৮ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১১:৪৮

ঊণকৌটী বলেছেন: ঠগী ছিলো এবং আছে এই সময়ে অন্য রূপে আবিষ্কৃত হচ্ছে

১০| ০৯ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ১:১৪

রিফাত হোসেন বলেছেন: ব্লগে এই নিয়ে অনেক আগেও কপি পেস্ট লেখা পেয়েছি। সূত্র জানালে ভাল হত। যদিও ইতিহাস, ইতিহাস হয়েই থেকে যাবে।

পোস্ট থেকে মন্তব্যই মূল্যবান মনে হচ্ছে! ঊণকৌটী বলেছেন: ঠগী ছিলো এবং আছে এই সময়ে অন্য রূপে আবিষ্কৃত হচ্ছে

১৭ ই নভেম্বর, ২০২২ সকাল ১০:০৬

বাংলার এয়ানা বলেছেন:



ঠগী নিয়ে আপনি লিখলেও কপি পেষ্ট মনে হবে, কারন সব লিখা গুলোই প্রায় কমন রেফারেন্স ফলো করে লিখা একই , আর যদি মনে হয় কপি তা হলে আরইউ'র মন্তব্যে সুত্র পাবেন। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.