![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনের জরাজীর্ণ অন্ধকারের ভেতর এক ঝলক আলো খুঁজে ফিরছি ; এই আলোটুকুর নামই জীবন, এই আলোটুকুর নামই প্রাণ।
এশিয়া কাপ ক্রিকেট খেলা চলছে। আজ বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের খেলা হচ্ছে। বাংলাদেশ প্রথমে ব্যাট করে। ৫০ ওভার শেষে বাংলাদেশের মোট সংগ্রহ তিন উইকেট হারিয়ে ৩২৬ রান। বাংলাদেশ নিঃসন্দেহে একটা ভাল স্কোর করেছে। পাকিস্তানকে চ্যালেঞ্জ করতে এই স্কোরটাই যথেষ্ট বলে আমার মনে হয়। জিততে হলে পাকিস্তানকে ৩২৭ করতে হবে। যথা সময়ে তারা ব্যাট করতে নামে।
আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে পড়ছিলাম। ২৪ মার্চ থেকে আমার ৩৪ তম বিসিএস এর লিখিত পরীক্ষা আরম্ভ হতে যাচ্ছে। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা আছে। তাই সেই ক্ষুধা মেটানোর ধান্ধায় ভীষণভাবে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছি। কিন্তু আজ সন্ধার পরে আর গ্রন্থাগারে থাকতে পারলাম না। সন্ধ্যা ৬ টার পরে দেখি গ্রন্থাগার প্রায় খালি হতে চলেছে। কারন বাংলাদেশের খেলা চলছে। সবাই আশা করছে আজ বাংলাদেশ জিতবে। প্রায় ১৫ বছর পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ আজ আবার জিততে চলেছে। তাই কেউ সেই দৃষ্টিনন্দন খেলাটাকে না দেখে থাকতে পারছে না। আমিও আর থাকতে পারলাম না। তাই হলের পথ ধরলাম। পড়ে থাকল আমার পেটের ধান্ধা,আমার সাধের বিসিএস পরীক্ষার পড়া। টাইগারদের জয়ের আনন্দের একজন সঙ্গী হব,এই আশায় হলে ফিরলাম। খেলা দেখা শুরু করলাম। আমি যখন খেলা দেখা শুরু করি তখনও বাংলাদেশের জেতার সুযোগ আছে। বলা যায় প্রায় ৮০% খেলা বাংলাদেশের পক্ষে। পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানরাও ভাল ব্যাট করছে। খেলা দেখছি। খেলা দেখতে দেখতে আজ আমি একটা চরম,তিক্ত ও আমাদের জাতীয় জীবনের জন্য হুমকীস্বরূপ একটা মারাত্নক অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। বাংলাদেশ বনাম পাকিস্তানের খেলা হচ্ছে। আমারা বাংলাদেশি। স্বাভাবিকভাবেই সবাই বাংলাদেশ কে সমর্থন করবে। আর বাংলাদেশ ভাল খেললে তো কথায় নেই। আজ বাংলাদেশ ভাল খেলেছে বা এখনও মোটামুটি ভালোই খেলছে। যখন ভাল খেলছে আমরা সবাই তালি দিচ্ছি,উল্লাস করছি। কিন্তু না,সবাই তালি দিচ্ছে না। আমি প্রথমে মনে করলাম এমনি তালি দিচ্ছেনা বা উল্লাস করছে না। কারন সবাই সবসময় তালি দেয়না। একটু পরেই দেখলাম অন্যকিছু। যারা বাংলাদেশের ক্রিকেটারা ভাল খেললে তালি দিচ্ছে না, তারা আবার পাকিস্তানী ক্রিকেটারা চার কিংবা ছয় মারলে তালি দিচ্ছে, উল্লাস করছে। আমি বুঝলাম তারা পাকিস্তানের সমার্থক। আমি তো অবাক হয়ে গেলাম। এটা কি! যেখানে বাংলাদেশ খেলছে, সেখানে বাংলাদেশকে সমর্থন না করে পাকিস্তান কে সমর্থন করছে। এরা কারা? এরা কি বাংলাদেশী? নাকি পাকিস্তানী?কি ধরনের মানসিকতা এদের? যে দেশে এদের জন্ম,যে দেশে এদের বসবাস,যে দেশের আলো বাতাসে এরা বেড়ে উঠছে,যে দেশের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা এরা ভোগ করছে,যে দেশে বসে এরা খেলা দেখছে, সেই দেশের মাটিতে বসে এরা সেই দেশকেই সমর্থন করে না। তারা সমর্থন করে সেই দেশের (বাংলাদেশ) বিরুদ্ধে খেলা অন্য একটা দেশকে(পাকিস্তানকে)। তারা সমর্থন করে সেই দেশকে,যে দেশ ১৯৪৭-১৯৭১ সাল পর্যন্ত আমাদের জোঁকের মত শোসন করেছে, তাদের! যারা আমাদের মুখের ভাষা কেড়েনিতে চেয়েছিল,যারা আমাদের সাথে চরম বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে চব্বিশটা বছর ধরে,যাদের গুলিতে মরেছে আমাদেরই কারও মা-বাবা,কারও ভাই-বোন,কারও আত্নীয়-স্বজন। যাদের হাতে আমাদের আড়াই লক্ষ মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে, তাদেরকে সমর্থন করে। আমি বিস্মিত,শঙ্কিত,আতঙ্কিত। কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের দেশ? আমাদের যুব সমাজ? আমাদের ভবিষ্যৎ” কী? আমরা কি আবার পাকিস্তানে পরিণত হব নাকি ভারতের কোন একটা প্রদেশে পরিণত হব? নাকি আমরা আমদের স্বাধীন সত্ত্বাকে টিকিয়ে রেখে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব?
আমার এলাকার এক লোককে আমি দেখেছি,তিনি পাকিস্তানের সমার্থক। আমি শুনেছি, তিনি নাকি নামাজ পড়ে পাকিস্তানের খেড়োয়ারদের জন্য দোয়া করেন,যেন পাকিস্তান জিতে যায়। তখন আমি বিষয়টাকে অতটা গুরুত্ব দিইনি। কিন্তু আজ গুরুত্ব না দিয়ে আর পারলাম না। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে অধ্যায়নরত ছাত্ররা যখন এমন আচরণ করে, তখন গুরুত্ব না দিয়ে আর থাকা যায় না। এ সকল ছাত্ররা সেই বিদ্যাপিঠে অধ্যায়ন করে,বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে যে বিদ্যাপিঠের ছাত্রদের একটা বড় ধরনের অবদান ছিল। আমি নিজেও সেই বিদ্যাপিঠের একজন ছাত্র হিসেবে গর্ববোধ করি। আমি নিজেও মনে করি, আমিও সেই স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের একটা অংশ হয়েগেছি। কারণ আমিও সেই সকল বীর সৈনিকদের উত্তরসূরি হিসেবে এখানে পড়তে এসেছি। কিন্তু বিধিবাম! একি,আমি এ কি দেখছি! লজ্জায়,ঘৃণায় আমার নিজের মাথার চুল আজ নিজেরই ছিড়তে ইচ্ছে করছে। আমার মনে হচ্ছে নিজের গালে নিজেই কষে চড় মারি! মনে হচ্ছে,পৃথিবীকে বলি, তুমি ফাঁক হও, আমি তোমার ভেতরে মুখ লোকায়।
আমার জানা ভারতের কিছু সমার্থকও আছে,যারা বাংলাদেশ বনাম ভারতের খেলা হলে বাংলাদেশকে সমার্থন না করে ভারতকে সমার্থন করে। আমাদের দেশপ্রেমের নমুনা কি এই,তার ধরণও বা কেমন! নিজের দেশের প্রতিদ্বন্দ্বীকে সমর্থন করা, মাতৃভূমির বিপক্ষে সমর্থন করা কি একপ্রকার দেশদ্রোহীতা নয়? এটাও কি এক প্রকার নব্য রাজাকার বৃত্তি না? পাকিস্তান আমাদের জোঁকের মত চুষে গেছে,স্বাধীনতার সময় ভারত আমাদের সাহায্য করলেও (তবে ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশের প্রয়োজনে বা মানবিকতা বিবেচনা করে যতটা বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে,তার চেয়ে নিজের প্রয়োজনে বা নিজের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বেশি করে এগিয়ে এসেছে সাহায্য করতে। কারণ ব্রিটিশরা আমাদের শিক্ষা দিয়েই গেছে যে,বিভক্ত কর এবং শাসন কর। আর আমাদের স্বাধীনতার জন্য ভারতের এই সাহায্য আমাদের জন্য অপরিহার্য ছিল। তার জন্য আমরা তাদের কাছে চির কৃতজ্ঞ। তাই বলে নিজের দেশকে বিলিয়ে দিয়ে নয়। আগে ঘর,তারপরে পর।) বর্তমান বাংলাদেশকে ভারত প্রতিনিয়ত চুষে চলেছে। প্রতিদিন, প্রতিমাস, এমন কি প্রতিটা মিনিটে,প্রতিটা সেকেণ্ডে ভারত আমাদেরকে জোঁকের মত চুষে চলেছে। তারপরেও আমরা কেন ভারত বা পাকিস্তানের ক্রিকেট খেলা কে সমর্থন করব? বা করি কেন?
কিছুদিন আগে ভারতের বলিউডে গুণ্ডে নামে একটা সিনেমা বের হয়েছে। সেখানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ কে অস্বীকার করা হয়েছে। সেখানে দেখানো হয়েছে,আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নামে কোন যুদ্ধ হয়নি। যুদ্ধ হয়েছে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে,আর বাংলাদেশ পাক-ভারত যুদ্ধের বাই-প্রডাক্ট বা উপাজাত হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করেছে। যারা আমাদের দেশের জন্ম ইতিহাসকে অস্বীকার করে,আমাদের গৌরবকে অবহেলা করে,যারা কিছুদিন আগেই জমিদার সেজে আমাদের দেশের টেস্ট ক্রিকেট খেলার মর্যদা কেড়ে নিতে চেয়েছিল,যারা বিভিন্ন ভাবে প্রতিটা মুহুর্তে,প্রতিনিয়ত আমাদের অপমান করে চলেছে,আমরা কেন তাদের খেলা কে সমর্থন করব?
আমাদের বাংলা সাহিত্যের একজন কবি “কবি আব্দুল হাকিম” তার “বঙ্গবানী” কবিতায় বলে গেছেন, “দেশী ভাষায় বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়
নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়”
কবি আব্দুল হাকিম আরো বলে গেছেন, “যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি”
তাই কবি আব্দুল হাকিমের সাথে সুর মিলিয়ে আমি বলতে চাই,
“দেশীয় ক্রিকেট যার মনে ন জুয়ায়
বাংলাদেশ ত্যাগী কেন ভারত-পাকিস্তান ন যায়”
আরো বলতে চাই, “যে সবে বঙ্গেতে জন্মি হিংসে ক্রিকেটার দেশী
যে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি”
©somewhere in net ltd.