নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু না বলা পছন্দ করি..

আতাউর রহমান দীপু

আতাউর রহমান

আতাউর রহমান দীপু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতি কথন...

০৩ রা মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৫০

বেশি দূর নয়, ১২ কি ১৩ বছর হবে। আমাদের পুকুর পাড়ে পানিতে হেলানো মধু আম গাছ নামে যে আম গাছটি ছিল চৈত্র-বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাসে সেই গাছটি-ই ছিল আমার ঠিকানা। স্কুলে যাওয়ার আগে ও স্কুল থেকে ফেরার পরে পুরো সময় কাটতো সেই গাছের উপর শুয়ে বসে। সাথী ছিল আমার দাদু আর সঙ্গে ছিল বৈশাখি মেলা থেকে কেনা ছুরিটা।

বৈশাখী তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে ছায়ার খোঁজে আমার দাদুরও সময় কাটত ওই আম গাছটির নিচে। দাদুর ভয়ে কেউ সেই গাছ থেকে আম চুরির সাহস পেত না। অবশ্য শুধু বৈশাখ না, সব সময় দাদু আমাদের সকল আঙ্গিনায় ঘুরে ফিরে দেখতেন। যখন বৈশাখি ঝড় হাওয়া বইতো তখন অনেক পাকা আম গাছের নিচে পড়ে থাকত। বজ্রপাতের ভয়ে দাদু আমাদের আম কুড়াতে দিতনা। ঝড় বাতাস শেষ হলে তার পর আমরা আম কুড়াতাম।

পুকুরের পানিতে হেলানো মধু আম গাছটি আমার প্রিয় ছিল। প্রতিটি ডাল-পালা সিঁড়ির মত। তাতে শুয়ে থাকার মতও অনেক ডাল ছিল। যে ব্যক্তি কোন দিন গাছে উঠেনি সেও এই গাছটিতে উঠতে পারতো। গাছটির আম ছিল অনেক সুস্বাদু। যে কোন দিন সেই আম খায়নি তাকে বলে বুঝানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আকারেও আমগুলো ছিল অনেক বড়। প্রতিদিন প্রায় ২০/২৫টি আম আমি একাই খেতাম। দাদু ছুরি দিয়ে আমগুলো আমাকে কেটে দিত।

দাদুর সাথে আম খেতে খেতে আমরা চলে যেতাম স্মৃতিময় সেই অতীত গল্পে। গাছ গুলো ছিল দাদুর নিজ হাতে লাগানো। শুধু আম গাছ নয়, নারিকেল-সুপারি-জামরুলসহ সকল গাছ ছিল দাদুর নিজ হাতে লাগানো। দাদা ছিল আমার হেড মাষ্টার, তিনি পারিবারিক কাজকর্ম তেমন পছন্দ করতেন না। সকালে স্কুলে যেতেন আর ফিরতেন রাতে। পারিবারিক ব্যপারেও তিনি ছিলেন মোটামুটি উদাসীন। দাদুকেই একা সব সমাধান করতে হতো। আর দাদুর কাজে সহযোগিতা করত তার একমাত্র ভাই ও আমার আব্বু-কাকা ও ফুফুরা। এছাড়াও ছিল দাদুর গল্পের মধ্যে ছিল তার যখন তিনি স্কুলে প্রথম গিয়েছিলেন তখনার গল্প, তার যেই সকল বান্ধবী বীনা, মিনতি তাদের গল্প, তারা ভারত চলে যাওয়ার গল্প, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার গল্প, ছোট কালে তার বিয়ের গল্প, আমাদের পুকুরের গল্প.....

আজ অনেক বছর হলো দাদুকে আর সেই আম গাছের নিচে দেখি না। কয়েক বছর হয়ে গেল আম গাছটিও আর নেই। পুকুর পাড় ভেঙ্গে গাছটি মরে যাওয়ায় তা কেটে পেলা হয়েছে। গাছের পশ্চিম পাশে যে খড়ের গাদা ছিল তাও নেই। সেই স্থানে গজিয়েছে আম-কাঁঠাল-তাল গাছসহ ছোট ছোট আরো কয়েকটি গাছের চারা। জায়গাগুলো আর এক সাথে নেই আব্বু কাকারাও তা ভাগ করে নিয়েছে। দাদু আমাদের ছেড়ে চলে গেল আজ প্রায় ৪/৫ বছর। কিন্তু দাদুর স্মৃতিগুলো এখনো রয়ে গেল আমাদের সমগ্র আঙ্গিনা জুড়ে।
মধু আম গাছটি যেই স্থানে ছিল, সেই স্থানে গেলে এখনো মনে হয়, দাদু তার লাঠি দিয়ে আমাকে দেখাচ্ছে, ওই জামরুল গাছটি আমার ভাই লাগিয়েছে। ওই খানে একটি আম গাছ ছিল অনেক মিষ্টি ছিল তার আম। তার নাম ছিল দুধ আম গাছ। ওই পুকুরটা আমার বিয়ের পর খনন করা হয়েছে। ওইযে কবরস্থান দেখা যাচ্ছে ওখানেই তোর দাদাকে প্রথম কবর দেয়া হয়।

আবার ফি‌রে এ‌সে‌ছে বৈশাখ, ‌কিন্তু দাদু আ‌সে‌নি। অ‌নেক গা‌ছে আম পে‌কে‌ছে কিন্তু মধু আম গাছ‌টি হা‌রি‌য়ে গে‌ছে । সব কিছু কেমন জা‌নি ছে‌ড়ে চ‌লে যাওয়া চ‌লে যাওয়া ভাব ...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.