ডিসডাসা’র পকেটে-২

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৩

(২য় পর্ব)

সে যাক, পাসপোর্ট হাতে ২য় পাতায় তর্জনী আঙুল ঢুকিয়ে আহত বদনে এদিক সেদিক যত দেখছি মুগ্ধই হচ্ছি! আহা কি পরিপাটি সাজানো গোছানো চারিদিকে সুনসান নীরবতা। সাদাকালো মানুষের পরিপাটি চলাচল। ঊজ্জল টাইলসে নিজের চেহারা দেখতে পেলাম! নিজেকে কেমন যেন বেমানান মনে হচ্ছে বারবার। মনে পড়ে যাচ্ছে ৫ ঘণ্টা পূর্বের অভিজ্ঞতার কথা। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে রাত বারোটায় যখন বৈধ কাগজ পত্র নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢুকতে চাইলাম একটু বসার জন্য আনসার ভাইরা দিলোনা। ৫টার ফ্লাইটের যাত্রীরা ২টার আগে ঢুকতে পারবেনা, কি অসাধারণ দেখাগেলো ক্ষমতার স্বাধীন ঘোষণা! হাজার কোটি টাকার রেমিটেনস আমরা পাঠাই, আমাদের কষ্টার্জিত রেমিটেনস না পেলে যে দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরেনা, তো সে আমরাই সেই রেমিটেনস পাঠানোর নেশায় বিভোর হয়ে এয়ারপোর্টের বাহিরে দাড়িয়ে আছি! ৫ ঘণ্টার জার্নি শেষে স্বজন বিয়োগের মনের দুঃখ যখন ভুলতে পারছিনা, তখন কাতর দেহটাকে একটু জিরিয়ে নিতে বসার কোন একটি টূল বা বেঞ্চি নেই ৪৪ বছরের পূরানো স্বাধীন দেশের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে, আহা!



দাড়িয়ে থেকে মাজাটা বাঁকা হয়ে যাচ্ছে, আমাদের শাসকদের মতো মশারাও ঝাঁকে ঝাঁকে মরণপণ লড়াইয়ে শেষ বারের মতো রক্ত চূষে নিচ্ছে! আহা ১৮ হাজার মাখলুকাতে যদি মশা অন্তর্ভুক্ত থাকে তবে আমার আপত্তি আছে বৈকি সৃষ্টির রহস্য নিয়ে! তবে মুহূর্তেই ভেবে অবাক হচ্ছি যে মশা আর আমাদের দেশের শাসকদের কি অপূর্ব মিল, এই দুই জাতিই মিলেমিশে একাকার হয়ে আমাদের রক্ত শোষণ করে! দুই জাতিই বেহায়া, যতই থাপ্পড় মারি নির্লজ্জের মতো আবারো আশে পাশে ঘুরঘুর করে রক্ত খাওয়ার নেশায়! হটাত দেখলাম পাশ দিয়ে একটি পলিথিন উড়ে যাচ্ছে। এদিক সেদিক কাচূমাচূ করে পলিথিনটা কুড়িয়ে নিলাম, দেখুকগা নিন্দুকে শরমের কি? দেয়ালের পাশে বিছিয়ে হেলাণ দিয়ে বসে গেলাম, আহা কতো আরাম! যে দেশের সরকার একটি টূল পর্যন্ত বসায়নি সেখানে একটি গায়েবি পলিথিন আবাবীল পাখীর কথা স্মরণ করিয়ে দিলো! জমিনের রক্ত চোষা সরকার না দেখলেও আকাশের সরকার হয়তো দুঃখ বুঝেছে বলে অন্তত একটি পলিথিন পেলাম বসার জন্য! পাশে তাকিয়ে দেখলাম এক যাত্রী ব্যাগ থেকে চাটাই বের করছে, আর চাটাইয়ে বসার অপেক্ষায় তার পরিবারের কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী! হাসিটা আড়ালে লুকিয়ে ভাবলাম এটাই কি লিখা ছিল স্বাধীনতার চেতনায়? (চলবে)

১ টি +১/-০