নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শিক্ষাজীবন শেষ করে যাঁরা সংসার ও বাচ্চা নিয়ে আছেন, তাঁরা একে সামাজিক পরিচয়হীন, মাথা নিচু করে বেঁচে থাকা হিসেবে দেখবেন না। সব কিছু অবজ্ঞা করে প্রতিবাদী হয়ে ওঠাও বুদ্ধিমতীর কাজ নয়। শিক্ষাজীবনটা যেমন সফলতার সঙ্গে পার হয়েছে, সংসার ও সন্তানের জীবনেও আপনাকে সফল হতে হবে। তারপর সময় ও সুযোগ বুঝে করবেন যা কিছু আপনি করতে চান
এখনো আমাদের মেয়েদের বড় করাই হয় একটা সময় বিয়ে করতে হবে, সংসার করতে হবে এবং ছেলেমেয়ের দায়িত্ব নিতে হবে- এই অনিবার্য সত্যকে মাথায় নিয়ে।
মেয়েদের জন্ম কি তাহলে বিয়ে ও সংসার করার জন্যই? এত কষ্ট করে শিক্ষাজীবন পাড়ি দিলাম তাহলে কিসের উদ্দেশ্যে? আমি তো সব কিছুর জন্য বিয়ের পর স্বামীর ওপর নির্ভরশীল হয়েই রইলাম। খুব হতাশ লাগে, মন খারাপ লাগে নিজের শিক্ষার কথা মনে হলে। যারা শিক্ষাজীবনে কোনো বাধা তৈরি হতে দেননি, সফলভাবে সম্পন্ন করে তবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন। ছেলেমেয়ে হয়েছে, সংসার করছেন- তার পরও মনে মনে কষ্ট পান নিজের জীবনটার কথা ভেবে। কী করবেন? লেখাটি তাঁদেরই জন্য।
* আপনি যেমন পড়াশোনার ক্ষেত্রে একটার পর একটা ধাপ পার হয়েছেন, যেমন- স্কুল, তারপর কলেজ, এরপর বিশ্ববিদ্যালয়। বিবাহিত জীবনও ঠিক তেমনিই আমাদের ব্যক্তিগত বা পারিবারিক জীবনের একটি অনিবার্য ধাপ। একে অস্বীকার করারও উপায় নেই আবার একে অতিক্রম করে পরবর্তী ধাপে যাওয়ার চেষ্টা করেও লাভ নেই। সুতরাং জীবনের স্বাভাবিক পরিবর্তিত ধাপ হিসেবে একে গ্রহণ করুন, এর নিজস্ব বিষয়গুলোর প্রতি (যেমন- সংসারের কাজ, বাচ্চার দায়িত্ব, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক) মনোযোগ বাড়ানোর চেষ্টা করুন এবং ইতিবাচক দৃষ্টি তৈরি করুন।
* নিজের সঙ্গে বারবার কথা বলুন, ভাবুন এবং সিদ্ধান্ত নিন আপনি আসলে কী করতে চান? এখনই তা করার উপযুক্ত সময় এসেছে কি না? কেননা, সন্তান হওয়ার পর থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মায়েদের বাইরে কাজ করতে যাওয়াটা অনেকের পক্ষেই অসম্ভব এবং জটিল। সে ক্ষেত্রে অধৈর্য এবং ডিপ্রেশন না হয়ে উপযুক্ত সময় এবং সুযোগের জন্য অপেক্ষা করুন।
* একটু ভেবে দেখুন আপনি শিক্ষাজীবন নিয়ে কোনো স্বপ্ন লালন করছিলেন কি না? যেমন- আমি বড় কিছু হব, আমি বাবা, ভাইবোনের দায়িত্ব নেব, আমি নিজের পায়ে দাঁড়াব- সংসার জীবনকে এ ক্ষেত্রে স্বপ্ন ভাঙার কারণ হিসেবে আপনার কাছে মনে হতে পারে। আমরা ছোট থেকে যেমন বড় হতে থাকি, তেমনি আমাদের স্বপ্নগুলোর পরিবর্তন হতে থাকে। আপনি নিজের পরিস্থিতি অনুযায়ী স্বপ্নকে নতুন রূপ দিতে পারেন। যেমন- এখন ছেলেমেয়ে মানুষ করাই আমার একমাত্র স্বপ্ন।
* কিছু চিন্তা আমাদের অস্থির ও মন খারাপ করার জন্য দায়ী থাকে। যেমন- আমার সহপাঠীরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি; এত দিনে আমি অনেক কিছু করে ফেলতে পারতাম, অথচ সংসার আর বাচ্চার কারণে আটকে আছি, সংসার ও বাচ্চার সব দায়িত্বই কি আমার? দুনিয়ার সবাই কত কিছু করছে, শুধু আমিই কিছু করছি না- এ ধরনের চিন্তাগুলো আপাতত মন থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। কেননা, এগুলো আপনাকে নেতিবাচক করে তুলবে। সব কিছুর প্রতি অনীহা, বিরক্ত ও অধৈর্য করে তুলবে।
* লক্ষ করুন, আপনি নিজেকে স্বামীর প্রতিযোগী মনে পোষণ করছেন কি না? স্বামী আমার ওপর সব চাপিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে অফিস করছে, সে অফিস করতে পারলে আমি কেন পারব না? সংসারের দায়িত্ব তাকেও পালন করতে হবে, বাচ্চা দেখাশোনায় তারও ভূমিকা থাকতে হবে। আপনার স্বামী যতটুকু দায়িত্ব বা সাহায্য করছেন তা খুশি মনে গ্রহণ করুন, প্রশংসা করতে ভুলবেন না। তাকে বোঝাবেন, আপনার প্রতি তাঁর সহযোগিতার হাত যেন আরেকটু প্রসারিত হয়। ভবিষ্যতে তিনিই হবেন সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী।
* অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন। যখন সংসারজীবন শুরু করছেন, তখন সন্তান ও স্বামীর প্রতি যত্ন নিন। যখন শিশু জন্ম নেবে, তখন কমপক্ষে তিন থেকে ছয় মাস মায়ের নিজস্ব বলে তেমন কিছু থাকে না। তাই এ সময়টা শুধু সন্তান ও নিজের প্রতি যত্নে কাটিয়ে দিন। সন্তান একটু বড় হয়ে উঠলে তাকে পাশে নিয়ে অথবা তার ঘুমের সময় আপনি নিজের অনেক কাজ করতে পারেন ঘরে বসেই। যেমন- সেলাই, হস্তশিল্প, ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি, লেখালেখি, অনুবাদ করার কাজ, অনলাইনে কাজ, হোম মেইড ফাস্ট ফুড ইত্যাদি। শিশু আরো একটু বড় হয়ে উঠলে পার্টটাইম জব অথবা ঘণ্টাখানেকের জন্য কোনো কাজ নিতে পারেন। অর্থাৎ আপনি যদি মনে করেন যে সংসার করলে আমার চলবে না, কিছু না কিছু করতেই হবে- তবে সময় বুঝে ধাপে ধাপে আগান।
* আপনার চারপাশে সহযোগিতার হাতগুলোর যত্ন নিন। যেমন- শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ প্রমুখ। আবার বর্তমানে গৃহপরিচারিকার ওপর কর্মজীবী নারীরা নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন- হয়তো তাদের উপায় নেই তাই। কিন্তু গৃহপরিচারিকা যেমন একটি অনিশ্চিত উপায়, তেমনি এর নিরাপত্তাহীনতাও বেশি। তারপর সন্তানের বেড়ে উঠায় বাইরের মানুষের কাছে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বলে একে মানসিক স্বাস্থ্যের দিক থেকে গ্রহণযোগ্য ধরা হয় না। অনেকেই মা, বোন বা দূরের কোনো আত্মীয়ের সাহায্য নেন। এ সম্পর্কের যাঁরা আপনার অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন ও সদ্ব্যবহার করুন।
* এ সব কিছুর মধ্যে নারী যে বিষয়টি নিয়ে ভেতরে ভেতরে কষ্ট পেতে থাকে তা হচ্ছে, নিজের আত্মপরিচয়ের বিষয়। আমার নিজের কোনো সামাজিক পরিচয় নেই- এভাবে চিন্তা করলে আপনি কষ্ট ও অশান্তি ছাড়া আর কিছুই পাবেন না। একেবারে পরিচয়হীন কোনো মানুষ হয় না। আপনি একটি সংসারের গৃহিণী বা কর্তা। একজন মা। একজন 'মা'- এর চেয়ে বড় কোনো পরিচয় বা আত্মসম্মান হতে পারে না।
* আপনি যদি কোনো ধারাবাহিক বা সুনির্দিষ্ট শিক্ষাজীবনের নারী হয়ে থাকেন (যেমন- ডাক্তার, আইনজীবী, ইঞ্জিনিয়ার, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানী ইত্যাদি) এবং বিবাহিত জীবনে ঢোকার পর বিরতিতে থেকে থাকেন, তবে আপনি আপনার কর্মদক্ষতার প্রতি বিশ্বাস, সাহস ও দৃঢ়প্রত্যয় রাখুন- আমি আবারও সময় হলে আমার কাজে ফিরে যাব এবং সফল হব। বিরতির সময় যে চিন্তাগুলো আপনাকে অস্থির করে তুলছে, সেগুলো একদিক থেকে কাজে ফিরে যাওয়ার যে মানসিক শক্তি বহন করছেন, তারই প্রতিবিম্ব।
* মন বেশি খারাপ লাগলে একজন নিরাপদ (প্রফেশনাল বা নন-প্রফেশনাল) ব্যক্তির সঙ্গে নিজের সুখ-দুঃখের কথা আলাপ করুন মন খুলে। তবে মন হালকা হবে।
শিক্ষাজীবন শেষ করে যাঁরা সংসার ও বাচ্চা নিয়ে আছেন, তাঁরা একে সামাজিক পরিচয়হীন, মাথা নিচু করে বেঁচে থাকা হিসেবে দেখবেন না। সব কিছু অবজ্ঞা করে প্রতিবাদী হয়ে উঠাও বুদ্ধিমতীর কাজ নয়। শিক্ষাজীবনটা যেমন সফলতার সঙ্গে পার হয়েছে, সংসার ও সন্তানের জীবনেও আপনাকে সফল হতে হবে। তারপর সময় ও সুযোগ বুঝে করবেন- যা কিছু আপনি করতে চান।
দৃষ্টি আকর্ষণ: এ ধরনের আরও অসংখ্য ফিচার দেখতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:৫২
দিকভ্রান্ত*পথিক বলেছেন: নারীর বেসিসে না হলে উপকৃত হতাম