![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনকে নিজের মত করে দেখি, ভালবাসি এবং সমালোচনা করি
কী আছে জীবনে ? এক অর্থে জীবনটা বড়ই নিরস । বেঁচে থাকাটা একঘেঁয়ে, যান্ত্রিক । কষ্ট এড়িয়ে যাবার সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টার নাম জীবন । এমন একটা খেলা, যেখানে পরাজয়ের শঙ্কা প্রতি পদে পদে । তবুও বেঁচে থাকাটা সৌভাগ্য বৈকি ! অন্তত মানুষের সুখে সুখী হওয়ার, দুঃখের সহভাগী হওয়ার একটা সুযোগ পাওয়া যায় । আবার কখনোবা প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞতাবোধ করার একটা সুযোগ ঘটে । এই যেমন- রূপালী চাঁদ, ভেসে যাওয়া মেঘ, হু হু করে বয়ে যাওয়া বাতাস, বনভূমির আলোড়ন, আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ঘুম ঘুম পাহাড়, ধ্যানমগ্ন নিস্তব্ধতা কিংবা অপিরিচিতা রহস্যময়ী সুন্দরী নারীর নির্নিমেষ চাহনি- এসব বড়ই লোভনীয়, পেলে মনে হয় জীবন বড় রোমাঞ্চকর, আহ্ কী মধুর ! কৃতজ্ঞতায় নুয়ে আসে মাথা । কিন্তু একদিন ফুরিয়ে যাবে সবকিছু এ জীবন থেকে, শেষ হয়ে আসবে সময় । আহ্, যদি কোনদিন মরতে না হতো !
দিন যায় । বছরের পর বছর ঘুরে শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত - আগে যেমন আসতো, এখনো তেমনি আসে, ভবিষ্যতেও আসবে । কিন্তু মানুষ আসে একবারই, যখন যায় চিরকালের জন্যই যায়; কেউ শুকনো পাতার মতো ঝরে বিলীন হয়ে যায়, কেউ রেখে যায় অবিনাশী স্মৃতি ।
জন্মগ্রহণমাএই মানুষ পরকালের টিকিট হাতে ছুটতে শুরু করে ঘন্টায় ষাট্ মিনিট গতিতে, কারো সাধ্য নেই রূখবার । সময় বড় প্রবঞ্চক, খোলা আইসক্রীমের মতো খাওয়া হোক বা না হোক ক্রমশ গলতেই থাকে । আর তাই বেঁধে দেওয়া সময়ের মাপকাঠিতে জীবন মহার্ঘ্য, অত্যন্ত মূল্যবান । কিন্তু তাই বলে সে ভয়ে সারাক্ষণ কুঁকড়ে থেকে পকেটে ভরে রাখবার মতো কিছু নয় । যা যাবেই তা ধরে রাখবার অতিরিক্ত আগ্রহ দেখিয়ে আসলে কোন লাভ নেই ।
জীবন চলমান । ছক বাধাঁ ও ভাঙ্গার খেলা । শত পরিকল্পনার পরও ভবিষ্যতটা অনিশ্চিত । আর তাই অদ্ভুত তার আকর্ষণ, অনাবিল তার বৈচিএ্য । এগিয়ে যেতে হবে, এগিয়ে যাবার নামই জীবন । থেমে যাবার নাম মৃত্যু ।
আসলে, মানুষের শক্তি ও সম্ভাবনাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা । তা-ই হচ্ছে মানুষের জীবন । ব্যক্তি মানুষ সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মানুষ, দিন ও দিনান্তের মানুষ । আর তাই মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে কিছু না কিছু করতেই হয় । সবাই নিজের প্রয়োজনটা বোঝে । যারা চালাক-চতুর, জীবনে তারা গুছিয়ে নেয়; যারা বোকা তারা পারে না । কিন্তু জীবনে ঠেকে শিখে সবাই । মানুষ ফিরে ফিরে নিজেকেই দেখতে চায় । তাই স্মৃতির সাগরে ডুবুরির মতো খুঁজে বেড়ায় অতীতের মণি-মুক্তা । স্মৃতি ভারাতুর হতে দারুণ ভাল লাগে ।
মানুষের প্রতি মানুষের মায়া জন্মায়, মায়া থেকে ভালোবাসাও আসে । কিন্তু শ্রদ্ধা যদি তার সঙ্গে না মেশে তবে সে ভালোবাসা এক সময় ফিকে হয়ে যেতে বাধ্য । এক জীবনে মানুষ যা কিছু অধিকার করে, সবকিছুর জন্যই নিজেকে দিয়ে মূল্য দেয়- জ্ঞান দিয়ে, শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, আবার কখনো জীবন দিয়ে ।
দুঃখ-কষ্টই জীবনের নির্যাস । দুঃখের মতো পরশ পাথর আর নেই । মেঘাচ্ছন্ন আকাশের আড়ালে তেজোদ্দীপ্ত সূর্যের মতো দুঃখের ওপারে থাকে অনাবিল সুখের হাতছানি । কে না জানে, যারা জীবনে অনেক দূঃখ-কষ্ট ভোগ করেছে তারাই সুখের প্রকৃত দাবিদার ।
পৃথিবীতে এমন মানুষও আছে, যারা কোন কিছু জমিয়ে রাখার চেয়ে বিলিয়ে দেয়াতেই আনন্দ পায় । বেঁচে থাকার মধ্যে আনন্দটাই তো সবচেয়ে বড়, যে যাতে আনন্দ পায় । রবি ঠাকুরের ভাষায়, “অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন, অন্তরে তাহার বেদনা অপার ।” আগামীকাল তার কাছেই মূল্যবান ও আকাঙ্খিত যে সুন্দর, স্বপ্নময় ও আনন্দময় দিনের পথ চেয়ে থাকে, সব হারানোর মাঝেও আশায় বুক বাঁধতে জানে । “আনন্দের সময় মানুষ দুখেঃর দিনের সম্বল সঞ্চয় করতে ভুলে যায় । আসলে তা নয়, পরিপূর্ণতা যদি ভবিষ্যৎ দৈন্যের কথা স্মরণ করতে পারে, তবে সে পরিপূর্ণ হলো কই ?” (শবনম: সৈয়দ মুজতবা আলী) ।
আজকের পৃথিবীতে ভালোবাসার, আনন্দের ও স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণার বড়ই অভাব । স্বামী বিবেকানন্দ বলেন, “The world is need of those whose life is one burning love-selfless. The love will make every word tell like a thunderbolt. Awake, awake great souls! The world is burning in misery, can you sleep?”
পৃথিবীতে স্বর্ণালী জীবন যাপনের শ্রেষ্ঠতম উপায় হচ্ছে জীবনের মাঝে আনন্দের অনুসন্ধান । আনন্দ আসে জগৎ ও জীবনের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা থেকে । আর ঈশ্বর তো ভালোবাসার মধ্যেই বিরাজমান । বস্তুর মধ্যে ভালোবাসার মন্দির গড়া যায় না । দেহ ভালোবাসার শএু । মন ও আত্মা দেহহীন, সে-তো ঈশ্বরের পাওনা ।
ভালোবাসাকে যারা অনেকটা দৈবশক্তির মতো মনে করে, তারা বিশ্বাস করে ভালোবাসায় জীবন উজ্জীবিত হয় । জীবনকে যদি শুধুমাএ একটি শব্দে করতে চাই তাহলে ‘ভালোবাসা’ হলো সেই অনিবার্য শব্দ । সমস্ত সৃষ্টিকর্মে ঈশ্বরের অসামান্য কবিত্ব ও ঋষিসুলভ ভালোবাসা আমাদের নিয়ত উদ্দীপিত করে জীবনের পরতে পরতে ভালোবাসা বুকে নিয়ে আনন্দ-সাগরে নিমজ্জিত হতে । দুঃখ-বিপদ, হতাশা-নিরাশার ধূ ধূ বালুচরে তবেই না গড়ে তোলা যাবে স্বপ্নীল পৃথিবীর প্রতিকৃতি, যার প্রাণ ভোমরা হবে ভালোবাসা ও জীবনানন্দ । আজ যারা দুঃখ-উপত্যকায় ক্রন্দসী দেবদূতের ন্যায় দিশেহারা ও ম্রিয়মান, একদিন তারা খুঁজে পাবে রংধনু-রাঙা জীবনের পথ....স্বপ্ন, আনন্দ ও ভালোবাসার পুষ্পাঞ্জলিতে ।
©somewhere in net ltd.