নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খুবই সাধারন একজন মানুষ । পড়া যার নেশা । পড়ার এবং জানার আশায় ----

মোহামমদ কামরুজজামান

মোহামমদ কামরুজজামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

" ইউক্রেন সংকট " - কি নিয়ে এবং এর সমাধান কোথায় ? আসলেই কি রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের এত সমস্যা নাকি ইরাক-লিবিয়া-আফগানিস্তানের মত মিথ্যা অজুহাতে পশ্চিমাদের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা ? - (১ম পর্ব) ।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১২:৫৭


(২০২১ এর এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ফোন করে ইউক্রেন সীমান্ত থেকে রুশ সেনা সরিয়ে নিতে বলেন)।
ছবি - এএফপি

গত প্রায় বছরাধিকাল যাবত সারাবিশ্ব ও বিশ্ব-ভূরাজনীতি যে বিষয়কে কেন্দ্র করে আবর্তিত হচছে তা হলো ইউক্রেন সংকট। যেখানে পশ্চিমাবিশ্ব - ন্যাটো - রাশিয়া সব মিলিয়ে ইউক্রেনকে ঘিরে সারা দুনিয়ায় এখন উত্তেজনা মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ইউক্রেনকে ঘিরে ইউরোপেও উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এর একদিকে আছে রাশিয়া, যারা ইউক্রেনের সীমান্তে প্রায় লাখখানেক সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছে বলে দাবি করছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর পাল্টা ন্যাটো জোটও তাদের সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে কোনো অভিযান চালালে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞাসহ নানা ব্যবস্থার হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।গত কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম ইউরোপ আবার একটি বড় আকারের যুদ্ধের মুখোমুখি - এমন আশংকা করছেন অনেকে।

এ অবস্থায় কিছু প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে সারা বিশ্বে।আর সেগুলো হল -

১। ইউক্রেন সংকট কেন এবং কি নিয়ে ?
২। পুতিন তথা রাশিয়ার হাতে এত শক্তি কোত্থেকে এল যে তারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিধর দেশগুলোর সামনে অস্ত্র উঁচিয়ে হুমকি-ধামকি দেওয়ার সাহস পাচ্ছে?
৩। রাশিয়ার ইউক্রেনের সীমানার কাছে এত সৈন্যসামন্ত জড়ো করার দরকার পড়ল কেন?
৪। এটা কি অতি সাম্প্রতিক ঘটনার জের, নাকি এর পেছনে ঐতিহাসিক পটভূমি কোনো কাজ করছে?
৫। পুতিন আসলে চাইছেনটা কী?
৬। পুতিন কি ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া ছিনিয়ে নেওয়ার পর এখন পুরো ইউক্রেনকেই দখল করতে চাইছেন, নাকি এসব ভয়ভীতি দেখিয়ে পশ্চিমাদের কাছে থেকে নিজের চাওয়াগুলোকে পাওয়াতে পরিণত করার মতলবে আছেন?
৭। রুশ বাহিনী যদি সত্যি সত্যি ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে, তাহলে ন্যাটো কি সে পরিস্থিতি সামাল দিতে পারবে?
৮। সর্বোপরী আমেরিকা তথা পশ্চিমাবিশ্বের কেন এত আগ্রহ ইউক্রেন কে নিয়া তথা রাশিয়ার চরম আপত্তি সত্ত্বেও তারা কেন এত আগ্রহ দেখাচছে ইউক্রেনকে ন্যাটোর সদস্যপদ দেয়ার জন্য?

আসুন দেখি - ইউক্রেন সংকট আসলে কী নিয়ে এবং উপরের প্রশ্নগুলির কিছু জবাব খুঁজি।

১৯৯১ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিশ্বের প্রথম সমাজতান্ত্রিক ফেডারেশন রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটে এবং বৃহৎ রাষ্ট্রটির ভূমি বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। সামগ্রিকভাবে, এই অঞ্চলকে 'উত্তর সোভিয়েত অঞ্চল' (post-Soviet space) হিসেবে অভিহিত করা হয় এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গঠিত রাষ্ট্রগুলোকে উত্তর সোভিয়েত রাষ্ট্রসমূহ (post-Soviet states) হিসেবে অভিহিত করা হয়। সোভিয়েত ফেডারেশনের পতনের পর উত্তর সোভিয়েত অঞ্চলে ১৫টি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অঞ্চলটিতে আরো অন্তত ৬টি নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থাৎ, এক সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থলে বর্তমানে রয়েছে মোট ২১টি কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্র।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের ফলে সৃষ্ট সর্ববৃহৎ রাষ্ট্রটি হচ্ছে রাশিয়া। যা বাল্টিক সাগরের তীর থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল পর্যন্ত ইউরেশিয়ার বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে অবস্থিত এবং রাশিয়া আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী প্রাক্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরী রাষ্ট্র (successor state)। অর্থাৎ, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সোভিয়েত ইউনিয়নের যেসব অধিকার ও দায়বদ্ধতা ছিল, সেগুলো (যেগুলোর মধ্যে রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্থায়ী সদস্যপদ ও সোভিয়েত ইউনিয়নের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব) বর্তমানে রাশিয়ার ওপর ন্যস্ত।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত চেচনিয়া ও তাতারস্তান, ইউক্রেনের ক্রিমিয়া এবং মলদোভার গাগাউজিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিল, কিন্তু বর্তমানে অঞ্চলগুলো হয় তাদের মূল রাষ্ট্র অথবা অন্য কোনো রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত। যেমন - ১৯৯৪ সালে তাতারস্তান রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়, ১৯৯৫ সালে গাগাউজিয়া মলদোভার অন্তর্ভুক্ত হয়, ২০০০ সালে চেচনিয়া রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ইউক্রেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা ঘোষণার পর রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হয়। এর ফলে এগুলো এখন আর কার্যত স্বাধীন রাষ্ট্র নয়।

ইউক্রেন সংকটের কারণ বুঝতে হলে আমাদের কিছুটা পিছনে বা সমস্যার শুরুর দিকে যাওয়া দরকার। ইউক্রেন সংকটের শুরু হয়েছে মূলতঃ ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলের পর থেকে। ক্রিমিয়া দখলেরও একটি শুরুর ইতিহাস আছে। ইউক্রেন যখন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের অংশ ছিল, তখন প্রায় ২০০ বছর ধরে রাশিয়ার মালিকানায় থাকা ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে ইউক্রেনের মালিকানায় দেওয়া হয়। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এই কাজ করেছিলেন। তখন তিনি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি, কয়েক দশকের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এবং ক্রিমিয়ার ওপর মস্কোর আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন সত্যিই ভেঙে গেল এবং ক্রিমিয়ার ওপর মস্কোর নিয়ন্ত্রণ ছুটে গেল, তখন মস্কো আবার চেষ্টা শুরু করল ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে ফিরে পেতে এবং তখন থেকেই ইউক্রেনের সঙ্গে তার সমস্যার শুরু।


(ইউক্রেন ইস্যুতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন।)
ছবি - এএফপি

সোভিয়েত থেকে বেরিয়ে ইউক্রেন স্বতন্ত্র স্বাধীন দেশ হওয়ার পর তাদের ভেতরকার জনগণের মধ্যে দুই ধরনের শিবির গড়ে ওঠে। ইউক্রেন রাশিয়ার লাগোয়া এলাকা বলে সেখানে অনেক জাতিগত রুশ নাগরিকের বাস। সেই রুশ নাগরিকেরা সব সময় রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছে। অন্যদিকে, বাকিরা ইউরোপসহ পশ্চিমাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ থাকতে চেয়েছে। পশ্চিমাপন্থীরা চেয়ে আসছে, ইউক্রেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত হোক এবং একই সঙ্গে তারা ন্যাটোভুক্ত হোক। এই ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেনের যুক্ত হতে চাওয়াতেই রাশিয়ার আপত্তি এবং তখন থেকেই সমস্যার শুরু হয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য ও রাশিয়ার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইউক্রেন কয়েক বছর আগে ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য আবেদন করার পর থেকেই পুরোদমে উত্তেজনা শুরু হয়েছে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে। সম্প্রতি ন্যাটো ইউক্রেনকে সদস্যপদ না দিলেও ‘সহযোগী দেশ’ হিসেবে মনোনীত করায় আরও বেড়েছে এই উত্তেজনা।

২০১৪ সালে ইউক্রেনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ভিক্তর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে একটি বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তি করতে চেয়েছিলেন। এতে ইউক্রেনের বেশির ভাগ মানুষ খুশি হয়েছিল। কারণ, এই চুক্তিগুলো হলে দেশ আরও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি পাবে। ইউক্রেনবাসী খুশি হলেও ইয়ানুকোভিচের এ উদ্যোগ পুতিনকে বিচলিত করে ফেলে। কারণ সেই চুক্তিটি হয়ে গেলে ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়া সহজ হয়ে যাবে। আর ইউক্রেন ইইউর সদস্য হয়ে গেলে একসময় রাশিয়ার ঘোর শত্রু ন্যাটোরও সদস্য হয়ে যাবে।


(রাশিয়ার অভিযানের আশংকায় ইউক্রেনের জনগণকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচছে)
ছবি -এএফপি

এ চিন্তা থেকেই ইয়ানুকোভিচের ওপর পুতিন এমন চাপ দিলেন যে ইয়ানুকোভিচ ইইউর সঙ্গে সেই চুক্তির আলোচনা থেকে বেরিয়ে গেলেন। এত বড় অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ইয়ানুকোভিচ নষ্ট করে দিলেন কেন? - এ প্রশ্ন রেখে ইউক্রেনবাসী বিক্ষোভ করলে ইয়ানুকোভিচের পতন হয় এবং তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

এরপর ইউক্রেনের ভেতরে যেসব এলাকায় জাতিগত রুশ লোকের বসত, সেখানে পুতিন ইউক্রেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভ উসকে দেন। বিদ্রোহীরা ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধে ফেটে পড়ে। পুতিন এই বিদ্রোহীদের সমর্থন দিতে যে সেনাবাহিনী পাঠান, তারা ইউক্রেনের কাছ থেকে ক্রিমিয়া দখল করে এবং পুতিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার নিজের ভূখণ্ড বলে ঘোষণা করেন।

এত বড় দেশ ওয়ার পরেও রাশিয়া কেন ক্রিমিয়া নিজের সীমানাভুক্ত করলো?

রাশিয়া এক বিরাট দেশ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় দেশ যেটি ১১টি টাইম জোন জুড়ে বিস্তৃত। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ। ভারতের পাঁচগুণ। ব্রিটেনের চেয়ে ৭০ গুন বড়। কিন্তু দেশটির জনসংখ্যা মাত্র ১৪ কোটি ৪০ লাখ। যার জনসংখ্যা বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া বা পাকিস্তানের চেয়েও কম। এত বড় একটি দেশের ক্রিমিয়া দখল করে নিজের সীমানাভুক্ত করার কী দরকার ছিল, এমন প্রশ্ন উঠতেই পারে।

রাশিয়া যত বড় দেশই হোক, তাদের একটাই সমস্যা - সারা বছর সচল রাখা যায় উষ্ণ পানির এমন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের প্রায় নেই বললেই চলে। ক্রিমিয়ার সেভাস্তাপোলে রাশিয়ার যে নৌঘাঁটি, সেটি কৌশলগত কারণে তাই রাশিয়ার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার ঢোকার পথ হচ্ছে এই বন্দর। সেটি হাতছাড়া হতে তারা কোনোভাবেই দিতে চায়নি। তাছাড়া প্রায় ২০০ বছর ধরে ক্রিমিয়া কিন্তু রাশিয়ারই অংশ ছিল।


ক্রিমিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষও জাতিগত রুশ। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এটি হস্তান্তর করেন তৎকালীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের কাছে। তখন তারা ভাবেননি, কোনো একদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবে এবং ক্রিমিয়ার ওপর মস্কোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাবে। কাজেই ইউক্রেন যে ন্যাটোর সদস্য হবে, সেটা রাশিয়া কোনোভাবেই মানবে না। কিন্তু মস্কো যখনই দেখলো যে ইউক্রেন তাদের প্রভাবের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখন প্রেসিডেন্ট পুতিন সেখানে হস্তক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নেন।

লেখক-সাংবাদিক টিম মার্শালের মতে, " কোনো বৃহৎ শক্তির অস্তিত্ব যখন হুমকিতে পড়ে, তখন সে শক্তি প্রয়োগ করবেই। এটা হচ্ছে কূটনীতির এক নম্বর শিক্ষা"। তিনি তার একটি বই ‘প্রিজনার্স অব জিওগ্রাফি’ বইতে লিখেছেন,"আপনি হয়তো এরকম একটা যুক্তি দিতে পারেন যে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সামনে বিকল্প ছিল। তিনি ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে পারতেন। কিন্তু মনে রাখতে হবে প্রেসিডেন্ট পুতিন আসলে রাশিয়ার ঈশ্বর প্রদত্ত ভৌগোলিক হাত নিয়ে খেলছেন এখানে"।

"কাজেই ইউক্রেনের ব্যাপারে কিছু না করে বসে থাকার কোনো সুযোগ তার ছিল না পুতিনের সামনে। কারণ ক্রিমিয়া ছিল রাশিয়ার একমাত্র উষ্ণ পানির বন্দর, আর পুতিনের আমলেই এই বন্দর রাশিয়ার হাতছাড়া হবে, সেটা তিনি চাননি"। আর রাশিয়া নিজেকে এখনো দেখে একটি পরাশক্তি হিসেবে, এবং বিশ্বে তার সেই সামরিক-রাজনৈতিক শক্তি অটুট রাখার ক্ষেত্রে ক্রিমিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব তাই অনেক বেশী।

এদিকে, একসময় রশিয়ার বলয়ে থাকা অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য ঠেকাতে ন্যাটো ধীরে ধীরে সেনা মোতায়েন বাড়াতে থাকে। সোভিয়েত ভেঙে যাওয়ার পর একের পর এক ন্যাটোতে যোগ দিয়েছিল চেক প্রজাতন্ত্র, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া ও আলবেনিয়া। এই দেশগুলো একসময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ অথবা ওয়ারশ সামরিক জোটের সদস্য ছিল। এদের সঙ্গে যোগ দিতে চাইছে জর্জিয়া, মলদোভা ও ইউক্রেন। কিন্তু সেখানে রুশপন্থী সশস্ত্র মিলিশিয়াদের শক্ত ঘাঁটি আছে এবং রাশিয়া তাদের সব ধরনের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ওই মিলিশিয়াদের কারণে তারা ন্যাটোতে যোগ দিতে পারছে না।

ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দিলে রাশিয়ার কী ক্ষতি

ইউক্রেন ন্যাটোয় যোগ দিলে রাশিয়ার ক্ষতি আছে,আর সেই ক্ষতি বেশ বড় ধরনের। সে কারণেই ১ কোটি ৭০ লাখ ৯৮ হাজার ২৪৬ বর্গকিলোমিটারের বিশাল দেশ রাশিয়া মরিয়া হয়ে মাত্র ২৭ হাজার বর্গকিলোমিটারের পুঁচকে ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। রাশিয়া দেশ হিসেবে বিশাল বড় হলেও সারা বছর সচল রাখা যায় উষ্ণ পানির এমন গুরুত্বপূর্ণ বন্দর তাদের প্রায় নেই বললেই চলে কিন্তু ক্রিমিয়ার সেভাস্তাপোলে রাশিয়া যে নৌঘাঁটি গেড়েছে, সেখানে সে ধরনের উষ্ণ পানি আছে। আর রাশিয়ার কৃষ্ণ সাগরে ঢোকার একমাত্র পথও হলো এই বন্দর। এ কারণে ক্রিমিয়ার অবস্থানগত মূল্য অনেক। ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হয়, তাহলে সেখানে ন্যাটো বাহিনীর আনাগোনা শুরু হবে। আর সেটি হলে কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার যাওয়া-আসা আগের মতো সহজ থাকবে না।

কাজেই ইউক্রেনের ন্যাটোর সদস্য হওয়া রাশিয়ার পক্ষে মানা সম্ভব নয়। এর আগে যতবার পোলিশ, সুইডিশ, ফরাসি, জার্মানসহ অন্যান্য বিদেশিদের আক্রমণের মুখে রাশিয়া পড়েছে, তার সবগুলোই এসেছে উত্তর ইউরোপের সমতল ভূমি দিয়ে। এ কারণে ওই অঞ্চলের দিকে রাশিয়াকে বাড়তি নজর দিতে হচ্ছে - --------

- চলবে


তথ্যসূত্র - এএফপি,বিবিসি, রয়টার্স ও প্রথম আলো ( ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২),নয়া দিগন্ত (২৮/০১/২০২২)

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২৫

সাগর শরীফ বলেছেন: ইউক্রেণ যেভাবে এগিয়ে চলেছে রুশ এভাব থেকে বেরিয়েেএসে তাতে করে রাশিয়াকে যথেষ্ট কাঠ খড় পোড়াতে হবে ইউক্রেনকে বাগে আনতে, এবং তাতেও কতটুকু সফল হবে তা দেখার বিষয়। আর ক্রিমিয়ার উপর আবার কর্তত্ব প্রতিষ্ঠা রুশদের জন্য অনেকটা অসম্ভব এখনই।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৫৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাগর শরীফ ভাই , আপনার পোস্ট পড়া ও ছোট তবে বাস্তব মন্তব্যের জন্য।

আসলে বর্তমানে যে অবস্থা বা পরিস্থিতি দাড়িয়েছে তাতে করে ভবিষ্যতে ইউক্রেনকে রাশিয়া কতটা নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবে বা ইউক্রেন ও কতটা ছাড় দিবে তা এক বিশাল প্রশ্ন । তবে প্রশ্ন যাই হোক, তাতে রাশিয়া কিংবা পশ্চিমা বিশ্বের ইউক্রেনকে নিয়ে রশি টানা-টানি যে জমে উঠেছে এটা নিশ্চিত।

আবার রাশিয়া যদিও বার বার বলছে ইউক্রেনে অভিযান চালানোর কোন ইচছা তার নেই কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের এ নিয়ে প্রচারণা থেমে নেই। আর তাই আসলে এখন ইউক্রেনে কি ঘটবে বা ঘটতে পারে তা নিয়ে পরিষ্কার ধারনা আমাদের কারোর ই নেই । আরো কিছুদিন পর হয়ত এ ব্যাপারে বুঝা যাবে।

তবে যাই কিছু ঘটুক না কেন , একটা কথা নিশ্চিত যে - ইউক্রেনের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক বা পরিস্থিতি আর আগের মত থাকবেনা। আর ক্রিমিয়ার উপর রাশিয়া তার কর্তত্ব ছাড়বেনা তার জন্য যতই পশ্চিমা বিশ্বের চাপ আসুক না কেন।

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:২৭

জুন বলেছেন: আমেরিকার অস্ত্র বিক্রি করা দরকার। ওদের অর্থনৈতিক সমস্যা প্রকট তাই এই যুদ্ধের অবতারণা । আফ্রিকা মহাদেশে, মধ্যপ্রাচ্যে,দক্ষিণ আমেরিকার অনেক অনেক সমৃদ্ধশালী দেশকে ফেইল স্টেট বানিয়েছে আমেরিকা আর ইউরোপীয় জোট। এখন নজর তাই রাশিয়া আর চীনের দিকে।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:০৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ বোন জুন , আপনার পোস্ট পড়া ও সমস্যার মূল বা আদি ও আসল বিষয়ে মন্তব্যের জন্য।

আমরিকা বা পশ্চিমা বিশ্বের মূল বিষয় (অস্ত্র ব্যবসা) এখানেই নিহিত থাকে। তার জন্য তারা কখনো মানবতার গান গায় , কখনো নারী স্বাধীনতার কথা বলে । আবার কখনো নিজেদের স্বার্থে শাসককের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে জনগণকে উসকে দিয়ে তারা তাদের মূল কাজ (অস্ত্র ব্যবসা) কে জায়েজ করে নেয়। এখানে মানবতা-নারী স্বাধীনতা-গণতন্ত্র এসবই ফাকা বুলি । এগুলির মোড়কে অস্ত্র ব্যবসাই মূল বিষয় । কারন, তাদের অর্থনীতি চলেই অস্ত্র ব্যবসাকে কেন্দ্র করে।

আর তাদের ভূয়া অভিযোগের নজীর কিংবা উদাহরণ এবং তাদের ভূক্তভোগীদের নজির আমাদের সামনেই আছে ইরাক-লিবিয়া-ভিয়েতনাম-আফগানিস্তান ।এসব জায়গা যেখানে তারা যে সব অভিযোগ করেছিল পরবর্তীতে বেশীরভাগই তারা প্রমাণ করতে পারেনি তবে তার বিষময় ফলাফল ও পরিণতি সেই দেশের জনগন ভোগ করছে বছরের পর বছর ধরে।

আর ইউরোপ বেশীরভাগ জায়গায়ই আমেরিকার বি টিম হিসাবে কাজ করে । ন্যায়- অন্যায় তাদের কাছেও বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে এটাও ঠিক বাকী সব রাষ্ট্র আর চীন কিংবা রাশিয়া এক নয় । এটাকে তাদের মনে রাখতে হবে।

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৩২

সাসুম বলেছেন: পোস্ট পড়ে ভাবছিলাম আনন্দ বাজার বা ছাগু দিগন্ত এর রিপোর্ট পড়ছি।
পোস্টের শেষে এসে সিউর হইলাম।

ইউক্রেন আর রাশিয়া নিয়ে আপনার কোন ধারনাই নেই। কেন পুতিন ইউক্রেন দখল করতে চায় আপনার কোন আইডিয়াই নেই। কেন ক্রিমিয়া দখল করছে তা নিয়ে এক হাস্যকর মিঠা পানির বন্দরের যুক্তি দাড় করিয়েছেন।

আপনার বাকি লেখার মতই খেলো একটা লিখা। বেশির ভাগ ইনফো আংশিক সত্য কিংবা জাস্ট ভাসা ভাসা।

জাস্ট চলে আর কি টাইপ। যাই হোক, চলুক। আপনার থেকে ভাল লিখা আশা করাটা বাতুলতা।

আপনার তালেবান প্রেমের পর এখন রুশ প্রেম - বেশ ভাল প্রেম আপনার ভাইজান।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ সাসুম ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।

পোস্ট পড়ে ভাবছিলাম আনন্দ বাজার বা ছাগু দিগন্ত এর রিপোর্ট পড়ছি। পোস্টের শেষে এসে সিউর হইলাম।

- কি কমু :( ভাইজান । কওয়ার কিছু নাই।

ইউক্রেন আর রাশিয়া নিয়ে আপনার কোন ধারনাই নেই। কেন পুতিন ইউক্রেন দখল করতে চায় আপনার কোন আইডিয়াই নেই। কেন ক্রিমিয়া দখল করছে তা নিয়ে এক হাস্যকর মিঠা পানির বন্দরের যুক্তি দাড় করিয়েছেন।

- ভাই , আমরা আদার ব্যাপারী তাই বড় জাহাজের পুরো খবর কি আমরা জানব । আমরা বড়জোর জাহাজের কার্গো হ্যাচের খবর জানতে পারব পুরো জাহাজের নয়। আর তাই " অন্ধের হাতি দেখার মত" যতটুকু জানতে পারছি তাই শেয়ার করেছি। আর এসব ব্যাপারের পিছনের বা প্রকৃত কারন কেউ ই শতভাগ জানতে পারেনা কখনো ।আর মিঠা পানির বন্দর একটা কারন হতে পারে তবে তাই শেষ কারন নয় । বাকী লেখায় হয়ত আরো কিছু কারন দেখতে পাব।

আপনার বাকি লেখার মতই খেলো একটা লিখা। বেশির ভাগ ইনফো আংশিক সত্য কিংবা জাস্ট ভাসা ভাসা। জাস্ট চলে আর কি টাইপ। যাই হোক, চলুক। আপনার থেকে ভাল লিখা আশা করাটা বাতুলতা।

- কি বল বলব ভাইজান বলেন । এত খাটাখাটুনি করে এত কিছু পড়া-লিকার পরেও যদি একথা বলেন , তাহলে আমি যাব কনে :(( ? আপনি এমন X(( কেনে ? আমার কোন লেকায় :| কোন কিছুতে আপনি তৃপ্ত হন না কেন ? কেন ? কেন?

আপনার তালেবান প্রেমের পর এখন রুশ প্রেম - বেশ ভাল প্রেম আপনার ভাইজান।

- ভাইজান, রুশ নারীরা অনেক :P সুন্দরী যার প্রমাণ পাই আমরা শেরজা তপন ভাইয়ের লেখায় ও বাবনিকে। আর তাই এখন রুশ প্রেমের জোয়ার উঠেছে মনের মাঝে (যদিও আমার একন আর বয়স নেই , শরীরের বেশীরভাগ যন্ত্রপাতির অংশই এখন আর পূর্ণ কার্যক্ষমতায় নেই ) ।

আর যে কোন প্রেমকেই আপনি ছোট করে দেখতে X( পারেন না , কারন প্রেম পবিত্র এবং সে এসেছে স্বর্গ থেইককা ।

আর সবশেষে কানে কানে একটা কথা বলি আপনাকে, আমার শুধু তালেবান কিংবা রুশদের প্রতিই প্রেম নেই , আপনার প্রতিও প্রেম আছে তবে আমি :(( ---------------- না ।

৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:০৭

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: ইউক্রেণের লোকেদের সাহস আর দেশপ্রেম দেখার মতো।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ দস্যু ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।

আসলে যে কোন মানুষেরই আত্মমর্যাদা নিয়ে ও স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। ইউক্রেনের জনগণ ও এর বাইরে নয়। তবে সমস্যা হয়ে গেছে তাদের ব্যবহার করে এখানে কয়েকটা পক্ষ তাদের নিজ নিজ স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। সমস্যাটা এখানেই।

৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:২৫

জুল ভার্ন বলেছেন: আজ সারাদিন মোবাইল ফোনে ব্রাউজ করছি....ছোট স্ক্রিনের জন্য কোনো লেখাই স্বাভাবিক ভাবে দেখতে পারছিনা- তাই পোস্ট সম্পর্কে মন্তব্য করতে পারিনা

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৩৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ জুল ভার্ন ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।

পড়তে চেষ্টা করেছেন, মন্তব্যে জন্য কিছু লিখেছেন - তাই অনেক।

এ সমস্যা হয়ত কেটে যাবে অচিরেই এবং আপনি আবারো ফিরে আসবেন - এ আশায়।

৬| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:১২

সাসুম বলেছেন: ভাই , আমরা আদার ব্যাপারী তাই বড় জাহাজের পুরো খবর কি আমরা জানব । আমরা বড়জোর জাহাজের কার্গো হ্যাচের খবর জানতে পারব পুরো জাহাজের নয়। আর তাই " অন্ধের হাতি দেখার মত" যতটুকু জানতে পারছি তাই শেয়ার করেছি।

এই কাজ যে একটা অনৈতিক কাজ এটা জানেন?? না জেনে মানুষ কে ভুল বা আংশিক জানানো ??? আমি আপনাকে প্রায় বলি আপনি কি বিলিভ করেন তাতে কোন অসুবিধা নেই বাট যখনই আপনি অন্য কাউকে জানাতে যাবেন , প্রসার করতে যাবেন, প্রচার করতে যাবেন তখন সেটা যদি ভুল হয় তাহলে বিরাট সমস্যা। জানাতে হবে সত্য কথা।

আপনি ঠিক যে জিনিষ খুব ভাল করে জানবেন সেটা নিয়েই লিখবেন, সেটা নিয়েই জানাবেন, সেটা নিয়েই জ্ঞান বিতরন করবেন। যেমন ধরেন- নারীকে ঠিক কোন কালারের বোরকা পড়তে হবে কিংবা কোন দোয়া পড়লে বেহেশতে বেশ কয়েকটা বেশি হুর পাওয়া যাবে এইসব আর কি।
এখন আপনি বাংগুস্তান এর আনন্দবজর পথম আলু আর ছাগু দিগন্ত থেকে ইনফো নিয়ে যদি জ্ঞান বিতরণ করতে চান তাহলে সেই জ্ঞানের ভেলিডিটি আর থাকেনা।

আপনার এই রাশিয়া এপিসোড নিয়ে আমি প্রতিটা লাইনের ভুল বের করতে পারব, প্রতিটা লাইন কে পালটা জবাব দিতে পারব সঠিক সোর্স ও তথ্য দিয়ে। কিন্তু সেটা করতে ইচ্ছে করছেনা। আমার আসলেই ক্লান্তি লাগে আপনার এইসব গুজব কে পালটা জবাব দিতে , টায়ার্ড হয়ে যাই। তারপরেও কিছু ইনফো দেই হালকা করে-

এই ব্যাপারে আপনাকে জানতে হলে আগে জানতে হবে পুতিন কি চান, কেন চান? ধরেন পুতিন ইউক্রেন কে কিভাবে দেখে তার একটা স্টেটমেন্ট দেই- এই স্টেটমেন্ট আগাগোড়া পড়বেন এবং সোভিয়েত এরার পুতিন এর পুরানো সোভিয়েত ব্লক করার ড্রিমে ফিরে যাবেন।

পুতিনের ইউক্রেন ভাবনা- ক্রেম্লিনের অফিসিয়াল স্টেট্মেন্ট
আপনাকে আরো জানতে হবে ইউক্রেন আর রাশিয়ার হিস্টোরি। আপ্নাকে জানতে হবে আজকের যে রাশিয়া তার গোড়াপত্তন হয়েছে ইউক্রেন থেকে, আপনাকে আরো জানতে হবে আজকের এই রাশিয়া আর ইউক্রেন এর খেলা যতটা না জিওপলিটিকাল তার চেয়ে বেশি মাদার রাশার নিজেকে গোছানোর।

এর সাথে আপনাকে আরো জানতে হবে,
ইউক্রেন কে কেন ন্যাটো তে চায়না রাশিয়া? এটা জানতে আপনাকে বুঝতে হবে ন্যাটোর আসল রিজন কি ছিল এবং কি করে ন্যাটো এন্টী রাশিয়া ব্লকে দাড় করালো সবাইকে। এর সাথে জানতে হবে কেন রাশিয়ার অনেক সীমান্ত বর্তী ইউরোপের দেশ এখনো ন্যাটো তে নাই, যেমন- ফিনল্যাণ্ড বা সুইডেন । নীচের ম্যাপ টা দেখেন-

রাশিয়া চাইবেনা তার বর্ডারে হাইপারসনিক মিসাইল মোতায়েন করুক তার শত্রু পক্ষ ন্যাটো। বেলারুশ আর ইউক্রেন এর বর্ডার খেয়াল করলে দেখবেন পূর্ব ইউরোপে এই দুইটা বিশাল অঞ্চল রাশিয়া কণ্ট্রোল করতে চাইছে।

খেয়াল করেন নীচের ম্যাপে আরো একটা জিনিষ-

এক এস্তোনিয়া আর লাটভিয়া ছাড়া কোন রিস্ক নাই সেদিক থেকে, এবং সেটা একটা ছোট্ট এলাকা।

ঐদিকে বেলারুশ আরেক রাশিয়া এবং সেটা দিয়ে প্রেসার দেয়া যাবে এবং যুদ্ধ লাগ্লে সহজেই পাল্টা জবাব দেয়া যাবে। অল্প এলাকা রক্ষা করলেই আর সমস্যা নাই রাশিয়ার।

এখন এই বর্ডারে ন্যাটোর মিসাইল আসা মানেই ব্লাক সী তে রাশিয়ার একক আধিপত্য ক্ষুন্ন। এবং সেই সাথে রাশিয়ার ঘাড়ের উপর মিসাইল ফিট করে বসে থাকবে ন্যাটো। এটা রাশিয়া কিছুতেই মানবেনা।

প্রশ্ন আসছে- এত কিছুর মাঝে তুর্কি কই? এই শালা ইসলাম জাহানের খলিফা পাঠা হল আসল শয়তান। এতদিন বসবরাস প্রণালী দিয়ে কনফ্লিক্ট এর সময় যুদ্ধ জাহাজ না যাওয়ার চুক্তি আছে, এখন তার নতুন আংকারার মাঝখান দিয়ে নতুন খাল করছে সে, এটা দিয়ে সে ন্যাটোর ট্রুপ্স আর ন্যাভাল বেইজ নিয়ে যাবে, রাশিয়া অনেক বাধা দিয়েও পারবেনা থামাতে। তো এখন যদি ইউক্রেন ও হারায় তাইলে আরো ক্ক্যাচাল , আগে একবার ক্যাচাল করে ক্রিমিয়া কেড়ে নিছে। এটা আর বাড়াবেনা বাট এখানে নতুন খেলোয়ার আসতে দেয়া যাবেনা।

এইবার খেয়াল করবেন- এই খেলায় ইউকে বেশ ভাল খেলোয়ার, কেন? সেটা সেই কোল্ড ওয়ার সিনারিওর কারনে। সেটা আরেক আলোচনা।

তো, এখন ইউক্রেন চাইলে যেখানে যাবে সমস্যা নাই, রাশিয়ার সমস্যা কি? ইউক্রেন একটা আলাদা কান্ট্রি? সমস্যা কালচার আর জনগনে। রাশিয়া আর ইউক্রেন এর কালচার সেইম এবং একই যায়গা থেকে উৎপত্তি।

আরো ক্যাচাল হল- একবার ইউই আর ন্যাটোর সদস্য পদ পেলে রাশিয়ার জনগন চেপে ধরবে পুতিন কে। বলবে দেখো আমাদের সেইম কালচার সেইম জনগন পাশের দেশে ক্যাপিটালিস্ট হয়ে গনতান্ত্রিক হয়ে কি সুন্দর করে উন্নতি করছে , অথচ আমরা এখনো সমাজতন্ত্রের সেই পুরান কেচালে উন্নতি করতে পারছিনা। আমাদের গনতন্ত্র দাও।

এই ভয় হল পুতিনের সবচে বড় ভয় কারন সেই হল ভয়ানক এক দানব। সে কিছুতেই ক্ষমতা দিবেনা জনগনের হাতে। ফলে ইউক্রেন কে কোন ভাবেই শান্তিতে থাকতে দিবেনা সে।

এর বাইরে, ইউক্রেন এর আশে পাশে সৈন্য সমাবেশ করে রাশিয়া একটা মাইল্ড থ্রেট দিলো ওয়েস্টার্ন ব্লক কে/ এবং তাদের সবার রাতের ঘুম হারাম করে দিলো ভাব যেন এমন।

বাট আম্রিকা কেন এত এগিয়ে যেখানে ইউক্রেন নিজেই যুদ্ধ করতে আগ্রহী নয়? কারন ন্যাটো কে আবার জাগিয়ে তোলা। ট্রাম্প ন্যাটো থেকে বের হয়ে যেতে চেয়েছিল এবং এবার আসলে ক্ষমতায় আসলেই বের হয়ে যেত। বাট বাইডেন সেটা হতে দিবেন না, সো রাশিয়ান এই থ্রেট কে সে সিরিয়াস করে সবাইকে জাগাইতে চাইছে।

বাট কেচাল হইল- অন্য যুদ্ধে ইউরোপ তার পিছে কুত্তার মত দৌড়াত এবার দৌড়াবে না। ফ্রান্স নাই এসবে, মাখো গতকাল্কেই রাশিয়া সফর করে এলো, এবং বলে আসল রাশিয়া আর উত্তেজনা বাড়াবেনা এটা কথা দিছে।

জার্মানি ভুলেও এই কেচালে নাই, কারন- রাশিয়ান গ্যাস না হলে সাম্নের আসন্ন শীতে বার্লিন আর মিউনিখের রাস্তায় লাশের পাহাড় হবে ঠান্ডা বরফে, সেটা আরব আমিরাতের আর কাতারের এল এন জি গ্যাস দিয়ে কোনভাবেই কাভার দেয়া যাবেনা। সো তাদের রাশিয়া কে লাগবেই। আর কেচাল লাগলে সবার আগে আঘাত আসবে নর্ড স্ট্রিম ২ তে। বিলিয়ন ডলার এর প্রজেক্ট শেষ। আর বাকিরা শান্তি চায়, কারন ইউরোপের শান্তিতে কেউ আঘাত হানুক এটা চায়না। সো ওয়াশিংটন আর লন্ডন একা এই যুদ্ধে জড়াবেনা কারন পারবেনা এত দূর থেকে যুদ্ধ করতে।

আর রাশিয়া ছোট খেলোয়ার না, তারা ইউক্রেন দখল করতে চাইলে এম্নে করবেনা। ক্রিমিয়ার মত ডনবাস দিয়ে শুরু করবে আগে। ছোট ছোট গ্রুপ কে টাকা আর অস্ত্র দিয়ে আস্তে আস্তে দখল করাবে। ইউক্রেন বেসামাল করে রাখবে ।

এখন ন্যাটো কখনোই ইউক্রেন এর এই অবস্থায় তাদের কে নিবেনা, সাহায্য ও করবেনা ডাইরেক্ট যুদ্ধে। ফলে পশ্চিমা ব্লক যতই চাক- ইউক্রেন নাই এই যুদ্ধে। কারন- তাদের হারানোর আছে সব, বাট পাবার নাই কিছু। তারা তাইওয়ান এর মত আম্রিকান পকেট থেকে টাকা খসাবে, সহায়তা নিবে আর নিজেরা আস্তে আস্তে বড় হবে। ইউক্রেন আস্তে আস্তে কিন্তু উন্নতি করছে।

আর রাশিয়া ও এত বেকুব না, এক্টা সৈন্য ইউক্রেনে পা রাখলে সবার আগে সুইফট এর উপর আঘাত, সাথে সাথে রাশিয়ান ইকোনমি তে ধ্বস নাম্বে। এক ঘন্টার মধ্যে রাশিয়ান রুবল পড়ে যাবে সর্বনিন্ম স্তরে। এই রিস্ক পুতিন কেন কিম জং উল ও নিবেনা। পাগল হলেও বুদ্ধি আছে।

এই মুহুর্তে একটা কথা লিখিত দেয়া যায়- আম্রিকা ভুলেও যুদ্ধে জড়াবেনা। জাস্ট হুমকি। কারন- যুদ্ধ করার মত শক্তি আম্রিকার নাই সেই অঞ্চলে যদিনা জার্মানি আর ফ্রান্স ডাইরেক্ট যোগ না দেয়।

এদিকে রাশিয়া এসব প্রেসার দিয়ে পশ্চিমা ব্লক কে চাপে রাখবে, আর ঐদিকে বিজনেস এক্সপানশান করবে। তাদের উপর থাকা টুকটাক সাস্পেনশান তুলে নিতে চাপ দিবে ক্রিমিয়া দখলের পর যেগুলা করছিল।

সবাই মাথার চুল ছিড়বে হোয়াইট হাউসে আর পুতিন ক্রেম্লিনে বসে বসে ভদকায় চুমুক দিবে।

একটা কথা মনে রাখবেন স্যার- রাশিয়া যুদ্ধে জড়াবেনা কোনমতেই , তারা ঠান্ডা মাথার খেলোয়ার। সেই ২০০৮ এ জর্জিয়া থেকে শুরু করে ২০১৪ তে ক্রিমিয়া - তারা জাস্ট আলাদা হতে চাওয়া গ্রুপ গুলাকে টাকা আর উইপন দিয়ে আস্তে আস্তে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে রাখবে। এটাই আসল চাহিদা। কারন যত ইউক্রেন এর পরিস্থিতি ঘোলাটে হবে তত সে বলতে পারবে তার দেশের জনগঙ্কে দেখো ডেমোক্রেসি তে কত ভেজাল। এর চেয়ে আমার মাদার রাশা ভাল।

যুদ্ধ ফুদ্ধ হবেনা, টেনশান নিয়েন না।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৪৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আবারো ধন্যবাদ সাসুম ভাই, আপনার প্রতি-মন্তব্যের জন্য।

আমি বলেছিনু - আমরা আদার ব্যাপারী তাই বড় জাহাজের পুরো খবর কি আমরা জানব । আমরা বড়জোর জাহাজের কার্গো হ্যাচের খবর জানতে পারব পুরো জাহাজের নয়। আর তাই " অন্ধের হাতি দেখার মত" যতটুকু জানতে পারছি তাই শেয়ার করেছি।

জবাবে আপনি বলেছেন - ই কাজ যে একটা অনৈতিক কাজ এটা জানেন?? না জেনে মানুষ কে ভুল বা আংশিক জানানো ??? আমি আপনাকে প্রায় বলি আপনি কি বিলিভ করেন তাতে কোন অসুবিধা নেই বাট যখনই আপনি অন্য কাউকে জানাতে যাবেন , প্রসার করতে যাবেন, প্রচার করতে যাবেন তখন সেটা যদি ভুল হয় তাহলে বিরাট সমস্যা। জানাতে হবে সত্য কথা।

আপনি ঠিক যে জিনিষ খুব ভাল করে জানবেন সেটা নিয়েই লিখবেন, সেটা নিয়েই জানাবেন, সেটা নিয়েই জ্ঞান বিতরন করবেন। যেমন ধরেন- নারীকে ঠিক কোন কালারের বোরকা পড়তে হবে কিংবা কোন দোয়া পড়লে বেহেশতে বেশ কয়েকটা বেশি হুর পাওয়া যাবে এইসব আর কি। এখন আপনি বাংগুস্তান এর আনন্দবজর পথম আলু আর ছাগু দিগন্ত থেকে ইনফো নিয়ে যদি জ্ঞান বিতরণ করতে চান তাহলে সেই জ্ঞানের ভেলিডিটি আর থাকেনা।


- আমি যখন এই লেখাটা শুরু করি তখন এবং এখনো ইচছা আছে ৩/৪ পর্বে শেষ করা । আর সেই হিসাবে ১ম পর্বে আমি শুধু "ইউক্রেন সংকট" এর পটভূমিকা এবং এর পিছনের কিছু কারন অনুসন্ধান করেছি বা লেখেছি। আর তাই পুরো লেখার পরেই এ বিষয়ে যদি এভাবে বলতেন মেনে নিতে কষ্ট হতনা যতটা না এখন এই অসম্পূর্ণ :(( গর্ভপাত (আংশিক লেখার) এর ফলে পাচছি।

আমার পুরো লেখার প্রায় সব বিষয়ই আপনার মন্তব্যের মাঝে চলে এসেছে। এখন ভাবছি বাকী পর্ব গুলি আর শেষ করব কিনা ? তবে শুরু করেছি যেহেতু শেষ করব - আর আপনার এরকম উপস্থিতি কামনা করছি।

আর একটা বিষয় - "আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও রাজনীতি"র বিষয়ের জন্য আমাদের দেশের বাইরের " এএফপি,বিবিসি,রয়টার্স,আল জাজিরা এবং দেশের মাঝে প্রথম আলো, নয়া দিগন্ত - এসবের উপর নির্ভর করতেই হয় সর্বশেষ আপডেট এর জন্য ।

আর আপনার হুর না লাগলেও :P আমার লাগবে ভাইজান তয় একটা হলেই হবে - বেশী না।

এর পর পুরো মন্তব্যে শুধুই মুগ্ধতা - এত চমতকার মন্তব্য ও বিশদ তথ্যের জন্য । আর জন্য রইলো আপনার প্রতি শুভেচছা এবং মন্তব্যে +++++++++++++++++++++++++++++++ সাথে আরো আরো অনেক ভালবাসা

৭| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার এই পোষ্টে সঠিক মন্তব্য করার জন্য একজনই ছিলেন। তাকে ব্যান করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৫:৫২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব নুর ভাই, আপনার মন্তব্যের জন্য।

আপনার এই পোষ্টে সঠিক মন্তব্য করার জন্য একজনই ছিলেন। তাকে ব্যান করা হয়েছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক।

- আপনি যার কথা বলেছেন তা বুঝেছি রাজিব ভাই এবং উনাকে প্রচুর মিসও করছি আমার প্রতিটা লেখার পরে। কারন , উনি যাই বলুক (যদিও উনার বেশীরভাগ মন্তব্যই লেখার বিষয়ের সাথে প্রাসংগিক থাকত না এবং থাকত ব্যক্তিগত আক্রমণ )
ব্লগে উনি থাকা মানে ছিল বিশেষ কিছু।

তবে একটা জিনিষ আমরা সবাই ভূলে যাই যে, " এ দুনিয়াতে সবকিছু বা সবাই গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু কেউ সর্বজনীন নয়"।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.