![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জিবনের প্রথম লঞ্চ ভ্রমণ শুরু হয় হয় করে হচ্ছেনা, বিকাল ৩টায় এসে বসে রইলাম-একটু বিলম্ব হচ্ছে । প্রথমে ভেবেছিলাম ৪-৫ ঘন্টা লাগবে গন্তব্যে যেতে, কিন্তু এখন জানতে পারলাম
সন্ধায় রউয়ানা হলে পরদিন ভোরবেলা পৌছাবো, শুনেইতো অস্থির লাগছে-কারণ রাতে এতক্ষণ ভ্রমণ করা বিরক্তিকর একটা বেপার-চারপাশে অন্ধকারে কিছুই দেখা’যাবেনা ।
অবশেষে লঞ্চ ছারল- এখন বাজে সন্ধ্যা ৬.৩০মি. ।
ধিরে ধিরে লঞ্চের গতি বারছে... আর আগে বলা ‘বিরক্তিকর’ শব্দটা বাদ দিতে মন চাইছে ।
লঞ্চ ভ্রমণ এতটা বিরক্তিকর লাগছেনা... যদিও এখন মাত্র শুরু, সময় গড়ালে হয়ত ‘বিরক্তিকর’ শব্দটা আবার উচ্চারণ করতেও পারি ।
লঞ্চ আর একটা টারমিনালে থামল, আরও যাত্রি উঠাবে-আবার রউয়ানা হল আমার বাহন ।
কি বেপার......
আমার বাহনটা এখন ধিরে চলছে কেন ।
কেন ধিরে চলছে তা জানার ইচ্ছা থাকলেও, ইচ্ছাটা আপাদত বাদ দিচ্ছি_কারণ আমাদের কেবিনের সামনে বারান্দায় সিটে বসে আছি, উঠলেই আর সিট ফেরত পাবোনা...বেদখল হয়ে যাবে । তাই থাক- নিজের ইচ্ছা ভিতরে নিয়ে বসে রইলাম ।
মরার লঞ্চ... কচ্ছপের গতিতে যাচ্ছে কেন ?! কিছুক্ষণ আগেতো ভালই ছুটছিল ।
ঘুম পাচ্ছে... লঞ্চে রাত ৯টা মনে হচ্ছে রাত অনেক হয়ে গেছে
ঘুমালে ভালই হবে, চোখ দুখানি একটু বন্ধ করেই নিই ।
এখন রাত ৩টা_ হঠাৎ জাগলাম, মাঝরাতে ভাইয়া আমার গায়ে চাদর দিয়ে গেলেন-টের পাইনি ।
চারপাশে তাকিয়ে দেখি কিছুই দেখা যাচ্ছেনা, মাঝে মাঝে লঞ্চের ডেক থেকে লাইট জালাইলে নদীর পাশে দুই’ধার একটু বুঝা যায়, এক’ধারের পাশ দিয়ে লঞ্চ ধিরে ধিরে চলছে ।
আঁকা বাঁকা নদী, নদীর প্রতিটা বাঁকে লাল বাতির সংকেত দেওয়া আছে-যেন লঞ্চ এর বাঁক কাটতে অসুবিধা না’হয় । লঞ্চের ডেক’এ শুয়ে আছি- কারণ হল কেবিনে ২জন ঘুমানোর আনুমতি আছে । চার পাশে যারা শুয়ে আছে- তারা প্রতি মুহুর্তে কেওনা কেও জাগছে, আর আমার মতই বসে আছে । সব স্তব্ধ হয়ে আছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা, রাতের পরিচয় সবাই জানেন । রাত যাচ্ছে লঞ্চ ধিরে ধিরে আগাচ্ছে, রাত ৪টা বাজে লঞ্চ মনে হয় একটা টার্মিনালে থামবে, জায়গাটার নাম ‘বগা টার্মিনাল’- যাত্রী নামানো হচ্ছে, পাশে দেখি ফেরিঘাট আছে নদী পারাবার । এইখান থেকে আমার গন্তব্যের দূরত্ব প্রায় ১ঘন্টা,
বসে রইলাম- আর ঘুমানো যাবেনা, লঞ্চ আবার থামলে নামতে হবে ।
এখানে নদীর অন্য পাশেও যাত্রী নামানো হল, যাত্রী নামাতে নামাতে ৪০মিনিট সময় পেরিয়ে গেছে । লঞ্চ আবার চলতে শুরু করল, ধিরে ধিরে চলছে । আর একটু ঝিমিয়ে নিই, আবার শুয়ে পরলাম- ঘুমিয়ে গেলেও সমস্যা নেই, গন্তব্যের কাছে এলেই লঞ্চের ডেকের ছোট ছোট বাতি গুলো জালিয়ে দিবে এবং জানিয়ে দিবে । তাই ঝিমাতে দোষ কি ?
ঘুম আসে’তো আসছে’না । সময় কেটে যাচ্ছে- হঠাৎ লঞ্চের ডেকের বাতি গুলো জ্বলে উঠল, মনে হচ্ছে এসে পরেছি- অনেক প্রতিক্ষা আর দীর্ঘ ভ্রমণের অবসান হতে যাচ্ছে ।
বিছানা গুছিয়ে নিচ্ছি, কিন্তু এখন শুধু লঞ্চের যাত্রা শেষ হল- আরো ছোট ছোট ভ্রমণ বাকি রইল। সামনের সময়টাতে রিকশায় উঠতে হবে তারপর নৌকা দিয়ে কিছু সময় পাড়ি দিতে হবে এবং তারপর বাসায় পৌছাব ।
লঞ্চ থেকে নামলাম রিকশায় উঠবো, রিকশাওয়ালারা কিভাবে কথা বলে-বুঝিনা,
যাক সে কথা- বুঝি আর না’বুঝি, ভাড়া যতই হোক আমি কোথায় যাব তা বুঝলেই হল ।
রিকশা থেকে নামলাম আর ভাগ্য ভালো নৌকা পেয়ে গেলাম, নৌকায় উঠলাম ভাড়া ২টাকা, আমার এলাকার ভাষায় বলি ‘গুদারা পারাপার’ ।
নৌকা পাড়ে ভিড়ার আগেই দুলাভাই সবার পরিচয় দিচ্ছেন- যারা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে দাড়িয়ে আছেন । নৌকা থেকে নামার সময় তারা খুব আগ্রহ নিয়ে আমাদের হাত থেকে ব্যাগ নিচ্ছেন, ব্যাগ এর সংখ্যা এতই বেশি যে-আমাকে তারপরেও ২টা ব্যাগ বহন করতে হচ্ছে ।
ভেবেছিলাম কাছেই হয়তো বাসা কিন্তু একটু একটূ করে প্রায় ৩মাইল পদ-যাত্রার পর বাসায় পৌছলাম । দীর্ঘদিন পর এতটা ভ্রমণ আর পরিশ্রম হল, ক্লান্তিতে মনে হচ্ছে মেঝেতে শুয়ে পরি।
এখানে বিদ্যুত নেই, সৌরশক্তির কল্যাণে সুধু বাল্ব জ্বলে-ফ্যান নেই । যত জলদি পারি পুকুরে গোসল করতে গেলাম, গোসল শেষে সেই’যে সকাল ৭টায় ঘুম দিলাম জাগলাম দুপুর ১টায় ।
হা...হা... এতক্ষণ কেও দিনের বেলা ঘুমায় না, আধো ঘুম-আধো জাগা অবস্থায় শুয়ে ছিলাম।
দুপুরের খাবার খেয়ে আবার ঘুমাইলাম । ঘুম আর ঘুম দিয়ে দিনটা পেরিয়ে গেল ।
রাত ৯টা বাজে মনে হচ্ছে যেন রাত ১২টা বেজে গেছে । রাতের পেট’পূজা শেষে ঘুমাতে গেলাম, রুমে গিয়ে আমার যেন গরম না লাগে তাই চরম এক ব্যাবস্থা করা হয়েছে, এইরকম ব্যাবস্থা দেখে ভেতরে একটু একটূ ভয় শুরু হয়ে গেল ।
to be continue.....
©somewhere in net ltd.