ডিসডাসা’র পকেটে-১

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১০

(১ম পর্ব)

পিজ্জা’র (pizza) নামটা পিরিচিত ছিলনা কখনো আমার সাথে! মফস্বলের বনরুটি-চা সিঙ্গারা-গুল্গুলার প্রিয় নামগুলি ছেড়ে যখন একটা ক্লিন চাকুরির সুবাদে টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ার কিছু শহরে ঘোরাঘুরি তখন বড়জোর মুরগীর রোষ্ট কাচ্ছি বিরিয়ানির দেখা পেয়েছিলাম! সে যাক নেপালি রাজেশ পিজ্জা হাটে চাকুরী করে, চটপটে দারুন দেখতে চায়নাদের মতো অবয়ব! বাঙ্গালি-হিন্দি-পাকিস্তানি-মালদিবিয়ান-চায়না পাঁচমিশালি চেহারার নেপালিদের চেনা মুশকিল, তবে পরিশ্রমী। মাঝে মাঝে রাজেশের সাথে দেখা হয় আমার, স্মিত হেসে জিজ্ঞেস করে How are you dear’। উত্তরের অপেক্ষা না করে রাজেশ চলে যায় নিজ গন্তব্বে!

তবে রাজেশের সাথে হাই-হ্যালো আদান প্রদানের একটা ব্যাপার আছে। নতুন ভিনদেশে আসার পর থেকেই আমার অন্তরে একটা শুন্যতা অনুভব করি প্রিয় মুখ গুলোকে না দেখার যন্ত্রণায়, বিশেষ করে আমার মেয়ে হুমায়রার জন্য! বুকটা সারাক্ষণ টানাটানা থাকে কষ্ট পাই, সিগারেটের ধোঁয়া দিয়ে কষ্টদের আড়ালে রাখার চেষ্টা করি, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভাবনায় ডুবে থাকি পথ হারিয়ে বসলাম নাতো? টেনশনটা ভিনদেশের প্রথম দিন থেকেই মেমোরিতে সেইভ হয়ে গেছে! জীবনে প্রথম কোন দেশের ইমিগ্রেশন পার হচ্ছি, এখানকার গালফ ডিসডাসা ওয়ালাদের ভিআইপি লাইন, আর আমরা হতচ্ছাড়া দেশত্যাগী ভিক্ষুকদের (স্থানীয় ভাষায় বাঙালিদের মিসকিন বলে) জন্য লাইনই নাই! একবার এক লাইনে দাঁড়ালে আরেক ভুঁড়িওয়ালা পুলিশ এসে এয়াল্লাহ এয়াল্লাহ (আল্লার নাম) ধরে ধাক্কা মেরে বলে ওই লাইন না সে লাইন, আহা কত অবমাননা মানুষের প্রতি মানুষের আল্লার প্রিয় পবিত্র নামটি ধরে ভীষণ অবহেলায় ধাক্কাধাক্কি! এরা নাকি নবীর সরাসরি উম্মত? পরকালে আল্লাহ এর হিসেব নিবেন কিনা জানিনা, না,জানি নবীর সরাসরি উম্মত হিসাবে ক্ষমা পেয়ে যাবে নবীর পাশের বাড়ির কুৎসিত প্রতিবেশীরা? এদের অনেকের নামের পিছনে আবার কুরাইশি, হাম্বলি, শাফিই, মাঝহাবি টাইটেল লাগাই রবীন্দ্র নাথের দাঁড়ি গলায় ঝুলিয়ে, লম্বা তজবি তর্জনী আঙ্গুলে গুরিয়ে গুরিয়ে পথে ঘাটে চলে! ক্লিনিং কোম্পানির বাঙালিদের দেখলে ডিসডাসায় হাত ভরে কোয়ার্টার দিনার ক্লিনারের হাতে গুঁজে দিয়ে বাদশাহি জাহির করে! আর টাকার কাঙাল বাঙালি ক্লিনার গুলো নবাব সিরাজধউলার সালামের আদলে কদম্বুচি চালিয়ে যায়, আহা! (চলবে)

২ টি +০/-০