ফাঁসি

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৪১

ভেতরে ফাঁসির সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। মাথায় জম টুপি পরানো হয়েছে, হাতগুলো পেছনে বাঁধা। স্বামীর সাথে শেষ দেখা করে বেরিয়েছে স্ত্রী। যুগ যুগের বাঁধন ছিন্ন হতে চলেছে। একজন ফাঁসির আসামী শেষ পর্যন্ত বিশ্বাস করে কোন দৈব শক্তি এসে তাকে রক্ষা করবে। এমনকি পেছনে হাত বাঁধা, গলায় দড়ি পরানো অবস্থায় এক পৃথিবী থেকে অন্য পৃথিবীতে যাওয়ার মাঝখানে দেয়াল যখন একটি মাত্র রুমাল; নীরবে দাড়িয়ে তখন সে ভাবতে থাকে এই বুঝি তাকে রক্ষা করতে কেউ এগিয়ে এলো।
আসামীর চোখে মুখে অন্ধকার। দাঁতে দাঁত খিটে থাকে। গলাটাকে ফোলানোর চেষ্টা করে যেন ব্যথাটা একটু কম লাগে। কিন্তু বিশাল এই দেহের ভারকি আর গলা সইতে পারে?
ধর্মীয় দোয়া/মন্ত্র পাঠ করতে থাকে আর মনে মনে অপেক্ষায় থাকে কোন দৈব শক্তির। কান খাড়া করে রাখে এই বুঝি কেউ একজন বলে উঠবে, “স্টপ; এই ফাঁসি হবে না”। ভাসতে থাকে প্রিয় মানুষগুলোর মমতাভরা মুখ। মনে ভাসে মায়ের চেহারা, স্ত্রীর চেহারা। সর্বোপরি সন্তানের চেহারা মনে করে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। তাদের মায়ামুখগুলো ভেবে হৃদয় কেঁদে উঠে। মনে হয়, যে কোন কিছুর বিনিময়ে আর ক’টা দিন যদি ওদের সাথে কাটাতে পারতাম! প্রিয় মানুষগুলোকে একটু জড়িয়ে ধরতে পারতাম!!
এক সময় পায়ের নিচ থেকে পাটাতন সরে যায়। গলায় আটকে যায় মোটা দড়ি। শুরু হয় রহস্যময় যাত্রা। ১০ মিনিট ঝুলিয়ে রাখার পর একজন ডাক্তার এসে ঘাড়ের চামড়া কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। পরে থাকে নিথর দেহ। এরপর থেকে আর প্রয়োজন হয়না কোন খাবার কিংবা পানি। শেষ খাবারগুলো দেহের কোন কাজে আসেনা। পাকস্থলিতে পরে থাকে নীরব হয়ে। মৃত্যুর আগ মুহুর্তে একজন আসামী ফিরে যেতে চায় তার অতীতে। ভুলগুলো মুছে দিয়ে নতুন করে লিখতে চায় জীবনের অধ্যায়। কিন্তু জীবন খাতার অক্ষর মোছার কোন ফ্লুইড নেই।
পড়ে থাকে শুধুই দীর্ঘশ্বাস...

৪ টি +০/-০