আধুনিক প্রযুক্তি কিংবা হারানো অনুভূতি।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪১

শাহবাগ জাদুঘরে বাংলাদেশের নৌকা বিষয়ক একটা গ্যালারি আছে। অনেক পুরাতন কিছু নৌকার মডেল শো কেসে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সব গুলোই আধুনিকতার ছোঁয়ায় বিলুপ্ত প্রায়। জাদুঘরে গেলে বাকি সবার মতো আমিও সেই নৌকার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি আর মাথা ঝুকাতে ঝুকাতে বলি "চরম তো!"

ইদানিং রাস্তা ঘাটে যে হারে 3G রিকশা (অটো রিকশা, স্পীডে চলে বলেই এই নামকরন) চলে তাতে আমার মনে হয় কয়েক যুগ পর জাদুঘরে রিকশা বিষয়ক একটা গ্যালারি খুলতে হবে। সেই গ্যালারিতে প্যাডেল মারা রিকশা সাজান থাকবে। পোলাপানকে জাদুঘরে নিয়ে গেলে তারা চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করবে "এটা কী?" তখন হতাশ কন্ঠে জবাব দিতে হবে "এটা হচ্ছে রিকশা। আগে এগুলোতে চড়ে স্কুলে যেতাম।"
বাচ্চা দের সাধারন জ্ঞানের বইয়ে প্রশ্ন লেখা থাকে "রিকশার নগরী বলা হয় কোন শহর কে?" উত্তর 'ঢাকা' আর তখন লেখা থাকবে "অটো রিকশার নগরী কোনটি?" উত্তরে লেখা থাকবে ঢাকার নাম।

এসব 3G রিকশায় উঠতে কেন যেন আমার মন সাই দেয় না। চলার সময় একটা মৃদু যান্ত্রিক শব্দ নিয়ে চলে। এগুলোর চালকরাও কেমন যেন ঝিম ধরা। এর থেকে প্যাডেল মারা রিকশাই আমাকে খুব টানে। খানা খন্দে পড়ে 'ঘটর মটর' শব্দ করে, শরীরে ঝাঁকুনি লাগে। জিনিস গুলো আমার কাছে বেশ লাগে। হয়ত একটু আস্তে চলে কিন্তু এই প্যাডেল মারা রিকশায় চড়ার অনুভতি যান্ত্রিক 3G রিকশায় নাই।

শুধু রিকশা না, সব কিছুইতেই এখন 3G এর ছোঁয়া। আগে একটা চিঠি পাঠিয়ে সেই চিঠির উত্তরের অপেক্ষায় এক থেকে দেড় মাস অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এখন সেই এক দেড় মাসের অপেক্ষা নেমে এসেছে মাত্র কয়েক মূহুর্তে। আমি বলছিনা যে এতে আমাদের কোনো খারাপ কিছু হচ্ছে। আমি বলছি এর কারনে আমরা আমাদের অনুভুতি গুলো হারাচ্ছি।
অনেক দিন পর প্রিয় মানুষটার কাছ থেকে একটা চিঠি পাওয়ার যে আনন্দ তার সামনে একটা ফোন কল পাওয়ার আনন্দ একেবারে নস্যি।

কিছু পেতে হলে নাকি কিছু হারাতে হয়। আসলেই তাই, বিজ্ঞানের আধুনিকতায় আমাদের বেগ ঠিকই পেয়েছি কিন্তু হারিয়েছি কিছু নিখাঁদ আবেগ আর অনুভুতি।

০ টি +০/-০