নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিলনদ

মাহমুদুল হাসান কায়রো

যাযাবর, অান্তর্জাতিক যাযাবর।

মাহমুদুল হাসান কায়রো › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভ্রমন ব্লগ

১৩ ই অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫১

ছেলেটির নাম এন্ড্রো (লন্ডন) মেয়েটির নাম স্কাই (অস্ট্রেলিয়া)। গতকাল তারা আসছিলো “খাজা নিজামুদ্দিনের আওলিয়ার” দরগায় রাতের কাউয়ালি আসর দেখতে। আমিও অপেক্ষা করছিলাম কাউয়ালি লাইভ করবো সেজন্য। কিন্তু কাউয়ালি শুরু হচ্ছিলো না তাই আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলো কখন শুরু হবে। আমি দরগার একজনকে জিজ্ঞেস করে জানলাম শুরু হতে দেরি হবে। তারপর দীর্ঘক্ষন কথা হলো দুজনের সাথে।

দুইজনে কাঁপল, বসবাস করে লন্ডনে। দুই মাসের জন্য বেড়াতে এসেছে ইন্ডিয়ায়। দুই মাসের কথা শুনে আমি এক্টু ভড়কে গেলাম। এত লম্বা ট্যুর....?! জিজ্ঞেস করতে এন্ড্রো বললো শুধু আমরা নই, আমাদের প্রায় ২৬ জনের গ্রুপ আসছি ইন্ডিয়ায়। একেক গ্রুপ একেক জায়গায় আছে। রাজস্থান, পান্জাব, হারিয়ানা, আগ্রা, মুম্বাই, কলকাতা এভাবে চষে বেড়াচ্ছি সমগ্র ইন্ডিয়া।
উল্লেখ্য যে, এরা কিন্তু খুব বড়লোক ট্যুরিস্ট নয়। খুঁজে খুঁজে সস্তা হোটেল, সস্তা খাবার, সস্তা ট্রান্সপোর্ট ব্যবহার করেন এরা।

একবার চিন্তা করুন, যদি এক লক্ষ এমন টুরিস্ট দেশের আনাচে কানাচে ঘুরে বেড়ায় এবং প্রত্যেকে মাসে ৫০০ ডলার করে খরচ করে তাহলে এই বিশাল অংকের টাকাটা কাদের পকেটে যাবে? যাবে দেশের অতি সাধারণ মানুষের পকেটে। আমাদের বাংলাদেশে আমরা কেবল দেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করার বিভিন্ন পরিকল্পনা করি। এতে কি হয়? নিজেদের পয়সা নিজেদের মধ্যেই ঘুরাঘুরি করে। কিন্তু বিদেশী ট্যুরিস্ট যখন দেশে আসবে তখন বাহির থেকে পয়সা এসে আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পকেটে ঢুকবে। বছর শেষে সেটা যোগ হবে জাতীয় অর্থনিতীতে।

আমার বিভিন্ন দেশ ভ্রমনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি এইরকম করে হাজার হাজার কাঁপল বের হয় বিশ্ব ভ্রমনে। একা হচ্ছে রিয়েল ট্যুরিস্ট। এরা কখনো নাইট ক্লাব, ড্রিংস, সেক্স কিংবা ঝলকানো আলোর জন্য ঘুরতে বের হয় না। এরা বের হয় পৃথীবি দেখতে, পৃথিবীর মানুষের সাথে মিশতে, মানব সমাজকে জানতে, বিভিন্ন কালচার থেকে শিখতে। এরা উঁচু অট্রালিক দেখতে পছন্দ করে না, এরা পছন্দ করে বড় তাল পাতা দিয়ে তৈরি মাটির ঘড় দেখতে। এরা নাইট ক্লাবে ডিজের মিউজিকের চেয়ে বেশি শুনতে চায় বিভিন্ন অঞ্চলের ফক মিউজিক। এরা পছন্দ করে শান্ত গ্রাম, নদীর ঢেও, মুরগীর বাচ্চা, রাস্তার ধারে সারি ধরে শুকিয়ে দেয়া পাটের আঁশ। এরা ঘুরতে এসে সুইমিং পুলে সাঁতার কেটে সময় নষ্ট করতে পছন্দ করে না, এরা দেখতে চায় বয়ে চলা নদী, কষ্ট করে উঠতে চায় পাহাড়ের চুড়ায়। এরা দেখতে চায় সাগর, দেখতে চায় বন। দেখতে চায় চা বাগান। দেখতে চায় বনের ভিতর মুক্ত পাখ পাখালি ও বন্য প্রাণীর দাপিয়ে বেড়ানো।

এন্ড্রোর খুব পছন্দ ফোক সং। সে যে রাজ্যেই যায় সেখানে ফোক সংগিতের আসরে যায়। তার মুবাইল থেকে কয়েকটা ভিডিও দেখালো আমাকে। আমি সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আমার মুবাইল থেকে গত জানুয়ারী মাসের ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ফোক ফিস্টের বেশ কিছু ভিডিও দেখালাম। খুশিতে লাফিয়ে উঠলো এন্ড্রো। চিৎকার করে বললো: ওয়াও, এত ফ্যান্টাস্টিক ফোক ফিস্ট তো কোথাও দেখিনি। আমি ইংলিশ, উর্দু, হিন্দি সহ সব ভিডিও গুলো দেখালাম। তারপর এই ফেস্টিবল সমন্ধে ডিটেইল জানালাম। তারা দুজনেই আগ্রহি হয়ে বললো এই ফেস্টিবল যদি এই মাসে কিংবা আগামী মাসের শুরুতে হতো তাহলে ১০০% নিশ্চিত আমরা সবাই যেতাম, তোমার সাহায্য নিয়েই যেতাম। কিন্তু জানুয়ারী তো অনেক দেরি।

তখন আমি তাদের অন্য প্ল্যান দিলাম। ব্রিফ করলাম কক্সবাজার সমন্ধে। ছবি দেখালাম, ভিডিও দেখালাম। ব্রিফ করলাম সিলেট, মোলভি বাজার, চিটাগাং, ও সুন্দরবন সমন্ধে। সুন্দর বনের ব্যাপারে তারা আগেই জানতো বাকি আর কিছুই জানে না। গুগল করে এই সব অঞ্চলের সুন্দর সুন্দর ছবি গুলো দেখালাম। আমি তাদের মোটামুটি ১৫ দিনের প্যাকেজ বানিয়ে দিলাম। বললাম জানুয়ারিতে ১৫ দিনের জন্য বাংলাদেশে আসতে পারলে ৩ দিনের ফোক ফিস্ট ইনজয় করতে পারবা আবার এই সব নেচারাল সৌন্দর্য ও উপভোগ করতে পারবা। তারা রাজি হয়ে গেলো। এন্ড্রো বললো আমি প্রফেসর মানুষ, আমার লিডে বাকিরা চলে। কাজেই কোন দুর্ঘটনা না ঘটলো জানুয়ারিতে আসছি তোমাদের দেশে। এবং সুযোগ হলে তোমার সাথেও দেখা হবে।

আমি মনে করি এই ধরনের রিয়েল ট্যুরিস্টদের আকৃষ্ট করার মত যথেষ্ঠ রসদ আমাদের আছে। চট্রগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, বান্দরবান, খুলনা, মৌলভি বাজার এই অঞ্চটিকে বিদেশি পর্যটকদের জন্য পুন্যভূমি করে গড়ে তুলা সম্ভব। সবাই মনে করে নিরাপত্তার সমস্যা আছে, কিন্তু আমি সেটা মনে করি না। টুকটাক সমস্যা সব দেশেই আছে। ইন্ডিয়ায় ও এই সাদা চামড়ার লোকেরা রাস্তায় বের হলে মানুষ হা করে তাকিয়ে থাকে। মেয়েদের এক্টু খোলামেলা পোশাক দেখলে অনেকে টিজ করে তাই বলে কি ইন্ডিয়ায় বিদেশি ট্যুরিস্ট আসে না? লক্ষ লক্ষ ট্যুরিস্ট আসে। এক্টু প্ল্যান করলে যেটা আমাদের দেশেও আনা সম্ভব।

বিগত কয়েক বছর যাবত দেখতেছি আমাদের সরকার বিদেশি পর্যটক আকৃষ্ট করতে বেশ হৈচৈ করছে। বেশ বড় বড় বাজেট রাখছেন, কিন্তু তার আওটপুট কোথায়? একেবারে জিড়ো। এর থেকে বুঝা যায় সব পয়সা আম্লাদের পকেটে চলে যাচ্ছে নয়তো পরিকল্পনায় রয়েছে বিশাল ভুল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.