![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]
প্রাচীন ভারত
ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো অতুলনীয়। আজ থেকে দু কি তিন হাজার বছর আগেও তো ভারতবর্ষের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিন্দুমাত্র অমলিন ছিল না। বরং আরও সমুজ্জ্বল থাকারই সম্ভাবনা। তখন তো কলকারখানা ছিল না। আকাশ ছিল নীলাভ ও নির্মল। মেঘেরাও। সে সময়ে শীতকালেও খুব বৃষ্টি হত নাকি।
মনে হয়, ভারতবর্ষের প্রাচীন মানুষেরা প্রাকৃতিক শক্তি বা সৌন্দর্য দেখে নিশ্চয়ই অভিভূত হয়েছিল ।
আর ঋষিরা?
ঋষিরা যেহেতু ব্যাতিক্রমী হৃদয়ের অধিকারী, কাজেই তারা সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ বা ভীত হয়ে গিয়ে রচনা করলেন মন্ত্র: যাকে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয়, স্তোত্র বা সূক্ত। কাজেই প্রাচীন ভারতের ঋষিরা, সর্বমোট যে ২০,৩৭৯ টি সূক্ত রচনা করেছিলেন তারই সংকলনকে বলা হয় বেদ। কেননা বেদ-এ রয়েছে সর্বমোট ২০,৩৭৯টি মন্ত্র বা ঋক।
প্রাচীন ভারতকে বলা হয় বৈদিক ভারত। ওই বৈদিক কথাটা এসেছে বেদ থেকেই। বৈদিক সমাজে দারুণ প্রভাব ছিল গ্রন্থটির।
সহস্র মন্ত্রের সমষ্টি বলেই বেদ অনির্বায ভাবেই ধর্মীয় গ্রন্থ । প্রাচীন ভারতেই গ্রন্থটি রচিত ও সঙ্কলিত হয়েছিল আজ থেকে ৩ বা সাড়ে ৩ হাজার বছর আগে; গবেষকরা এমনই মনে করেন।
দীর্ঘকাল বেদ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। পরে বেদ সঙ্কলন করলেন কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস। ইঁনিই রচেছিলেন মহাভারত।
বেদ-এর ভাষা আদি সংস্কৃত। সাধারন মানুষ তো দূরের কথা; অতি শিক্ষিত পন্ডিতেও টীকাভাষ্য বাদে বেদ বোঝে না। সবচে ভালো টীকা নাকি লিখেছেন সায়নাচার্য। জানি না। আমি বেদজ্ঞ নই। তবে বেদ বোঝার জন্য টীকাভাষ্যের দরকার হয়। কেননা, বৈদিক যুগে একই শব্দের বিভিন্ন অর্থ হত। যেমন: “গো” শব্দের অর্থ হতে পারত জল রশ্মি বাক্য পৃথিবী গরু।
মনে করা হয় যে যিশুখ্রিস্টের জন্মের ১৫০০ বছর আগে আর্যরা পারস্য হয়ে প্রাচীন ভারতে এসেছিল প্রাচীন । তার আগেই প্রাচীন ভারতে হরপ্পা ও মহেনজোদারো সভ্যতা প্রায় ধ্বংসের মুখে এসে পৌঁছেছিল। তো, আর্যরা প্রথমে ভারতবর্ষের পশ্চিমাঞ্চলে বসবাস করে; আরও পরে তারা পূবের গাঙ্গেয় অববাহিকা অবধি পৌঁছেছিল।
এভাবেই সূচিত হয়েছিল বৈদিক যুগের।
বৈদিক ঋষিরা বেদ লিখেছিল ভোজ নামে এক ধরনের গাছের পাতার ওপর। এই ভূর্জপত্র বা ভোজ পাতাই হল প্রাচীন ভারতের প্যাপিরাস।
সেই বৈদিক যুগেই গড়ে উঠেছিল বেদ-এর কনসেপ্ট।
তো বেদের কনসেপ্ট বা বিষয় কি?
বেদের কনসেপ্ট বা বিষয় হল দেবতা ও যজ্ঞ।
দেবতা কি তা জানি। কিন্তু, যজ্ঞ কি?
দেবতার উদ্দেশ্যে দ্রব্য ত্যাগই যজ্ঞ।
বৈদিক যজ্ঞে নাকি রাশি রাশি কাঠ, মন মন ঘি পুড়ত। শত শত ছাগ, শত শত ষাঁর রীতিমতো বলি হয়ে যেত।
বেদে নানা দেবতার কথা উল্লেখ রয়েছে। যেমন, অগ্নি ছিলেন বেদ-এর একজন প্রধান দেবতা।অন্য দেবতারা হলেন: বায়ূ জল সূর্য উষা পৃথিবী আকাশ।
আগেই বলেছি, বৈদিক ঋষিরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে গিয়ে রচনা করেছিলে স্তোত্র বা সূক্ত বা মন্ত্র। তো, তখনকার সমাজে লোকে বিশ্বাস ছিল যে বিশেষ উপায়ে এসব দেবদের ভজনা করলে সুখশান্তি মেলে; বিপদ ধারেকাছেও ঘেঁষে না, উপরোন্ত ধনবৃদ্ধি হয়। কী করে দেবদের ভজনা করা যায় সে পথ দেখাত বেদ। কাজেই বেদ ছিল বেস্ট সেলার। তবে গ্রন্থটি সবাই পাঠ করতে পারত না। কেবল ব্রাহ্মণরাই এটি পড়তে পারত ব্যাখ্যা করতে পারত; অন্যরা নয়। বৈদিক সমাজে তখন বর্ণপ্রথা ছিল।
বৈদিক সমাজে সবচে নিচে ছিল শূদ্ররা। এরা আসলে ছিল আর্য-পূর্ব ভারতের অধিবাসী। আর্যরা এদের পরাজিত করে দাসে রুপান্তরিত করেছিল। শূদ্ররা বেদ শ্রবণ করলে বা শুনলে নাকি ওদের কানে গরম সিসা ঢেলে দেওয়া হত!
তো বেদ কিন্তু একটি গ্রন্থ নয়। বেদ চারটি। যথা:ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ। বেদের মধ্যে ঋগ্বেদই প্রচীনতম। এর অধিকাংশ সূক্তেই বিভিন্ন দেবতার বর্ণনা ও প্রশস্তি লিপিবদ্ধ আছে। যজুর্বেদ গদ্যে লেখা এবং এটি দুভাগে বিভক্ত। শুল্ক ও কৃষ্ণ যজুর্বেদ; এতে নানা কাহিনী রয়েছে। যেমন গুরু বৈশম্পায়ণ ও শিষ্য যাজ্ঞবল্ক্যের কাহিনী আমরা যজুর্বেদ-এই পাই। শুল্ক যজুর্বেদ মন্ত্রের সঙ্কলন। আর কৃষ্ণ যজুর্বেদ এ মন্ত্র থাকলেও গল্প রয়েছে। এটিকে ভারতীয় পুরাণের উৎস বলা যেতে পারে। সামবেদ বিভিন্ন ঋষিরচিত সূক্তের সংকলন। এ জন্য এটিকে সামবেদ-সংহিতাও বলা হয়। এটি একটি সঙ্গীত গ্রন্থ। বৈদিক যজ্ঞে যে সঙ্গীতের প্রচলন ছিল তা সামবেদ থেকেই নেওয়া। সামবেদের ৭৫টি মন্ত্র বাদ দিলে বাকি সব সূক্ত ঋগ্বেদ
থেকে নেওয়া। অথর্ববেদ: আগের বেদগুলার বিষয় ছিল কেবল মোক্ষ। অথর্ববেদ-এ মোক্ষ ছাড়াও ধর্ম অর্থ ও কাম বিষয় হিসেবে প্রযুক্ত হয়েছে। তা ছাড়া এটি ভারতীয় আয়ুবের্দ শাস্ত্রেরও উৎস। পাপক্ষয়, শক্রজয় বিষয়ক নানা বশীকরণ মন্ত্র রয়েছে এটিতে । সবচে বিস্ময় যে - অথর্ববেদ-এ রয়েছে আর্য ঐক্যের আহবান। অনার্যদের নিশ্চিহ্ন করার ইঙ্গিত!
প্রতিটি বেদ কয়েকটি মন্ডল বা অধ্যায়ে বিভক্ত। মন্ডলে রয়েছে সূক্ত। প্রতিটি সূক্তে রয়েছে বেশ কটি ঋক বা মন্ত্র। আগেই একবার উল্লেখ করেছি, বেদে সর্বমোট মন্ত্রের বা ঋকের সংখ্যা ২০,৩৭৯।
যা হোক। প্রাচীন বৈদিক সমাজেই বেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠেছিল। যিশুর জন্মের ৬০০/৭০০ বছর আগে বৈদিক সমাচে বেদবিরোধী প্রতিবাদী চিন্তাবিদের জন্ম হল। যেমন: চার্বাক মহাবীর বুদ্ধ। বৈদিকরা এদের বলল নাস্তিক।
পরবর্তীকালে বেদবিরোধীরা ভারতবর্ষে টিকে থাকতে পারেনি। ওদের যথা সময়ে হটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভারতবর্ষ থেকে অন্যত্র পাড়ি জমাতে বাধ্য হয়েছিল বৌদ্ধধর্ম। জৈনধর্ম কেবল ভারতবর্ষে আজও টিকে আছে; কারণ, ধর্মটি নানা বৈদিক আচারপ্রথা গ্রহন করেছিল বহুকাল আগেই। চার্বাক ঋষি কি বলেছেন না বলেছেন সে সব এখন পন্ডিতদের গবেষনার বিষয়। ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষ ওসব নিয়ে মাথা ঘামায় না।
কাজেই সংশয়ীদের হটিয়ে বেদ আবার ফিরে আসে। তাছাড়া বেদভিত্তিক ধর্মের উত্থান হয়েছিল খ্রিস্টীয় ষষ্টসপ্তম শতকে। ব্রাহ্মণ্যবাদী পৌরানিক ধর্মের উত্থান ঘটে তখনই। পৌরানিক ধর্মের ভিত্তি ছিল ভারতবর্ষের সমাজে প্রচলিত পুরাণ। আগেই বলেছিকৃষ্ণ যজুর্বেদ কে ভারতীয় পুরাণের উৎস বলা যেতে পারে।
ভারতীয় সমাজে আজও বেদ-এর প্রাধান্য। তার কারণ বিশেষ উপায়ে দেবতার ভজনা করলে সুখশান্তি মেলে, বিপদ আসে না, ধনবৃদ্ধি হয়-ভারতের সাধারণ মানুষের এরকম বিশ্বাস। বেদের দেবতারা অপসৃত হয়ে গেছে কবে। তবে মূল কনসেপ্টটি আজও অপরিবর্তিতই রয়ে গেছে- পূজো-অর্চনা করে দেবতাকে সন্তুষ্ট করা। বেদের প্রধানতম দেবতা ছিল অগ্নি; অগ্নির অর্চনা আজ ভারতবর্ষে কেউই করে না।
নিজেদের জন্য অনিল আম্বানিরা ৬০ তলা ভবন নির্মান করলেও ভারতীয় সমাজে আজও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয়নি। ভারত আজ চাঁদে রকেট পাঠালেও ভারতীয় সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে বিজ্ঞানের বিকাশ তেমন হয়নি। কাজেই বহুলপঠিত না হলে বেদ এখনও ভারতীয় সমাজে অপ্রতিরোধ্য গ্রন্থ হিসেবেই টিকে রয়েছে।
এমন কী- পাকিস্থানি ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে জয়লাভের আশাতেও বেদপাঠ হয়!
উৎস:
ড. আর এম দেবনাথ রচিত সিন্ধু থেকে হিন্দু।
নিচের লিঙ্কে বেদ-এর পুরোটাই পাবেন। অবশ্য ইংরেজিতে।
http://www.sacred-texts.com/hin/
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:০৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আচ্ছা;দেব। অবশ্য সময় পেলে।
আর-লেখাটা ভালো লাগল বলে ধন্যবাদ।
২| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:০৮
জেমসবন্ড বলেছেন: অগ্নি কি কোন দেবতা না অগ্নি বলতে কাকে বুঝানো হয়েছে , সেটা নিয়ে এখন গবেষণা হচ্ছে ।
বেদের মূল বক্তব্য থেকে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা অনেক দুরে চলে গেছে । বেদে একেশ্ষর বাদের কথা বলা আছে । গোমাংস খাওয়ার কথা বলা আছে , মহানবী (সঃ) এর কথা বলা আছে ।
বেদ নিয়ে অনেক কিছু বলা যায় , আমি অনেক পড়াশুনা করেছি এবং আশ্চর্য হয়ে গিয়েছি , ইসলাম ধর্মের সাথে এর মিল দেখে ।
দুঃখ হল আমাদের হিন্দু ভাইয়েরা , বেদ পড়ে না । তবে অনেক গড়মিল আছে, সেটাকে আমি মনে করি অর্থের বিকৃতি বা মানুষের ইচ্ছিক পরিবর্তন বা সে সময়ের প্রভাব ।
৩| ০৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ রাত ২:০৪
মিতুলদত্ত বলেছেন: চমৎকার কাজ করছেন আপনি। প্রাচীন ভারতবর্ষের শিল্প-সাহিত্য এত বৈভবময়, আমরা কেন অন্য দেশের কালচারের কাছে হাত পাতবো বলুন তো?
আপনি চেষ্টা করবেন এর পর উপনিষদ নিয়ে লেখার। কারণ উপনিষদকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কবিতা বলা হয়।
ভালো থাকবেন।
০৫ ই নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:০২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনি লিখেছেন ...প্রাচীন ভারতবর্ষের শিল্প-সাহিত্য এত বৈভবময়, আমরা কেন অন্য দেশের কালচারের কাছে হাত পাতবো বলুন তো? ...
এ জন্যই মার্কিন (বিট জেনারেশনের) কবি জ্যাক ক্যারুয়াক বলেছিলেন-ভারত হচ্ছে জগতের হৃদয়।
উপনিষদ নিয়ে অবশ্যই লিখব। এবং অতি অবশ্যই উপনিষদ পৃথিবীর শ্রেষ্ট কবিতা।
এখানেই রয়েছে "ত্যক্তন পূঞ্জিভূতা" শ্লোকটি।অর্থাৎ, ত্যাগের সঙ্গে ভোগ কর।যা অনেকেরই জীবন আমূল বদলে দিয়েছে।
আপনাকে শুভেচ্ছ।
৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩২
প্রণব আচার্য্য বলেছেন: নিজেদের জন্য অনিল আম্বানিরা ৬০ তলা ভবন নির্মান করলেও ভারতীয় সমাজে আজও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর হয়নি। ভারত আজ চাঁদে রকেট পাঠালেও ভারতীয় সমাজের তৃণমূল পর্যায়ে বিজ্ঞানের বিকাশ তেমন হয়নি। কাজেই বহুলপঠিত না হলে বেদ এখনও ভারতীয় সমাজে অপ্রতিরোধ্য গ্রন্থ হিসেবেই টিকে রয়েছে।
এমন কী- পাকিস্থানি ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে জয়লাভের আশাতেও বেদপাঠ হয়!
+
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৪:০২
ফয়সাল আকরাম বলেছেন: ইমন ভাই, লেখাটা ভাল লাগসে .. কিছু বেদ আপনার স্টাইলে অনুবাদ করে পোস্ট দেন