![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘শাহাদাহ’-বলতে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’- কে বুঝায়।
যার অর্থ হলঃ
“আল্লাহ ছাড়া ইবাদাতের যোগ্য আর কোন মা’বুদ নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রাসূল।”
এই স্বাক্ষীর অপর নাম হল “কালিমা”- যা ইসলামের প্রথম স্তম্ভ।
অনেক মুসলমানই এই ভুল ধারনার মধ্যে আছেন যে, শুধুমাত্র এই্ কালিমা উচ্চারন করলেই বা মুসলিম ঘরে জন্ম বা লালন-পালন হলেই বা নাম মুসলমানদের মত হলেই মুসলমান হওয়া যায় এবং কিছু ইবাদাত পালনের মাধ্যমে জান্নাতের অধিকারীও হওয়া যায়!!! এটি খ্রিস্টানদের মতধারা।
ইসলামে প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই সবাইকে শাহাদাহর (কালিমা) সঠিক ব্যাখ্যা জানতে হবে। এর স্বাক্ষ্য দানই ইসলামে প্রবেশের একমাত্র রাস্তা। কেউ বুঝে শুনে এ কালিমার স্বাক্ষ্য দিলে সে হবে মুসলিম, আর অস্বীকার করলে সে হবে কাফির। এ হচ্ছে এমন এক কালিমা যা মানুষের ঈমান ও কুফরীর মধ্যে পার্থক্য করে দেয়। এটি এমন এক কালিমা যা না জানলে প্রত্যেকেরই ইসলামে প্রবেশ গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে নিজেকে মুসলিম দাবী করে তার প্রতি ফারদ হচ্ছে এ
কালিমার সঠিক অর্থ, গুরুত্ব, ফযীলত, এর রোকন এবং এর শর্তাবলী জেনে নিবে, যেন এর দাবী পূরণ করতে পারে, এবং দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা লাভ করতে পারে। কারন এ কালিমা সম্পর্কে অজ্ঞতা, মূর্খতা বান্দার ব্যর্থতা এবং চিরস্থায়ী ধ্বংস ডেকে আনে।
অতএব সেই সব মুসলমান ভাই-বোনদের প্রতি আহবান, যারা নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করেন, আসুন আমরা এর সঠিক মর্মার্থ্য জেনে তা পালন করার চেষ্টা করি।
সলাত-রোজা-হাজ্জ্ব-যাকাহর যেমন শর্ত আছে, তেমনি শাহাদারও শর্ত আছে। সলাত সহীহ হওয়ার শর্তাবলীর মধ্যে যদি যে কোন একটি শর্ত যেমন অযু করা বা কিবলামুখী হওয়া ইত্যাদি পূরণ না করা হয়, তাহলে সলাত বাতিল বলে গন্য হবে। তেমনি শাহাদাহ সাতটি শর্ত সম্বলিত, যা পরিপূর্ণ ভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগের পর আমাদের মাঝে ইসলামের প্রথম স্তম্ভ (ঈমান) স্থাপিত হওয়ার দাবী করতে পারব। এ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা এবং এর শর্তগুলো পূরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াজিব।
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর চাচাত ভাই ইবন আব্বাস (রাদিআল্লাহু আনহু) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেনঃ “ইহা কি সত্যি যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- এর স্বাক্ষ্যদানই জান্নাতে প্রবেশের চাবিকাঠি?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হ্যা সত্যি। তবে প্রত্যেক চাবিতেই কিছু দাঁত থাকে এবং এই দাঁতগুলোর কোন একটির অনুপস্থিতে কাংখিত দরজাটি খোলা
সম্ভব নয়। অনুরূপ ভাবে কালিমারও সাতটি দাঁত রয়েছে এবং আমাদের জীবনে এর যে কোন একটির অভাব ঈমানের দাবীকে পরিপূর্ণ করে না এবং এর ফলে শাহাদাহ অকার্যকর (বাতিল) হয়ে পড়ে।”
সাতটি শর্ত হলঃ
১ম শর্তঃ কালিমার ইলম অর্জন করা
আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেন, فاعلم انه لا اله الا الله -
“তুমি জেনে রাখো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)”। [সূরা মুহাম্মাদঃ১৯]
অবশ্যই বান্দাকে এই কালিমার শব্দসমূহের অর্থের ইলম অর্জন করতে হবে। শাব্দিক অর্থে এর ব্যাখ্যা হল-আল্লাহ ব্যতীত ইবাদাতের যোগ্য কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর প্রেরিত সর্বশেষ নাবী ও রাসূল এবং তাঁর পর আর কোন নাবী বা রাসূল আসবেন না।
কালিমার প্রথম অংশকে ‘তাওহীদ’ এবং দ্বিতীয় অংশকে ‘রিসালাত’ বলা হয়। এর উভয় অংশে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য।
প্রথম অংশ তাওহীদ
তাওহীদ মানে একত্ববাদ। তাওহীদের নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ জানতে ও মানতে হবেঃ
১. তাওহীদ আল রুবুবিয়্যাহ
–আল্লাহই একমাত্র রব-ইলাহ-মালিক-রিযিক্বদাতা-নিরাপত্তাদাতা-আলিমুল গায়িব-সৃষ্টিকর্তা।
২. তাওহীদ আল উলুহিয়্যাহ
একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ব্যতীত অন্য কারো ইবাদাত করা যাবে না। সকল ইবাদাত সলাত, রোজা, কুরবানী একমাত্র আল্লাহর প্রাপ্য, আর কারও নয়।
৩. তাওহীদ আল-আসমা, ওয়াস-সিফাতঃ
আল্লাহর ৯৯টি সুন্দর নাম রয়েছে যার প্রত্যেকটি পৃথক পৃথকভাবে আল্লাহর গুন সমূহকে প্রকাশ করে। এই গুনবাচক নামসমূহের প্রত্যেকটির উপর ঈমান আনা ফারদ।
৪. তাওহীদ আল-হাকীমিয়্যাহ
আল্লাহই একমাত্র আইনদাতা এবং এই বিশ্ব জগতে আল্লাহ ছাড়া আর কেউই আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রাখেনা।
প্রত্যেককেই রিসালাত সংক্রান্ত নিম্নোক্ত বিষয় সমূহ জানতে ও মানতে হবেঃ
১. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর সুবহানাহু ওয়া তা’আলার প্রেরিত সর্বশেষ নাবী ও রাসূল এবং তাঁর প্রতি সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআন নাযিল করা হয়েছে।
২. সাইয়্যিদুল মুরসালিন রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রত্যেকটি কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে সুন্নাহ বলে, যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কর্তৃক অনুমোদিত। সুতরাং, প্রত্যেক মুসলমানকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নাহ অনুসরন করতে হবে।
৩. রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিশ্বজগতের সর্বোৎকৃষ্ট গুনাবলী সম্পন্ন এবং সর্বশ্রেষ্ট মানব।
৪. সবাইকে অবশ্যই নিজ পিতামাতা-সন্তান এবং সমগ্র মানবকুল অপেক্ষা বেশী ভাল বাসতে হবে।
২য় শর্তঃ আল-ইয়াক্বীন - নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করা
আমাদেরকে অবশ্যই শাহাদাহ-র প্রথম শর্ত [তাওহীদ-রিসালাত] এর উপর বিন্দু মাত্র সন্দেহ না রেখে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে।
৩য় শর্তঃ আল-কাবুল - প্রকাশ্যে ও গোপনে ঈমানের স্বীকৃতি
তাওহীদ ও রিসালাতের ব্যাপারে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং যে কোন প্রেক্ষাপটের মোকাবিলায় মৌখিক স্বীকৃতি দান ও বাহ্যিকভাবে মেনে নিতে হবে।
৪ম শর্তঃ আল-ইনকিয়াদ - কুরআন ও সুন্নাহর কাছে পরিপূর্ন আত্নসমর্পন
আমাদেরকে অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্নসমর্পন করতে হবে। কিছু আয়াত মানা এবং বাকী আয়াত অমান্য করা যাবে না।
৫ম শর্তঃ আল-সিদক সত্যবাদীতা
সেই সত্য যা মিথ্যা বা মুনাফিকী কোনটাই অনুমোদন করে না। এ কালিমা শুধূ মুখে উচ্চারন করবে কিন্তু এ কালিমা দ্বারা যা বুঝানো হয়েছে তা যদি অন্তরে অস্বীকার করে, তবে সে নাজাত লাভ করতে পারবে না।
৬ম শর্তঃ আল-ইখলাস -একনিষ্টতা
রিয়ামুক্ত হয়ে একনিষ্টভাবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ইবাদাত করতে হবে।
৭ম শর্তঃ আল-ওয়ালা, ওয়াল বারা -আল্লাহর সন্তুষ্ঠির জন্য ভালবাসা ও ঘৃনা করা
যে কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে একমাত্র আল্লাহরই জন্য ভালবাসতে হবে এবং আল্লাহরই জন্যই ঘৃণা করতে হবে। সাহাবীদের জীবনী থেকে এর বহু উদাহরন পাওয়া যায়। যুদ্ধের ময়দানে নিঃর্দ্বিধায় কাফির পিতা বা পুত্রকে হত্যা করেন অনেক সাহাবী।
মুসলমান হওয়ার জন্য উপরোক্ত ৭টি শর্ত প্রত্যেককেই নিজের জীবনে কার্যকর করতে হবে।
©somewhere in net ltd.