নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক চিলেকোঠার সেপাই!

বায়েস আহমেদ

আমার বাংলাদেশ, আমি তোমায় ভালবাসি!

বায়েস আহমেদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জিহাদের না বলা কথা!

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০১

একটা কথা বলি, কাউকে বলবা না কিন্তু!

- আচ্ছা, বলো।

জানো, জানো - আমি কিন্তু খেলতে খেলতে পড়ে যায়নি!

ওরা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে!

- বলো কি? কিন্তু ওরা কারা?

ওরা অফিসার, বিদেশে পড়ালেখা করা;

অনেক শিক্ষিত, দামী বাড়ি আর একটা পাজেরো।

ওরা বলে - টাকা দে, নাইলে ফাইল সই হবে না।

ওরা বলে - প্রমোশন দে, নাহলে কাজ হবে না।

ওরা অনেক ক্ষমতাবান, আমি ওদেরকে অনেক ভয় পায়।

ওরা শুধু বলে - টাকা দে, টাকা; জমি চাই, ফ্লাট চাই, বিদেশে যাব।

আমি ওদেরকে অনেক ভয় পায়।



আরেকটা কথা বলি?

- বলো।

ওরা আমাকে শুধু ধাক্কা দিয়েই থেমে থাকেনি,

আমাকে গলা ধরে জোর করে নিচে নামিয়েছে।

নিচে না অনেক অন্ধকার ছিল, আমি নামতে চাইনি,

আমি শুধু আম্মুর কাছে যেতে চেয়েছিলাম;

কিন্তু ওরা আমার কথা একদমই শুনল না,

আমার গলা ধরে নিচে ফেলে দিল!

_________________________________

নিচে কি যে অন্ধকার আর স্যাঁতস্যাঁতে কাঁদা-মাটি।

প্রথমে পড়ে গিয়ে খুব ব্যাথা পেয়েছিলাম,

অনেকক্ষণ কেঁদেছি, আম্মুকে ডেকেছি, বাবা-বাবা বলে চিৎকার করেছি!

কিন্তু কেউ শুনল না।

জানো, জানো - কি যে ঠাণ্ডা, বরফ হয়ে যাচ্ছিলাম;

হঠাৎ দেখি পানি উপরে উঠে আসছে, আমি তো সাঁতার জানি না।

এখন কি করি?



আমি তোমাদের ঐ লোহার পাইপ বেয়ে উপরে উঠতে চাইলাম।

কিন্তু পারলাম না! বার বার নিচে পড়ে গেলাম।

একটু পর আমি আর নিঃশ্বাস নিতে পারছি না,

গা বেয়ে শত-শত কেঁচো আর কিসব পোকামাকড় উঠতে লাগল।

আমি আবারও চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম, বাবা-মা!

কিন্তু কেউ শুনল না।



চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, আমি অন্ধকারকে না অনেক ভয় পাই।

রাতে আমি সবসময় আম্মুর সাথে ঘুমাই, একা কোথাও থাকি না।

কিন্তু আজকে ওরা জোর করে আমাকে একা এই অন্ধকার ঘরে রেখে দিয়েছে!

বলো তো, আমি কি কোন দোষ করেছি, আমি তো ওদের কোন ক্ষতি করিনি।

দাঁড়াও, একবার আম্মু আসুক, আমি নালিশ করে দিব!

__________________________________________

না জানি কত দিন, কতক্ষণ হয়ে গেল

কেউ আসল না আমাকে নিতে।

আমার না অনেক ক্ষুদা পেয়েছে, ওওনেক।

কি যে ঠাণ্ডা, একটা লেপও দিল না ওরা। কেন আমাকে ওরা এই গর্তে ফেলে দিল?

আব্বু সবসময় বলত - ওরা খারাপ লোক, ওদের সাথে কথা বলবি না।

কই আজকেও তো আমি ওদের সাথে কথা বলিনি, কিন্তু ওরা আমাকে কেন ফেলে দিল?

এজন্যই বাবা ওদেরকে খারাপ বলে।



একটা কথা বলি, কাউকে বলবা না কিন্তু? আমি খুব লজ্জা পাব।

- অবশ্যই বলো।

অনেক ক্ষুধা লেগেছিল, আশেপাশে কিচ্ছু ছিল না;

আমি না পেরে, ঐ কাঁদা-পানিই খানিকটা খেয়ে নিলাম।

একটা কেঁচো কিলবিল করতে করতে আমার চোখে ধুঁকে গেল;

অনেক ব্যাথা পেয়েছিলাম, অনেক কান্না করেছিলাম;

দাঁড়াও, বাসায় গিয়ে আমি সবাইকে বলে দিব!

______________________________________

আচ্ছা, তুমি আমাকে উপরে নিয়ে চলো না। আমার না খুব খারাপ লাগছে!

- অবশ্যই তোমাকে নিয়ে যাবো, ঐ যে ওরা এখুনি আসবে।

তারপর আমরা বাসায় যাব, আজকে তোমার জন্য অনেক রান্না হয়েছে।

বিরানি, পোলাও, খাসির রেজালা, মুরগির রোস্ট আর বোরহানি!



আমার না দম বন্ধ হয়ে আসছে, খুব খারাপ লাগছে!

- এইতো আর অল্পক্ষণ, আরেকটু ধৈর্য ধরো।

তোমার আর ঠাণ্ডা লাগবে না, বাসায় আজকে একটা নতুন লেপ কিনে এনেছি।

কালকে তোমার স্কুল ছুটি, আমরা সারাদিন খেলব,

আর ঐ দুষ্ট লোকগুলাকে আচ্ছামত পিটুনি দিব, ঠিক আছে?

_________________________________________

ঠাণ্ডায় হাত-পা অবশ হয়ে গেছে, আমার না খুব ঘুম পেয়েছে!

- আচ্ছা, তোমাকে একটা গল্প শুনাই আর তুমি ঘুমাও!

ঘুম থেকে উঠে দেখবা কতো যে খাবার, আর ঘরের মেঝেতে পানিও থাকবে না,

থাকবেনা আর অন্ধকার আর সাপের ভয়, নতুন নতুন জামা আর সোয়েটার,



আর ঠাণ্ডা লাগবে না, তখন আমরা একসাথে অনেক মজা করব;

তুমি কষ্ট পেও না, এইতো শুধু আজকের এই রাতটা!

_________________________________

[♫♫♫ ঘুম পাড়ানি মাসি-পিসি মোদের বাড়ি এসো,

খাট নাই পালং নাই পাটি পেতে বসো;

বাটা ভরে পান দিবো গাল ভরে খেয়ো,

খোকার চোখে ঘুম নাই ঘুম দিয়ে যেয়ো ♫♫♫]



----- এক দেশে, ছিল ছোট্ট একটা শিশু

ওকে একদিন একদল দুষ্ট লোক ধাক্কা দিয়ে অন্ধকার গর্তে ফেলে দিল!

বাচ্চা শিশুটি ঠাণ্ডায়, না খেয়ে, পানির নিচে দিনের পর দিন কষ্ট করল;

ওকে চারপাশ থেকে অজস্র সাপ, কেঁচো-কেন্নো, পোকামাকড় ছেঁকে ধরল।

কিন্তু শিশুটি হার মানবে না, ও বাসায় ফিরে যাবেই।

উপরের দুষ্ট লোকগুলো ওকে উঠতে দিবে না, কিন্তু ও উপরে যাবেই।

এরপর শিশুটি আস্তে আস্তে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ল!

____________________________________

পরদিন সকাল - ওরা বলল, শিশুটি মারা গেছে।

- বললাম, না শিশুটি মারা যায়নি; ওকে হত্যা করা হয়েছে!

সবাই আঁতকে উঠে বলল, কে ওকে হত্যা করেছে?

চিৎকার করে বললাম - তোদের ঐ নোংরা, ঐ কলুষিত সমাজ!

ধিক তোদেরকে, ধিক তোদের ঐ সাংঘাতিকতায়,

ধিক্কার জানাই তোদের সবাইকে!!

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৯

অগ্নি সারথি বলেছেন: পুরোটা পড়তে পড়তে সাহসে কুলালো না।
জিয়াদ আমাকে ক্ষমা কর বাবা, তোর জন্য নিরাপদ একটা পৃথিবী তৈরি করতে আমি আজো পারিনি বরং নিজেকে পরিস্থিতি থেকে বের করে নিয়েছি বারংবার।

২| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৬

প্রসন্নআমি বলেছেন: হুম কয়জন ভাবলো এমন করে,আর যদি ভেবেও থাকে তাহলে এই ভাবনার লাভটাই বা কি যদি এইরকম ঘটনা ঘটেই যেতে থাকে। হয়তো এখন জিহাদ,পরে অন্যকেউ হবে পত্রিকার শিরোনাম ,খানিকের আলোচনার বিষয়বস্তু। তাতে ফল কি??এর আগেও একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম প্রথম আলোতে সম্ভবত রোববার ,যেটা পড়ে কান্না ধরে রাখতে পারিনি। কবে আমরা জাগব/>>ছেকে ফেলব সব দূষিত রক্ত।।

৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:০০

রবিউল ৮১ বলেছেন: জিহাদের বাবা মা কে এখন রাষ্টই ভুলে গেছে।তারা কোন ক্ষতিপূরণও আর পাবে ব্লে মনে হয় না।এই দেশে ক্ষমতাহীন মানুষের জীবনের কোন মূল্যই নাই সে যত বড় পদেই থাকুক না কেন?সুন্দর লিখার জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.