![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিডিহটনিউজ এক্সক্লুসিভ: শেয়ার বাজারে তালিকা ভূক্ত ভ্রমণ ও অবকাশ খাতের ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী কয়েক শ কোটি টাকা দূর্ণিতি করে চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করে সটকে পড়েছেন।
জালিয়াতি করে উড়োজাহাজ কেনার হোতা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের সদ্য পদত্যাগী চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী।
প্রচলিত আইন অনুযায়ী উড়োজাহাজ কেনার কথা থাকলেও সব নিয়ম ভেঙে জালিয়াতি করে উড়োজাহাজাজ কেনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন ক্যাপ্টেন তাসবির। শুধু তাই নয়, উড়োজাহাজ কেনার নাম করে অনিয়মের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ৪১৫ কোটি টাকা তোলার পাশাপাশি ২০ বছরের পুরনো উড়োজাহাজ কিনেছেন আন্তর্জাতিক দর থেকে অনেক বেশি দামে। এতে দেশ থেকে বাইরে অর্থপাচারের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে।
প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী, খুচরা যন্ত্রাংশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ দরপত্র ছাড়া শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের একক সিদ্ধান্তে উড়োজাহাজ কিনেছে।
ইউনাইটেড এয়ারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে দুদক দেখতে পায়, বিমান সংস্থাটি ২০ বছরের পুরনো উড়োজাহাজ কিনেছে আন্তর্জাতিক দর থেকে অনেক বেশি দামে। এছাড়া একই সময় কেনা একই মডেলের উড়োজাহাজ তারা কিনেছে ভিন্ন ভিন্ন দামে।
যেমন- এমডি-৮৩ মডেলের তিন জাহাজের মূল্য ধরা হয়েছে যথাক্রমে ৭৬ লাখ ২০ হাজার ডলার, ৮৮ লাখ ২৪ হাজার ৫৮০ ডলার এবং ৭৬ লাখ ডলার। অন্য তিনটি মডেলের ক্ষেত্রেও একই রকম করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচার করা হয়েছে।
ওই সময় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কোম্পানির উড়োজাহাজের সংখ্যা ছিল আটটি। কিন্তু মূল্য সংবেদনশীল তথ্য হিসেবে বিনিয়োগকারীদের জানানো হয় চারটির তথ্য। বাকি চারটির তথ্য তারা গোপন করে। এর মাধ্যমে তারা এসইসির আইন লঙ্ঘন করে।
এই অনিয়মের তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে দুদক ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে জানতে চেয়েছিল। পরবর্তীতে তারা দুদককে জানায়, কোম্পানির লিখিত কোনো ক্রয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়নি। ক্রয় নীতিমালা প্রনয়ণের কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
নীতিমালা প্রণয়ন না হলেও কোম্পানির প্রয়োজনে ৯টি উড়োজাহাজ কেনা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে এমডি-৮৩ মডেলের তিনটি উড়োজাহাজ। এতে ব্যয় হয় দুই কোটি ৪০ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮০ ডলার। দুইটি এয়ারবাস কেনা হয় দুই কোটি ৬২ লাখ ৫৫ হাজার ডলারে। দুটি এটিআর উড়োজাহাজ কেনা হয় এক কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ডলারে এবং ড্যাশ-৮ মডেলের দুটি উড়োজাহাজ কেনা হয় এক কোটি এক লাখ ২০ হাজার ৭৯৬ ডলারে।
এই ৯টি ঊড়োজাহাজ কী পদ্ধতি অনুসরণ করে ক্রয় করা হয়েছে -এ ব্যাপারে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী জানান, গত ২০০৮ সালের ৩১ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদ উড়োজাহাজ ও উড়োজাহাজের খুচরা যন্ত্রাংশ ক্রয় করার জন্য তাকে ক্ষমতা দেয়।
দুদকের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রচলিত রীতিনীতি অনুযায়ী, খুচরা যন্ত্রাংশ প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রাপ্ত সর্বনিম্ন দরদাতার কাছ থেকে ক্রয় করা হয়ে থাকে। কিন্তু ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষ উড়োজাহাজ ক্রয়ের কোনো প্রকার দরপত্র আহ্বান ছাড়াই শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের দেওয়া ক্ষমতা বলে একক সিদ্ধান্তে ৯টি উড়োজাহাজ কেনে।
তাছাড়া এসব উড়োজাহাজ জ্বালানি সাশ্রয়ী নয় এবং উড়োজাহাজ চলাচলের উপযুক্ত করতে সি-চেক, ইঞ্জিনিয়ার ও কেবিন ক্রুদের প্রশিক্ষণ -সবকিছু নতুন করে করতে হয়েছে। প্রতিটি উড়োজাহাজ ক্রয় প্রক্রিয়াটি প্যাকেজ আকারে ফিনিক্স এয়ার ক্রাফট লিজিং থেকে নেওয়া হয়। কিন্তু কোম্পানির আর্থিক বিবরণীতে উড়োজাহাজ ক্রয় এবং এর যন্ত্রাংশসহ আনুষঙ্গিক খরচ আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক বিমান বাহিনীর প্রকৌশল পরিদপ্তরের এক উইং কমান্ডারকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। তিনি অনুসন্ধানে উড়োজাহাজ কেনার ক্ষেত্রে বড় ধরনের দুর্নীতি খুঁজে পেয়েছেন। সমূহ বিপদ আঁচ করতে পেরেই পদত্যাগ করে সটকে পড়েছেন ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল ইসলাম চৌধুরী।
নানা অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তার এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করছে খোদ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অনিয়ম করে শেয়ারবাজার থেকে ৪১৫ কোটি টাকা তুলে নেওয়া, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) এর কাছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা পাওনা না দেওয়া, মালিকানা দ্বন্দ্বসহ নানা অভিযোগে এমনিতেই বিপদগ্রস্থ ছিলেন তাসবিরুল ইসলাম।
শুধু তাই নয়, নিয়ম না মেনে যাত্রীদের জীবন ঝুঁকির মুখে ফেলে বিপজ্জনকভাবে ফ্লাইট পরিচালনার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথমবার শেয়ারবাজার থেকে ৪১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর সম্প্রতি নতুন করে আবার টাকা তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু আগের অনিয়ম ও প্রতারণার কারণে স্টক একচেঞ্জ ও বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) তার পুনরায় অর্থ তোলার পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত শেয়ারবাজার থেকে আর টাকা তোলার সুযোগ হাতছাড়া হওয়াতেই তাসবির পদত্যাগ করে সটকে পড়েছেন। এই খাত থেকে তাসবির যে পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন আর নতুন করে কিছু করার সুযোগ নেই। এ কারণেই চতুর তাসবির নিজে থেকে সরে গিয়ে নিজেকেই রক্ষা করেছেন।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরেই এয়ারওয়েজের ১১টি উড়োজাহাজের ৫টি অচল ছিল। যখনই কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয় তখন একটি উড়োজাহাজের যন্ত্রাংশ খুলে আরেকটিতে লাগিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলতো ফ্লাইট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুটি এয়ারবাসের একটি সবসময়ই অচল থাকে। বর্তমানে পাঁচটি এমডি-৮৩ এর মধ্যে তিনটি এবং তিনটি এটিআর-৭২ উড়োজাহাজের একটি অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। এর মধ্যে একটি এটিআর-৭২ দুই মাসের বেশি সময় ধরে পড়ে আছে। ইঞ্জিন না থাকায় এটি সচল করা যাচ্ছে না। আর কখনোই এক সঙ্গে দুটি এয়ারবাস-৩১০ উড়োজাহাজ সচল থাকে না।
বিমান চলাচল খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইউনাইটেড এয়ার একদিকে রুট চালু করছে, অন্যদিকে তা বন্ধ করছে। এভাবেই চলছে এয়ারলাইন্সের রুট প্ল্যানিং। গত কিছুদিনের মধ্যে ইউনাইটেড এয়ার ঢাকা-সিঙ্গাপুর, ঢাকা-দুবাই ও ঢাকা-ব্যাংকক ফ্লাইট বন্ধ করে।
অভিযোগ রয়েছে, মূলত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ ১১টি উড়োজাহাজ দেখিয়ে শেয়ার ছেড়েছে। যে কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা এসব উড়োজাহাজ বহর থেকে সরিয়ে ফেলতে পারছে না।
এ বিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের মুখপাত্র ও অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) কামরুল ইসলামকে সারাদিন একাধিকবার মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি।
ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর পদত্যাগের পর মঙ্গলবার এয়ারলাইন্সে অস্থিরতা তৈরি হয়।
এ অবস্থায় এয়ারলাইন্সের বৈমানিকেরা ক্যাপ্টেন তাসবিরের পদত্যাগের পরেও যাতে সবকিছু ঠিকমতো চলে, কর্মীদের বেতনভাতা পেতে যাতে কোনো সমস্যা না হয় তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈমানিক ও কর্মীদের মধ্যে সভা হয়।
এদিকে মূলত সোমবার এয়ারওয়েজের বার্ষিক সাধারণ সভায় সদ্য পদত্যাগী ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরী পরিচালকদের তোপের মুখে পড়েন। যে কারণে সোমবার সন্ধ্যার বার্ষিক সভা শেষ হতে মধ্যরাত লেগে যায়। ওই সভাতেই তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হয়।
এদিকে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহতাবুর রহমান বুধবার নতুন দায়িত্বে যোগদান করছেন বলে এয়ারওয়েজ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের কাউন্টার বন্ধ করে পালিয়েছে কর্মকর্তারা। পুলিশও তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। ফ্লাইট বাতিল করার পরপরই কর্মকর্তারা তাদের কাউন্টার বন্ধ করে দেন।
এদিকে কাউন্টার বন্ধ থাকার ফলে বিভিন্ন দেশে যাওয়া ২ শতাধিক যাত্রীর যাত্রা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। তারা বিমানবন্দরের ভেতরেই বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের সবকটি ফ্লাইট বাতিলের ঘোষণা দেয়। এর পরপরই কাউন্টারটি বন্ধ করে দেয় কর্মকর্তারা। কিন্তু যাত্রীরা তাদের পূর্ব নির্ধারিত ফ্লাইট অনুযায়ী বিমানবন্দরে আসেন। কিন্তু সি-রোতে অবস্থিত ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাউন্টার বন্ধ দেখার পরপরই তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন।
এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আসমা আরা জাহান বলেন, রাত সোয়া ৮টার সময় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট দোহা মাসকট যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে কর্মকর্তারা তাদের কাউন্টার বন্ধ করে দেন। যাত্রীরা কাউন্টার বন্ধ দেখার পর বিক্ষোভ করতে থাকেন।
তিনি বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সেখানে প্রায় দুইশ’ যাত্রী রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যাত্রীরা কিভাবে তাদের গন্তব্যস্থলে যাবেন সেটা ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষ জানেন। আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি কিন্তু তাদের পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে রাত পৌনে ১০টার দিকেও যাত্রীরা সি-রোতে থেমে থেমে বিক্ষোভ করছেন। আর্মড পুলিশের সদস্যরা বিক্ষোভরত যাত্রীদের ঘিরে রেখেছেন।
উল্লেখ্য, বুধবার সন্ধ্যা ৭টায় উত্তরায় ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন জানানো হয়, বৃহস্পতিবার থেকে ইউনাইটেডের সব ফ্লাইট অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উড়োজাহাজের জ্বালানি ও ইনফ্লাইট খাবার না থাকাসহ নানা কারণে বৃহস্পতিবার থেকে আর কোনো ফ্লাইট পরিচালনা করা সম্ভব হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে এয়ারলাইন্সের হেড অব মার্কেটিং আফতাব, ডিরেক্টর ফ্লাইট অপারেশন ক্যাপ্টেন ইলিয়াস, ক্যাপ্টেন ওয়াহিদ, ডিরেক্টর প্রশাসন উইং কমান্ডার (অব.) ফেরদৌস, ডিরেক্টর কাস্টমার সার্ভিস ফরহাদ, শাহাবসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলমান পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে এরই মধ্যে ইউনাইটেডের দুই ডিরেক্টর পদত্যাগ করেছেন।
সূত্র: এই লিংক
©somewhere in net ltd.