![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ক্লাস থ্রি থেকে ক্লাস টেন ঢাকার বাইরে পড়ালেখা করেছি। অর্থাৎ মফস্বলে বেড়ে উঠেছি। এহেন দীর্ঘ বিরতির পর এসএসসি পরীক্ষা শেষে ঢাকা ফিরি; উদ্দেশ্য একটাই- কোচিং করে ঢাকার একটি ভাল কলেজে পড়ালেখা করব।
বাবার পোস্টিং তখন ফরিদপুরে, ঢাকায় আমাদের বাসা নাই। তাই ছোট মামার সোবহানবাগের বাসায় এসে উঠলাম, শুরু করলাম কলেজ ভর্তি কোচিং। মামার বাসা থেকে রাস্তা পার হলেই “হট হাট” ফাস্টফুড শপ, আর তার ঠিক উপর তলাতেই ছিল কোচিং সেন্টার। আমি তখন সবে ঢাকায় এসেছি, নিজের মাঝে তখন মফস্বলের তকমা লেগে আছে, কেমন যেন একটা গেঁয়ো গেঁয়ো ভাব! আমি খুব সিম্পল্ভাবে চলি, আর ঢাকার ছেলে-মেয়েদের সে কি ভাব! আমি তাকিয়ে থাকি ওদের দিকে, ওদের চালচলনে, ওদের কথা বলার স্টাইল। নিজেকে আরও গেঁয়ো মনে হয়। ভয়ে ভয়ে আমি ক্লাসরুমের একদম শেষ বেঞ্চে গিয়ে বসতাম।
ক্লাস শেষে দেখতাম ছেলে-মেয়েরা আড্ডা দিচ্ছে, হট-হাটে যাচ্ছে; আমি আরও কাঁচুমাচু হয়ে যেতাম। ভাবতাম ঐ ফাস্টফুডে ঢুকলে আমার পকেট খালি হয়ে যাবে। তাই তৎকালীন হট-হাট ছিল এক বিভীষিকার নাম! কোচিং-এর প্রথমেই ভড়কে গেলাম, ঢাকার সব বিখ্যাত স্কুলের ছাত্র ওরা। টেস্ট পেপারে ঢাকার যেসব নামীদামী স্কুলের প্রশ্নপত্র সল্ভ করতাম, আজকে দেখি সেইসব স্কুলের বিখ্যাত সব ছাত্রছাত্রী। আমি মাথা নিচু করে ঢুকতাম আর মাথা নিচু করেই বের হতাম। ঢাকা তখন আমার কাছে এক মহীয়সী, এক অলীক শহর!
ঢাকার তিনটি কলেজের ফর্ম কিনলাম - নটরডেম, ঢাকা কলেজ এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ (ইহা ছিল আমার পছন্দের ক্রম)! যাহোক নটরডেমে পড়ার খুব ইচ্ছা ছিল, কিন্তু মেরিট-লিস্ট তো দূরের কথা এমনটি ওদের ওয়েটিং-লিস্টেও থাকতে পারলাম না। এরপর বাসা থেকে ঢাকা কলেজে পরীক্ষা দিতে মানা করা হল! এখন শেষ ভরসা - ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ! দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, এখন যদি মডেল কলেজে চান্স না পাই, তবে আমার ঢাকায় পড়ার স্বপ্নটা আর পূরণ হবে না! তাই মডেল কলেজে পরীক্ষা দেয়ার সময় খুব ভয়ে ছিলাম, অনেকটা বিমর্ষ অবস্থার মাঝেই পরীক্ষা দিলাম; আর শেষমেশ টিকে গেলাম, ইয়াহু!!
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ; বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ। নটরডেমে পড়ার দুঃখ ভুলে মডেল কলেজে যাত্রা শুরু করলাম। আমাকে ফজলুল হক হলে একটা সিট দেয়া হল। আগের দিন আব্বু কলেজের নির্ধারিত লিস্ট ধরে আমার শার্ট, প্যান্ট, জুতা, মশারি, বিছানা এবং বালিশের কাভার থেকে শুরু করে যা যা লিস্টে ছিল সব কিনে এনে, নির্দেশনা মত একটি টিনের ট্রাঙ্কে সব ভরে আমাকে ফজলুল-হক হলের গেটের সামনে দিয়ে এল। দেখি আব্বু হেঁটে চলে যাচ্ছে, কোনদিন এভাবে পরিবারের সদস্য ছাড়া হোস্টেলে থাকিনি; মনে হচ্ছিল এক দৌড়ে আব্বুর হাত ধরে নিজ বাসায় ফিরে যাই! ফরিদপুরের কমলাপুরের মাঠ, সেই মাঠে ক্রিকেট খেলা, পাড়ার বন্ধুরা, আমাদের ক্রিকেট টিম; খুব মনে হচ্ছিল। বাবাকে আর ডাকি নাই, শুনেছি বিদায় বেলায় পিছন থেকে ডাকলে নাকি অমঙ্গল হয়; অনেক মন খারাপ হল, কাঁদতে কাঁদতে টিনের বাক্স নিয়ে চলে গেলাম আমার দোতলার রুমে!
রুমে গিয়ে দেখি আমার সাথে আরও তিনজন আছে - ওয়ালিদ, ফাহাদ আর আব্দুল আলীম। ওরাও আমার মত মফস্বলের স্কুল-পড়ুয়া! এরপর থেকে আমরা তিনজন বেস্ট-ফ্রেন্ড, আমরা বসে বসে দিন গুনি কবে এই টার্ম হবে আর আমরা এক মাসের ছুটিতে বাসায় ফিরব। মাঝে মাঝে রাতে ঘুমের মাঝে আলীমের কান্নার আওয়াজ শুনতে পারতাম। ও মাথায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে মায়ের জন্য ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদত। ওর দুঃখ দেখে, নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম!
যাইহোক, কিছু দিনের মাঝেই জানতে পারলাম যে আমরা হলাম নিউ-বয়। মডেল কলেজের ছাত্রদের মাঝে দুইটা ভাগ আছে - ওল্ড বয় এবং নিউ বয়। ওল্ড-বয় মানে হল যারা আমাদের আগে এই কলেজে পড়ালেখা শুরু করেছে। যেমন- আমরা একদশ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু করেছি, আর ওরা কেউবা তৃতীয় কিংবা দশম শ্রেণী থেকে ক্লাস শুরু করেছে। তাই ওরা ওল্ড-বয়, আর আমরা হলাম নিউ-বয়। নিউ-বয় হওয়ার কিছু ঝামেলা আছে, যেমন র্যাগ খাইতে হবে, আবার ওরা মাঝে মাঝেই আমাদের সাথে সিনিয়র ভাইয়ের মত আচরণ করে ইত্যাদি।
যাক প্রথম প্রথম আমি ওল্ড-বয়দেরকে ভয়ে এড়িয়ে চলতাম। ওদের মাঝে অনেকটা দাম্ভিতকা কাজ করত, মনে হত ওরাই এই কলেজের মালিক, আর আমরা বানের জলে ভেসে এসেছি। মাঝে মাঝে ওরা আমাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করত। কেননা আমরা হলাম মফস্বলের ছেলে আর ওরা ঢাকার।
আমি সবসময় খ্যাত টাইপের ছেলে, ফ্যাশন সচেতনও নয়। সারাজীবন মফস্বলের জিলা স্কুলে পড়েছি। তাই কোনদিন শার্ট-ইন করি নাই। কিন্তু মডেল কলেজে এসে শার্ট-ইন বাধ্যতামূলক। আমি এমনভাবে শার্ট-ইন করতাম যে আমার প্যান্ট কোমরে না থেকে পেটের উপরে থাকতো। পুরানো দিনের আমির খানের মুভির মতো, হাহাহাহা! এই নিয়ে একদিন ইংরেজি স্যার ক্লাসে আমাকে আনস্মার্ট বলে ক্লাসে খুব অপমান করল। আমি তো লজ্জায় শেষ, পরে মাসুম বিল্লাহ নামে এক ওল্ড-বয় আমাকে কিভাবে শার্ট-ইন করে প্যান্ট পরতে হয় শিখাল। এই প্রথম কোন ওল্ড-বয় আমার বন্ধু হল, আজও বিল্লাহর কাছে আমি কৃতজ্ঞ!
একদিন গণিত স্যারের ক্লাসে আমার পাশে এক ওল্ড-বয় ঘুমাচ্ছিল। হঠাৎ স্যার ওকে দেখে তেড়ে আসল, আমি ভয়ে ওকে জাগিয়ে দিলাম। আমি কেন ওকে জাগিয়ে দিলাম, এই ওজুহাতে স্যার আমাকে ব্যাপকভাবে অপমান করল। যে ঘুমাচ্ছিল, সে বেঁচে গেল। আমি তো তাজ্জব-বনে গেলাম। এরকম অনেক বৈষম্য ছিল আমাদের মাঝে। একদিন কথা কাটাকাটির জের ধরে এক ওল্ড-বয় আমাকে গোসলখানায় গলা ধরে দেয়ালের কোনায় নিয়ে গিয়ে ধোলাই দিল, আরেকদিন আরেকজন থাপ্পড় দিল! ঐ দুইদিন অনেক মন খারাপ করেছিলাম, একা একা রুমে বসে কেঁদেছি। আমি হাড়ে-চামড়ার একজন দুর্বল প্রকৃতির মানুষ, প্রতিবাদের ভাষা আমার জানা ছিল না! বাবা-মাকে ছেড়ে থাকায় সবসময় মন খারাপ থাকতো, এর মাঝে ওল্ড-বয়দের অত্যাচার। এইসব রেসিডেনসিয়াল স্কুল-কলেজে এরকম হয়েই থাকে, এর মাঝেই যুদ্ধ করতে হবে। মুখ বুঝে সব মেনে নিলাম!
ঢাকার ওইসব ওল্ড-বয়কে আমি সমীহ করে চলতাম, ওদের ফার্স্ট বয় গোল্ড মেডালিস্ট (এসএসসির রেজাল্ট হিসাবে) কিংবা সেকেন্ড বয়, ক্লাসের বাহারি ক্যাপ্টেন, ওরা সুন্দর করে ইংরেজি বলতো, অনেক স্মার্ট, স্যারেরাও ওদের ভক্ত! আমার এই স্মার্ট পরিবেশ বুঝতেই কয়েক মাস লেগে গেল, ঢাকার চাকচিক্য আর আভিজাত্য, আহা! নিজেকে বেশ নিচু জাতেরই মনে হত!
একাদশ শ্রেণীর প্রথম বাংলা প্রথম পত্র ক্লাস টেস্ট। একটি কবিতার মূল-বক্তব্য লিখতে হবে। পরীক্ষা দিলাম। দুই-তিনদিন পর বাংলার হায়দার আলী স্যার হঠাৎ করে ক্লাসে এসে ডাকলেন - বায়েস আহমেদ কে? আমি ভয়ে ভয়ে উঠে দাঁড়ালাম, স্যার আমার সামনে এগিয়ে আসলেন। মনে মনে ভাবছি, কি ভুলটাই না আবার করে বসলাম! স্যার এসে বললেন - তুমি কি জানো যে খাতায় তুমি কি লিখেছ? আমি ভয়ে আরও সঙ্কুচিত হয়ে গেলাম। জবাব দিলাম - না স্যার। স্যার বললেন - আমি আজ পর্যন্ত কাউকে কবিতার উত্তরে দশে দশ দেই নাই। এই বলে স্যার আমাকে খাতাটা ধরিয়ে দিলেন। দেখলাম দশে দশ পেয়েছি। আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম, অঙ্কে কিংবা বিজ্ঞানে ফুল-মার্কস পাওয়া সম্ভব, কিন্তু বাংলায় কিভাবে? তাও আবার রচনামূলক কবিতার প্রশ্নে? স্যার বললেন - অসাধারণ! সারা ক্লাস আমার দিকে তাকিয়ে!
এরপর থেকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয় নাই, মডেল কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম হয়েছি, শুধু প্রথম না; সেন্ট্রাল কলেজ ফাস্ট-বয় হয়েছি! সব বাঁধা, সব অপমান, সব লজ্জা, অভিমান আর কষ্টকে জয় করেছি। শুধু ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজই নয়; বরং এই ঢাকা শহরকে জয় করেছি। আর বেশি কিছু বলতে চাই না, বাকিটা তো ইতিহাস!
_____________________________________
লেখাটি তাঁদের জন্য উৎসর্গ করলাম, যারা স্বপ্ন দেখে ভাল কিছু করার, নতুন কিছু করার। কিন্তু সামনে রয়েছে অনেক বাঁধা-বিপত্তি। ঝড়-ঝঞ্ঝাট থাকবেই, তাই বলে পিছু হটলে চলবে না; এগিয়ে যেতে হবে সব বাঁধা ডিঙিয়ে! ভয় পাওয়ার কিছু নেই, যদি স্বদিচ্ছা থাকে, যদি আপনি পরিশ্রমী এবং সৎ হয়ে থাকেন, আর যদি আপনার লক্ষ্য থাকে অটুট, তবে আপনি দৃঢ়কল্পে এগিয়ে যেতে পারবেন। সামনের সব লজ্জা আর ভয় আপনার সততা আর নিষ্ঠার ঝড়ো হাওয়ায় উড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। এগিয়ে চলেন, আর পিছে ফিরে দেখার সময় নাই!
পুনশ্চঃ পরবর্তীতে আমার এ পথচলায় অনেক ওল্ড-বয়, নিউ-বয় এবং স্যারদের সহযোগিতা ও ভালবাসা পেয়েছি। যারা আমার দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁদের প্রতি চির-কৃতজ্ঞতা; ধন্যবাদ সবাইকে!
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৬:৪৩
বায়েস আহমেদ বলেছেন: আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!
২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৭:৩৯
কলাবাগান১ বলেছেন: বুদ্ধিদীপ্ত উত্তর আশা করেছিলাম আপনার কাছ থেকে (চাদগাজীর কমেন্টে) কিন্তু কমেন্ট মুছাতে সেই সুযোগ থেকে বন্চিত হলাম।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩০
বায়েস আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ, আমি আসলে ঝামেলা এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করি। একটু মনের কথা লিখলাম, তাতেও ঋণাত্মকধর্মী কমেন্ট ভাল লাগে না। আমরা পরস্পরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই, আর একটু বেশি সহনশীল হতে চেষ্টা করি। ভাল থাকবেন!
৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:১৯
নিজাম বলেছেন: এরকম সমস্যায় এক নম্বর ভুক্তভুগীও আমিও। তবে আপনার মতো আমি প্রথম হতে পারি নাই। টিকে আছি কোনমতে। অভিনন্দন আপানাকে।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩১
বায়েস আহমেদ বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! ভাল থাকবেন!
৪| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১০:৫৭
মেহেদী_বিএনসিসি বলেছেন: বলতে গেলে সেই ১৯৫৩ সালে ওপথ মাড়িয়েছিলাম.......আপ্নেতো বুড়া বয়সে এসেও কান্না কাটি করেছেন........
আমি বরিশালে তৎকালীন মফস্বল পরিবেশ থেকে এসে ক্লাস থ্রীতে ভতর্ী হয়েছিলাম..........বাবা-মা ছেড়ে সাত সাগর দুরে রেসিডেনসিয়ালের বন্দী জীবন আমাকে প্রচন্ড অসুস্থ করে দিয়েছিলো......৬মাসের লাইফটাইমের সাড়ে তিনমাসই হাসপাতালে থেকেছিলাম..........। পরে পুকুরে রাতে গোসল করতে গিয়ে ক্লাস নাইনের এক ছাত্র মারা যাওয়ার খবর শুনে আম্মুর প্রবল প্রতিরোধে আমার আবার নিজ শহরে ফিরে যাবার সুযোগ মেলে। এখন টুকরো টুকরো দুএকটা ঝাপসা ছবি ছাড়া কিছুই মনে নেই।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩২
বায়েস আহমেদ বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন!
৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:২১
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: প্রথমাংশ পড়ে বেশ নস্টালজিক হয়ে পড়লাম। সেটা যাই হোক। আপনার ঢাকা জয়ের ইতিহাস ভালা পাইছি।
পদ্যে দশ পেয়েছেন তাও সই। গদ্যে পেলে চেয়ার উল্টাইয়া পইড়া যাইতাম।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৩
বায়েস আহমেদ বলেছেন: হাহাহা, ভাল লাগলো আপনার কমেন্ট পড়ে, ভাল থাকবেন!
৬| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১২:২৬
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: খুব মন দিয়ে পড়ছিলাম আপনার লেখা -- আমাকে খুবই নাড়া দিয়ে গেল লেখার ভিতরে প্রতি বাক্য ------কিন্তু শেষে এসে এত তাড়াহুড়া করে শেষ করলেন কেন --- ভালোইতো আগাচ্ছিল --- আরো দুই প্যারা হলে সবচেয়ে বেশি ভাল হতো --------
আপনার জন্য শুভকামনা রইল
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫
বায়েস আহমেদ বলেছেন: আপনার পরামর্শ এবং মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, পরবর্তীতে আপনার পরামর্শ খেয়াল রাখব; ভাল থাকবেন।
৭| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৩২
নাহিদ রুদ্রনীল বলেছেন: বাহ দারুন অভিজ্ঞতা। এই বছর ঢাকা জয় করতে আসার কথা ছিল। রেজাল্টে গাদ্দারি করসে
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৯
বায়েস আহমেদ বলেছেন: ব্যাপার না, আবারও চেষ্টা করেন। ভাল থাকবেন!
৮| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৪:৪০
রাতুলবিডি৪ বলেছেন: যাক প্রথম প্রথম আমি ওল্ড-বয়দেরকে ভয়ে এড়িয়ে চলতাম। ওদের মাঝে অনেকটা দাম্ভিতকা কাজ করত, মনে হত ওরাই এই কলেজের মালিক, আর আমরা বানের জলে ভেসে এসেছি। মাঝে মাঝে ওরা আমাদেরকে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করত। কেননা আমরা হলাম মফস্বলের ছেলে আর ওরা ঢাকার।
আমিও নিউ বয় ছিলমা! আপনি কোন ব্যাচ?
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫০
বায়েস আহমেদ বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, ২০০১ ব্যাচ ছিলাম!
৯| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০
শ্যাডো ডেভিল বলেছেন: আপনে তো ভাই বাংলাদেশেই ছিলেন, তাও আবার একাদশ শ্রেনীতে উঠে DRMC এর হোস্টেলে ছিলেন। আমার কাহিনী তো আরো খারাপ। বাবা চাকরীসূত্রে ইরানে ছিলেন, তাই আমার শৈশবও কাটে ইরানে, ৯ বছর অবধি। '৯৩ সালে বাংলাদেশে ফিরে একচান্সেই DRMC চান্স পেয়ে ৩য় শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে যাই। এরপর থেকেই শুরু হয় হোস্টেলের দুর্বিষহ জীবন।
একে তো ৯ বছরের ছোট্ট জীবনে কখনোই বাবা-মায়ের চোখের আড়াল হই নাই, তার উপর বাংলাদেশের মানুষের আচার- ব্যাবহারও সম্পূর্ণ অপরিচিত। ইরানে থাকতে সমবয়সি সবাইকেই তুমি করে বলতাম-হোক সে ১/২ বছরের বড়,কেউ কখনো মাইন্ড করে নাই। মনে আছে, ১ম দিন এই অভ্যাসের কারনে ৪র্থ শ্রেনীর এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে চড়-থাপ্পড় এবং চরম ঝাড়ি খেয়েছিলাম।
আর মায়ার কথা কি আর বলবো। সকাল-বিকাল-সন্ধ্যা-রাত এমন কোন সময় ছিলোনা যখন আমি কাদি নাই। কতো রাত যে নির্ঘুম কেটেছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে বালিশ ভিজিয়ে তার ইয়ত্তা নাই। আমার ক্লাসের আর কাউকেই কাদতে দেখি নাই আমি কখনো। হাউস(আমরা হোস্টেলকে হাউস বলতাম) পালানোর চিন্তা করেছি, ভেবেছি এমন কিছু করবো যাতে করে হাউস টিসি দেয়। কিন্ত ওগুলো কল্পনা পর্যন্ত-ই, বাস্তবে রীপ দেয়ার সাহস বা সুযোগ কখনো হয়নি।
এখোনো মনে আছে, কুদরত-ই-খুদা হাউসের পেছনের রাস্তায় চলাচলকারী রিকসাওয়ালাদেরও মনে হত যে ওরা কত সুখী,দিন শেষে ওরা ওদের মা-বাবার কাছে ফিরতে পারতেছে।
সিনিয়রদের বৈমাত্রেয় আচরনের কথা আর কি বলবো। পান থেকে চুন খসলেই শাস্তি- চড়-থাপ্পড়, নিল-ডাউন, রোদের ভেতর দাড় করে রাখা, মুরগী করা(দু' পায়ের মাঝে মাথা রেখে উল্টা দিক থেকে কানে ধরা), কান ধরে উঠ-বস ইত্যাদি। সবসময় মন খারাপ বা চুপচাপ থাকতাম বলে আমার কোন বন্ধুও হয়ে ওঠেনি ঐসময়, ক্লাসমেটরাও খুব একটা পাত্তা দিতোনা বা কখনো সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি।
যার ফলে সবসময় খুব ভয়ে থাকতাম, ঐ বয়সে যতটুকু আত্মবিশ্বাস থাকার কথা, সেটুকুও ছিলোনা। মনে আছে ১ম পার্বিক পরীক্ষার রিপোর্ট কার্ডে আমার ক্লাসটিচার ওয়ালী ম্যাডাম লিখেছিলেন- "খুব-ই ভীতু স্বভাবের, অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন।" বিকালবেলায় কখনো খেলাধুলায় অংশ নিতাম না। ঐ সময়টাতে অপেক্ষা করতাম কখনো খেলার মাঠের পাশে বসে,কখনো গেটের কাছে গিয়ে- কখন মা আসবে,কখন একটু তাকে দেখতে পাবো,কখন একটু জড়ায়ে ধরতে পারবো। কখনো আশা পূর্ণ হতো, কখনো হতোনা।
ছোটবেলায় পাইলট হবার খুব ইচ্ছা ছিলো। মনে আছে, একদিন আম্মুকে জড়ায়ে ধরে কাদতে কাদতে বলেছিলাম- মা যেদিন পাইলট হবো সেদিন বোমা মেরে সবগুলো হাউস ধ্বংস করে দিবো, তাহলে আমার মতো কাউকে আর এখানে থাকতে হবেনা।
যাই হোক, এই দুর্বিসহ অবস্থা থেকে মুক্তি মিলেছিলো ৪/৫ মাস পর। আব্বু মেডিকেল কনডিশন শো করে বাসা থেকে ক্লাস করার ব্যবস্থা করেছিলেন। এরপর আর DRMC কে কখনোই খারাপ মনে হয় নাই। সিনিয়র-জুনিয়র কারো ব্যাপারেই আর সমস্যায় পড়তে হয় নাই। বরং কখনো কোন জুনিয়রকে কাদতে দেখলে যথাসম্ভব সান্তনা/সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।
এখনো আমার মন কাঁদে but সেটা DRMC তে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা ভেবে(অবশ্যই হোস্টেলে কাটানো দিনগুলো বাদে)। আবার যদি সেই দিন গুলোতে ফিরে যেতে পারতাম.............
(নিজের কথা বলে আপনাদের বোর করার জন্য দু:খিত)।
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭
বায়েস আহমেদ বলেছেন: আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। খুব ভাল লাগলো আপনার কথাগুলো। একদম নিজের সাথে মিলে গেছে।
আমরা হোস্টেলকে হাউস বলতাম। আর পাশের রাস্তার দোকানদারকে দেখে কি যে হিংসা হতো, বার বার মনে হত ওদের মত স্বাধীনভাবে কবে যে ঘুরতে পারবো! তবে এখন মিস করি ঐ দিনগুলোকে; কষ্টের মাঝেও আমরা আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতাম। মডেল কলেজ নিয়ে আরও অনেক অভিজ্ঞতা আছে, পরে সময় পেলে একদিন লিখব। ভাল থাকবেন!
১০| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:৫৩
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ভালো লাগল আপনার সব প্রতিকূলতার মাঝেও জয়ী হতে।
ভাল থাকবেন।
২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১২:২৩
বায়েস আহমেদ বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ! ভাল থাকবেন!
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৪:০৮
বটপাকুড় বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো। এক সময় এই সুদূর প্রবাসে এসেও ঢাকার বড় হওয়া ছেলে কি রকম বেমানান মনে হত। তবে বিদেশীদের এক টা জিনিস ভাল, পারতপক্ষে কাউকে অপমান করেনা । দেশে যখন ছিলাম আমার নিজেরও সেরকম কোন চেষ্টা কিংবা রুচি ছিলনা। আমার নিজের অনেক মফস্বলের অনেক বন্ধছিল। ঢাকার বন্ধুদের তুলনায় বরং মফস্বলের ছেলেরা জটিল কম হয়।
আপনার ঢাকা জয় করার ঘটনা পরে মজা পেলাম। এখন যখন এই বিদেশে ক্লাস নিতে ঢুকি, তখন বাইরে প্রকাশ না করলে ভিতরে ভিতরে ঠিকই মজা পাই।