![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোরআন ও হাদিসের আলোকে নারীদের সালাত পদ্ধতিকে ইদানিং একটি দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। নিম্নে এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হলো-
সালাত পদ্ধতিতে নারীদের ক্ষেত্রে মৌলিকভাবে দুটি পার্থক্য রয়েছে। আর তা হলো-
১. সতর বা পর্দাকেন্দ্রিক পার্থক্য :
অর্থাৎ যতটুকু সম্ভব গোপনীয়তার মাধ্যমে নারীরা সালাত আদায় করবে। এই মর্মে আল্লাহ মহান পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন,
ﻭَﻗَﺮْﻥَ ﻓِﻲ ﺑُﻴُﻮﺗِﻜُﻦَّ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺒَﺮَّﺟْﻦَ ﺗَﺒَﺮُّﺝَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﺍﻟْﺄُﻭﻟَﻰ ﻭَﺃَﻗِﻤْﻦَ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓَ ﻭَﺁﺗِﻴﻦَ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓَ ﻭَﺃَﻃِﻌْﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻟِﻴُﺬْﻫِﺐَ ﻋَﻨﻜُﻢُ ﺍﻟﺮِّﺟْﺲَ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟْﺒَﻴْﺖِ ﻭَﻳُﻄَﻬِّﺮَﻛُﻢْ ﺗَﻄْﻬِﻴﺮًﺍ
তোমরা গৃহাভন্তরে অবস্থান করবে-মুর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। [সুরা আল আহযাব, আয়াত নং ৩৩]
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ [রা.] থেকে বর্ণিত হুজুর [সা.] এরশাদ করেন নারীদের নিজকক্ষে নামাজ পড়া বাড়িতে নামাজ পড়ার তুলনায় উত্তম, আর নির্জন ও অভ্যান্তরিন স্থানে নামাজ পড়া ঘরে নামাজ পড়া থেকে উত্তম। [হাদিসটি সহিহ, আবু দাউদ ১/৩৮৩, মুসতাদরাকে হাকেম ১/৩২৮]
হজরত আয়েশা [রা.] রাসুল [সা.] থেকে বর্ণনা করেন, ওরনা বা চাদর ব্যতিত নারীদের নামাজ কবুল হবেনা। [আবু দাউদ ১/৪২১ তিরমিজী ২/২১৫-মুসতাদরাকে হাকিম ১/৫১]
উল্লেখিত আয়াত ও হাদিস দ্বারা এ কথার সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, নারীদের সব সময় পর্দার আড়ালেই থাকা প্রয়োজন। আর নামাজ ইসলামের অন্যতম একটি বিধান সুতরাং নারীর নামাজ অধিক পর্দায় হবে- এটাই বিবেকের দাবী।
আমরা দেখলাম পর্দার ক্ষেত্রে নামাজ পড়ার সময় পুরুষ ও নারীদের কি পার্থক্য আছে, এখন আমরা দেখব নামাজের রুকন বা পড়ার পদ্ধতির ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীদের নামাজের মাঝে কি পার্থক্য আছে
২. রোকন বা পড়ার পদ্ধতিতে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য : চার ধরনের দলীলের আলোকে সংক্ষিপ্ত ভাবে পদ্ধতিগত এই পার্থক্য তুলে ধরা হলো-
১. হাদিস শরীফের আলোকে। ২. সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্য ও কর্মের আলোকে। ৩. তাবেয়ী ইমাম গনের ঐক্যমত্যের আলোকে। ৪. চার ইমামের ঐক্যমত্যের আলোকে।
১. হাদিসের আলোকে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য : নামাজি নারীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বাধা দেওয়ার ক্ষেত্রে করণীয় কি? রাসুল [সা. এ প্রসঙ্গে বলেন, পুরুষদের জন্য হলো তাসবীহ বলা আর নারীদের জন্য হাতে আওয়াজ করা। [সহীহ বুখারী ১/৪০৩] ইয়াজিদ ইবনে আবী হাবীব [রা.] বলেন, একবার রাসুল [সা.] নামাজরত দুই নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্য) বললেন যখন সিজদা করবে তখন শরীর জমিনের সাথে মিলিয়ে দিবে, কেননা নারীরা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো নয়। [কিতাবুল মারাসিল-ইমাম আবু দাউদ : পৃঃ১১৭]
প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস শায়েখ শুয়াইব আরনাউত [রহ.] হাদিসটির সুত্র সম্পর্কে বলেন, বণর্নাকারী প্রত্যেক রাবী সর্ব্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য রাবীদের অন্তর্ভুক্ত সুতরাং হাদিসটি “সহীহ”। [তালীক আলা মারাসিলে আবী দাউদ পৃঃ ১১৭] আহলে হাদিস স্বীকৃত শীর্ষস্থানীয় আলেম নবাব সিদ্দীক হাসান খান বুখারী শরীফের ব্যাখ্যগ্রন্থ ‘‘আওনুল বারী” (১/৫২০) -তে লিখেছেন উল্লেখিত হাদিস সকল ইমামের উসুল অনুযায়ী দলীল হিসাবে পেশ করার যোগ্য। আর এ হাদিসটির উপরই আহলে সুন্নত ও চার মাজহাবসহ অন্যন্যদের আমল চলে আসছে।
উল্লেখ্য এই সব হাদিসের সমর্থনে নারী ও পুরুষদের নামাজ আদায়ের পদ্ধতিগত পার্থক্য ও ভিন্নতাকে নির্দেশ করে । এমন আরো অনেক হাদিস রয়েছে। পক্ষান্তরে এগুলোর সাথে বিরোধ পুর্ন একটি হাদিসও কোথাও পাওয়া যাবে না, যাতে বলা রয়েছে যে, পুরুষ ও নারীর নামাজের পদ্ধতিতে কোন পার্থক্য নেই।
২. সাহাবায়ে কেরামের বক্তব্যের আলোকে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য : হজরত নাফেয় [রহ.] ইবনে উমর [রা.] থেকে বর্ণনা করেন, ওনাকে রাসুল [সা.] -এর যামানায় নারীদের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, প্রথমত তারা চার পা হয়ে বসত অতপর এক পক্ষ হয়ে বসার জন্য বলা হল। আসারটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহীহ। [জামেউল মাসানীদ-ইমাম আবু হানীফা [রহ.], খণ্ড ১/৪০০]
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [রা.] থেকে বর্ণিত ওনাকে নারীদের নামাজ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, নারীরা বৈঠকে আংগুলসমুহ মিলিয়ে ও সমবেতভাবে বসবে। [এই হাদিসের সমস্ত রাবী সিকাহ- সুতারাং হাদিস সহীহ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-খণ্ড ১/২৪২]
৩. তাবেয়ী ইমামগণের ঐক্যমতের আলোকে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য : হজরত হাসান বসরী ও হজরত কাতাদা [রহ.] বলেন, নারীরা যখন সিজদা করবে তখন তারা যথা সম্ভব জরসড় হয়ে থাকবে। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সিজদা দিবে না, যাতে কোমর উচু হয়ে না থাকে। [ হাদিসটি সহীহ, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, খণ্ড ৩/১৩৭-ইবনে আবী শাইবা ১/৪২]
কুফাবসীদের ইমাম ইবরাহীম নাখয়ী [রহ.] বলেন নারীরা বসা অবস্থায় এক পক্ষ হয়ে বসবে । [সহীহ, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, খণ্ড ১/৪৩]
মক্কা বাসীদের ইমাম আতা ইবনে আবী রাবাহ [রহ.] বর্ণনা করেন নারী যখন রুকুতে যাবে অত্যন্ত সংকোচিতভাবে যাবে এবং হাতদ্বয় পেটের সাথে মিলিয়ে রাখবে। [সহীহ মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক ৩/১৩৭]
খালেদ ইবনে লাজলাজ সিরিয়া বাসীদের ইমাম , তিনি বলেন নারীদের আদেশ করা হত, তারা যেন নামাযে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের উপর বসে। পুরুষদের মত না বসে । আবরনযোগ্য কোন কিছু প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় নারীদেরকে এমনটি করতে হয়। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ২/৫০৫]
মোট কথা তাবেয়ীদের যুগে যারা ইমাম এবং ইসলামি বিধি বিধানের ক্ষেত্রে অনুসরনীয় তাদের মতামত থেকে প্রমানিত হল যে, নারী ও পুরুষদের নামাযের পদ্ধতি অভিন্ন মনে করা সম্পুর্ন ভুল । সাহাবি ও তাবেয়ীদের মতামতের সাথে এই ধারনার কোনই মিল নেই।
৪. ইমামের ফিকহের আলোকে নারী ও পুরুষের নামাজের পার্থক্য :
ফিকহে হানাফি : ইমাম আবু হানিফা [রহ.] -এর অন্যতম শাগরেদ ইমাম মুহাম্মদ [রহ.] বলেন আমাদের নিকট নারীদের নামাজে বসার পছন্দনীয় পদ্ধতি হলো উভয় পা এক পাশে মিলিয়ে রাখবে, পুরুষের মতো এক পা দাঁড় করিয়ে রখবে না। [কিতাবুরল আসার ১/৬০৯, আরো দ্রষ্টব্য- হিদায়াঃ ১/১০০-১১০-১১১- ফাতওয়ায়ে শামী ১/৫০৪- ফাতওয়ায়ে আলমগীরি-১/৭৩]
ফিকহে শাফেয়ি : ইমাম শাফেয়ি [রহ.] বলেন, আল্লাহ পাক নারীদেরকে পুরো পুরি পর্দায় থাকার শিক্ষা দিয়েছেন। এবং রাসুলও [সা.] অনুরুপ শিক্ষা দিয়েছেন। তাই আমার নিকট পছন্দনীয় হলো, সিজদা অবস্থায় নারীরা এক অঙ্গের সাথে অপর অঙ্গকে মিলিয়ে রাখবে, পেট উরুর সাথে মিলিয়ে রাখবে এবং সিজদা এমনভাবে করবে যাতে সতরের অধিক হেফাজত হয়। [যাখীরা, ইমাম কারাফী ২/১৯৩]
ফিকহে হাম্বলি : তাকবীরে নারীদের হাত উঠানোর সম্পর্কে ইমাম আহমাদ [রহ.] বলেন, হাত তুলনামুলক কম উঠাবে। [আল মুগনী -২/১৩৯]
এ পর্যন্ত হাদিস, আসারে সাহাবা, আসারে তাবেয়ীন ও ইমামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট হল যে, পুরুষ ও নারীর নামাজের পদ্ধতির অভিন্ন নয় বরং ভিন্ন।।
মৌলিকভাবে নারী ও পুরুষের নামাজের মাঝে পাচ ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে- ১. তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত ওঠানো। ২. হাত বাঁধার স্থান। ৩. রুকুতে সামান্য ঝোঁকা। ৪. সিজদা জড়সড় হয়ে করা। ৫. বৈঠকে পার্থক্য।
প্রথম পার্থক্য- তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত ওঠানো : এক. ‘ওয়ায়েল ইবনে হুজুর [রা.] থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবীজি [সা.]-এর নিকট এলাম, তিনি আমাকে বললেন, হে ওয়ায়েল ইবনে হুজুর! যখন তুমি নামাজ পড়বে তখন তুমি তোমার হাত কান পর্যন্ত ওঠাবে আর নারীরা তাদের হাত বুকের ওপর বাঁধবে। [হাইসামি [রহ.] বলেন, ‘এই হাদিসের সমস্ত রাবী নির্ভরযোগ্য, উম্মে ইয়াহইয়া ব্যতীত। কিন্তু পরবর্তী মুহাদ্দিসগণের নিকট উম্মে ইয়াহইয়াও প্রসিদ্ধ।]
দুই. ‘ইমাম যুহরী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : নারীরা কাঁধ পর্যন্ত হাত ওঠাবে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/২৭০]
দ্বিতীয় পার্থক্য- হাত বাঁধা : ইমাম তহাবী (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : নারীরা তাদের উভয় হাতকে বুকের ওপর রেখে দেবে, আর এটাই তাদের জন্য যথোপযুক্ত সতর। (আসসিআয়া : ২/১৫৬, ফাতাওয়ায়ে শামী : ১/৫০৪, আল মাবসুত সারাখসী : ১/২৫)
তৃতীয় পার্থক্য- রুকুতে কম ঝোঁকা : ‘যখন নারী রুকুতে যাবে তখন হাতদ্বয় পেটের দিকে উঠিয়ে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে, আর যখন সিজদা করবে তখন হাতদ্বয় শরীরের সাথে এবং পেট ও সিনাকে রানের সাথে মিলিয়ে দেবে এবং যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে।
চতুর্থ পার্থক্য- সিজদা জড়সড় হয়ে করা : ‘বিখ্যাত তাবেঈ ইয়াযীদ ইবনে আবী হাবীব বলেন, একবার নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজরত দুই নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তাদেরকে (সংশোধনের উদ্দেশ্যে) বললেন, যখন সিজদা করবে তখন শরীর জমিনের সাথে মিশিয়ে দেবে। কেননা নারীরা এ ক্ষেত্রে পুরুষদের মতো নয়।’ [কিতাবুল মারাসীল ইমাম আবু দাউদ হা. নং ৮০] আবু দাউদ (রহ.)-এর উক্ত হাদিস সম্পর্কে গায়েবে মুকাল্লিদদের বিখ্যাত আলেম ও মুহাদ্দিস নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ‘আউনুল বারী’ ১/৫২০-এ লিখেছেন, এই মুরসাল হাদিসটি সকল ইমামের উসুল ও মূলনীতি অনুযায়ী দলিল হওয়ার যোগ্য।
হজরত মুজাহিদ ইবনে জাবর [রহ.] পুরুষদের জন্য নারীদের মতো ঊরুর সাথে পেট লাগিয়ে সিজদা করাকে অপছন্দ করতেন। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/৩০৩]
হজরত হাসান বসরী ও কাতাদাহ (রহ.) বলেন, নারী যখন সিজদা করবে তখন সে যথাসম্ভব জড়সড় হয়ে থাকবে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ফাঁকা রেখে সিজদা করবে না, যাতে কোমর উঁচু হয়ে থাকে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/৩০৩]
পঞ্চম পার্থক্য- বৈঠকের ক্ষেত্রে নারীগণ উভয় পা বাঁ পাশ দিয়ে বের করে দিয়ে জমিনের ওপর নিতম্ব রেখে ঊরুর সাথে পেট মিলিয়ে রাখবে : হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর [রা.] থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, নারী যখন নামাজের মধ্যে বসবে তখন যেন এক ঊরু (ডান ঊরু) আরেক ঊরুর ওপর রাখে, আর যখন সিজদা করবে তখন যেন পেট ঊরুর সাথে মিলিয়ে রাখে, যা তার সতরের জন্য অধিক উপযুক্ত হয়। [সুনানে কুবরা বাইহাকী : ২/২২৩]
হজরত খালেদ ইবনে লাজলাজ [রহ.] বলেন, নারীদেরকে আদেশ করা হতো তারা যেন নামাজে দুই পা ডান দিক দিয়ে বের করে নিতম্বের ওপর বসে, পুরুষদের মতো না বসে, আবরণীয় কোনো কিছু প্রকাশ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় নারীদেরকে এমনটি করতে হয়। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/৩০৩)
ইবনে আব্বাস [রা.]-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে নারীরা কিভাবে নামাজ আদায় করবে? তিনি বললেন, খুব জড়সড় হয়ে অঙ্গের সাথে অঙ্গ মিলিয়ে নামাজ আদায় করবে। [মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা : ১/৩০২] উপর্যুক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনা একটু মনোযোগের সাথে পাঠ করলে একজন ঠাণ্ডা মস্তিষ্কের পাঠক সহজে অনুমান করতে সক্ষম হবেন যে, নারীদের নামাজের পার্থক্যের বিষয়টি নবীজি [সা.] এবং সাহাবীদের যুগ থেকেই চলে আসছে এবং -এর পক্ষে অনেক শক্তিশালী দলিল রয়েছে।
কিন্তু কিছু কিছু ইসলামী চিন্তাবিদ (?) সালাফ থেকে চলে আসা সুপ্রতিষ্ঠিত মত ও পথকে উপেক্ষা করে নিজের গবেষণালব্ধ মত ও পথকে জনগণের মাঝে চালিয়ে দেওয়ার ও জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
লেখাটি বিভিন্ন লেখা থেকে নিয়ে একসাথে করা হয়েছে ।
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪০
আজাদ মোল্লা বলেছেন: মহিলার জন্য মহিলার ইমামতি বৈধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মু অরাকা (রাযিঃ) কে আদেশ করেন, তিনি যেন তার বাড়ির সদস্যদের ইমামতি করেন। [আবু দাঊদ, সালাত অধ্যায়, অনুচ্ছেদঃ মহিলার ইমামতি,নং ৫৯১, ইবনু খুযায়মা বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন]
আয়েশা (রাযিঃ) হতে প্রমাণিত, তিনি মহিলাদের ইমামতি করতেন এবং লাইনের মাঝে দাঁড়াতেন। [মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক,নং৫০৭৬, দারাকুত্বনী/বায়হাক্বী]
তবে তারা ইমামতির সময় পুরুষের মত লাইন থেকে আগে বেড়ে পৃথক স্থানে দাঁড়াবে না; বরং লাইনের মাঝেই অবস্থান করতঃ ইমামতি করবে। এটা কিছু সাহাবিয়ার আমল দ্বারা প্রমাণিত। [আর রাওদা আন নাদিয়্যাহ, সিদ্দীক হাসান খাঁন,১/৩২২]
কিন্তু মহিলার জন্য বৈধ নয় যে, তারা পুরুষের ইমামতি করবে। [প্রাগুক্ত,৩১২-৩১৩] এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আমল, খুলাফায়ে রাশেদীনের আমল এবং ধারাবাহিক মুসলিম উম্মার আমলই বড় প্রমাণ, যে তাঁরা কেউ মহিলাকে পুরুষের ইমাম নিযুক্ত করেন নি আর না তাদের যুগে এমন কোন নজীর ছিল।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘‘ঐ সম্প্রদায় কখনো সফলকাম হতে পারে না, যারা কোন মহিলাকে তাদের বিষয়াদির নেতা নিযুক্ত করে”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ মাগাযী, নং৪৪২৫] যেহেতু ইমামতি এক প্রকারের নেতৃত্ব, তাই তাদের এ পদে নিযুক্ত করা অবৈধ। [দেখুন শারহুল মুমতি,৪/২২২]
ন্যবাদ আপনাকে ।
২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৮
হানিফঢাকা বলেছেন: আর উলটা পাল্টা অপ্রাসঙ্গিক কোরআনের আয়াত দিবেন না। এইটা "নারী ইমামতি করতে পারবে কিনা" এই বিষয়ের সাথে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক।
ধন্যবাদ।
৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৪০
নীল আকাশ ২০১৬ বলেছেন:
মহিলা ইমাম ঘরে সালাত পড়ালে পুরুষদের মত স্বরবে কিরাআত পড়বে যাতে মহিলা মুক্তাদীরা শনতে পারে। তবে যদি কোন অমহরম (যে পুরুষকে বিবাহ করা নিষিদ্ধ নয়) পুরুষেরা মহিলা কন্ঠ শোনার আশঙ্কা থাকে, তখন মহিলা ইমাম নীরবে কিরআত পড়বে। একদা আয়েশা (রাঃ) মাগরিবের সালাতে মেয়েদের ইমামতি করেন। তখন তিনি তাদের মাঝখানে দাঁড়ান এবং স্বরবে কিরআত পড়েন। (আইনী তুহফা সালাতে মোস্তফা, ৩১ পৃঃ)
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪২
আজাদ মোল্লা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে পাশে থাকার জন্য ।
৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৩
হানিফঢাকা বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। এইবার কিছু প্রমান টু দ্যা পয়েন্টে হাদিস থেকে দিয়েছেন। ধরে নিচ্ছি এই বিষয়ে আপনার মোটামোটি জ্ঞান আছে। আমাকে আরেকটু হেল্প করেন দ্যা করে। নবীর সময় থেকে চার খলিফার সময় পর্যন্ত পুরুষ এবং নারী একসাথে (মাহরাম ব্যাতীত) ঘরে বা মসজিদে নামায আদায় করার কোন রেকর্ড আছে কিনা (ইমামতি যেই করুক কোন সমস্যা নেই_)। কারন আগে নাকি মসজিদে নারীদের প্রবেশাধিকার ছিল।
আপনার উত্তরের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার কাজে লাগবে।
৫| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪
সায়মা বিনতে সামাদ বলেছেন: নারী পুরুষের সমতা বিধানের নামে ধর্মীয় মতবাদে আঘাত করার কোন অধিকার আমাদের নেই। সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার আরও অনেক ইস্যু আছে। সেগুলোর প্রতি মনোযোগ দেওয়া উচিত।
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২৯
আজাদ মোল্লা বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করার জন্য ।
৬| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:১৩
এ আর ১৫ বলেছেন: আপনার দেওয়া হাদিস -- ‘ঐ সম্প্রদায় কখনো সফলকাম হতে পারে না, যারা কোন মহিলাকে তাদের বিষয়াদির নেতা নিযুক্ত করে”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ মাগাযী, নং৪৪২৫] ---- এবার এই হাদিসের সত্য মিথ্যা যাচাই করা যাক । এখানে উল্লেখ্য আমাদের নবী (সা) বিবি খাদিজা(রা) বা নারীর নেতৃত্বে কাজ করেছেন এবং তাহাদের বিবাহের পর বিবি খাদিজা (রা) মালিকানাধিন ব্যবসা দেখ ভাল করেছেন । এবার হাদিসটির পট ভুমিটা কি দেখি --
নবীজীর তায়েফ আক্রমণের সময় (৮ হিজরিতে) কিছুতেই তায়েফের দুর্গ ভাঙ্গা যাচ্ছিল না। তখন তিনি ঘোষণা করে দিলেন, দুর্গের ভেতর থেকে যে সব ক্রীতদাস পালিয়ে আসবে তারা সবাই মুক্ত হবে। শুনে অনেক ক্রীতদাস তায়েফ দুর্গ থেকে পালিয়ে আসে, ফলে দুর্গের পতন হয়। বালক আবু বাকরা (হজরত আবু বকর রাঃ নন) ছিলেন সেই ক্রীতদাসের একজন। তারপর দীর্ঘ চব্বিশ বছর চলে গেছে, নবীজী দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন, সেই ক্রীতদাস বালক এখন বসরা নগরের গণ্যমান্য নাগরিক। তখন ঘটে গেল মুসলমানের ইতিহাসে প্রম রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ, হজরত ওসমান খুন হবার পরে হজরত আলীর বিরুদ্ধে হজরত আয়েশা-তালহাযুবায়ের দলের। উট শব্দটার আরবি হল “জামাল।” বিবি আয়েশা উটে চড়ে হজরত আলীর বিরুদ্ধে সৈন্য-পরিচালনা করেছিলেন বলে এ-যুদ্ধের নাম হয়েছে “জামাল-যুদ্ধ।” এধারে-ওধারে বারো হাজার সাহাবি খুন হয়েছেন এ-যুদ্ধে।
হজরত আলী ‘জামাল-যুদ্ধে’ জয়লাভ করে বিবি আয়েশাকে সসম্মানে মদীনায় পাঠিয়ে দেবার পর বসরায় প্রবেশ করে শহরের গণ্যমান্য লোকদের ডেকে পাঠান। আবু বাকরা তখন হজরত আলীকে এই হাদিস শোনান। নবীজীর সময় ৬২৯ থেকে ৬৩২ সাল পর্যন্ত রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের আμμমণে ইরাণে খুব বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। তখন সেখানে দু’জন নেত্রীর আবির্ভাব হয়েছিল। সে-কথা শুনে নবীজী নাকি আবু বাকরাকে এ-হাদিস বলেছিলেন। হাদিসটা হল − “আবু বাকরা বলিয়াছেন, জামাল-যুদ্ধের সময় আমি সাহাবীদের সহিত যোগ দিয়া (বিবি আয়েশার পক্ষে) যুদ্ধে প্রায় নামিয়া পড়িয়াছিলাম, কিন্তু নবী (দঃ)-এর একটি কথায় আলাহ আমাকে বড়ই উপকৃত করিয়াছেন। যখন নবীজী (দঃ)-কে বলা হইল যে (পারস্য সম্রাট) খসরুর মৃত্যুর পরে পারস্যের লোকেরা তাহার কন্যার উপর নেত্রীত্ব অর্পণ করিয়াছে, তখন তিনি বলিলেন − ‘কখনও উনড়বতি করিবে না সেই জাতি যে জাতি তাহাদের নেতৃত্ব অর্পণ করে নারীর উপরে” (সহি বোখারীর ইংরেজী অনুবাদ, পঞ্চম খণ্ড, হাদিস নম্বর ৭০৯)।
এটা বোখারীর যে কোন বাংলা অনুবাদে পেয়ে যাবেন, হাফেজ মোঃ আবদুল জলিলের ৯০ পৃষ্ঠার ২২২ নম্বরে তো পাবেনই, আজিজুল হক সাহেবের বোখারীর চর্তু খণ্ডের ২২৬ পৃষ্ঠাতেও পাবার কথা। অর্থাৎ আমরা পেলাম ঃ
এ হাদিস জানার পরেও তিনি বিবি আয়েশা (রাঃ)-র পক্ষে যুদ্ধে “প্রায় নেমে পড়ছিলেন,” পরে হঠাৎ মত পরিবর্তন করেন। অর্থাৎ হাদিসটা প্র মে তাঁর মনে পড়েনি।
এ হাদিস আবু বাকরা প্রকাশ করেছেন হজরত আয়েশা (রাঃ) পরাজিত হবার
পরে, আগে নয়।
এ হাদিস অনুসারে তাঁর উচিত ছিল বিবি আয়েশা (রাঃ)-র বিপক্ষে হজরত আলী (রাঃ)-র পক্ষে যুদ্ধ করার। তা তিনি করেননি।
বলেছেন নবীজীর মৃত্যুর সুদীর্ঘ ২৪ বছর পর, তার আগে একবারও বলেননি।
এ হাদিসে তিনি বড়ই উপকৃত হয়েছেন বলে জানান।
তিনি হজরত আলী (রাঃ)-কে বলেছেন, অন্য কাউকে না জানালেও তিনি নাকি শুধু হজরত আয়েশা (রাঃ)-কে জামাল-যুদ্ধের আগে চিঠি লিখে এ-হাদিসের কথা জানিয়েছিলেন। (অর্থাৎ তাঁকে নেত্রীত্ব ছাড়তে বলেছিলেন)।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নবীজী বর্ণনা করেছেন অনেক সাহাবীকে, কিন্তু যে-হাদিসের সাথে বিশ্বের সমস্ত মুসলিম নারীদের সম্মান ও অধিকার কেয়ামত পর্যন্ত বাঁধা, সেই অসাধারণ গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নবীজী বলেছেন শুধু তাঁকেই, আর কোন সাহাবীকেই নয়, বিদায় হজ্জ্বের খোৎবাতেও নয়।
এবার কিছু সহজ হিসেব করা যাক।
আবু বাকরা বলেছেন “আমি বড়ই উপকৃত হইয়াছি।” কিভাবে ? তিনি কোন নেতা বা রাজা বাদশা ছিলেন না, কিভাবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বড়ই উপকৃত হলেন। প্রশড়বই ওঠে না। তিনি তো বিবি আয়েশার বিরুদ্ধে হজরত আলীর পক্ষে যুদ্ধও করেননি।
জামাল-যুদ্ধে যদি আয়েশা (রাঃ) জিতে যেতেন, তবে কি তিনি এ-হাদিস প্রকাশ করতেন ? কে জানে!!
জামাল-যুদ্ধ যদি না হত তবে তিনি এ-হাদিস বলতেন কি ? বোধহয় না, কারণ তিনি সুদীর্ঘ ২৪ বছরে এ-হাদিস বলেননি।
এবারে প্রমাণ।
চিঠিতে এ-হাদিস কথা জানাবার পরেও বিবি আয়েশা (রাঃ) নেত্রীত্ব ছেড়ে দেননি, যুদ্ধের নেত্রীত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি এ-হাদিস বিশ্বাস করেননি।
মওলানারা এ-হাদিস জানতেন না, এটা হতে পারে না। যুগে যুগে বেশির ভাগ মুসলিম সুলতানাদের সময় মওলানারা বিরোধীতা করেননি। অর্থাৎ তাঁরা এহাদি স বিশ্বাস করেননি।
মুসলিম জাহানের খলীফাদের দরবারে কোরাণ-হাদিসের প্রচণ্ড চর্চা হত। এ-হাদিস নিশ্চয়ই তাঁরা জানতেন। মুসলিম জাহানের খলীফারাও এ-হাদিস বিশ্বাস করেননি। তাঁদের সমর্থন ছাড়া সুলতানাদের মুদ্রা ও খোৎবা সম্ভব হত না।
অর্থাৎ ইসলামের ইতিহাসে বেশির ভাগ লোক এ-হাদিস বিশ্বাস করেনি। আইয়ুবের বিরুদ্ধে নির্বাচনে ফাতিমা জিনড়বার সমর্থক মওলানা মওদুদিও বিশ্বাস করেনি। কেন ? কারণটা তাঁরা হয়ত জানতেন, এ-হাদিস জাল-হাদিস। মাত্র তিনটি সূত্র দিচ্ছি, আরও বহু জায়গায় পেয়ে যাবেন :
সূত্র ১. আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অপরাধে আবু বাকরাকে শাস্তি দেওয়াহইয়াছিল (“দ্য ফরগট্ন কুইন্স্ অব্ ইসলাম” − বিখ্যাত ইসলামি বিশেষজ্ঞ ফাতিমা মার্নিসি)।
সূত্র ২. এই হাদিসের অসত্যতা সুপ্রমাণিত শুধু ইতিহাসেই নয়, বরং ইহাও সত্য যে আবু বাকরা সম্বন্ধে মুসলমানের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে যে মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অপরাধে তাহাকে জনসমক্ষে শাস্তি দেয়া হইয়াছিল। − উইমেন’স রাইট ইন ইসলাম − শরীফ চৌধুরী।
সূত্র ৩. ইহার বর্ণনাকারী আবু বাকরাকে নারী-ব্যাভিচারের মিথ্যা সাক্ষ্য দিবার অপরাধে হজরত ওমর শাস্তি দিয়াছিলেন। − উইমেন অ্যাণ্ড পলিটিক্স ইন্ ইসলাম
www.submission.org/women/politics.html
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৮
আজাদ মোল্লা বলেছেন: উটের যুদ্ধ বলতে বুঝানো হচ্ছে জঙ্গে জামালকে। ইসলামী ইতিহাসের একটি দুঃখজনক যুদ্ধের নাম জঙ্গে জামাল।
যা হযরত আয়শা রাঃ, হযরত তালহা রাঃ , জুবাইর রাঃ এর মতামতের অনুসারী এবং হযরত আলী রাঃ এর বাহিনীর মাঝে সাবায়ীদের ঘৃণ্য চক্রান্তের কারণে সংঘটিত হয়েছিল।
সাবায়ী চক্র হযরত উসমান রাঃ কে নির্মমভাবে হত্যা করলে মুসলমানদের ঐক্যমত্বে হযরত আলী রাঃ কে খলীফা নিযুক্ত করা হয়। সে সময় হযরত উসমান রাঃ এর হত্যাকারীদের আগে হত্যা করা হবে? না প্রথমে সাবায়ী চক্রান্তের জালে আটকে যাওয়া ইসলামী খিলাফতকে প্রথমে শক্তিশালী করা হবে, তারপর অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হবে?
এ বিষয়টি নিয়ে তৎকালীন সাহাবীদের মাঝে দুটি দল হয়ে যায়। হযরত আয়শা রাঃ, হযরত মুয়াবিয়া রাঃ, হযরত তালহা রাঃ, হযরত জুবায়ের রাঃ এর মত ছিল আগে হযরত উসমান রাঃ এর হত্যাকারীদের শাস্তি দেয়া হবে। আর হযরত আলী রাঃ এবং তার অনুসারীদের মত ছিল আগে ষড়যন্ত্রের জালে ভগ্নপ্রায় ইসলামী খিলাফতকে প্রথমে শক্তিশালী করা হোক, তারপর অবশ্যই হত্যাকারী অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হবে।
এ মতবিরোধ হওয়ার পর উভয় দল বসরার পথে এক স্থানে মুখোমুখি অবস্থান করে সন্ধিতে আসেন। শান্তিময় সন্ধিচুক্তিতে সাবায়ী চক্র প্রমাদ গুনে।
উভয় পক্ষই ছিলেন দ্বীনের পক্ষে। হকের পক্ষে। কোন দলই যুদ্ধ কামনা করেন নি। কিন্তু রাতের গভীরে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থানকারী দুই বাহিনীর উপরই এক সাথে হামলা করে বসে সাবায়ী চক্র। ফলে সৃষ্ট হয় বিভ্রান্তির। হযরত তালহা, হযরত জুবায়ের ও হযরত আয়শা রাঃ এর বাহিনী মনে করেন হযরত আলী রাঃ এর বাহিনী হামলা করেছে, আর হযরত আলী রাঃ এর বাহিনী মনে করেন অপরপক্ষ হামলা করেছে।
এ ভুল বুঝাবুঝির কারণে শুরু হয় এ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। ইতিহাসের এক মর্মান্তিক ট্র্যাজেডীর জন্ম দেয় কুখ্যাত সাবায়ী চক্র। রাতের গভীরে সংঘটিত হওয়া এ দুঃখজনক ভুল বুঝাবুঝির যুদ্ধটিই ইতিহাসে জঙ্গে জামাল বা উটের যুদ্ধ নামে প্রসিদ্ধ। আব্দুল্লাহ বিন সাবার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে ইতিহাসের পাতায় লেখা হয় এক মর্মান্তিক ইতিহাস। নির্দোষ ১০ হাজার মুসলমান শহীদ হন সে যুদ্ধে। (তারীখে তাবারী-৩/৫৪)
বিস্তারিত জানতে পড়ুন-তারীখে তাবারী, মুফতী মনসুরুল হক রচিত ইসলামী খিলাফত ধ্বংসের প্রকৃত ইতিহাস)
মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক বিবাদ লাগিয়ে ফায়দা হাসিল করার এ ষড়যন্ত্র এখনো করে যাচ্ছে সাবায়ী চক্রের উত্তরসূরী ইহুদী খৃষ্টান শক্তি।
ধর্মীয় কোন্দল, ধর্ম নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি। হাজার বছর ধরে আমল করা কুরআন সুন্নাহের সঠিক ব্যাখ্যার বিপরীত ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে আজ মসজিদে মসজিদে বিবাদ লাগিয়ে দিয়েছে ইহুদী খৃষ্ট শক্তি মাধ্যমে। আল্লাহ তাআলা সাধারণ মুসলমানদের এ ভয়াবহ ইহুদী খৃষ্ট ষড়যন্ত্র থেকে সাধারণ মুসলমানদের হিফাযত করুন। সঠিক বিষয় বুঝার তৌফিক দান করুন। আমীন, ছুম্মা আমীন ।
ইসলামের ইতিহাসে শুধু আয়শা রাঃ নয়, কোন মুসলিম নারীই প্রধান নেত্রী হয়ে যুদ্ধ করেন নি। বরং সহযোগী ছিলেন হযরত আয়শা রাঃ জঙ্গে জামালে। তিনিই মূল নেত্রী ছিলেন না। মূল ছিলেন হযরত জুবাইর রাঃ এবং তালহাসহ অন্য সাহাবীরা।
সবচে’ বড় কথা হল-জঙ্গে জামালে হযরত আয়শা রাঃ যুদ্ধ করার জন্য আসেনইনি, যুদ্ধ করার কোন ইচ্ছাই ছিল না। ঘটনাক্রমে চক্রান্তের শিকার উভয় মুসলিম বাহিনী। গভীর রাতে ভুল বুঝাবুঝির কারণে সৃষ্ট বিশৃংখল যুদ্ধের নেতৃত্ব হযরত আয়শা রাঃ করেছেন একথা একটি বোকামীসূলভ মন্তব্য। তিনি হযরত জুবাইর রাঃ এবং হযরত তালহা রাঃ এর সাথে সে ময়দানে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত থাকলেই নেতৃত্ব হয়ে যায় এমন কথা বলাটা অযৌক্তিক।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন। আমীন। ছুম্মা আমীন।
৭| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:০৮
এ আর ১৫ বলেছেন: আপনি কি এই হাদিসের স্বপক্ষে এই জবাব দিলেন -- ‘ঐ সম্প্রদায় কখনো সফলকাম হতে পারে না, যারা কোন মহিলাকে তাদের বিষয়াদির নেতা নিযুক্ত করে”। [বুখারী, অধ্যায়ঃ মাগাযী, নং৪৪২৫] --- বিবি আয়শা (রা) বাই ডিফল্ট নেতৃত্বে চলে আসেন -- তিনি অংশ গ্রহন করার কারনে বহু মুসলমান তার পক্ষে যোগ দেয় এবং যার প্রেক্ষিতে একটা ভয়াভহ যুদ্ধ হয় । যদি বিবি আয়েশা (রা) ঐ পক্ষকে সমর্থন না করতেন তাহোলে এত বিপুল সংখ্যক মুসলমান তার পক্ষ আসতো না । সুতরাং সুপ্রিম নেতৃত্ব তার হাতে ছিল । যারা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিচ্ছিল তাদের সুপ্রিম কমান্ডার ও ছিলেন তিনি। যদি তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে না থাকতেন তাহোলে যুদ্ধের নেতৃত্ব অন্য কারো হোত যেহেতু তিনি উপস্থিত ছিলেন সুতরাং নেতৃত্ব তার ।
এই ঘটনার পর ঐ হাদিসটি আবিষ্কার হয় এবং যিনি এই হাদিসটির বর্ণনা করেছেন তিনি একজন মিথ্যাবাদি ভন্ড এবং মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার জন্য তার শাস্তি হয়ে ছিল । নারী নেতৃত্ব যে হারাম তার পক্ষে আপনার হাদিস গুলো গ্রহন যোগ্য নয় । স্বয়ং নবীজী (সা) নারীর নেতৃত্বে চাকুরী করেছেন ( বিবি খাদিজা (রা) ) এবং নারীর মালিকাধিন ব্যবসা দেখ ভাল করেছেন । তিনি যখন হেরা পর্বতের দিনের পর দিন ধ্যান করেতেন তখন ব্যবসার দেখা শুনা এবং তার পৃষ্ঠপোষকতা বিবি খাদিজা (রা) করেছেন ।
তাই বোলছি নারী নেতৃত্ব মোটেও হারাম নহে । নারীরা যদি অন্য সব কিছুতেই নেতৃত্ব দিতে পারে তাহোলে নামাজের ঈমামোতি কোরলে তা হারাম হবে তার পক্ষে কোন দলিল আছে কি ??
এবার নারী নেতৃত্বের ব্যাপারে খোদ কোরাণের নির্দেশটাই দেখি না কেন আমরা। পড়ে দেখুন সুরা নামল আয়াত ২৩ − “আমি এক নারীকে সাবা-বাসীদের উপর রাজত্ব করতে দেখেছি।” সেই রাজত্ব করা রাণী যখন ইসলাম গ্রহণ করে মুসলমান হল তখন ? তখন কোরাণ কি বলেছে তাকে সিংহাসন থেকে তাড়িয়ে দেয়া হল ? মোটেই নয়, মোটেই নয়, পড়ে দেখুন আয়াত ৪৪।
২১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৪৮
আজাদ মোল্লা বলেছেন: সুন্দর আলোচনার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে ।
ভালো থাকবেন ভাই ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৪
হানিফঢাকা বলেছেন: এইসব হাদিস একটাও ধোপে টিকবেনা। এইখানে মুলত আপনি নারী ও পুরুষের নামাযের পার্থক্য ধরে তুলেছেন। মুল বিষয় এইটা না। মুল বিষয় হচ্ছে নারী নামাযের ইমামতি করতে পারবে কিনা। অযথা মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য এই সব হাদিসের রেফারেন্স দিয়েন না। টু দ্যা পয়েন্টে কিছু থাকলে দেন।
ধন্যবাদ।