নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছবি - prothomalo.com
চীন এবং ইরান গত শনিবার (২৭/০৩/২০২১) রাজধানী তেহরানে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ ও চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ২৫ বছরের জন্য "কৌশলগত সহযোগিতা" চুক্তি করেছে । দেশ দুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলছেন যে, এই চুক্তিটির মাধ্যমে আগামী ২৫ বছর দুদেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বজায় থাকবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানায়, চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী বলে জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ জাভেদ জারিফ।তিনি বলেন, "চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই জানিয়েছেন দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন কৌশলগত অংশীদারিত্বের পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং ইরানের সঙ্গে চীন ব্যাপকভাবে সম্পর্কের উন্নতি করতে চাইছে"।যদিও চুক্তির বিস্তারিত এখনো প্রকাশিত হয়নি। চুক্তিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য আগামী এক দশকের মধ্যে দশগুণ বাড়িয়ে ৬০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। চুক্তি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে আশা করা হচ্ছে, এটি একটি কার্যকর "কৌশলগত চুক্তি" যার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি ও অবকাঠাকামো খাতসহ ইরানের প্রধান খাতগুলোতে চীনের বিনিয়োগ ব্যাপকমাত্রায় বৃদ্ধি এবং সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।তবে ধারণা করা হচ্ছে যে, আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের তেল কিনবে চীন। পাশাপাশি ইরানে কিছু বিনিয়োগও করবে চীন। নিষেধাজ্ঞার কারণে ইরানে বিদেশী বিনিয়োগ অনেকটা বন্ধই রয়েছে।
প্রতিনিয়ত বিশ্বের নানা প্রান্তে ঘটে চলেছে নানা ঘটনা । আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ট্রাম্পের হার এবং জো-বাইডেনের বিজয়ের পর বিশ্বে নতুন অবয়ব নিতে শুরু করেছে অনেক কিছু। আমেরিকা কর্তৃক পুতিনকে খুনি আখ্যা দেয়ার জের কাটতে না কাটতে চীনের সাথে ইরানের ২৫ বছরের কৌশলগত বহুল আলোচিত চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার খবর বেরিয়েছে। ট্রাম্পের হারের পর বিশ্বশক্তির সাথে ইরানের করা পারমানবিক চুক্তি নিয়ে ইরান এবং চুক্তির অংশীদার বাকী বিশ্বের যে প্রত্যাশা ছিল তাও অনেকটা হিমাগারেই আছে, এ ব্যাপারে আমেরিকার ধীরে চলো নীতির কারনে।তাইওয়ান ইস্যুতে চীন-মার্কিন উত্তেজনা বাড়ছে। ভারতের সাথে চীন আর পাকিস্তানের একদিকে দেখা যাচ্ছে বোঝাপড়ার চেষ্টা আবার অন্য দিকে ভারতকে আফগান শান্তি প্রক্রিয়ায় যুক্ত করার চেষ্টায় নতুন জটিলতা তৈরি হচ্ছে। ইসরাইলের নির্বাচনে নেতানিয়াহুর ভাগ্য ঝুলে আছে। তিনি সরকার গঠন করতে পারবেন নাকি প্রধানমন্ত্রিত্ব হারিয়ে মুখোমুখি হবেন বিচারের। অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে তুরস্ক, সৌদি আরব, মিসরেও। সব কিছু দেখে মনে হচ্ছে বিশ্বে নতুন কিছু ঘটা বা ঘটানোর জন্য ভেতর থেকে আয়োজন চলছে। সে আয়োজন যে নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের সুচনা এবং মধ্যপ্রাচ্যে নতুন মেরুকরণ করবে তাতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।
ছবি - dailyinqilab.com
চীন-ইরান ২৫ সালা চুক্তি
দীর্ঘদিন আলাপ আলোচনার পর চীন ও ইরান শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে একটি "বিস্তৃত কৌশলগত অংশীদারিত্ব" চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যাতে পরের ২৫ বছর উভয় পক্ষের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং বাণিজ্য সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হওয়ার প্রতিশ্রুতি রয়েছে যার আলোচনার শুরু হয়েছিল ২০১৬ সালে।ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাঈদ খতিবজাদেহ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, "এটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন কৌশলগত স্তরে উন্নীত করবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট ড. হাসান রুহানির বক্তব্যেও তারই প্রতিফলন। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই’র সঙ্গে বৈঠকে রুহানি বলেন, দুই দেশই অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সব ক্ষেত্রে দীর্ঘ মেয়াদে সম্পর্ক ও সহযোগিতা জোরদারে আগ্রহী"।
একই সময় ওয়াং ই বলেন, "চীন সবসময় ইরানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নকে গুরুত্ব দিয়েছে এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করে এসেছে। ইরানের উপর আমেরিকার সর্বোচ্চ চাপ হচ্ছে একটি মানবতাবিরোধী পদক্ষেপ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এর প্রতি সমর্থন নেই"।প্রথমবারের মতো ইরান একটি বড় বিশ্বশক্তির সাথে এত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ২০০১ সালে ইরান এবং রাশিয়া ১০ বছরের সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষর করে যা মূলত ছিল পারমাণবিক সহায়তাকেন্দ্রিক। পাঁচ বছর মেয়াদে সময় বাড়িয়ে এটি ২০ বছর করা হয়।চীন ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পঞ্চাশতম বার্ষিকীতেই তেহরান-বেইজিং চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলো। দুই দেশের মধ্যে আগে থেকেই উষ্ণ সম্পর্ক ছিল এবং উভয়ই ২০১৯ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরে রাশিয়ার সাথে একটি যৌথ নৌ মহড়ায় অংশ নেয়।
ইরান ও চীন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য করে। তেলের দাম হ্রাস এবং ২০১৮ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরান ও বিশ্বশক্তির মধ্যে পারমাণবিক চুক্তি থেকে একতরফাভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করার পরে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ২০১৪ সালের প্রায় ৫২ বিলিয়ন ডলার থেকে এ পর্যায়ে নেমে আসে।২০২০ সালের আগস্টে প্রস্তাবিত চুক্তি নিয়ে প্রথম আলোচনা হয়। আর সম্ভবত এটি কাকতালীয় ঘটনা নয় যে, আলাস্কায় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সন্ধিহীন বৈঠকের এক সপ্তাহ পরে তেহরানে চীন-ইরান এই চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর মাধ্যমে চীন বাইডেন প্রশাসনের কাছে স্পষ্ট সঙ্কেত পাঠিয়েছে যে, "ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি ইরানের ওপর তার অর্থনৈতিক চাপ কার্যকর করার ক্ষমতা চীনের সহযোগিতার ওপর নির্ভর করছে"।
ছবি - dhakapost.com
এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে এ চুক্তির কি কোন প্রভাব পড়বে
যুক্তরাষ্ট্রের রক্তচক্ষুর তোয়াক্কা না করে চীন এবং ইরানের "কৌশলগত সহযোগিতা"র চুক্তি এশিয়ার বিরাট অংশের ভূ-রাজনৈতিক চালচিত্র বদলে দেবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এর আওতায় ইরানের তেল-গ্যাস, ব্যাংকিং, টেলিকম, বন্দর উন্নয়ন, রেলওয়ে উন্নয়ন এবং আরো কয়েক ডজনখানেক গুরুত্বপূর্ণ খাতে চীন ব্যাপক বিনিয়োগ করবে। এই বিনিয়োগের পরিমাণ আগামী ২৫ বছরে কমপক্ষে ৪৪ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ হতে পারে।সেই সাথে প্রস্তাবিত চুক্তিতে সামরিক ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কিছু বলা হয়নি। এর আগে মিডল-ইস্ট আই নিউজ ওয়েবসাইটের রিপোর্টে বলা হয়েছিল, চুক্তির আওতায় চীন তাদের বিনিয়োগের সুরক্ষায় ইরানে পাঁচ হাজার পর্যন্ত সৈন্য মোতায়েন করতে পারবে। এর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রথম সরাসরি চীনা সামরিক উপস্থিতির সম্ভাবনা তৈরি হবে। এটি এবং চীনাদের কাছে একটি ইরানি দ্বীপ ইজারা দেয়ার বিষয় তেহরানের নেতারা সরাসরি অস্বীকার করেছেন। স্বাক্ষরিত চুক্তিতে এ ধরনের কিছু আছে কি না এখনও নিশ্চিত নয়।
আন্তর্জাতিক উত্তর-দক্ষিণ পরিবহন করিডোর নামে ইরান ও রাশিয়ার একটি প্রকল্পে অংশীদারিত্ব রয়েছে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সুবিধাগুলোতে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় পার্থক্য ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইরান ও পাকিস্তানের মধ্যে মুক্তবাণিজ্য রেলপথ ও বন্দরগুলোর কারণে উভয় দেশে সম্ভাব্য বিকাশ ঘটতে পারে। আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সম্ভাব্য চুক্তিটি পাকিস্তান ও চীনের ওপর ভারতের চাপও শিথিল করবে।
মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতির ওপর কি কোন ধরনের প্রভাব পড়বে -
চীন ঐতিহ্যগতভাবে মধ্যপ্রাচ্যে বা কোন দেশের সাথে রাজনৈতিকভাবে যুক্ত ছিল না। মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশের সাথে চীনের কম বেশি অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল। ইরানের সাথে চুক্তির মাধ্যমে বেইজিংয়ের মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো। চীন ইসরাইল-ফিলিস্তিন এবং সংশ্লিষ্ট অন্য পক্ষগুলোর অংশগ্রহণে বেইজিং সম্মেলনের প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাব মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে চীনের সম্পৃক্ত হওয়ার আকাংখারই ইঙ্গিত। ইরানের সাথে এ চুক্তি অন্যান্য আঞ্চলিক খেলোয়াড়ের স্বার্থের সাথে যে সঙ্ঘাত তৈরি হবে তার শীর্ষে রয়েছে সৌদি আরব। বিআরআই-এর সাথে অন্যান্য উপসাগরীয় এবং মিসরের মতো দেশও অন্তর্ভুক্ত। সৌদি আরব বিশেষভাবে চীনের সাথে সম্পর্ক বাড়াতে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। সৌদি তেলের প্রধান গ্রাহক যুক্তরাষ্ট্র তেল কেনা বন্ধ করে দেয়ায় জ্বালানি বিক্রির বাজার হিসেবে রিয়াদ টার্গেট করেছিল চীন এবং ভারতকে। ভারতের সাথে সৌদি আরব জ্বালানি খাতে একাধিক বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। অতি সম্প্রতি তারা চীনে আগামী ৪০ বছর তেল সরবরাহের অঙ্গীকার করেছে। বেইজিং ইরানের সাথে সৌদি বিরোধ নিরসনে মধ্যস্থতা করে সৌদির নিরাপত্তার ব্যাপারে ওয়াশিংটন নির্ভরতা কমানোর জন্য কাজ করছে বলে মনে হয়। ইয়েমেনের যুদ্ধ অবসানে দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার আভাস মিলছে। এটি হলে তা মধ্যপ্রাচ্যে চীনা কূটনীতির বড় সাফল্য হিসেবে গণ্য হতে পারে।
ছবি-naya-digant.com
ইরান কেন এই দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তির পথে -
ওয়াশিংটনে আরব গাল্ফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো আলি আলফোনেহ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় ইরান অস্তিত্বের স্বার্থে চীনের দ্বারস্থ হয়েছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাস মজুদের হিসাবে ইরান বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় জ্বালানি বিক্রি করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। সেই সাথে বিনিয়োগের অভাবে তেলক্ষেত্র উন্নয়নের পথও কার্যত বন্ধ। চীনা বিনিয়োগ তাদেরকে সেই ‘মহাসঙ্কট’ থেকে বের করে আনতে পারবে।
এই দীর্ঘ মেয়াদী চুক্তিতে চীনের স্বার্থ কী -
২০১৬ সালে শি জিন পিংয়ের ইরান সফরের সময় "কৌশলগত সহযোগিতা চুক্তি" নিয়ে প্রথম দুই সরকারের মধ্যে প্রাথমিক বোঝাপড়া হয়। কুয়ালালামপুরে মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব চায়নার অধ্যাপক ড. মাহমুদ আলি বলেন, "চীন তাদের ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্পে ইরানকে জোরালোভাবে আনার জন্য অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছে। মালাক্কা প্রণালী দিয়ে তাদের বাণিজ্য, বিশেষ করে জ্বালানি সরবরাহের নির্ভরতা কমানোর জন্য চীন বহু দিন ধরে উদগ্রীব, কারণ ওই সমুদ্র রুটটির নিয়ন্ত্রণ এখনো যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের হাতে। ইরানকে পাশে পেলে সমুদ্র রুটকে পাশ কাটিয়ে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা চীনের জন্য অনেক সহজ হবে। চীনের জন্য এটি বিরাট এক ভূ-রাজনৈতিক উদ্যোগ"।
ইতোমধ্যেই অবশ্য চীন ও ইরানের মধ্যে সরাসরি রেল লিংক তৈরি হয়েছে। "নতুন সিল্ক রোড" নামে পরিচিত এই রেল রুট শিনজিয়াং থেকে কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিস্তানকে যুক্ত করে তেহরান পর্যন্ত ২৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ। চীনা কোম্পানি সিনোম্যাক পশ্চিম ইরানে নতুন একটি রেললাইন তৈরির চুক্তি সই করেছে। তবে বেইজিংয়ের সবচেয়ে বড় প্রকল্প তেহরান এবং মাশাদের মধ্যে ৯২৬ কিলোমিটার রেললাইনের বিদ্যুতায়ন। তেহরান-কোম-ইস্পাহানের মধ্যে একটি দ্রুতগতির রেলপথ নির্মাণেরও কথা হচ্ছে। এসব রেল প্রকল্প ‘নতুন সিল্ক রোড’-এর অংশ হবে।
বিশ্ব পরিস্থিতিতে বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে এই চুক্তির কি কোন প্রভাব পড়বে?
এই চুক্তির ফলে ইরানের অর্থনীতির প্রভূত উন্নতি হবে। তাদের রাজনীতি স্থিতিশীল হবে। ইরানের সাথে দ্বন্দ্বের ব্যাপারে অনেক দেশের আগ্রহ কমবে। এমনকি উপসাগরের অনেক দেশ চীনের সাথে এই ধরনের চুক্তিতে আগ্রহী হতে পারে।চীন-ইরান এবং পাকিস্তানের মধ্যে খুব ধীরে হলেও নিশ্চিতভাবে একটি কৌশলগত জোট দানা বাঁধছে। এর সাথে অদূরভবিষ্যতে যুক্ত হতে পারে আফগানিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়া। নতুন এই ভূ-রাজনৈতিক সম্ভাবনা যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, তার মিত্র ভারতের জন্যও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
সুয়েজ খালের বিকল্প প্রস্তাব -
ইরান-চীন চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পরই ইরান এক তাৎপর্যপূর্ণ প্রস্তাবে বলেছে, এশিয়া থেকে ইউরোপে পণ্য পরিবহনের জন্য সুয়েজ খালের তুলনায় প্রস্তাবিত নর্থ-সাউথ করিডোর বা এনএসটিসি রুটের ঝুঁকি অনেক কম এবং অনেক বেশি লাভজনক। সুয়েজ খালে একটি বিশাল জাহাজ আড়াআড়িভাবে আটকে পড়ার কারণে কয়েক দিন ধরে সেখানে অসংখ্য জাহাজের জট তৈরি হয় এবং এর ফলে প্রতিদিন শত শত কোটি ডলারের ক্ষতি হয়।
মস্কোয় নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি শনিবার এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, জাহাজ, রেল ও সড়কপথের সমন্বয়ে তৈরি হওয়া এ রুটে পণ্য পরিবহনের খরচ শতকরা ৩০ থেকে ৬০ ভাগ কমবে। এ ছাড়া, বর্তমানে সুয়েজ খাল দিয়ে পণ্য পরিবহনে ৪০ দিন সময় লাগলেও প্রস্তাবিত রুটে সময় লাগবে মাত্র ২০ দিন। ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় চবাহার সমুদ্রবন্দর এই রুট বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে। ইরানের পাশাপাশি ভারত ও রাশিয়ার পক্ষ থেকে নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর বা এনএসটিসি রুটের পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে। ২০০০ সালে ৭,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ বহুমুখী এই রুটের প্রস্তাব করা হয়। পরবর্তীতে মধ্য এশিয়ার ১০টি দেশ এই পরিকল্পনায় যুক্ত হয়।
ছবি - dailyinqilab.com
১৬ দেশের মার্কিনবিরোধী জোট
সাম্প্রতিক আরেকটি খবর হলো- রাশিয়া, চীন ও ইরানসহ ১৬টি দেশ জোটবদ্ধ হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে। জাতিসঙ্ঘকে ব্যবহার করে আমেরিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিরুদ্ধে যে হুমকি ও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে তা মোকাবেলার জন্য এই জোট। জোটে থাকছে, সিরিয়া, ফিলিস্তিন, উত্তর কোরিয়া, ভেনিজুয়েলা, কিউবা, আলজেরিয়া, অ্যাঙ্গোলা, বেলারুশ, বলিভিয়া, কম্বোডিয়া, ইরিত্রিয়া, লাওস, নিকারাগুয়া, সেন্ট ভিনসেন্ট এবং গ্রেনাডিন্স দ্বীপপুঞ্জ। এই জোট নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধের মেরুকরণের পদক্ষেপ তাতে সন্দেহ নেই।
ছবি - americabangla.com
বিশ্ব পরিস্থিতিতে বা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে পাল্টে যাবে অনেক কিছু -
চীন-ইরান চুক্তি বিশ্ব পরিস্থিতির অনেক হিসাব নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। বাইডেনের ক্ষমতায় যাওয়ার মূল অঙ্গীকার, ‘চেনা আমেরিকাকে ফিরিয়ে আনা’। এই লক্ষ্য অর্জনে তিনি পুরনো মিত্রদের আস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গীকার পালনে তার দেশকে পুরনো ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনছেন। আর চীন-রাশিয়া দুই শক্তিকে সমান্তরাল প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করছেন। এর অনিবার্য প্রতিক্রিয়া হলো পাল্টা শক্তিগুলোর নিজেদের নিয়ে ভিন্ন বলয় তৈরি করা। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সামর্থ্য এবং চীনের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা এক হয়ে নতুন বলয় নির্মাণে আগ্রাসী হতে শুরু করলে দ্বিতীয় পর্যায়ের স্নায়ুযুদ্ধ অনিবার্য। তবে স্নায়ুযুদ্ধের দুই প্রতিপক্ষের কিছু সীমাবদ্ধতা এবং সুবিধা রয়েছে। কোন দেশে গণতন্ত্র বা মানবাধিকার আছে সে সবের তোয়াক্কা করার প্রয়োজন পড়ে না চীন-রাশিয়ার। ফলে কর্তৃত্ববাদী সরকারগুলো এই বলয়ের সাথে মৈত্রী করতে কোনো চাপের মধ্যে পড়ে না। তবে বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক কাঠামোতে এই বলয়ের প্রভাব এখনো গৌণ। যদিও ডলারের বিকল্প আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মুদ্রার উত্থান এই ভারসাম্যে পরিবর্তন আনতে পারে যে চেষ্টা চীন-রাশিয়া যৌথভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। নতুন চুক্তি অনুসারে চীন-ইরান বাণিজ্যে ডলারের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
অবশ্য চীন বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এখনো যতটা না ভোক্তা তার চেয়ে বেশি সরবরাহকারী। ফলে চীন-রাশিয়ার সাথে বলয়বন্দী হওয়া মানে ইউরোপ আমেরিকার বাজার এবং অভিবাসনের সুযোগ সঙ্কুুচিত হওয়া। এই টানাপড়েনের মধ্যেই মাঝামাঝি যেসব উদীয়মান এবং উল্লেখযোগ্য শক্তিমত্তার দেশ রয়েছে তারা কোন বলয়ে এখনি একাত্ম না হয়ে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। তবে ‘না ঘরকা না ঘাটকা’ অবস্থায় মধ্যবর্তী দেশগুলোর বেশি দিন থাকার অবকাশ থাকবে বলে মনে হয় না। বৈশ্বিক পরিস্থিতি এখন দ্রুত বদলাতে শুরু করেছে। চীন-ইরান চুক্তি হতে পারে এ ক্ষেত্রে অনেক বড় একটি বড় ঘটনা।
=========================================================
তথ্য সূত্র এবং সহযোগীতায় - বিবিসি, রয়টার্স এবং দৈনিক নয়া দিগন্ত সম্পাদকীয় (30/03/21)।
০১ লা এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৪:৫৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সত্যপথিক শাইয়্যান ভাই,আপনার মন্তব্যের জন্য।
তবে আমার মনে হয় আপনার মন্তব্যে মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্যের যথাযথ প্রতিফলন হয়নি।
জ্ঞান-বিজ্ঞান তথা সভ্যতার উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে পারস্য তথা ইরানের অবদান অনেক ।রোমান সাম্রাজ্যের শাসনামলে যখন পাশ্চাত্যে বিরাজ করছিল অনৈক্য। প্রাচীন ইউরোপীয়নরা যেমন, অ্যাংলোসেক্সন (ব্রিটিশ) এবং স্ক্যান্ডেনিভিয়ান,পর্তুগীজ,ফরাসী ও ভাইকিংরা ইউরোপকে আধুনিক সভ্যতা থেকে অনেক দূরে রেখেছিল। ইউরোপের বর্বর এই জাতিগুলোই রোমান সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল এবং মধ্যযুগের পর এরাই বিশ্বের নানা অঞ্চলে উপনিবেশ তৈরি করে সারা দুনিয়ার নানা জাতির ওপর গণহত্যা ও লুণ্ঠন চাপিয়ে দেয় এবং তাদের স্বাধীনতা হরন করে শোষন করে সুদীর্ঘকাল। অন্যদিকে ইরানি জাতি ইসলামী সভ্যতার মশাল নিয়ে বিশ্বের উন্নত সভ্যতা ও সংস্কৃতি রক্ষার দায়িত্ব পালন করে। খ্রিস্টিয় চতুর্থ শতক থেকে ১৪ শতক পর্যন্ত সময় তথা প্রায় এক হাজার বছর ছিল ইউরোপের জন্য অন্ধকার বা মধ্যযুগ। কিন্তু ইরানিরা প্রাচ্য ও এশিয়াকে সেই অজ্ঞতা আর বর্বরতার আঁধারে ডুবে থাকতে দেয়নি।আর ইরানি ও ইসলামী সভ্যতার বিকাশে আরব মুসলমানরাও প্রধান সহযোগীর ভূমিকা পালন করেছে।
মোট কথা মুসলমান হওয়ার পর ইরানিরা আরো শক্তিশালী ও বেশি সম্মানের অধিকারী হয়। আর বর্তমানে যারাই ইসরাইল এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলবে তারাই আমেরিকার নিষিদ্ধ তালিকায় পড়ে অথচ জাতিসংঘ এবং আরো অনেক বিশ্বসংস্থা কর্তৃক প্রমাণিত অপরাধের জন্য আমেরিকা বা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়না বা যায়না।আর মুসলমান হলে ত কথাই নেই।
২| ০১ লা এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩১
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ইরানকে ঘায়েল করার জন্য মধ্যপ্রাচ্য ও আমেরিকা উঠে পড়ে লেগেছে।
০১ লা এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:০১
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ মোঃ মাইদুল সরকার ভাই,আপনার মন্তব্যের জন্য।
আসলে সারা দুনিয়ায় যে বা যারাই আমেরিকার স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং মধ্যপ্রাচ্যে যারা ইসরাইলের বিরুদ্ধে বলবে তাদের বিরুদ্ধেই ইহুদি-আমেরিকান লবি তথা আমেরিকা উঠে পড়ে লাগে শায়েস্তা করার জন্য ।আর তাদের বিরুদ্ধে নেমে আসে মানবতা বিরোধী অপরাধের মহান অস্ত্র "আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা"।তা সে চীন-ইরান -উত্তর কোরিয়া যেই হোক।আর মুসলিম হলেত কথাই নেই।
৩| ০১ লা এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:৩২
রাজীব নুর বলেছেন: আন্তর্জাতিক বিষয় গুলোতে আমার কোনো জ্ঞান নেই। তাই মন্তব্য করলাম না।
০১ লা এপ্রিল, ২০২১ বিকাল ৫:১৫
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই,আপনার মন্তব্যের জন্য।
৪| ০১ লা এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৪৫
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: চীন এতদিন গ্রাম্য মাতুব্বরদের মতো আচরন করতো,আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসার চেষ্টা।খুব সম্ভব পাছ হজার সৈন্য ইরানে রাখার অনুমতিও আছে এই চুক্তির সাথে,যদিও প্রকাশ করছে না।একটা প্রতিক্রিয়াতো অবশ্যই হবে।
০১ লা এপ্রিল, ২০২১ রাত ১০:৪৬
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ নুরুলইসলাম ০৬০৪ ভাই,আপনার মন্তব্য এর জন্য।৷৷৷ চীন আসলে মুলত ব্যবসায়ী আর আমেরিকা হল সাম্রাজ্যবাদী ব্যবসায়ী। চীন মানুষের প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ ও যোগান দেয় দুনিয়াব্যাপী আর আমেরিকা প্রথমে দুইজনের মাঝে শত্রুতা তৈরী করায়,তারপর যুদ্ধ বাধায় এবং তাদের সবাইর কাছে অস্ত্র বেচে। আমেরিকা এবং চায়না উভয়ের ব্যবসা এবং উদ্দেশ্য সম্পুর্ণ ভিন্ন ভিন্ন। আর আমেরিকার সারা দুনিয়ায় খবরদারী তথা সৈন্য মোতায়েন আছে পক্ষান্তরে চীন দেশের বাইরে কখনো সৈন্য পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়নি। তবে এক কেন্দ্রীক বিশব্ব্যবস্থা থেকে বের হবার জন্য যদি চীন ইরানে সৈন্য প্রেরণ এর সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকে তবে দুনিয়ার পরিস্তিতি চেক এন্ড ব্যালেন্স এর জন্য তা এক যুগান্তকারী ঘটনা বলতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা এপ্রিল, ২০২১ দুপুর ২:২৯
সত্যপথিক শাইয়্যান বলেছেন:
ইরানীরা সব সময় বিশ্বের জন্যে সমস্যার সৃষ্টি করে এসেছে। এরা মুসলমানদের ভালো চায় না।