নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিকৃতবুদ্ধির অধিকারী

বর্ষন মোহাম্মদ

অস্থিতিশীলতা, নষ্টামি, আর যাবতীয় প্রতারণা-প্রবণতার বিরুদ্ধে খেলা চলবে

বর্ষন মোহাম্মদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবহমান বাংলার চিরাচরিত উৎসব “চৈত্রসংক্রান্তি”র জীবনদর্শন

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:২২


‘সংক্রান্তি’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো সূর্য বা গ্রহাদির এক রাশি থেকে অন্য রাশিতে গমন, সঞ্চার; ব্যাপ্তি। যেমন, চৈত্র সংক্রান্তি হলো চৈত্র মাসের শেষ দিন। ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে সারা পৃথিবী নতুন সাজে নিজেকে সাজিয়ে নেয়। গাছে গাছে কিশলয় দুলে ওঠে, শাখায় শাখায় ফুল ফোটে আর গাছের ডালে কোকিল গান গেয়ে ওঠে। ক’দিন বাদেই অর্থাৎ ফাল্গুনের প্রথম সপ্তাহের পরেই প্রকৃতি রুক্ষভাব ধারণ করে, প্রচণ্ড খরতাপ আর বৃষ্টির অভাবের কারণে জলাভাব দেখা দেয়, প্রাণিকুল জলতেষ্টায় ভুগতে থাকে। ফলে, মানুষ মনে মনে বসন্ত বিদায়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে যা চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবে পরিণত হয়েছে কালক্রমে। আর পরের দিনই নতুন বছরের প্রথম দিন হওয়ায় চৈত্র সংক্রান্তির উৎসবও বেশ গুরুত্ববহ। মোটের উপরে চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে বিগত বছরকে বিদায় দিয়ে বৈশাখের প্রথম দিনে সকলকে শুভেচ্ছা জানানো হয় নতুন বছরের যেখানে সকলের মঙ্গল কামনাই মূল উদ্দেশ্য।
সাধারণত বঙ্গাব্দের দিনপঞ্জি বিবেচনায় মাস গণনার শেষ দিনটিকে সংক্রান্তি বলা হয়ে থাকে। তাই চৈত্র মাসের শেষ দিনটি হলো চৈত্র সংক্রান্তি। যেহেতু বাংলা মাস গণনার ক্ষেত্রে চৈত্র মাস বছরের শেষ মাস এবং চৈত্র সংক্রান্তি বছরের শেষ দিন সেহেতু অন্যসব দিনের চেয়ে এর গুরুত্ব অনেকটাই বেশি। প্রাচীনকাল থেকে সাধারণ জনগণ যারা বিশেষত কৃষির সঙ্গে জীবনের চৌহদ্দি বুনে নিয়েছেন সর্বকালের তরে বিশেষত তারাই চৈত্র সংক্রান্তিতে নানাবিধ পূজা-পার্বণ, মেলা, লোকাচারসহ সবমিলিয়ে বিশেষ উৎসব পালনের কার্যকারণ বিবেচনা করলে এটিকে বিশেষ লোকউৎসব বললে অত্যুক্তি হবে না। অন্য অর্থে, সম্প্রদায়গত আচার বিবেচনায় সনাতন ধর্মাবলম্বীগণ বিশেষ উৎসব হিসেবে এটি পালন করে থাকে এবং উপবাস, ব্রতাচার, দান ও স্নান পুণ্যলাভের জন্য শুভপ্রদ মনে করে পালন করে থাকে যেমন, চড়ক, গাজন, উপবাস, ভিক্ষান্ন ভোজন প্রভৃতি। শিবের গাজন ও ধর্মের গাজন নামে পালাগানও অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। গাজন মূলত কৃষকদের উৎসব। চৈত্রের দাবদাহ থেকে রক্ষা পেতে বৃষ্টির জন্য চাষীরা পালার আয়োজন করে থাকে যা গাজন নামে পরিচিত।
লোকউৎসব হিসেবে চড়ক বেশ পরিচিত। এটি চৈত্র সংক্রান্তির দিনে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এটি শৈব অনুষ্ঠান হিসেবেও পরিচিত। চড়ক উপলক্ষে যে আচার-অনুষ্ঠান পালিত হয়ে থাকে তা অনেক এলাকায় গাজন, গম্ভীরাপূজা বা নীলপূজা নামে পরিচিত। গবেষকগণের মতে এটি সাধারণত স্থান, অনুষ্ঠানের ধরন ও কালের কারণেই এমন আলাদা আলাদা নাম ধারণ করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মালদহ বা মুর্শিদাবাদে যে আচার-প্রথার মাধ্যমে চড়ক পালিত হতে দেখা যায় তাতে এটি স্পষ্টভাবে বলা যায় যে, এসব চড়ক পূজারই বিভিন্ন রূপ। আবার শৈব অনুষ্ঠান বলারও কারণ জানা যায়। লোকমাধ্যমে কথিত আছে যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে বাণরাজা যুদ্ধে লিপ্ত হন। এই বাণরাজা ছিলেন একজন শিব ভক্ত। শিব উপাসক-ভক্ত এই বাণরাজা যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে ভগবানের নিকট অমরত্ব লাভের প্রার্থনা জানায়। কিন্তু তাঁর প্রার্থনা জানানোর প্রক্রিয়া ছিল আলাদা। তিনি শিবভক্তিসূচক গীত অভিনয় আকারে উপস্থাপন করে তাঁর আর্জি জানায় এবং অবশেষে নিজের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হন। এই কারণেই যারা শিব ভক্ত বা যারা শৈব সম্প্রদায়ের তারা এই উৎসব পালন করে থাকেন। অর্থাৎ শৈব অনুষ্ঠান বলার কারণ এটিই।
যদিও শিবের আরাধনাই উৎসব পালনের প্রধান উদ্দেশ্য তারপরও এতে আরও দুই দেবতার প্রসঙ্গ এসে যায়। একজন নীলপরমেশ্বরী আর অন্যজন কালাকরুদ্র। নীলপরমেশ্বরীর আরেক নাম নীলচন্দ্রিকা। সাধারণ জনগণ একে নীলাবতী বা নীল নামেও ডাকে। কোনো কোনো এলাকায় নীল এবং গম্ভীর এই দুইটি যেহেতু শিবেরই অন্য নাম তাই এই দুই পুরুষ দেবতার নামে পূজাচার পালিত হতে দেখা যায়। সাধারণত কালাকরুদ্র নামক দেবতার উদ্দেশ্যে পশুবলি দেয়া হয়ে থাকে। নীলপূজা উপলক্ষে গ্রামের বাইরে ঠিক শ্মশানের ঘাটে হাজরা ঠাকুর বা দানো বারণো নামে আরও এক দেবতার পূজা করা হয়ে থাকে। চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন হয় নীলপূজা আর পরের দিন হয় চড়ক পূজা। সংস্কৃতির বহুউৎপত্তিবাদ তত্ত্ব অনুসারে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলেও এধরনের কিছু উৎসব পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। ইউরোপে প্রচলিত মেপাল উৎসব অনেকটা চড়কের মতোই। শ্রীলঙ্কায় প্রচলিত টুককুম উৎসবও চড়কের মতোই। লাদাখ, সিকিম এবং ভুটানের বৌদ্ধদের চোড়গ উৎসবের সঙ্গে চড়ক পূজার মিল পাওয়া যায়। অনেক গবেষক পৃথিবীর অন্য কোনো এলাকা থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে এই চড়ক পূজার প্রচলন বলে মনে করেছেন কিন্তু ভারতীয় উপহাদেশের চড়ক পূজার নৃতাত্ত্বিক দিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, এতে এমন কিছু উপাদান আছে যেগুলি আর্যপূর্ব সভ্যতার চিহ্ন বহন করে।
ইতিহাসবিদ নীহাররঞ্জন রায়ের মতে, ‘সামাজিক জলতত্ত্বের দৃষ্টিতে ধর্ম ও চড়ক পূজা দুই-ই আদিম কোম সমাজের ভূতবাদ ও পুনর্জন্মবাদ বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত; প্রত্যেক কোমের মৃত ব্যক্তিদের পুনর্জন্মের কামনাতেই এই পূজার বার্ষিক অনুষ্ঠান।’ তবে বড়শি কিংবা বাণ সন্ন্যাসের মাধ্যমে নরবলি প্রথার চিহ্ন আছে বলেও অনেকে মনে করে থাকেন। চৈত্র সংক্রান্তি সম্পর্কে জানা যায়,
চিত্রা নক্ষত্র হইতে চৈত্র হইল নাম।।
বসন্ত বিদায় নিল, বর্ষশেষ যাম-
চড়কের উৎসব, গাজনের গান।
সেইসঙ্গে বর্ষ হইল অবসান।।

চৈত্র সংক্রান্তির মেলা অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। মেলায় সকল ধরনের পণ্যই বিক্রি হয়ে থাকে। মেলায় কাঠের তৈজসপত্র, মাটির তৈরি নানা জিনিসপত্র, খেলনা, কাঁসা পিতলের বাসন-কোসন, পূজার নৈবেদ্য আর মিষ্টান্ন বিক্রি হয় দেদারসে। তবে সাধারণত খাবার জিনিসই বেশি বিক্রি হয়। আর কিছু রূপসজ্জার জিনিসও বিক্রি হয়। কারণ, যারা চড়ক উপভোগ করতে আসে তারা কোনো ধর্মের বাঁধনে আবদ্ধ নয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা সময়জুড়েই মেলা চলতে থাকে মহাসমারোহে। চড়ক যদিও নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠীর আচার-অনুষ্ঠান কিন্তু যে মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে তাতে বাঙালির ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার সুস্পষ্ট প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়।
জীবন চর্যা ও মানসচর্চার সামগ্রিক অভিব্যক্তি বিবেচনায় নিলে বাঙালির নৃতাত্ত্বিক বিষয়াদির উপাদানগত প্রমাণাদি দ্বারা বোঝা যায় যে, জীবের শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ার সঙ্গেও চৈত্র সংক্রান্তির যোগ আছে। কৃষিজীবী সমাজ ব্যবস্থায় আচার পালনের ক্ষেত্রে নারী বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সারা বছরের অন্যান্য সংক্রান্তির মতো চৈত্র সংক্রান্তি পালিত হয় না। এসময় প্রকৃতি থাকে রুক্ষ, আশেপাশে বৃষ্টি হওয়ার কোনো পূর্বলক্ষণ থাকে না, কৃষিজমির মাটি পানির অভাবে ফেটে চৌচির হয়, নব্যতা সংকটে নদীর পানি চলে যায় তলদেশে- তাই সংক্রান্তির উৎসবে আনন্দের অন্তরালে থাকে শুভাশুভ বোধ কামনায় আচার-ক্রিয়া। পৌষ সংক্রান্তির মতো চৈত্র সংক্রান্তিতে পিঠা-পায়েসের আয়োজন থাকে না কিন্তু বাড়িতে চৌদ্দ রকম শাক মিলিয়ে রান্না হতে দেখা যায় এবং এতে অতি অবশ্যই তিতা স্বাদের গিমাশাক (বৈজ্ঞানিক নাম: Glinus oppositifolius) থাকতে হবে। গিমাশাক লতানো জাতীয় উদ্ভিদের পাতা। গিমার তিতা কমাতে অনেক গৃহিণী আলু কিংবা বেগুন সহযোগে এটি রান্না করে থাকেন। অবস্থাপন্ন বাড়িতে ঘি দিয়ে গিমাশাক রান্নার রেওয়াজ আছে। সাধারণত জ্ঞাতি সম্পর্কের কয়েক বাড়ির গৃহিণীরা একসঙ্গে শাক তুলতে বের হন।
প্রচলিত আছে যে, চৌদ্দ রকমের শাক তুলে তবে তা রান্না করা চৈত্র সংক্রান্তির প্রচলিত খাদ্যাচারের অন্যতম। শাকতোলা ও রান্নার ক্ষেত্রে ‘চৌদ্দ’ সংখ্যাটি প্রতীকী বলে ধারণা করা হয় কারণ চৌদ্দ সংখ্যা দ্বারা এই খাদ্যাচারে পরিমাণে বেশি বোঝায়। তবে বাংলার সাধারণ কৃষিজীবী সমাজে ক্ষেত্র সমীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় যে, চৈত্র মাসে পাওয়া যায় এমন শাকগুলির মধ্যে হেলেঞ্চা, গিমা, পিপুল, কস্তুরি, দন্ডকলম, থানকুনি, তেলাকুচা, খেতাফাটা, কচুশাক, পাটশাক, ঢেঁকিশাক, বথুয়া, শুশ্নি, নুনিয়া, খুইরাকাটা, কারকুল, হাগড়া, কলমি, নেটাপেটা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। চৈত্র সংক্রান্তির দিনে ঘুম থেকে উঠেই খৈ, চিড়া, মুড়ি-মুড়কি, ঘরে পাতা দই, তিলের নাড়ু, ছাতুর নাড়ু, নারিকেলের নাড়ু প্রভৃতি শুকনো খাবার সকলে মিলে বেশ আনন্দসহ উপভোগ করে থাকে।
সনাতন ধর্ম পালনকারীগণ চৈত্র সংক্রান্তিতে নানা লোকাচার পালন করে থাকেন। মুসলমানরা মেলায় যোগ দেয় উৎসবের আমেজে। মেঘ, বৃষ্টি, জল কামনায় কৃষিজীবীরা আচার-ক্রিয়া পালন করে, ব্যবসায়ীরা হালখাতার আয়োজন করে, সমাজের একটি অংশ শিবের গাজন উপভোগ করে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জাতিসত্তাগুলি বৈসুক, সাংগ্রাই ও বিজুর মতো উৎসবগুলি পালনের প্রস্তুতির দিন হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তিকেই বেছে নেয়। তাই, চৈত্র সংক্রান্তি একান্ত কৃষিজীবীর উৎসব হলেও আজ সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনের কারণেই ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলে পালন করে থাকে যা অসাম্প্রদায়িক গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে সংস্কৃতি বিশ্লেষকগণ মনে করেন।
চৈত্র সংক্রান্তি সনাতনীদের উৎসব হলেও অনেক ক্ষেত্রেই মুসলিম সম্প্রদায়ও এ দিনে পালন করেছে নিজস্ব নিয়মাচার। প্রচণ্ড গরম ও দাবদাহ থেকে মুক্তির জন্য খোলা মাঠ বা নদীর চরে জমায়েত হয়ে জামায়াতের সহিত বিশেষ নামাজ আদায়ের চল ছিল। এর উদ্দেশ্য মহান সৃষ্টিকর্তার নিকট এই গরম থেকে নিষ্ক্রান্তির জন্য রহমত প্রার্থনা। প্রত্যেক বাড়ি থেকে নগদ টাকা অথবা চাল-গুড় প্রভৃতি নিয়ে বড় তাল কিংবা বটগাছের তলে দুধ, সেদ্ধ চাল ও তালের গুড় দিয়ে তৈরি হত শিরনি। এরপর তা বিলিয়ে দেয়া হত সর্বত্র। লোকমুখে একে তালতলার শিরনি হিসেবে অভিহিত করা হয়।
বর্তমানে এই উৎসব তার ধর্মীয় গন্ডী পেরিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে প্রবেশ করেছে এবং এপার ও ওপার বাংলার মানুষের নিকট অন্যতম পার্বণ ও উৎসবের উপলক্ষ্য হিসেবে হাজির হয়েছে। পুরাতনকে ঝেড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে নতুনভাবে সব শুরু করার এবং পূর্বের মঙ্গলময়তা ও সৌভাগ্যকে সামনে টেনে নিয়ে যাবার প্রণোদনা থেকেই বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ।
ব্যবসায়ী সম্প্রদায় এদিনে দোকানপাট পরিষ্কার ও ধোয়া-মোছা করে অশুচি, জঞ্জাল ও অপবিত্রতাকে বিদায় জানায় এবং পরের দিন তথা নতুন বছরে সব নতুন করে শুরু করার প্রস্তুতি নেয়। নতুন বছরে নতুন হিসেবনিকেশ খোলার রীতি যা ‘হালখাতা’ নামে পরিচিত, তার প্রস্তুতিও শুরু হয় চৈত্র সংক্রান্তিতে। ধূপ-ধুনো এবং গোলাপ পানির সুবাসে মুখরিত হয় দোকান। ব্যবসায়িক সম্প্রদায় মূলত এ দিনটিকে বিদায় উৎসব হিসেবে পালন করে। পুরাতন বছরের বকেয়া টাকা উত্তোলনের দিন এটি কারণ পরদিন নতুন বছরে খোলা হবে নতুন খাতা, চলবে নতুন হিসেব।
বাঙালি যেখানে পালন করে চৈত্র সংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ সেখানে পিছিয়ে নেই নৃগোষ্ঠীরাও। তারা পালন করে বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান- বৈসাবি। বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উপলক্ষ্যে মারমা, ত্রিপুরা, চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যাদের পালন করা উৎসব- বৈসুক (ত্রিপুরা), সাংগ্রাই(মারমা), বিঝু বা বিজু (চাকমা ও তঞ্চঙ্গ্যা) এর আদ্যক্ষর সমূহ থেকে বৈসাবি নামটি এসেছে। এই উত্‍সবে তারা পরিবারের সকলকে নতুন কাপড় কিনে দিয়ে থাকে, মন্দির ও ঘর ফুল দিয়ে সাজায়। পিঠে ও পাঁচন (হরেক রকম সবজি মিশিয়ে তৈরি ব্যাঞ্জন) তৈরি হয়। বিভিন্ন ধরনের পিঠা যেমন- কলাপিঠা, সান্যাপিঠা, বিনিপিঠা, বিনিভাত, পায়েস, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ও পানীয় তৈরি হয় ঘরে ঘরে। তারা দেবতার নিকট পরবর্তী বছরে ভাল জুম চাষ ও বন্য হিংস্র পশুপাখিদের থেকে রক্ষা পাবার জন্য প্রার্থনা করে। এছাড়াও নানান খেলাধুলায় মেতে ওঠে তারা।
বাংলা বছরের শেষ উপলক্ষ্যে যেমন নানান সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের পসরা বসে, তেমনি দেখা যায় মেলা, পিঠে-পুলি ও আনন্দ আসরের। পাশাপাশি চলতে থাকে পরদিন নতুন বছরকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাবার জোর প্রস্তুতি। সুরের ধারা সহ নানান সাংস্কৃতিক সংস্থা সাক্ষর রাখে নিজস্ব পরিবেশনার। নকশা-আল্পনার লালিমায়, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও হালখাতার আগমনী আনন্দ সুবাসে সর্বত্র সাজ সাজ রব পড়ে যায়। আর এভাবেই পুরনোকে আনন্দের সাথে বিদেয় দিয়ে আমরা পা রাখি এক অবারিত নতুনের জগতে, নতুন আশা, উদ্যম আর প্রেরণার গালিচায়।
এভাবেই দুই বাংলার বাঙালি ও নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মধ্যে নিজস্ব আঙ্গিকে ঠাঁই করে নিয়েছে চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব। হাসিমুখে পুরাতনকে বিদেয় করে দিয়ে নতুন দিনের আগমনী বার্তায় মিশে যেতে প্রতি বছর উন্মুখ হয়ে ওঠে গ্রাম ও নগরবাসী। জাতি ও ধর্মগত ভেদ ভুলে আনন্দের শামিয়ানাতলে একীভূত হয়ে যায় নানান শেকড়ের মানুষ। মানুষ, আনন্দ, রং, উৎসব আর হৃদ্যতার অপূর্ব পরিস্ফুটন দেখা যায় বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণের এই আনন্দযজ্ঞে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: লেখাতে নতুন কিছু নেই। সেই এক ঘ্যানঘ্যানানি প্রতিবছর।

২| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ বিকাল ৩:০৮

প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন বলেছেন:




রাজীব নুর বলেছেন: লেখাতে নতুন কিছু নেই। সেই এক ঘ্যানঘ্যানানি প্রতিবছর।
রাজীব নুর ভাই, ইতিহাস তো ফিক্সড হয়ে যায়, তা কি কখনো আপডেট হয়? সেটা আপনি যতবারই লেখেন একই তো হবে।

৩| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:০০

কামাল১৮ বলেছেন: আমাদের গ্রামের পাসের গ্রামে হতো এই চরক পূজা।ছোট বেলায় দেখতে যেতাম।সেই সাথে মেলাও হতো।এটা একটা অমানবিক কাজ।এখন মনে হয় বন্ধ হয়ে গেছে।এই সব কুসংস্কার থেকে মানুষ বের হয়ে আসছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.