নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মাত্রমানুষ

আয়শা ঝর্না

আয়শা ঝর্না › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী ও তার নিরাপত্তাহীনতা এবং একটি আত্মহত্যা

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৩

একজন আকতার জাহান, রাজশাহী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। শিক্ষায়, আর্থিক দিক থেকে কোনভাবেই তিনি দূর্বল ছিলেন না। তবু তাকে আত্মহত্যা করতে হলো! কেননা সে ছিল অত্যাচারী স্বামীর নিপীড়ন থেকে বেরিয়ে আসা এক গৃহত্যাগী নারী। কেননা সে তার নিজের সন্তান আর নিজের জীবনকে ভালবাসত। তার স্বামী তাকে ছুরি নিয়ে তাড়া করার পর তিনি এক কাপড়েই গৃহ ত্যাগ করেছিলেন। এক কাপড়ে অতি যত্নে গড়া সংসারকে পেছনে ফেলে বাঁচতে চেয়েছিলেন খুব সাধারণভাবে। তবু শেষ রক্ষা হোল কই? সন্তানের নিরাপত্তা, সামাজিক হেনস্তা তাকে মানসিক যাতনায় রাখত। তাই সবার মাঝে থেকেও যে সে ছিল একা। একা একাই নিজের যন্ত্রনায় নিজেই কুকড়ে যেতেন। শেষমেষ মৃতু্যর পথই বেছে নিলেন।

যদিও তার মৃতু্যকে আমরা আত্মহত্যা বলছি, তবু এটি আত্মহত্যা নয়। এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, এই কৃসংষ্কারে আবদ্ধ এই সমাজ এখনও ডিভোর্সী নারীকে একঘরে করে রাখতেই অভ্যস্ত। আর তাই সকল অার্থিক সামর্থ্য থাকা সত্বেও সে থাকে সমাজের এককোণে। আর নয়মাস দশদিন পেটে রেখে তিলে তিলে গড়া সন্তানের দায়িত্বও যখন একজন পিতা আইনগতভাবে পেয়ে যান তখন একজন নারী হয়ে পড়েন অসহায়। সহজে সে অন্য জীবনে অভ্যস্ত হতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এ রকম আরও আরও কত আকতার জাহান মৃতু্যর প্রহর গুনছে কে জানে! এই সমাজ কি বদলাবে? নাকি এর অন্ধকার কূপে পড়ে প্রাণ দেবে আরও অনেক শিক্ষিত নারী? আমরা ভুলে যেতে পারি ঢাবির শিক্ষক রুমানার কথা। যার দু'চোখই অন্ধ করে দিয়েছিল তার নরপশু স্বামী।

তবু সমাজ চোখ বুজে থাকে। না দেখার ভাণ করে। মেয়ের অশান্ত মনের খবর জানার বা বোঝার চেষ্টা করেন না তার বাবা-মা। তারা সমাজের তথাকথিত সম্মানের ভয়ে মেয়েকে কোন রকমে সংসারে জীবনে টিকে থাকতে বলেন। আর এদিকে ধীরে ধীরে তার প্রিয় সন্তানটি মৃতের মত সংসারের ঘানি টেনে চলে যখন সে ঘানি আর টানতে না পারে তখনই ঘটে যায় বিষ্ফোরণ, আমাদের সমাজের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় তার সীমাবদ্ধতা। আজকে সময় এসেছে নারীদেরকে সোচ্চার হবার- তার সমস্ত নিপীনের বিরুদ্ধে, তাকে দিতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা। আমাদের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটাতে হবে। কিছু পারিবারিক আইনেরও পরিবর্তন আজ প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। কারণ তিলে তিলে গড়া একজন নারীর সবকিছু তার প্রাক্তন স্বামী একাই পাবেন, তা তো হতে পারে না। ডির্ভোসী বাবা-মায়ের সন্তানের দায়িত্ব দু'জনেই সমানভাবে দেয়া উচিৎ। একজন মা ছটফট করে তার সন্তানকে দেখার আশায় অথচ তার বাবা পিতৃত্ব ফলানোর জন্য তাকে মায়ের সাথে দেখা করতে দেয় না। একজন আকতার জাহানকে এ সমাজ মেরে ফেলেছে, সে মরতে চায়নি, বাঁচতে চেয়েছিল প্রচন্ডভাবে! এর দায়ভার আমরা কিছুতেই এড়াতে পারি না।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:০৪

রায়হানুল এফ রাজ বলেছেন: সামাজিক অনাচার অনেক বেড়ে গেছে। শিক্ষিত মানুষেরাও এখন হায়েনা।

২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪৭

কবি এবং হিমু বলেছেন: আজকে সময় এসেছে নারীদেরকে সোচ্চার হবার__এখন ও কি নারী সোচ্চার হয়নি?সমাজটা নারী-পুরুষ সবাইকে নিয়ে।একজন নারী যদি বিয়ের পর মা হতে না পারে তাহলে সেই নারী,সমাজে সব থেকে বেশি কটু কথা শুনে থাকে তার মতোই অন্য নারীদের কাছ থেকে।আর তাই পুরুষের পাশপাশি নারীদের বেশি সচেতন হওয়া উচিত মনে করি।
ডির্ভোসী বাবা-মায়ের সন্তানের দায়িত্ব দু'জনেই সমানভাবে দেয়া উচিৎ___এটার সাথে সহমত।

৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:০৪

আয়শা ঝর্না বলেছেন: রায়হানুল এফ রাজ, দেখুন সামািজক অনাচার অনাচার আগেও ছিল এখনও আছে। আগে না হয় মেয়েরা শিক্ষিত ছিল না বলে সে লাঞ্ছনা নিয়তি নির্ধারিত বলে মেনে নিত। কিন্তু এখন নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী, শিক্ষিত তবু তাদেরকে ঘরে-বাইরে অপদস্ত হতে হবে কেন? এটি কি ধরেণের অনাচার? এটি পুরুষের মনোজাগতিক আনাচর নয়? পুরুষ যদিও বাইরে থেকে স্মার্ট হয়েছে কিন্তু ভেতরে ভেতরে সে এখনও শধ্যযুগয়ি প্রথাকে নিজের মনে লালন করে। আর এ জন্যই মেয়েরা স্বাবলম্বী, শিক্ষিত হয়েও নিজের মত করে একটা জীবন সে বেছে নিতে পারে না।

৪| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:২৪

রেজা ঘটক বলেছেন: আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রতিটি স্তরে এখনো যে নারী-পুরুষ সামাজিক বৈষম্য, পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি, আইনের সীমাবদ্ধতা, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তাহীনতা, তার সবগুলো নেগেটিভ নিয়ামকই আকতার জাহানদের আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার জন্য যথেষ্ট। সমাজে ও পরিবারে সম্মান হারাতে হারাতে একসময এরা খুব একা হয়ে যায়। সেই একাকীত্বের কাছে একসময় মানসিক দ্বন্দ্বের সুতীব্র পরাঘাতেই আত্মহত্যার মত দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যক্তির জন্য পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়বোধ এখানে অনেকটা দায়ী। পাশাপাশি ব্যক্তির মানসিক যন্ত্রণাকে নিউট্রাল করার মত সামাজিক অনুসঙ্গগুলো এখনো আমাদের মত দেশে যথেষ্ট উন্নত হয়নি। যে কারণে এই দায় পরিবার, সমাজ বা রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।

৫| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৮ ভোর ৫:৪০

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: ব্যক্তিগত সততা খুব দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.