নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্ন ও বাস্তবতাকে পাশাপাশি নিয়ে চলা নিতান্তই সাধারন একজন মানুষ।

ফাহাদ জুয়েল

ফাহাদ জুয়েল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুক রিভিউ : সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ\'র বিখ্যাত উপন্যাস \'কাঁদো নদী কাঁদো\'

২০ শে আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:৪৭


সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ। এমন একজন প্রতিভাবান কথাশিল্পী যিনি সাহিত্যের প্রচলিত বৈশিষ্ট্যকে অতিক্রম করে এমন এক শিল্পরীতি ও দৃষ্টিভঙ্গি সমৃদ্ধ মাত্রার সংযোজন করেছেন যা অভিনব ও স্বতন্ত্র, এবং সর্বোপরি তা বাংলা কথাসাহিত্যে নতুন ধারা হিসেবে গৃহীত ও বলিষ্ঠ ধারায় বহমান। পরবর্তীতে এ ধারায় চলেছেন শহীদুল জহির, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সহ অনেকে।

বর্তমান সময়ের অনেক লেখকদের প্রতিবছর অন্তত একটা করে বই বের করার প্রবণতা দেখতে পাই। এবং এ ব্যাপারে আমার একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা হচ্ছে- 'ওনাদের হয়তোবা সন্দেহ প্রতিবছর বই না বের করতে পারলে তাঁরা সাহিত্য জগত থেকে হারিয়ে যাবেন। যে কারণে তাঁরা জোর করে হলেও কিছু একটা লিখেন এবং তা বই আকারে প্রকাশ করেন। সবশেষে, সে বইয়ের বিক্রয় বাড়ানোর উদ্দেশ্যে ভক্তকুল নিয়ে এমন সব প্রচারণা কৌশলের আশ্রয় নেয় যা দেখে সচেতন পাঠক সমাজ আগামী দিনের বাংলাসাহিত্য নিয়ে কিছুটা শংকাবোধ করেন।'

অথচ ওনারা যদি তাঁদের অগ্রজদের জীবনী সমন্ধে সচেতন থাকতেন তাহলে দেখতে পেতেন বহু লেখক তাদের সমগ্রজীবনে হাতেগোনা কয়েকটিমাত্র বই লিখেও বাংলা কথাসাহিত্যে স্থায়ী আসন লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন।

তাঁদের মধ্যে আমরা বিশেষভাবে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারি। দীর্ঘ বিশ বছরে তিনি মূলত তিনটি উপন্যাস লিখেছেন- লালসালু ১৯৪৮, চাঁদের অমাবস্যা ১৯৬২, কাঁদো নদী কাঁদো ১৯৬৮। এছাড়া অবশ্য প্রবাসের সংকট নিয়ে তাঁর How does one ciok Beans নামে একটি ইংরেজি উপন্যাসও রয়েছে। তাঁর সব উপন্যাসে যা কমন বা বহমান তা হচ্ছে 'অস্তিত্ববাদ'। তবে তাঁর যে উপন্যাসটি বাংলা কথাসাহিত্যের ধারাকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছে এবং অনন্য বৈশিষ্ট্য দান করেছে তা হল 'কাঁদো নদী কাঁদো'।

এ উপন্যাসের শিল্প কৌশলের মূল ভিত্তি হচ্ছে চেতনাপ্রবাহরীতি বা Stream of consciousness. এই চেতনাপ্রবাহরীতি বলতে বুঝায় এমন এক বর্ননাত্মক কৌশল যা ব্যক্তিক বা সমন্বিত চেতনায় বহমান বিচিত্র চিন্তা ও অনুভবকে কথাসাহিত্যে রূপ দেয়। এ রীতিতে গল্পের কাহিনী আখ্যানধর্মী নয়, বরং কাল-পারম্পর্যহীন ও মনোবিশ্লেষণাত্মকধর্মী হয়।

'কাঁদো নদী কাঁদো'র কাহিনী শুরু হয়েছে স্টিমারে বসা দুই কথকের পরোক্ষ সাক্ষাতকারের মাধ্যমে। 'তবারক' ও 'আমি' - এই দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে সমগ্র কাহিনী বিস্তার লাভ করেছে। এই দুই ব্যক্তির কথন, বর্ণনা ও চিন্তনের মধ্য দিয়েই আমরা উপন্যাসের অন্যসব চরিত্রের সাথে পরিচিতি লাভ করবো।

পুরো উপন্যাসেই তবারক বলছে কুমুরডাঙা শহর, বাঁকাল নদী ও তীরবর্তী অধিবাসীদের জীবনযাত্রা ও তৎকালীন সময়ের নানা বর্ণনা। কুমুরডাঙা জীবনের ইতিহাস, বাঁকাল নদীতে চর জেগে উঠার ফলে স্টিমার বন্ধ হয়ে বস্তুগত জীবনের ক্ষয়ক্ষতির ইতিহাস, নানা পেশার মানুষের জীবনের বিশ্বাস, সংস্কার, দ্বন্দ্ব ও হতাশা থেকে প্রত্যাশায় উত্তরণের ইতিহাসও বর্ণিত হয়েছে তবারকের দৃষ্টিকোণ থেকে।

অন্যদিকে 'আমি' নামক কথকের ভাবনায় ফুটে উঠেছে তার এক প্রিয় আত্মীয় মুস্তফার কথা। লেখক এই দুই কথকের মাধ্যমেই কুমুরডাঙার মানুষ ও মুস্তফার যোগসূত্র ঘটিয়েছেন। মুস্তফার পিতা মিথ্যাবাদী ও অতিশয় দুর্বৃত্ত প্রকৃতির। মুস্তফা বহু প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজের চেষ্টায় উচ্চশিক্ষা লাভ করে এবং কুমুরডাঙার ছোট হাকিম হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়। এবং সেখানকার প্রাক্তন এক উচ্চপদস্থ কর্মচারীর মেয়ের সাথে তার পরিচয় সূত্রে প্রণয় ও এক পর্যায়ে বিয়ে ঠিক হয়। বিয়ের কথা মুস্তফা চিঠির মাধ্যমে নিজ বাড়িতে জানায়। কিন্তু সে চিঠি বাড়িতে পৌঁছানোর পর সেখানে ঘটে যায় এক করুণ কাহিনী।

মুস্তফার এ কাহিনীটা উপন্যাসে থাকলেও মূল বিষয়বস্তু ছিল নদীতে চর পড়া প্রসঙ্গে এবং সেখানকার জনজীবনে এর প্রভাব। জীবনজিজ্ঞাসা বা দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনাপ্রবাহরীতি সহ আঙ্গিকের নানা মাত্রার কারণে এই উপন্যাস বাংলা কথাসাহিত্যে এক প্রভাবশালী ও অনুসরণযোগ্য স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

-
বইয়ের নামঃ কাঁদো নদী নদী
লেখকঃ সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্
প্রকাশনীঃ মাটিগন্ধা ( এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি প্রকাশনীর বইও পাওয়া যায় বাজারে)
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৭০ টাকা (প্রকাশনীভেদে দামের তারতম্য হতে পারে)।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর বিখ্যাত উপন্যাস কাঁদো নদী কাঁদো’র উপর সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনাটি অতি মনোরম ও সুখপাঠ্য হয়েছে । তাঁর লেখা কালজয়ী তিনটি উপন্যাস যথা লালসালু, চাঁদের অমাবশ্যা ও কাঁদো নদী কাঁদো পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে । ১৯৬৮ সনে আমি নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। কিন্তু সে সময় কালেও উপন্যাস পেলে তা সারারাত জেগে হারিকেনের আলোতে এক শুয়া বসায় পাঠ শেষ করতাম । পাঠে বিপত্তি ঘটত শুধু সারারাত জ্বলে জ্বলে হারিকেনের তেল ফুরিয়ে গেলে । যাহোক, এই বইটির উপরে আপনার পর্যালোচনা পাঠ করার সময়ে আমার স্মৃতিতে মনের অজান্তই ভেসে উঠে সেই বাল্যকালের কথা । তাই এপর্যায়ে আরো দু একটি কথা না বলে পারছিনা , আমার বড় কাকা ছিলেন বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, শেষে অধ্যক্ষ হিসাবে সরকারী আনন্দ মোহন কলেজ থেকে অবসরে যান। এখানে প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ্য যে আমিও আনন্দ মোহন কলেজ হতে ইন্টারমিডিয়েট করেছি, সে সময় বাংলা সাহিত্যের ক্ষ্যতিমান অধ্যাপকদের কাছ হতে শুনছি যে বিখ্যাত সাহিত্যক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ এই কলেজের একজন কৃতিমান ছাত্র ছিলেন, যিনি ডিসটিংশন সহ বিএ পাশ করেছিলেন এই কলেজ হতেই , শুনে গর্বে বুক ভরে যেত । ১৯৬৮ সনে 'কাঁদো নদী কাঁদো' প্রকাশের পর তা বাজারে আসার পরে একদিন দেখি কাকা হাতে করে একটি বই নিয়ে ঘরে এসেছেন । টেবিলের উপর সেটা রাখার পরে এক ফাকে গিয়ে দেখি এটি একটি উপন্যাস, নাম কাঁদো নদী কাঁদো । অপেক্ষার পালা, কখন এটা কাকার পাঠ শেষ হবে । দিন দুয়েক অপেক্ষা করে দেখলাম বইটি কাকার টেবিল হতে বই এর সেলফে স্থান পেয়েছে । যায় কোথায়, চুপি চুপি নিয়ে এসে রাতে শুরু হল পাঠ, সারা রাত কভার, বই পড়া শেষ। মনে হল যেন কাহিনীর সাথে নীজেই মিশে গেছি ।

পরম শ্রদ্ধেয় বড় কাকার প্রয়ানের পর উনার বিশাল সংগ্রহশালার কিছু কিছু বই এখন আমার বুক সেফফে স্থান পেয়েছে । আপনার এই পর্যালোচনা পাঠের সময় প্রায় অর্ধ শতাব্দি পরে বুক সেলফ হাতরিয়ে ব্‌ইটির উপর আবার একবার চোখ বোলালাম। সেই ছোট সময়ের পড়া কাহিনী প্রায় ভুলেই গিয়েছিলাম । এখন বইটি পাঠ ও সে সাথে আপনার সরস পর্যালোচনায় 'কাঁদো নদী কাঁদো' কে চেতনা প্রবাহরীতির একটি বলিষ্ট উপন্যাস হিসাবেই মানসপটে ভেসে উঠে । এই পরিনত বয়সে এটি পাঠের পর দৃঢ় প্রতিতি হল আঙ্গিক প্রকরণে বইটিতে পাশ্চাত্যের প্রভাব কিছুটা থাকলেও এর সমাজ জীবন, পরিবেশ ও চরিত্রাদি একান্ত ভাবেই আমাদের স্বদেশীয়। উপন্যাসের চরিত্র এক স্টিমারযাত্রী তবারক ভুঁইয়ার মুখে বিবৃত কুমুরডাঙ্গার ছোট হাকিম মুহাম্মদ মুস্তফার জীবনালেখ্য ও অন্তর্জীবনের ইতিকথা সুন্দরভাবে উঠে এসেছে উপন্যাটিতে । একদিকে নিয়তি তাড়িত মুহাম্মদ মুস্তফার করুণ জীবনোপাখ্যান, অপরদিকে শুকিয়ে যাওয়া বাকাল নদীর প্রভাব তাড়িত কুমুরডাঙ্গার মানুষের ব্যতিব্যস্ত জীবনচিত্র । একটি সল্পপরিসর উপন্যাসে নদীকে ঘিরে মানুষের জীবন ও নিসর্গ, বাস্তব ও পরাবাস্তব, মানব চৈতন্য ও অবচেতনা, বিশ্বাস ও সংস্কার সবকিছু মিলে অস্তিত্ববাদ ও নিয়তিবাদের সমন্বয়ে এক অভিনব ও জটিল শৈল্পিক নৈপুণ্য সমৃদ্ধ কাঁদো নদী কাঁদো উপন্যাসখানি নিঃসন্দেহে সে সময়কালে বাংলা উপন্যাসে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছিল, যার অনুরনন এখনো সমানতালে প্রবাহমান আছে নদী অববাহিকা অঞ্চলের মানুষের জীবনে । এখনকার সাহিত্য প্রেমিকগন এই উপন্যাস পাঠ না করলে নদীপাড়ের মানুষের জীবন অধ্যায়ের অনেক কিছুই মিস করবেন বলে মনে করি ।

প্রিয় সাহিত্যিকের উপরে লেখা এই সুন্দর পর্যালোচনাটিকে যাবার বেলায় প্রিয়তে নিয়ে গেলাম ।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.