![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দৃশ্যপট
=>প্রতিদিন একইভাবে খালি গায়ে বারান্দায় বসে থাকেন কেনো?
=>আপনি আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন কেনো?
=>আজব তো আমি প্রশ্ন করলাম না?
=>আমিও তো প্রশ্ন করলাম।
=>আমি আগে প্রশ্ন করেছি আপনি উত্তর দিন।
=>আমি পরে প্রশ্ন করেছি আপনি উত্তর দিন।
=> বেয়াদব!!!!
ফ্ল্যাশব্যাক-১
বেয়াদব বলে গটগট করে হেটে চলে গেলো যে মেয়েটি তার নাম “অনি”। ঢাকার নামকরা একটি স্কুলে পরে। পড়ালেখার প্রচুর চাপ। তাই স্বাভাবিক ভাবে পড়তেও হয় বেশী। পড়তে পড়তে যখন ক্লান্ত হয়ে যায় তখন সে তার রুমের সাথে খোলা বারান্দায় এসে বসে থাকে। মাঝে মাঝে রকিং চেয়ারে দোল খায়। কানে হেডফোন দিয়ে একমনে চোখ বুঝে থাকে সে। দেখলে মনে হয় যেনো ঘুমিয়েই গিয়েছে। খুব মায়াময় চেহারার এই মেয়েটির পুরো নাম “নিশাত আনজুম অনি”। বাড়ীটি তাদের নিজের। ওর বাবা খোকন সাহেব এলাকার বেশ হ্মমতাবান একজন মানুষ।
অনি যখন বারান্দায় আসে তখনই দেখে তাদের সামনের বিল্ডিংয়ের বারান্দায় তারই সময়বয়সী একটি ছেলে প্রতিদিন খালি গায়ে লুঙ্গি পরে বিশ্রীভাবে বসে থাকে। দেখলেই গা ঘিনঘিন করে উঠে। কী হ্ম্যাত ছেলেরে বাবা।
এমনিতে কিছু বলে না অনি। কিন্তু আজ ছেলেটি খালি গায়ে লুঙ্গি পরে যখন বারান্দায় শুয়ে ছিলো তখন একটা দমকা বাতাসে লুঙ্গি উড়ে গিয়ে ছেলেটির বিপদসীমা অতিক্রম করে ফেলেছিলো প্রায় । তখন আর থাকতে না পেরে রাগে ছেলেটিকে কথা শুনিয়ে দিতে চায় অনি। কিন্তু ছেলেটির সাথে কথায় সুবিধা করে উঠতে পারেনা অনি। রাগে ফোঁসফোঁস করতে থাকে অনি।
ফ্ল্যাশব্যাক-২
“আরে যান যান। কে বেয়াদব সবাই জানে। পরপুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকেন,লজ্জা শরমের বালাই নাই। আবার আমাকে বেয়াদব বলতে আসছে।“
কথটা বলে বারান্দা থেকে বাসায় এসে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিতে বসে যায় ছেলেটি।
ছেলেটির নাম “অন্তু”। ঢাকা শহরের অখ্যাত এক বেসরকারী কলেজে পরে অন্তু । পড়ালেখা কে আবিস্কার করেছে তার খোজ যেদিন পাবে সেদিনই তাকে খুন করে জেলে যাওয়ার প্রবল ইচ্ছে অন্তুর। তাকে মারার জন্য ৮৪৫/=টাকা দিয়ে একটি ছুরি বানিয়ে তোশকের নিচে লুকিয়ে রেখেছে অন্তু । তবে অন্তুর মন খুবই নরম । সামান্য একটা মশা সে মারে না। ফু মেরে উরিয়ে দেয়। কিন্তু তার বাহ্যিক দিক দেখলে মনে হয় খুনে স্বভাবের। আসলে ভেতরে সে ঠিক তার উল্টো।
অন্তুরা এই বাসায় ভাড়া থাকে। মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে অন্তু হলেও তাদের কোন অভাব নেই। বরং প্রয়োজনের তুলনায় বেশিই আছে অন্তুদের। অন্তুর বাবা একজন ব্যাবসায়ী।
অন্তুর কেনো যেনো গরম একটু বেশীই লাগে। আর লুঙ্গিতো অন্তুর অসাধারন প্রিয় একটি পোশাক। লুঙ্গি ছাড়া তার চলেই না। সে তার বাবা মাকে বলে রেখেছে তার বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে গেলে আগে জিজ্ঞেস করতে হবে পাত্রীর লুঙ্গিতে কোন অসুবিধা নেইতো। বিয়ের পর যদি লুঙ্গি পরতে বাধা দেয়া হয় তাহলে কিন্তু বউয়ের খবর আছে। অন্তুর পড়ার টেবিলে মার্কার দিয়ে বড় করে লেখা “বউ ছাড়তে রাজী আছি কিন্তু লুঙ্গি ছাড়তে রাজী নাই”।
অন্তু বাসায় থাকলে খালি গায়েই থাকে। এমনিতে সে বারান্দায় খুব কম যায় তবে যতবারই সে বারান্দায় গিয়েছে কাকতালীয় ভাবে প্রতিবারই সেই অজানা মেয়েটির সাথে চোখাচোখি হয়েছে। আর আজতো একেবারে ধুন্ধুমার কান্ড হয়ে গেলো কথায় কথায়।
…………..
অনি মনে মনে ভাবছে,ছেলেটা মনে হয় আমাকে দেখার জন্য সারাদিন বারান্দায় বসে থাকে।
অন্তু মনে মনে ভাবছে,মেয়েটা মনে হয় ছেলেদের সাথে টাংকি মারার জন্য সারাদিন বারান্দায় এসে বসে থাকে।
…………….
অন্তু ফেসবুকে খুব একটিভ । উপরের ঘটনাটি নিয়ে অন্তু রাতে একটা স্ট্যাটাস দিলো ফেসবুকে। সেইখানে তার এক ফ্রেন্ড কমেন্ট করলো, মেয়েটির নাম কী?
অন্তু বলল জানিনা। তবে মনে হয় কটকটি বেগম এই টাইপের নাম হবে। যে কঠোর ভাবে কথা বলে তার নাম তো এমনই হবে।
অন্তু সেই ফ্রেন্ডটির এবাউটে গিয়ে দেখলো তেমন কোন তথ্য দেয়া নেই তার । কেমন যেনো সন্দেহজনক। মনে হয় ফেইক আইডি। ও হ্যা আইডিটির নাম “মেঘলা নীলাচল”।
মেয়েটিকে স্ট্যাটাসে পচিয়ে বেশ খুশিমনে ঘুমুতে গেলো অন্তু।
পরের দিন বিকেলে অন্তু আবার একই পোশাকে বারান্দায় গেলো। গিয়ে দেখে সেই মেয়ে বসে বসে কফি খাচ্ছে।
অন্তুঃ একা একা কফি খাইলে পেট খারাপ হয়।
অনিঃ হলে হবে আপনার কী?
অন্তুঃ না পেট খারাপ হলে আপনাকে হসপিটালে ভর্তি করতে হবে। তারপর আমি হরলিক্স আর ,গ্লুকোজ নিয়ে আপনাকে দেখতে যাব। তো রিসিপশনে যখন জিজ্ঞেস করবে রোগির নাম কী?
আমি কি বলবো?
অনিঃ বলবেন রোগির নাম অনি।
অন্তুঃ আচ্ছা আজ যাই পরে কথা হবে।
রাতে ফেসবুকে চ্যাট করছে অন্তু । হঠাত তাকে মেসেজ দিলো “মেঘলা নীলাচল”। কথা হলো কিন্তু নিজের আসল কোন তথ্য দিলোনা মেঘলা নীলাচল।
অন্তুঃ জানেন আজ সেই মেয়েটির নাম জেনেছি?
মেঘলা নীলাচলঃ কোন মেয়েটি?
অন্তুঃ আরে কাল যে স্ট্যাটাস দিলাম না।
মেঘলা নীলাচলঃ ও হ্যা হ্যা। তা মেয়েটাকে কেমন লাগে আপনার কাছে?
অন্তুঃ কেমন লাগে জানিনা তবে তাকে নিয়ে একটা কবিতা লিখে ফেলেছি।
মেঘলা নীলাচলঃ কবিতা খুব ভালো লাগে। আমাকে শুনান কবিতাটা।
অন্তুঃ
“কল্পনার আকাশের পরী তুমি .
তুমিই আমার রাজত্ব ..
তোমার জন্যই উদাস আমি ...
এটাই এখন আমার দায়িত্ব ....
মেঘ যুক্ত আকাশে .
সোঁদা গন্ধযুক্ত বাতাসে ..
তাকিয়ে থাকি নির্বাক ..
এক নিঃশ্বাসে...
এক ঝলকে আসো তুমি .
হারিয়ে যাও আরেক পলকে ..
চোখের আলোতে দেখি তোমায় ...
মনের আঙ্গিনার উঠানে....
ক্ষনিকের দেখায় চেয়েছি তোমায়, আমৃত্যের জন্যে.
ক্ষনকালের জন্য পেয়েছি তোমায়,খুঁজে পেয়েছি কল্পনার রংঙ্গে ..”
মেঘলা নীলাচলঃ অসম্ভব সুন্দর লাগলো।
অন্তুঃ হয়েছে আর পাম দিতে হবেনা।
হাসি ঠাট্টার মাধ্যমে চলতে লাগলো তাদের মেসেজিং।
পরেরদিন বিকেলে__
অন্তুঃ শুভ বিকেল কটকটি বেগম।
অনিঃ মানে কী এসবের?
অন্তুঃ ওফস দুঃখিত। আমি আর আপনাকে কটকটি বেগম বলবো না।
অনিঃ আবারও তো বলে ফেললেন।
অন্তুঃ হে হে হে।
অনিঃ গা জ্বালানো হাসি হাসবেন না বলে দিচ্ছি।
অন্তুঃ কি করবো বলুন গা ঠান্ডা করার হাসি তো শিখিনি তাই গা জালানোর হাসিই হাসছি।
অনিঃ আপনি এতো কথা বলেন কিভাবে? অসহ্য।
অন্তুঃ সহ্য।
অনিঃ না যাই এই বেয়াদবের জালায় থাকা গেলো না।
অন্তুঃ (জোরে জোরে বলতে লাগলো) এই রাখবেন কটকটি?????????????
নিজের রসিকতায় নিজেই হাসতে লাগলো অন্তু।
রাত্রিবেলা ফেসবুকে__
মেঘলা নীলাচলঃ আপনার কটকটি বেগমের খবর কী?
অন্তুঃ মনে হয় তার প্রতি দুর্বল হয়ে পরছি দিনদিন।
মেঘলা নীলাচলঃ বলেন কী? এখন কী হবে?
অন্তুঃ জানিনা। যা হবার হবে।
মেঘলা নীলাচলঃ একটা কথা বলবো?
অন্তুঃ অবশ্যই বলুন।
মেঘলা নীলাচলঃ আমি কবিতা লিখতে পারি না। তবে আপনাকে উদ্দেশ্য করে দুটো লাইন লিখেছি আমি।
অন্তুঃ হুম বইলা ফেলেন।
মেঘলা নীলাচলঃ “তোমারই অগোচরে তোমারই পাশে,ছায়া হয়ে থাক.
তোমায় ঘিরে তোমায় আঁকড়ে,রঙ্গিন সুতো বুনি”
অন্তুঃ ডালমে কুচ কালা হ্যায় :p
………………………………………………………………….
অন্তুঃ শুভ বিকেল বাড়ীওয়ালার মেয়ে।
অনিঃ এসব বলবেন না আমায়।
অন্তুঃ আচ্ছা অনেক তো ঝগড়া হলো, তো আমরা কী বন্ধু হতে পারি না।
অনিঃ বাংলাদেশে দুজন দশটি কথা বললেই বন্ধু হয়ে যায়। আর আমরা তো দুইশ কথা বলে ফেলেছি। অগোচরে আমরাই বন্ধু হয়ে গিয়েছি।
অন্তুঃ তোমার ফেসবুক আইডি আছে?
অনিঃ আছে কিন্তু দেবনা।
অন্তুঃ কেনো?
অনিঃ কারন আমি বাড়ীওয়ালার মেয়ে।
অন্তুঃ হা হা হা।
কথায় কথায় বেলা গড়িয়ে গেলো। নামলো শহরে সাঁঝ।
অন্তুঃ আজ ওর সাথে অফিসিয়ালী বন্ধু হলাম। :p
মেঘলা নীলাচলঃ ফেসবুকে না রিয়েলী?
অন্তুঃ রিয়েলী। কিন্তু ফেসবুক আইডি দিলো না যে।
মেঘলা নীলাচলঃ রিয়েলী বন্ধু হলে ফেসবুকে আবার কি দরকার?
অন্তুঃ ওকে আমি আমার সব ভুবনেই চাই।
মেঘলা নীলাচলঃ ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওনি?
অন্তুঃ না তবে যাবো।
মেঘলা নীলাচলঃ যাও তাহলে।
অন্তুঃ ওর সাথে যেদিন ঘুরতে যাবো, সেদিন কিন্তু তোমার সাথেও দেখা করবো। এক ঢিলে দুপাখি। আচ্ছা তোমার প্রিয় খাবার কী?
মেঘলা নীলাচলঃ ক্যাডবেরী।
রাত শেষ হয়ে পূর্ব দিগন্তে দেখা যাচ্ছে সূর্যের রশ্মি।
অন্তুঃ তোমার প্রিয় খাবার কী?
অনিঃ ক্যাডবেরী।
অন্তুঃ ভালো তো।
অনিঃ কেন?
অন্তুঃ ফেসবুকে আমার এক বান্ধবী আছে। ওর প্রিয় খাবারও ক্যাডবেরী।
অনিঃ ওকে কি পছন্দ করো?
অন্তুঃ তোমার মত হলে করতাম।
অনিঃ যাও ফাজলামি করো না।
অন্তুঃ চলো একদিন ঘুরতে যাই।
অনিঃ কোথায়?
অন্তুঃ রমনা পার্কে????
অনিঃ আচ্ছা সময় হলে তোমায় জানাবো।
রাতে__
অন্তুঃ অনি আমার সাথে দেখা করতে রাজি হয়েছে সময়ও জানিয়েছে।
মেঘলা নীলাচলঃ তো যাও দেখা করতে।
অন্তুঃ তুমিও আসবে।
মেঘলা নীলাচলঃ কিন্তু সময় নেই যে আমার।
অন্তুঃ তা না হলে আমি ঘুরতে যাবো না।
মেঘলা নীলাচলঃ এ কেমন কথা?
অন্তুঃ এটাই কথা।
মেঘলা নীলাচলঃ আচ্ছা আমি আসবো তোমার নাম্বার দাও।
অন্তুঃ নাও।
দুইদিন পর । বিকেল চারটা__
অন্তু রমনায় পৌছে গেছে। দূর থেকে দেখতে পেলো অনি দাড়িয়ে আছে। অন্তু কাছে গিয়ে বলল চলো ক্যাডবেরী নিয়ে আসি।
অনিঃ তোমার সেই বান্ধবী কোথায়?
অন্তুঃ কল দেই দারাও।
অনিঃ একটু পরে কল দাও। তার আগে আমি তোমাকে দুলাইন কবিতা শুনাই।
অন্তুঃ শোনাও।
অনিঃ “তোমারই অগোচরে তোমারই পাশে,ছায়া হয়ে থাকি
তোমায় ঘিরে তোমায় আঁকড়ে,রঙ্গিন সুতো বুনি”
অন্তুঃ এই কবিতাটাতো আমি আরেকজনের কাছে শুনেছি।
অনিঃ কল দাও ওকে।
এই বলে অন্তু কল দিলো । অবাক হয়ে শুনতে লাগলো অন্তু, রিং বাজছে অনির মোবাইলে।
অন্তুঃ তু তু তুমি????
অনিঃ মেঘলা নীলাচল।
অন্তঃ ক্যাডবেরী নিয়ে আসি।
অনিঃ হ্যা যাও এক ঢিলে দুই পাখি। মেঘলা নীলাচল আসলে তো একটা ক্যাডবেরী বেশী আনতে হত।
অন্তুঃ সমস্যা কী ? আমিতো এখন বাড়ীওয়ালার জামাই।
অনিঃ মানে কী?
অন্তু তার কাধে থাকা ব্যাগ থেকে একটি গোলাপ বের করে দিলো। আর বলল “একটা পাখি,দুইটা পাখি,তিনটা পাখি”।
অনিঃ তোমাকেও একটা পাখি,দুইটা পাখি,তিনটা পাখি”।
কিছু কথাঃ অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে অনি নামে কি সত্যিই কেও আছে? হ্যা অনি নামের পিছনে সত্যি কেও আছে। ওনার আসল নামও অনি। এমনকি সে থাকেও আমাদের সামনের বিল্ডিঙয়ে , আমার বারান্দার সাথেই তার বারান্দা, এবং সে সত্যি সত্যিই বাড়ীওয়ালার মেয়ে। এইটুকু সত্যি বাকি সব আমার গোবরওয়ালা মস্তিস্ক থেকে কল্পনা করে লিখেছি। আর এই অনির সাথে আমার জীবনেও একটি কথাও হয়নি। উৎসর্গ করলাম এই অনিকেই।
©somewhere in net ltd.