![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেষ পর্যন্ত মানবতা বিরোধী অপরাধে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ও সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাসির হুকুম হয়েছে।এতে অবশ্য কোন চমক নেই।কেননা,যদি ফাসির হুকুম না হত,তাহলে গনজাগরণ মঞ্চ আন্দোলন করত।ফাসি ফাসি ---ফাসি চাই,সাকা চৌধুরীর ফাসি চাই।তাতে অবশ্যই আদালত অবমাননা হতো না।কেননা,আদালত অবমাননা,শুধু মাত্র সরকারের পছন্দ না হলেই হয়।কোন দাবী যদি সরকারের পছন্দ হয়,তাহলে এই সরকারের আমলে আদালত অবমাননার মামলা হতে দেখলাম না!কিন্তু সরকারের বিপক্ষে গেলে আদালত অবমাননা মামলা!!!
মানবতা বিরোধী অপরাধের জন্য বিচারের সাথে আমাদের আবেগ জড়ীত।রয়েছে ৩০ লক্ষ্য শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা।এই বিচার মানি ৩০ লক্ষ্য শহীদের প্রতি সন্মান দেখানো।কিন্তু আশ্চার্য হলো এই যে, এই বিচারটাকেও আমরা প্রশ্নে সন্মুখিন করেছি।প্রথমে শুধুমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করে!কেন দেশে কি বিরোধী রাজনীতি করেনা এমন একজনও যুদ্ধ অপরাধী ছিল না?
তারপর সরকার শুরু করল যুদ্ধ অপরাধীদের নিয়ে রাজনৈতিক ব্যবসা!কিছু হলেই যুদ্ধ অপরাধীদের বাচানোর ষড়যন্ত্র!সবচেয়ে বড় ব্যাপার বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত রাজনৈতিক দল,যাদের প্রতিষ্ঠাতা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা,সেই দলকে দিল যুদ্ধ অপরাধীর খেতাব।ফলে মানুষ এই বিচার নিয়ে প্রথম থেকেই ২ ভাগ হয়ে গেল।
পরবর্তীতে স্ক্যাইপি কেলেংকারীর মাধ্যমে পুরো বিচার প্রক্রিয়াকেই বিতর্কিত করে ফেলল!সর্বশেষ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ১৭২ পৃষ্ঠার রায়ের ১৬৭ পৃষ্ঠাই অনলাইনে একদিন আগেই প্রকাশে পায়।অভিযোগ উঠেছে,এই রায় আইন মন্ত্রনালয়ে লেখা হয়েছে!সরকারও পরবর্তীতে স্বীকার করল,রায় সত্যি আগে প্রকাশ হয়ে গেছে।এরপর মানুষের কি কোন ভাবে এই বিচারে আস্থা রাখার অবস্থা আছে?এই ব্যাপারে প্রবীন সাংবাদিক এবিএম মুসার মতে,রামের জন্মের আগে রামায়ণ রচনার কাহিনীর মতো ঘটনা।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বক্তব্য অনুসারে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় তিনি ছিলেন পাকিস্থানে।তার সাথে তখন এক সাথে ছিল হাইকোর্টের আরেকজন বিচারপতি।তিনি তাকে সাক্ষি হিসেবে চেয়েছেন।অন্যদিকে সেই বিচারপতি সাক্ষ্যি দেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে অনুমতি চেয়েছিলেন।কিন্তু তাকে সাক্ষ্য দিতে দেওয়া হয়নি!হাইকোর্টর সেই বিচারপতির নাম হাসনাইন।যে ৪টি অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়েছে সেই ৪টি অভিযোগে বর্ণিত ঘটনাবলী ঘটেছে ১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল এবং ১৭ এপ্রিল। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ তিনি পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার জন্য পাকিস্তান চলে যান। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে তার সাথে দেখা হয় বর্তমানে হাইকোর্টের সিটিং জাস্টিজ শামীম হাসনাইনের সাথে। জনাব শামীম হাসনাইন পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহপাঠী ছিলেন।
পুরো বিচার প্রক্রিয়াই এহয়েছে বিতর্কিত।এর ফলে বিএনপির আইনজীবীরা সংবাদ সন্মেলন করেন।এই রায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপির ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং বিএনপির ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, রায় ঘোষণার আগেই সমস্ত রায় সবাই পেয়ে গেছেন। অতীতে কোন দিন এ রকম শুনিনি। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ে নাকি মে মাস থেকেই রায় লেখা শুরু হয়ে গেছে, যখন এই মামলার রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী চলছিল। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এই ব্যাপারে সরকার ও ট্রাইব্যুনালের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। না হলে সন্দেহ আরো দৃঢ় হবে। তিনি একে নজিরবিহীন উল্লেখ করে বলেন, আমরা কোন দিন আশাও করিনি, রায় ঘোষণার আগে রায় প্রকাশিত হয়ে যায়। এ ধরনের নজিরবিহীন ঘটনা বাংলাদেশে ঘটছে। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে সাফাই সাক্ষীর সুযোগ দেওয়া হয়নি, এতে তার অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এই বিচারের আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করা হয়নি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব বলেন, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বাবা ১৯৭২ সালে দালাল আইনে কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। কিন্তু সে সময় যুদ্ধাপরাধী তালিকায় সালাউদ্দিন কাদেরের নাম ছিল না। এতো দিন পর্যন্ত তার নাম আসেনি। তিনি বলেন, তিনি (সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী) মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতেন। তার ক্লাসমেট এখন হাইকোর্টের একজন বিচারপতি। সে কথা জানিয়ে তার পক্ষে সাক্ষী দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু তাকে সে সুযোগ দেয়া হয়নি। খন্দকার মাহবুব বলেন, এই বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিচার। কাল্পনিক কাহিনী সাজিয়ে মামলা তৈরি করা হয়েছে। এই প্রহসনের সাথে যারা সম্পৃক্ত এই বাংলার মাটিতে একদিন তাদের বিচার হবে।
এছাড়া মঙ্গলবার রাতে একুশে টেলিভিশনে সাবেক রাষ্ট্রদূত বিএনপির অ্যাডভোকেট নাসিরুদ্দিন এবং জিটিভিতে বিএনপির অপর একজন আইনজীবী এই রায়ের আইনগত ও পদ্ধতিগত ত্রুটি বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা করেন।
এই রায়ের ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড:আসিফ নজরুল চ্যানেল আ্ইতে বলেন,এই রায় হয়েছে পারসেপশানের ভিত্তিতে।আমরা ধারণা করি সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী একজন খারাপ লোক।আর এই খারাপ লোককে যদি আমরা ফাসিতে ঝুলাতে চাই,সরাসরি ফাসি দিয়ে দিলেই হতো।কিন্তু পারসেপশানের মাধ্যমে কখনও বিচার হয় না।
এই ব্যাপারে বিডিহটনিউজের সাথে আলাপকালে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দাবীদার, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দলের ঢাকা মহনগর উত্তরের সভাপতি রিয়েল রোমান বলেন,যুদ্ধ অপরাধের বিচারের দাবী আমাদের প্রানের দাবী।কিন্তু এই জনপ্রিয় দাবীকে পুজি করে আওয়ামীলীগ এটিকে প্রতিপক্ষকে ঘায়েলের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।আমরা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।তিনি আরো বলেন,এই ট্রাইবুনাল একের পর এক বিতর্ক জন্ম দিয়ে যাচ্ছে।সর্বশেষ রায়ের কপি আইন মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে ফাস হওয়ার মাধ্যমে বিচারের গ্রহণযোগ্যতার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকেছে।
তারপরও আমরা আশাহত হবো না।আমরা আশা করব,সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এই রায়ের ভুল ত্রুটি গুলো পর্যবেক্ষণ করে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি রায় দিবে।
©somewhere in net ltd.