নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বৈকন্ঠ

বৈকন্ঠ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিনতি করেও বাঁচতে পারেনি ঐশীর মা

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪

তুই আমার মেয়ে না? তুই এভাবে আমাকে মারছিস কেন?’ এভাবেই মেয়ের কাছে আকুতি করে প্রাণ ভিক্ষা চাইছিল স্বপ্না রহমান। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। একের পর এক ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মাকে। মায়ের চিত্কারে একমাত্র ছেলে ঐহী জেগে ওঠে। ঐশীকে সে রক্তাক্ত খঞ্জর দিয়ে মারার ভয় দেখিয়ে বাথরুমে নিয়ে আটকে রাখে। এর আগে ঘুমের মধ্যে বাবাকে জবাই করে। তারপর মা-বাবার লাশ গৃহকর্মীর সহায়তায় টেনেহিঁচড়ে বাথরুমে নিয়ে বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখে। মা-বাবার এমন লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছে মেয়ে ঐশী। তাদের হত্যা করে ঐশী একফোঁটা চোখের পানিও ফেলেনি।

হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করার অভিযোগে ঐশীর আরও দুই বয়ফ্রেন্ডের সন্ধান চলছে। আটকদের মধ্যে ঐশী, তার বয়ফ্রেন্ড রনি ও গৃহকর্মী সুমীকে পাঁচদিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

গত ১৬ আগস্ট রাজধানীর শান্তিনগরের চামেলীবাগের ২ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার ৫/বি নম্বর ফ্ল্যাট থেকে মালিবাগস্থ পুলিশের বিশেষ শাখার সদর দফতরে কর্মরত রাজনৈতিক অধিশাখার পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান (৪৫) ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের (৩৯) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শনিবার নিহতদের একমাত্র মেয়ে ঐশী রহমান (১৮) রাজধানীর পল্টন থানায় আত্মসর্মপণ করে। তারপর একে একে আটক হয় তাদের বাসার গৃহকর্মী সুমী বেগম (১৫), ঐশীর বয়ফ্রেন্ড রনিসহ সাতজন। এছাড়াও নিহতদের একমাত্র ছেলে ঐহী, সিএনজি চালকসহ বেশ কয়েকজনকে গোয়েন্দা হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঐশীর বয়স কমপক্ষে ১৮। তার প্রথম স্কুল জীবন শুরু হয় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে। সেখানে ছেলেদের মাথায় টুপি আর মেয়েদের মাথায় স্কার্ফ পরিধান করা বাধ্যতামূলক। যেটি করতে ঐশী নারাজ ছিল। তাই সেখানে পড়াশোনা হলো না। মা-বাবা তাকে ভর্তি করেন রাজধানীর রামপুরার কর্ডোভা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে। এখান থেকে সে ‘এ’ লেভেল শেষ করে। এরপর ‘ও’ লেভেলে ভর্তি করা হয় ধানমণ্ডির অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে।

জীবনের মোড় এখানেই ঘুরে যায়। হাই সোসাইটি মেইনটেইন করতে গিয়ে বিপথে পা বাড়ায় ঐশী। এখানে অনেকটাই শখের বশে প্রথম সিগারেটে টান দেয়। সেই সিগারেট থেকে এক সময় গাঁজা সেবন করে। এরপর তাকে নেশায় একেবারে পেয়ে বসে। সিগারেট ও গাঁজা সেবন দৃষ্টিকটূ। সবার সামনে এসব অভ্যাস ধরে রাখা কঠিন। বন্ধুবান্ধবদের পরামর্শেই জড়িয়ে পড়ে নীরব ঘাতক নেশা ইয়াবায়। ইয়াবার কোনো গন্ধ নেই। তাতে কেউ বুঝতেই পারে না। দুই বছরে সে পুরোপুরি ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ে। বছরখানেক পরে বিষয়টি প্রথম মা-বাবার চোখে হালকা ধরা পড়ে। প্রথমে সে নানা উসিলায় তা কাটিয়ে নিত। এভাবেই কেটে যায় প্রায় দেড় বছর। সর্বশেষ মাস ছয়েক ধরে মা-বাবা মেয়ের মাদকাসক্তি নিয়ে একেবারেই কঠোর হয়। ঐশীকে বেশ কয়েক দফায় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে যান তারা। কিন্তু লাভ হয়নি। আবার নেশায় জড়িয়ে পড়ে ঐশী। মাদকাসক্ত হয়ে সে নানা ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়ে। তার বয়ফ্রেন্ডের সংখ্যা অনেক। যারা অধিকাংশই ঐশীর চেয়ে বয়সে বড়। তাদের সঙ্গে সে অবৈধ মেলামেশাও করেছে।

এমন পরিস্থিতিতে মা-বাবা খুবই কঠোর হন। কোনো কিছুতেই যখন কাজ হচ্ছিল না তখন মা-বাবা মেয়েকে একা একা ঘর থেকে বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন। বাড়ির যে কোনো একজন সব সময়ই ঐশীর সঙ্গে সঙ্গে থাকত। তাতেও কাজ হয়নি। কারণ ঐশী মা-বাবা বেরিয়ে গেলেই বাড়ি থেকে নানা উসিলায় বেরিয়ে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মাদক সেবন করত।

ঐশী যাতে কারো সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য মা স্বপ্না রহমান গত ৩১ জুলাই মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেন। মায়ের এমন কাজে বাবা বাধা দেননি। এরপর থেকেই ঐশী বেপরোয়া হতে থাকে। মা-বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা নেয় মনে মনে।

যেভাবে হত্যা করে মা-বাবাকে: গত ১৪ আগস্ট বয়ফ্রেন্ড রনির সঙ্গে যোগাযোগ করে ঐশী। রনির কাছ থেকে সে উচ্চমাত্রার ঘুমের বড়ি সংগ্রহ করে রাখে। রাতের খাবারের পর বাড়ির সবাই চা বা কফি পান করে। রাতের খাবারের পর ঐশী মাকে কফির সঙ্গে ১০টি উচ্চমাত্রার ঘুমের বড়ি মিশিয়ে দেয়। এরপর মাকে ধরে নিয়ে গিয়ে মাস্টার বেডে শুইয়ে দেয়। খানিক পরে ঐহীও মায়ের সঙ্গে শুয়ে পড়ে। চেতনানাশক ওষুধযুক্ত কফি পান করে মা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। প্রসঙ্গত, চিকিত্সকদের মতে অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খেলে মানুষ অনেক সময় অচেতন হয়ে পড়ে। কিন্তু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম।

মাকে কফির সঙ্গে ঘুমের বড়ি সেবন করানোর সময় বাবা বাইরে ছিলেন। বাসায় ফিরে মায়ের খোঁজ নেন। ঐশী বাবাকে জানায়, আম্মুর মাথা ধরায় ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে। তিনি বাইরে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে বাসায় ফেরেন। রাত ১১টার দিকে তাকেও কফির সঙ্গে অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খাইয়ে দেয় ঐশী। খাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনিও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। তাকে পাশের আরেকটি কক্ষে কৌশলে শুইয়ে দেয় ঐশী।

রাত দেড়টার দিকে প্রথমে বাবাকে বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় বাসার ব্যবহূত দুদিকে ধারালো খঞ্জর দিয়ে জবাই করে। এতে তার শ্বাসনালী কেটে যায়। তিনি মুহূর্তেই মারা যান। রাত সোয়া ২টার দিকে ঐশী মায়ের রুমে ঢোকে। তাকেও জবাই করার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি নড়াচড়া করে ওঠেন। এতে তাকে জবাই করা যায়নি। তাই ঐশী মাকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এক পর্যায়ে মা বাঁচার জন্য মেয়েকে বলেন, ‘তুই আমার মেয়ে না! আমাকে এভাবে মারছিস কেন?’ তাতেও মন গলেনি বখে যাওয়া মেয়ে ঐশীর। হত্যাকালে ঐহী জেগে ওঠে। তাকে রক্তাক্ত খঞ্জর দেখিয়ে বাথরুমে আটকে রাখে ঐশী।

এরপর সে কাজের মেয়েকে ডেকে তোলে। চিত্কার করার চেষ্টা করলে সে ছুরি উঁচিয়ে তাকেও ভয় দেখায়। তার মুখ চেপে ধরে। তার মাথায় হাত রেখে কসম করায়। বলে যা করেছি তুই বলবি না।

বললে তোর মা মারা যাবে।’ এরপর তাকে টাকার লোভ দেখায়। টাকা আর কসমের ফাঁদে ফেলে কাজের মেয়ের সহায়তায় মেঝেতে ভেসে যাওয়া রক্তের ওপর দিয়ে টেনেহিঁচড়ে মা-বাবাকে ঐশীর বাথরুমে নেয়া হয়। সেখানে লাশ দুটো বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। আলমারির চাবি মায়ের কোমরে বাধা ছিল। তা সহজেই খোলা যাচ্ছিল না। তখন ঐশী বটি দিয়ে চাবির গোছা কেটে আলমারি খুলে টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে দুটি ব্যাগে ভরে রাখে। আর সারারাত ধরে গৃহকর্মী সুমিকে নিয়ে মেঝেতে লেগে থাকা রক্ত কাপড় আর পানি দিয়ে পরিষ্কার করে।

বৃহস্পতিবার সকালে ঐহীকে বাথরুম থেকে বের করে আর গৃহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বের হয়। বের হওয়ার সময় ঐশীর নিজের ফোন না থাকায় মায়ের মোবাইল ফোন নেয়। এরপর নেমেই বয়ফ্রেন্ডদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকে। বয়ফ্রেন্ডরা তাকে মোবাইল ফোনের সিমকার্ড পরিবর্তনের কথা বলে। সে দ্রুত একটি দোকান থেকে সিমকার্ড কিনে ভরে নেয়। বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় ঐহীকে বলে আমরা লন্ডন চলে যাচ্ছি। আর কাজের মেয়েকে বলে আমরা কানাডা চলে যাচ্ছি। সেখানে শুধু সুখের জীবন। কোনো চিন্তা নেই।

বাসার নিচ থেকে ঐশী একটি সিএনজি ভাড়া করে। সারাদিন সিএনজিতে ঘুরে বেড়ায় তারা। কাজের মেয়েকে কোথাও রাখতে গেলে সন্দেহ হওয়ার ভয় আছে। এজন্য সে মোটা টাকা দিয়ে গৃহকর্মী সুমিকে সিএনজি চালকের বাসাবোর বাসায় রাখে। আর সে চলে যায় গোড়ান এলাকায় থাকা বান্ধবী তৃষার বাড়িতে। আর ঐহীকে তার এক আত্মীয়ের বাসায় পাঠায়। সেখান থেকে ঐহী বাসায় ফেরে। আর তাতেই প্রকাশ পায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি। ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ঐশী এক বয়ফ্রেন্ডের পরামর্শে পল্টন মডেল থানায় আত্মসমর্পণ করে।

রবিবার ডিএমপির মুখপাত্র ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ঐশী পুরোপুরি জড়িত। সেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হত্যাকাণ্ডটি পরিকল্পিত। মোবাইল ফোন নেয়ার পর থেকেই ঐশী মা-বাবাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্যে ঐশীর আরও দুই বয়ফ্রেন্ডের সন্ধান চলছে। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আরও কেউ জড়িত কি না সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। মূলত মা-বাবার ওপর ক্ষোভ থেকেই হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটায় সে।

আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, আদালত আসামিদের রিমান্ড শুনানি শেষে গ্রেফতার দেখানো প্রত্যেককে পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুুর করে। আদালতে হাজির করার সময় শত শত মানুষ মা-বাবার হত্যাকারী খুনি মেয়েকে দেখার জন্য ভিড় জমায়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:০৯

আলমগীর_কবির বলেছেন: ঐশীর জন্য সমবেদনা জানাবো কিনা বুঝতে পারছিনা। ঐশির এতদুর আসার পেছনে পরলোকগত মা-বাবা দায় এড়াতে পারে কিনা সেটাও বুঝতে পারছিনা। তবে এই রকম ঘটনা যেন আর কোনদিন কোন পরিবারে না ঘটে।

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৫:৪৩

গেন্দু মিয়া বলেছেন: "এখান থেকে সে ‘এ’ লেভেল শেষ করে। এরপর ‘ও’ লেভেলে ভর্তি করা হয় ধানমণ্ডির অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে"

don't they have to do O level first and then A level?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.