![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]
ছোট্ট এই মেয়েটিকেও খেমার রুজ গেরিলারা রেহাই দেয়নি।
রুজ শব্দটা ফরাসী; অর্থ লাল। কাজেই খেমার রুজ শব্দের অর্থ: লাল খেমার। কম্বোডিয়ার ৯৫% লোকই খেমার জনগোষ্ঠীর। খেমার রুজ বলতে কম্বোডিয়ার কমিউনিষ্ট গেরিলাদের বোঝায়।
কিন্তু, ফরাসী নামের কি কারণ?
১৮৬৩ থেকে ১৯৫৩ অবধি কম্বোডিয়া শাসন করেছিল ফ্রান্স । কাজেই, ফরাসী শাসনাধীন কম্বোডিয়ায় খেমার ভাষার পরই ফরাসী ভাষার স্থান।
স্বাধীনতাউত্তর কম্বোডিয়ার প্রথম শাসক ছিলেন প্রিন্স নরোদম সিহানুক। তিনিই কম্বোডিয়ার কমিউনিষ্ট গেরিলাদের ঐ “লাল খেমার” নাম দিয়েছিলেন।
১৯৭৫। এপ্রিল মাস। সরকারী বাহিনীকে বিধস্ত করে লক্ষ লক্ষ খেমার রুজ গেরিলারা কম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেনে প্রবেশ করে। সেই ষাটের দশক থেকেই কম্বোডিয়ার কমিউনিষ্ট গেরিলারা কম্বোডিয়ার শাসন ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে জোর তৎপরতা চালিয়ে আসছিল। ১৯৭৫ সালের ১৭ এপ্রিল তারা সে লক্ষ্য অর্জনে সফল হয়। খেমার রুজ গেরিলাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পলপট। খেমার রুজ গেরিলারা নমপেন দখল করার পলপট সরকার কম্বোডিয়ার নামকরণ করে “ডেমোক্রেটিক কাম্পূচিয়া”। তারপর নানাবিধ সংস্কারে নামে পলপট সরকার ভয়ঙ্কর এক হত্যাযজ্ঞে লিপ্ত হয়।
যে গনহত্যা চলাকালীন সময়ে নমপেন শহরের পাশ দিয়ে বয়ে চলা মেকঙ নদীটার জল হয়ে উঠেছিল রক্তাক্ত।
গনহত্যা কারণ?
নমপেনবাসীর ওপর খেমার রুজ গেরিলাদের ছিল ভয়ঙ্কর ক্রোধ। খেমার রুজ গেরিলাদের চোখে নমপেনবাসী ছিল পাতি বুর্জোয়া: যারা সব সময় শস্তা ভোগ বিলাসে ডুবে থাকে, মদ খায়, নাইট ক্লাবে নাচে; যারা আমেরিকান কালচারে আসক্ত, খেতে পছন্দ করে বার্গার ও কোক; দেশের প্রতি যাদের বিন্দুমাত্র টান নাই, যারা বিপ্লবে যোগ দেয়নি, যারা সব সময় কেবল আমেরিকার যাওয়ার ধান্দায় থাকে, গ্রামে যেতে চায় না; গ্রামের মানুষের দারিদ্র নিয়ে ভাবে না, কোনওমতে পাশ করে একটা চাকরি পেলেই যারা খুশি।
খেমার রুজ গেরিলারা নমপেনবাসীর নাম দিয়েছিল: “মেকঙ নদীর বেশ্যা।”
কাজেই অস্ত্রের মুখে আমেরিকা-আসক্ত পাতি বুর্জোয়া নমপেনবাসীকে নিয়ে যাওয়া হল গ্রামের দিকে । হাঁটিয়ে। রাস্তার ওপর হাজার হাজার নারীপুরুষশিশুবৃদ্ধবৃদ্ধা হাঁটছে। এপ্রিল-মে মাসের কড়া রোদ। তৃষ্ণা। ক্ষুধা। বিলাসী জীবনযাপসের জন্য মুটিয়ে গিয়েছিল অনেকেই। হাঁপাতে-হাঁপাতে পথেই মরল অনেকেই । উৎকন্ঠিত তাদের চকচকে হলুদ মুখ। দু’পাশে কারবাইন উঁচিয়ে খেমার রুজ গেরিলারা। সামান্য এদিক-ওদিক হলেই ঠা ঠা ঠা।
মাঝে মাঝে একটা কালো ট্রাক এসে থামত রাস্তার পাশে। বেছে বেছে খেমার রুজ গেরিলার লোকজনকে তুলে দিত সেই ট্রাকে। তারপর ট্রাকটা চলে যেত কোনও নির্যাতন কেন্দ্র। হয়তো টুঅল স্লেঙ্গ-এ। টুঅল স্লেঙ্গ-এ বন্দিদের প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত । জিজ্ঞাসাবাদের সময় টর্চার।
টুঅল স্লেঙ্গ থেকে মৃতপ্রায় বন্দিদের আবার ট্রাকে তোলা হত।
ট্রাক একাব ছুটত চোয়েয়ুঙ্গ এক-এর দিকে।
চোয়েয়ুঙ্গ এক ছিল খেমার রুজ গেরিলাদের অন্যতম বধ্যভূমি।
২
তখন বলছিলাম যে-খেমার রুজ গেরিলাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন পলপট। পলপট ছদ্মনাম। ফ্রান্সে থাকাকালীন সময়ে নেওয়া। আসলে পলপট শব্দের কোনও নির্দিষ্ট মানে নেই। পলপটের আসল নাম- সালথ সার। জন্ম ১৯২৫ সালে কম্বোডিয়ার এক অভিজাত পরিবারে। পরিবারটি ছিল বৌদ্ধ। কাজেই সালথ সারের ছেলেবেলায় শিক্ষার অন্যতম ভিতটি ছিল অহিংস বৌদ্ধ দর্শন ছিল । বালক সালথ সার পাঠ করেছিল ধর্মপদ থেকে বুদ্ধের বানী।
Let go of anger.
Let go of pride.
When you are bound by nothing
You go beyond sorrow.
Anger is like a chariot careering wildly.
He who curbs his anger is the true charioteer.
Others merely hold the reins.
With gentleness overcome anger.
With generosity overcome meanness.
With truth overcome deceit.
Speak the truth.
Give whenever you can,
Never be angry.
ভাবলে অবাক হতে হয়-পরে এই পলপটেরই নির্দেশেই লক্ষাধিক নিরীহ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়েছিল।
১৯৪৮ সাল। রেডিও ইলেকট্রনিক্স নিয়ে পড়তে ফ্রান্সে যায় সালথ সার। সেই সময়টায় গোটা ইউরোপ ছিল মাকর্সবাদ নিয়ে উত্তেজিত। সেই সময়ককার অধিকাংশ বুদ্ধিজীবি মনে করতেন: মাকর্সবাদ সর্ব প্রকার সামাজিক রোগের একমাত্র প্রতিষেধক। এমন কী সার্ত্রর মতন নিরাসক্ত মানুষও মাকর্সবাদের আকর্ষন এড়াতে পারেন নি। প্যারিসেই মাকর্সবাদে দীক্ষা সালথসারের। সম্ভবত সার্ত্রর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। কম্বোডিয়ায় তখন ফরাসী শাসন। সার্ত্র উপনিবেশগুলোয় ফরাসী শাসনের ঘোর বিরোধী ছিলেন।
পলপট কম্বোডিয়ায় ফেরেন ১৯৫৩ সালে। ফিরেই স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ভিয়েতনামও লড়ছিল ঔপনেবেশিক ফ্রান্সের বিরুদ্ধে। ভিয়েত কংদের সঙ্গে যোগাযোগ হল পলপটের।
১৯৫৩ সালেই ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিল কম্বোডিয়ার স্বাধীনতাকামী জনগন। নরোদম সিহানুক হলেন রাজা। স্বাধীনতার পরপরই পলপটসহ অন্যদের তৎপরতায় কমিউনিষ্ট আন্দোলন দানা বাঁধছিল কম্বোডিয়ায়- যে আন্দোলনের পিছনে ভিয়েতনামের শ্রমজীবি শ্রেনির অগ্রনায়ক হো চি মিন-এর প্রত্যক্ষ ইন্ধন ছিল। প্রিন্স নরোদম সিহানুক ছিলেন প্রাচীনপন্থি। তিনি মাকর্সবাদ বুঝতেন না। বুদ্ধের দানশীলতায় আস্থা ছিল। তিনি নির্মম উপায়ে কমিউনিষ্ট দমন করতে লাগলেন বটে - তবুও পলপটের নেতৃত্বে ষাটের দশকে কমিউনিষ্ট আন্দোলন আরও সক্রিয় হয়ে উঠতে থাকে কম্বোডিয়ায়। ভিয়েতনামের ভিয়েত কংরা তাকে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছিল। দুটি প্রতিবেশি দেশের অবস্থা তখন ভয়ানক জটিল। থেকে থেকে মার্কিন বিমান হামলা চলছিল ভিয়েতনামে; সীমান্ত পেরিয়ে এমন কী কম্বোডিয়াতেও বোমা বর্ষন করছিল মার্কিন বোমারু বিমানগুলি । কেননা, মার্কিন প্রশাসন ইন্দোচিনে কমিউনিষ্ট তৎপরাতার মূল শিকড় উপড়ে ফেলতে চায়! অবস্থা এমনই ভয়ানক।
১৯৬৭ সাল। পলপটের নেতৃত্বাধীন কম্বোডিও কমিউনিস্টরা একের পর এক সিহানুক নিয়ন্ত্রিত সরকারী বাহিনীকে আক্রমন করে করে পযুদর্স্ত করতে থাকে ।
প্রিন্স নরোদম সিহানুক ঠিক ঐ সময়টায় কম্বোডিয়ার কমিউনিষ্টদের নাম দিয়েছিলেন খেমার রুজ । অর্থাৎ, লাল খেমার।
১৯৭৫। ৮ বছর গেরিলা যুদ্ধের পর ট্যাঙ্ক বহর নিয়ে লক্ষ লক্ষ খেমার রুজ গেরিলারা নমপেন শহরে প্রবেশ করে। তারপর ১৯৭৯ সাল অবধি প্রায় ৩০ লক্ষ কম্বোডিয় জনগনের মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯। এই সময়টায় পলপট সরকার কম্বোডিয়ায় শুদ্ধি অভিযানের নামে নারকীয় এক হত্যাযজ্ঞ চালায়। এককালের সুহৃদ ভিয়েতনামের সঙ্গে পলপটের সর্ম্পকে ফাটল ধরেছিল। খেমারুজরা ভিয়েতনাম সীমান্তও আক্রমন করছিল। ভিয়েনাম নাকি কম্বোডিয়ার পূর্বাঞ্চলের সীমানা গ্রাস করে নিয়েছিল-এই অজুহাতে। আসলে সেই সময়টায়, ঐতিহাসিকদের মতে, পলপট সরকার ভুগছিল উগ্র জাতীয়তাবোধে।
১৯৭৮ সাল। ভিয়েতনামী সৈন্যরা কম্বোডিয়ায় অনুপ্রবেশ করে। অনুপ্রবেশের অবশ্য অন্য কারণও ছিল। পলপট সরকার কর্তৃক পরিচালিত অমানবিক গনহত্যা ।
অপ্রতিরোধ্য ভিয়েতনামী সৈন্যরা দ্রুত নমপেনের দিকে এগিয়ে আসছিল।
১৯৭৯। পলপটসহ খেমার রুজরা গেরিলারা থাই সীমান্তের পালিয়ে যায়।
ভিয়েতনাম ছিল আমেরিকার শক্র। কাজেই, গনহত্যার অভিযোগ সত্ত্বেও আমেরিকা খেমার রুজ গেরিলাদের বিচার না-করে বরং সাহায্যই করেছিল।
৩
নমপেন শহরের একটি হাই স্কুল। নাম: টুঅল সাভি প্রেই। স্বাধীনতা উত্তর কম্বোডিয়ার প্রথম শাসক প্রিন্স নরোদম সিহানুক-এর নামে নাম। সাদা রং করা ৫টি দালান মিলে তিন তলা স্কুল। সামনে খেলার মাঠ । মাঠের কিনারে কিনারে নারকেল গাছ। নারকেল গাছ গোড়ায় সাদা রং করা । রাস্তা থেকে দোতলার বারান্দা ও পিলার চোখে পড়ে। আজ ঐ স্কুলটাকে দেখে কে বলবে ঐ স্কুলেই চার বছর ধরে প্রায় ২০,০০০ মানুষকে বন্দি করে অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছিল।
১৯৭৫। আগস্ট মাস। পলপট সরকার সিদ্ধান্ত নিল টুঅল সাভি প্রেই স্কুলটাকে নির্যাতন কেন্দ্র করে তুলবে। স্কুলটার বাউন্ডারি কাঁটাতারে ঘিরে ফেলা হয়। প্রবাহিত করা হল বিদ্যুৎ। নাম দিল Security Prison 21 (S-21) Tuol Sleng ও বলা হল। Tuol Sleng শব্দটি খেমার। মানে, "বিষাক্ত বৃক্ষের পাহাড়।"
স্কুলটার ক্লাসরুমগুলিই হয়ে ওঠে প্রিজন সেল আর টর্চার চেম্বার। কখনও ১০০০ থেকে ১৫০০ বন্দি থাকত টুঅল স্লেঙ্গ-এ। অনেকেই নির্যাতন সইতে পারত না। মরে যেত। যারা বেঁচে থাকত-তাদের পাঠানো হত চোয়েয়ুঙ্গ এক নামে বধ্যভূমিতে।
নমপেনের ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে চোয়েয়ুঙ্গ এক।
১৯৭৫ সালের আগে চোয়েয়ুঙ্গ এক ছিল ফাঁকা মাঠ। মাঠে নানা রকম গাছ। একপাশে চিনেদের কবরখানা। ১৯৭৫ সালের পর ঐ চোয়েয়ুঙ্গ এক-ই হয়ে উঠেছিল খেমার রুজদের বধ্যভূমি। প্রায় ২০, ০০০ মানুষকে ওখানে মেরে ফেলা হয়েছিল। একটি ১৯৮০ সালের পর ওখানকার একটি গনকবরে প্রায় সাড়ে আট হাজার মৃতদেহ পাওয়া গেছিল। মৃত্যুর আগে প্রায় সবাই টুঅল স্লেঙ্গ এ ছিল। বন্দিরা প্রথমে মাঠের ওপর একটা গর্ত খুঁড়ত। গর্ত খোঁড়া শেষ হলে বন্দিদের গর্তের পাশে দাঁড়াতে বলত খেমার রুজরা। হত্যাযজ্ঞের সময় পলপট সরকার বুলেট খরচ করত না। যে কারণে, খেমার রুজদের হাতে থাকত রড, কখনও - কখনও কোদাল নিড়ানির মতো ভোঁতাও ব্যবহার করত তারা । খেমার রুজরা বন্দিদের পিটিয়ে পিটিয়ে মারত।
গাছের গুঁড়িতে আছড়ে মারত শিশুদের ।
আশির দশকে একটি বৌদ্ধ স্তুপ নির্মান করা হয়েছে চোয়েয়ুঙ্গ এক-এ। সাদা রঙের ছোট্ট একটা বাড়ি। চারিদিকে কাচে ঘেরা। বাইরে থেকে দেখা যায় ভিতরে কী আছে। ভিতরের পরপর কয়েকটা প্ল্যাটফর্ম। প্ল্যাটফর্মের ওপর খুলির পাহাড়। সর্বমোট ৫০০০ খুলি রয়েছে! নানা বয়েসী মানুষের খুলি। নারীর, পুরুষের, শিশুর। বেশির ভাগ খুলিতেই ফাটল। আঘাতের চিহ্ণ ...
মানুষের এমন অসহায় মৃত্যু!
যে মৃত্যু খেমার রুজ পলপট সরকারের ঠান্ডা মাথার পরিকল্পনা। পলপট সরকার যে কোনও সন্দেহভাজনকে প্রথমে দু-বার সতর্কবানী পাঠাত । তারপর তাদের আসতে বলা হত কোনও গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলত- দোষ স্বীকার কর। তা হলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। বল তুমি বিদেশিদের চেন, তুমি কি আমেরিকানদের চেন?। বল। বল, নইলে তোমার স্লেট ক্লিন করে দেব। তার মানে এখন তুমি প্রথমে যাবে টুঅল স্লেঙ্গ। সেখানে তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। সামান্য উত্তম মধ্যম দেওয়া হবে। পরে তোমাকে পাঠানো হবে চোয়েয়ুঙ্গ এক। মেরে ফেলার জন্য। তোমার মাথায় মোটা শক্ত কাঠ দিয়ে আঘাত করা হবে। ভবিষ্যতের মানুষ দেখবে তোমার মাথায় ফাটল, আঘাতের চিহ্ন ...
মানুষের এমন অসহায় মৃত্যু!
টুঅল স্লেঙ্গ-এ সন্দেহভাজন বন্দিদের ২ থেকে ৩ মাস রাখা হত। গভীর সন্দেজভাজনদের আরও বেশি। টুঅল স্লেঙ্গ এ প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারা হত, দেওয়া হত ইলেকট্রিক শক; লোহার তার গরম করে ঢোকানো হত শরীরের নানা জায়গায়। সিলিং থেকে উলটো করে ঝুলিয়ে রাখত- নিচে ড্রাম ভরতি পানি, পানিতে বন্দির মুখ। একজন দড়ি ধরে টানছে। বন্দির মুখ ড্রামের পানিতে ডুবছে, ভাসছে। কখনও মাথায় প্লাস্টিকের ব্যাগ ভরে মানুষটার নিঃশ্বাস আটকে রাখা হত। কিংবা ধারালো ছোরা দিয়ে ফালি ফালি করে কাটা হত অঙ্গপ্রতঙ্গ; তুলে ফেলা হত নখ । নখের ক্ষতে ঢালা হত অ্যালকোলহল। বন্দির মাথা পানির তলে চুবিয়ে রাখা হত। অনেকক্ষণ। মেয়েদের করা হত ধর্ষন।
সবশেষে মেরে ফেলার জন্য পাঠানো হত চোয়েয়ুঙ্গ এক।
আগেই বলেছি- চোয়েয়ুঙ্গ এক রয়েছে খুলিতে ভরা একটি সাদা রঙের কাচের বাড়ি। বৌদ্ধ স্তুপ। নানাদেশ থেকে লোকে যায় ওই সাদা রঙের বাড়িতে । নানা বয়েসী মানুষের খুলি। নারীর, পুরুষের, শিশুর। বেশির ভাগ খুলিতেই ফাটল। আঘাতের চিহ্ণ ... খেমার রুজ দের বর্বরতা দেখে শিউরে ওঠে তারা।
টুঅল স্লেঙ্গও এখন গনহত্যা যাদুঘর। নানাদেশ থেকে লোকে যায় ওখানে। খেমার রুজ দের বর্বরতা দেখে শিউরে ওঠে।
৪
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯। অসংখ্য নির্যাতনকেন্দ্র ও বধ্যভূমি গড়ে উঠেছিল কম্বোডিয়া জুড়ে। প্রায় প্রতিদিনই হাজার হাজার লোককে মেরে ফেলা হত। ১৯৭৫ সালে কম্বোডিয়ার জনসংখ্যা ছিল ৭০ লক্ষ। যার মধ্যে ৩০ লক্ষই নিহত হয়েছিল খেমার রুজ গেরিলাদের পরিচালিত নির্মম গনহত্যায়।
খেমারদের পরিবার সাধারনত বড় হয়। একেকটা পরিবারের লোকসংখ্যা ৭০ থেকে ৮০ জনের কম না। ওদের অস্ত্রের মুখে কোনও নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হত। কাপড় দিয়ে চোখ বাধা হত, হাত বাধা হত। তারপর রড দিয়ে আঘাত করে করে ৭০ ৮০ জনকেই মেরে ফেলা হত।
অনেক খুনিরাই ছিল কিশোর। খেমার রুজরা এদের ডাবের পানিতে রক্ত মিশিয়ে খাইয়ে খুনিতে পরিনত করেছিল কম্বোডিয়ায় ক্ষমতা দখলের পর।
৫
পলপট সরকার হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল কেন?
কমিউনিষ্ট পলপট সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিল। নতুন এক সমাজ গড়তে চেয়েছিল খেমার রুজ গেরিলারা। গ্রামভিত্তিক, শ্রেণিহীন।ছেলেবেলায় কম্বোয়িায়ায় অপরিসীম দারিদ্র দেখেছিল পলপট। দেখেছিল ফরাসী শাসনশোষনের নির্মম ফল। বুদ্ধের মিঠে কথায় যে দারিদ্র দূর হয়নি টের পেয়েছিল। ইউরোপে গেলেন পলপট। মার্কসবাদ তখন নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দরিদ্র রাশিয়াকে বদলে দিচ্ছে সোভিয়েতরা । মাসর্কবাদী তত্ত্বমতে: সমাজের রুপ (form)আছে। একে সচেতন ভাবে বদলানো যায়। কাজেই পলপটের নির্দেশে অস্ত্রের মুখে পাতি বুর্জোয়া আমেরিকা-আসক্ত নমপেনবাসীকে নিয়ে গেল গ্রামের পথে। হাঁটিয়ে। দু’পাশে খেমার রুজ গেরিলারা কারবাইন উঁচিয়ে। সামান্য এদিক ওদিক হলেই ঠা ঠা ঠা। এপ্রিল-মে মাসের গরম। তৃষ্ণা। পথেই মরল অনেকে। মাঝে মাঝে একটা কালো ট্রাক এসে থামত। লোকজনকে তুলে নিত। তারপর ট্রাকটা থামত কোনও নির্যাতন কেন্দ্র। হয়তো টুঅল স্লেঙ্গ-এ।
টুঅল স্লেঙ্গ থেকে চোয়েয়ুঙ্গ এক।
৬
অনেকের মতে বাংলাদেশেও সমাজকাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন। কথাটা অস্বীকার করব না। তবে সে উদ্যেগে একজন মানুষও যেন নিহত না হয়। সমাজকাঠামোর পরিবর্তন হতে হবে রক্তপাতহীন।
আমাদের কম্বোডিয়ার স্বৈরাচারী পলপট শাসনের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
ষাট ও সত্তুরের দশকে মার্কিন আগ্রাসন ঠেকাতে ২০ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিল ভিয়েতনাম । ভিয়েতনামী তরুনতরুণীরা সে ইতিহাস জানেই না।আজ তারা ঠিকই কোক খাচ্ছে, বার্গার খাচ্ছে, কিনছে আইপড ন্যানো।
তাহলে কী লাভ হল ঐ ২০ লক্ষ মানুষের আত্মদানে?
নেপালের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকেও আমাদের শেখার আছে অনেক কিছু ।
৭
শেষমেশ কি হয়েছিল পলপটের?
মনে থাকার কথা। ১৯৭৮ সাল। কম্বোডিয়ায় গনহত্যা ঠেকানোর জন্য ভিয়েতনামী কমিউনিস্টরা কম্বোডিয়ায় অনুপ্রবেশ করে। পলপটসহ খেমার রুজরা গেরিলারা থাই সীমান্তের দিকে পালিয়ে যায়। তবে, খেমার রুজ গেরিলাদের ওপর পলপট তার আধিপত্য দীর্ঘকাল বজায় রাখতে পারেনি। একদল খেমার রুজ গেরিলা বিদ্রোহ করে পলপটকে বন্দি করে। তার বিচার চলছিল। বিচার করছিল খেমার রুজরাই। বিচার চলাকালীন সময়ে থাইকম্বোডিয়া সীমান্তের কাছে গহীন অরণ্যে একটি কাঠের বাড়িতে। পলপট মারা যান ১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাসে । পলপটের জীবনীকার লিখেছেন- মৃত্যুর সময় পলপটের নাকি তেমন মৃত্যুযন্ত্রনা হয়নি। ঘুমের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকে মারা গিয়েছিলেন পলপট!
পলপট প্রথম বিবাহ করেছিলেন ফ্রান্সে। ২য় একটি বিবাহ করেছিলেন নাকি মৃত্যুর ঠিক আগে ।
তথ্যসূত্র:
http://en.wikipedia.org/wiki/Cambodia
Chandler, David, and Rooney, Dawn F. "Cambodia." Microsoft® Student 2008 [DVD]. Redmond, WA: Microsoft Corporation, 2007. Microsoft ® Encarta ® 2008. © 1993-2007 Microsoft Corporation. All rights reserved.
Tuol Sleng-এর বন্দিদের ছবি দেখতে চাইলে-
http://www.tuolsleng.com/photographs.php
২| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৩৬
...অসমাপ্ত বলেছেন: ভাল পোস্ট। ভাল লিখেছেন।
৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৪২
ভাঙ্গা পেন্সিল বলেছেন: ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে এই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এই পোস্টটা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরাই কি মাথায় তুলে রাখছি না আকবর দ্যা গ্রেট, আলেকজান্ডার দ্যা গ্রেট বলে সেইসব যুদ্ধবাজ নেতাকে? ইতিহাসের পাতায় পাতায় রক্ত ঝরিয়ে যারা বীর, তাদের ঘৃণা করাই হোক ইতিহাসের মূল মোরাল। পলপট ইতিহাসের তেমনই একটা নাম। প্রতিটা রাজ্যজয়, প্রতিটা বিপ্লব আমাকে নরহত্যা বাদে আর কিছুই মনে করাতে পারে না।
আপনার লেখা খুব ভালো
২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: @ ভাঙ্গা পেন্সিল-
আপনার সঙ্গে একমত।
আমি আলেকজান্ডারকে আলেকজান্ডার দি গ্রেট বলি না। বলি আলেকজান্ডার দি থ্রেট।
আপনি লিখেছেন-ইতিহাসের পাতায় পাতায় রক্ত ঝরিয়ে যারা বীর, তাদের ঘৃণা করাই হোক ইতিহাসের মূল মোরাল।
একমত।
ধন্যবাদ।
৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৬
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: বিবরণ বেশ হৃদয়গ্রাহী। কিন্তু আপনার পুরো আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটিই অনুপস্থিত। খেমার রুজরা ছিল ষাট-সত্তরের লাল পতাকাকে লাল পতাকা দিয়ে ঢাকবার সিআইএর কর্মসূচির সবচেয়ে মোক্ষম পরীক্ষাগার। থাইল্যান্ডের মাধ্যমে আমেরিকা খেমারদের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ এবং আর্ন্জাতিকভাবে নিরাপত্তা দিয়েছিল। এটা দালিলিক সত্য। তবে এ সত্য উইকিপিয়ায় আছে কিনা তা আমি জানি না। আপনি এখানে দেখে নিতে পারেন।
Click This Link
এবং এটি Click This Link
পলপটরা সমাজতন্ত্রের নামে কৃষি ভিত্তিক সাম্যবাদ বানানোর যে উদ্ভট তত্ত্ব দিয়েছিল, সেসময়ের কোনো কমিউনিস্ট পার্টিই একে সমর্থন করেনি। ইন্দোচীন এলাকায় সমাজতন্ত্র কায়েমের ঢল দেখে আমেরিকা ঐ নীতিটি নেয়। একদিকে চীনের বিপরীতে তাইওয়ান, উত্তর কোরিয়ার বিপরীতে দ. কোরিয়া এবং ভিয়েতনামের বিপরীতে কম্বোডিয়ার খেমারদের তারা সাহায্য করে। এই তথ্যটিও খুবই জরুরি যে, জাতিসংঘে পল পটের বিচার ও কম্বোডিয়াকে এক ঘরে করার বেশ কয়েকটি সেভিয়েত প্রস্তাবে আমেরিকা ভেটো দিয়ে তাদের রক্ষা করেছিল বিপুল অস্ত্র ও অন্যান্য সাহায্য দিয়ে কম্বোডিয়ার ভেতরের ভিযেতনামি জনগোষ্ঠী এবং খোদ ভিয়েতনামে ঢুকে হত্যাকাণ্ড চালিয়ে নিচ্ছিল। শেষে ভিয়েতনাম বাধ্য হয়ে কম্বোডিয়ায় ঢুকে খেমারদের পরাজিত করে। একটি সমাজতান্ত্রিক দেশ তাহলে কেন আরেকটিকে আক্রমণ করেছিল?
এই উধ্দৃতিটি দেখুন।
The U.S. government's secret partnership with the Khmer Rouge grew out of the U.S. defeat in the Vietnam War. After the fall of Saigon in 1975, the U.S.-worried by the shift in the Southeast Asian balance of power-turned once again to geopolitical confrontation. It quickly formalized an anti-Vietnamese, anti-Soviet strategic alliance with China-an alliance whose disastrous effects have been most evident in Cambodia. For the U.S., playing the "China card" has meant sustaining the Khmer Rouge as a geopolitical counterweight capable of destabilizing the Hun Sen government in Cambodia and its Vietnamese allies.
When Vietnam intervened in Cambodia and drove the Pol Potists from power in January 1972, Washington took immediate steps to preserve the Khmer Rouge as a guerrilla movement. International relief agencies were pressured by the U.S. to provide humanitarian assistance to the Khmer Rouge guerrillas who fled into Thailand. For more than a decade, the Khmer Rouge have used the refugee camps they occupy as military bases to wage a contra-war in Cambodia. According to Linda Mason and Roger Brown, who studied the relief operations in Thailand for Cambodian refugees:
আশা করি এই গুরুতর ভুলটি আপনি শুধরে নেবেন। যদি নেন, তাহলে পুরো লেখার তাৎপর্য একদম অর্থ ধারণ করে। ধন্যবাদ।
২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৩
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ ওয়াসিফ। আপনার তথ্যগুলি নিয়ে আরেকটি লেখার ইচ্ছে রইল।
এই লেখার বিষয় ছিল কেবলি খেমার রুজদের তান্ডব। বধ্যভূমি। ইত্যাদি।
তবে, আপনার তথ্যগুলি আগে পেলে ভালো হত।
ধন্যবাদ।
৫| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৪৯
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: আবারো আপনাকে অনুরোধ করছি আমেরিকার চরদের কমিউনিস্ট বলার এই মারাত্মক বিভ্রান্তি শুধরে নিতে। ওপেরর লিংক ও কমেন্ট দ্রস্টব্য।
২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
আপনার তথ্যগুলি নিয়ে গভীর ভাবেই ভাবব।
৬| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:৫৯
রাস্তার ছেলে বলেছেন: আপনি এমন এক সময়ে লেখাটা পোস্ট করলেন যখন আমি এই বিষয়েই একটা ইংরেজি আর্টিকেলের অনুবাদ করছি। তাই অংশ নিলাম। অনেকখানিই অনুবাদ করেছি। এইটুকুথেকে যতটা বুঝেছি তা হল, পলপটের উদ্দেশ্য কমিউনিজম অর্জনের ছিল নাকি অন্য কিছু তা নিয়েই সন্দেহ আছে। পলপটের সময় কিন্তু কমিউনিস্ট বিশ্ব মহা বিতর্কে লিপ্ত কিন্তু তখনও মস্কোপন্থী আর পিকিংপন্থী শিবিরে ভাগ হয়নি। যাই হোক, পলপট মস্কোপন্থা বা পিকিংপন্থাকে 'বিদেশি মতবাদ' হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন। আসলে তার সাম্যের বিপ্লব শেষমেশ উগ্র জাতীয়তাবাদের পথঘুরে প্রতিক্রিয়ার পথে পা বাড়িয়েছিল। চীনে মাওয়ের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসা প্রতিবিপ্লবী শিবিরের সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। আবার ভিয়েতনামীরা ছিল স্পষ্টতই মস্কোপন্থী। তৎকালে সামাজিক সাম্রাজ্যবাদী হয়েওঠা সোভিয়েত সরকার পলপটের সাথে চীনের একাত্মতা মেনে নিতে পারে নি। ফলে মূলত সোভিয়েত নির্দেশেই ভিয়েতনামীরা কম্বোডিয়ায় হামলা চালায়।
আসলে কম্বোডিয়া বা ভিয়েতনাম, কোনখানেই বিপ্লব পুরোপুরি স্বাধীন ভাবে পরিচালিত হয়নি। কম্বোডিয়ায় চীন আর ভিয়েতনামে সোভিয়েত প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। কোন দেশের সাধারণ মানুষের জন্য যে বিপ্লব, তাতে সাধারণ মানুষের দার্শনিক মুক্তিই আসল এবং নির্ধারক অর্জন। বিদেশি শক্তির মাধ্যমে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য অর্জন করা গেলেও জনগণের দার্শনিক মুক্তি আসে না। এই দার্শনিক মুক্তির জন্য যে ত্যাগ ও ধৈর্যের পরীক্ষা কমিউনিস্ট নেতৃত্বকে দিতে হয়, তার কোনটাই ছিল না পলপটের নেতৃত্বে।
তবে একটা কথা বলে রাখা দরকার, পলপট একটা কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছিলেন আর তখনও ইতিহাস থেকে শিক্ষানেবা মত কোন ইতিহাসই রচিত হয় নি। আজ পলপট এই ইতিহাস আমাদর সামনে রেখে গেছেন বলেই আমরা তার বিশ্লেষণ ও সারসংকলন করতে পারি।
পোস্টে প্লাস!
২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: প্রায় ৩০ লক্ষ কম্বোডিওকে হত্যা করে এশিয়ায় সমাজতন্ত্রের জনপ্রিয়তা হ্রাসের জন্য পলপট অনেকখানি দায়ী বলে মনে করি।
আপনি লিখেছেন- পলপট একটা কঠিন সময়ের মধ্যদিয়ে যাচ্ছিলেন আর তখনও ইতিহাস থেকে শিক্ষানেবা মত কোন ইতিহাসই রচিত হয় নি।
আপনার এই কথাটি কি ঠিক?
স্টালিন অনেক আগেই বিপ্লবের নামে ২ কোটি মানুষ হত্যা করেছেন।
পলপটের কি তা জানা ছিল না?
৭| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০০
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: কিছু মনে করবেন না, আপনার এই লেখার তথ্যগুলো অসত্য নয়। কিন্তু এর আসল হোতাদের উদ্ঘাটন না করলে বিষয়টার রাজণৈতিক তাৎপর্য একেবারেই মারাত্মক ভুলপথে চালিত হতে পারে। সেজন্যই আমার এই ব্যগ্রতা।
আপনাকে ধন্যবাদ সহনশীলতার জন্য।
২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৯
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আসলে আমার লেখার বিষয় খেমার রুজদের রাজনৈতিক চরিত্র নির্ধারণ নয়। তেমন হলে লেখা অন্য রকম হত। আমার লেখার বিষয় গনহত্যা।
যে কারণে লিখেছি -
মাঝে মাঝে একটা কালো ট্রাক এসে থামত রাস্তার পাশে। বেছে বেছে খেমার রুজ গেরিলার লোকজনকে তুলে দিত সেই ট্রাকে। তারপর ট্রাকটা চলে যেত কোনও নির্যাতন কেন্দ্র। হয়তো টুঅল স্লেঙ্গ-এ। টুঅল স্লেঙ্গ-এ বন্দিদের প্রথমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হত । জিজ্ঞাসাবাদের সময় টর্চার।
টুঅল স্লেঙ্গ থেকে মৃতপ্রায় বন্দিদের আবার ট্রাকে তোলা হত।
ট্রাক একাব ছুটত চোয়েয়ুঙ্গ এক-এর দিকে।
চোয়েয়ুঙ্গ এক ছিল খেমার রুজ গেরিলাদের অন্যতম বধ্যভূমি।
আমার উদ্দেশ্য ঝিকে মেরে বউকে শেখানো। বাংলাদেশেও ৭১ এ ৩০ লক্ষ মানুষ নির্মম গনহত্যার শিকার হয়েছিল। সে কথা না -বলেও একবার স্মরণ করা।
আপনাকে ধন্যবাদ-নতুন চিন্তার পথ দেখিয়ে দেওয়ার জন্য।
৮| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৬
উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: যুগে যুগে দেখা গেছে আদর্শ ভিত্তিক সরকারগুলোই বেশী অসহিষ্ণু হয়ে থাকে। ব্যতিক্রমও আছে। মিলেসোভিচ মনে হয় ডেমোক্রেটিক ভাবে নির্বাচিত।
সবার উপরে মানবাধিকারকে রাখলে এই সব দানবদের প্রতিরোধ করা সম্ভব।
৯| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৬
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: রাস্তার ছেলে আপনার বক্তব্যের মর্ম ঠিক আছে। কিন্তু আমি পলপট বা খেমারদের কমিউনিস্ট বলতে মোটেই রাজি নই। কমিউনিস্টরাও ভুল করেছে, মানুষও মেরেছে ক্ষেত্রবিশেষে। কিন্তু পলপট গোড়া থেকেই প্রতিবিপ্লবী। জাতীয়তাবাদী হুন সেন সরকারকে সরিয়ে ভিয়েতনামকে ধসানোই তার উদ্দেশ্য ছিল। আর সেটা তারা করেছিল মার্কিনিদের উদ্দেশ্যের হাতিয়ার হয়ে।
যাহোক, ইন্দোনেশিয়া ও শ্রিলঙ্কায় প্রায় চার লক্ষ কমিউনিস্ট হত্যার কাহিনী দেখি আজ আর কেউ বলে না। উইকিপিডিয়াতেও এ বিষয়ে কিছু আছে কি?
২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:৫৭
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ইন্দোনেশিয়ায় কমিউনিস্ট হত্যাকান্ড তারিক আলীর বইতে পড়েছি। লেখার ইচ্ছে রইল। আর শ্রীলঙ্কার ইতিহাস জানা নেই। তথ্য দিয়ে সাহয্য করলে খুশি হব।
১০| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:০৮
মুহাম্মাদ তারিক সাইফুল্লাহ বলেছেন: ফারুক ওয়াসিফ ভাই, আপনার তথ্যটি পড়ে চমকে উঠলাম। আমার ধারণা বিশ্বব্যপী জঙ্গীবাদের পিছনেও আমেরিকার হাত আছে! রবার্ট ল্যাংডনের 'অ্যান্জেলস এন্ড ডেমনস' পড়ে তাই মনে হয়।
১১| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১০
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: আমি স্ট্যালিন পুজাির নই। িকন্তু িতিন দউ কোটি লোক মেরেছিলেন এটা কতটা সত্য? দুই কোটি তার হাতে, দুই কোটি রুশ হিটলারের হাতে মরলে এক দশকেই তাদের চারকোটি লোক মারা যায়। কিন্তু রুশ জনমিতি কী তা প্রমাণ করে? স্ট্যালিনের বাড়াবাড়ির সঙ্গে সিআইএর প্রচারকে গুলিয়ে ফেললে কীভাবে হবে?
২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৫
ইমন জুবায়ের বলেছেন: আমিও বলি না যে ২ কোটি মানুষ স্টালিনের নির্দেশে মরেছিল। তবে ২য় মহাযুদ্ধে আশেপাশে বলে সংখ্যাটা প্রায় ওরকমই হওয়ার সম্ভাবনা। সোভিয়েত শাসন আর্মেনিয়াসহ মধ্য এশিয়ায় ক্রমেই ছড়াচ্ছিল। সামান্য বিরোধীতা হলেই সাইবেরিয়া। যেমন খেমার রুজদের হাতে ৩০ লক্ষ লোক মারা যায়নি। তখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল মৃত্যুর কারণও তাই।
তবে সব কিছুর পিছনে যে সি আই এর হাত আছে সেটাও সত্য।
আমি মাইক্রোসফট এনকার্টার ওপর নির্ভর করি। ওটাও তো সি আই এর ঘরের পাশের জিনিস।
১২| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১২
রাঙা মীয়া বলেছেন: *********
১৩| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:১৩
উম্মু আবদুল্লাহ বলেছেন: ফারুক ওয়াসিফ, খেমাররুজরা কিন্তু নিজেদের কমিউনিস্ট ভাবত। আদর্শ মানুষকে সব সময় মহান করে না।
আর তাছাড়া সমাজতন্ত্র শোষিতের অধিকারের কথা বললেও দেখা গেছে বিরোধীর প্রতি নিষ্ঠুর। এমন কি মাঝে মাঝে সমমনাদের প্রতিও।
১৪| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৯
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: @ সাধারণ সদস্যরা ভাবতো আর নেতারা তেমন প্রচার দিত। তারপরও বলি, কে কী ভাবে তা তার সম্পর্কে শেষ কথা না, তার সম্পর্কে শেষ কথা সে কী করে, তা।
১৫| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:২৭
আহসান হাবিব শিমুল বলেছেন: @ উম্মু আব্দুল্লাহ,
হিটলার, মুসোলিনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত।জর্জবুশ,রোনাল্ড রিগ্যান,
মার্গারেট থাচ্যার প্রত্যেকই জনগণের বিপুলভোটে নির্বাচিত।
সাদ্দামের কথা জানিনা।
১৬| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৫৯
আধার রাতের মুসাফির বলেছেন: যারা বিনা কারনে নির্দোষ মানুষ খুন করে ক্ষমতায় এসে যারা তাদের নিজদের গুনাগুন করে তারা তো চরম মুর্খ।
১৭| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:২০
রাস্তার ছেলে বলেছেন: @লেখক:
স্ট্যালিনের হত্যা আর পলপটের হত্যার মধ্যে পার্থক্য আছে। তবে তার আগে যেটা বলতে হয়, স্ট্যালিন এসব সত্বেও টিকে ছিলেন এবং এখনও রাশিয়ায় মোটামুটি জনপ্রিয়ই বলাচলে। কাজেই সেখান থেকে পলপটের পরাজয়ের কারণ শেখার মত কিছু ছিল না। আসলে কমিউনিস্ট বিপ্লবীরা তখনও কোথাও ক্ষমতা দখলের পর পরাজয় দেখেই নি (যদিও পলপট আসলে কমিউনিস্ট ছিল কিনা তা ক্ষমতা দখলের প্রায় ১ বছরের মধ্যেই প্রশ্ন বিদ্ধ হয়)।
এবার আসুন পার্থক্য নিয়ে। পলপট যেটা করেছিলেন, তা হল সত্যিকারের গণহত্যা। একেবারে সাধারণ মানুষকে শত্রুর কাতারে ফেলে নির্বিচারে হত্যা। পরবর্তিতে সেই হত্যার পেছনে আবার একটা ফালতু তত্ত্ব খাড়া করানো তার আরেকটা অপরাধ। অর্থাৎ ব্যাপারটা দাঁড়ায় এরকম যে, হত্যাকান্ডটা ছিল তার বিপ্লবি কর্মসূচীর আওতা ভুক্ত! ওদিকে স্ট্যালিনের হত্যা কিন্তু কোন কর্মসূচীর আওতা ভুক্ত ছিল না! অধিকাংশই ছিল রাজনৈতিক হত্যাকান্ড অথবা স্ট্যালিনের প্যারানয়িক আচরণের বহিঃপ্রকাশ।
**আপনার দেয়া হত্যাকান্ডের সংখ্যা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তাইবলে বলছিনা হাতেগোনা লোক খুন হয়েছিলেন!
@ফারুক ওয়াসিফ:
ঐ কাহিনীগুলো উইকিপিডিয়ায় আসার কোন কারণ আছে বলেন? প্রতিক্রিয়াশীলরা তাহলে ক্ষমতায় টিকে থাকে কি করে আর আমেরিকার জনগণ ওবামার পরিবর্তনের ডায়লগে ভোলে কি করে বলেন ব্রাদার?
১৮| ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:০২
ফারুক ওয়াসিফ বলেছেন: এটাই আসল কথা। স্ট্যালিন নিয়ে আর বেশি বলার দরকার দেখছি না।
১৯| ২৩ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:০৯
দিনমজুর বলেছেন:
পোস্ট পড়তে পড়তে যেটি লেখার তাগিদ বোধ করছিলাম- ফারুক ওয়াসিফ তা বলে দিয়েছেন। ফারুক ওয়াসিফকে অনেক ধন্যবাদ।
২৩ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ২:১৪
ইমন জুবায়ের বলেছেন: এবার খেমার রুজদের গনহত্যা নিয়ে লিখলাম।
এরপরে বিপথগামী খেমার রুজদের প্রকৃত সরুপ উম্মোচন করার চেস্টা করব।
ধন্যবাদ।
২০| ২৪ শে নভেম্বর, ২০০৮ দুপুর ১:৩৪
দিনমজুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: এবার খেমার রুজদের গনহত্যা নিয়ে লিখলাম।
এরপরে বিপথগামী খেমার রুজদের প্রকৃত সরুপ উম্মোচন করার চেস্টা করব।
ধন্যবাদ।
===========>>
আপনি মূল পোস্টে শুধু গণহত্যা নিয়ে লিখেননি, খেমারুজদের স্বরূপও কিছু উন্মোচন করেছেন। যেভাবে উন্মোচন করেছেন- সেটিতেই আপত্তি, তাছাড়া মোটের উপর পোস্টখানি ভালোই লাগছিল......
আপনার পোস্টের ৫ নং পয়েন্টের দিকে দেখিঃ
পলপট সরকার হত্যাযজ্ঞে মেতেছিল কেন?
কমিউনিষ্ট পলপট সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিল। নতুন এক সমাজ গড়তে চেয়েছিল খেমার রুজ গেরিলারা। গ্রামভিত্তিক, শ্রেণিহীন।ছেলেবেলায় কম্বোয়িায়ায় অপরিসীম দারিদ্র দেখেছিল পলপট। দেখেছিল ফরাসী শাসনশোষনের নির্মম ফল। বুদ্ধের মিঠে কথায় যে দারিদ্র দূর হয়নি টের পেয়েছিল। ইউরোপে গেলেন পলপট। মার্কসবাদ তখন নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। দরিদ্র রাশিয়াকে বদলে দিচ্ছে সোভিয়েতরা । মাসর্কবাদী তত্ত্বমতে: সমাজের রুপ (form)আছে। একে সচেতন ভাবে বদলানো যায়। কাজেই পলপটের নির্দেশে অস্ত্রের মুখে পাতি বুর্জোয়া আমেরিকা-আসক্ত নমপেনবাসীকে নিয়ে গেল গ্রামের পথে। হাঁটিয়ে। দু’পাশে খেমার রুজ গেরিলারা কারবাইন উঁচিয়ে। সামান্য এদিক ওদিক হলেই ঠা ঠা ঠা। এপ্রিল-মে মাসের গরম। তৃষ্ণা। পথেই মরল অনেকে। মাঝে মাঝে একটা কালো ট্রাক এসে থামত। লোকজনকে তুলে নিত। তারপর ট্রাকটা থামত কোনও নির্যাতন কেন্দ্র। হয়তো টুঅল স্লেঙ্গ-এ।
টুঅল স্লেঙ্গ থেকে চোয়েয়ুঙ্গ এক।
আপনি আপনার পোস্টের ৫ নং পয়েন্টে যা লিখেছেন- তা আরেকবার পড়ুন, সে অংশটুকু কি একইরকম রাখবেন? পলপট সরকার হত্যাযজ্ঞে কেন মেতেছিল এর জবাব ফারুক ওয়াসিফের আলোচনায় দারুন ভাবে এসেছে, ফলে নতুন করে কিছু বলার নেই।
হয় আপনি ফারুক ওয়াসিফের বক্তব্য বা যুক্তিগুলো খণ্ডন করুন, নতুবা- আপনার পোস্টে কিছু এডিট করুন।
আপনাকে ধন্যবাদ।
২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ৭:৫১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: এডিট করার টেননিকাল ঝামেলা আছে। ফাইল হারিয়ে যায়।
তার চে বরং আপনার ও ওয়াসিফের বিশ্বাসের ওপর আরেকটা পোস্ট দিই। অবশ্য পরে। তার আগে দৃস্টিভঙ্গিটা বোঝার চেস্টা করি।
ধন্যবাদ।
২১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১১:১৯
রাগিব বলেছেন: রাস্তার ছেলে বলেছেন:
@ফারুক ওয়াসিফ:
ঐ কাহিনীগুলো উইকিপিডিয়ায় আসার কোন কারণ আছে বলেন? প্রতিক্রিয়াশীলরা তাহলে ক্ষমতায় টিকে থাকে কি করে আর আমেরিকার জনগণ ওবামার পরিবর্তনের ডায়লগে ভোলে কি করে বলেন ব্রাদার?
-----
আপনি একটা ভুল করছেন, উইকিপিডিয়া কিন্তু কোনো সরকারী বিশ্বকোষ না। বরং এনকার্টাতে / ব্রিটানিকাতে যা আসতে পারে না, এমন তথ্য উইকিপিডিয়াতেই আসা সম্ভব। (নির্ভরযোগ্য) তথ্যসূত্র দেয়া হলে তথ্যযোগে বাঁধা নেই। সমস্যাটা হলো উইকিপিডিয়া কীভাবে কাজ করে, তা না বুঝেই অনেকে উইকিপিডিয়াতে অমুক নেই কেনো, তমুক নেই কেনো বলতে থাকে ... তথ্যসূত্র যোগ করে তথ্যের ত্রুটি ঠিক করার "ঝামেলা" তারা আর পোহাতে চায় না।
২২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৬
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: চমৎকার....
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৫:২৮
রাইহান বলেছেন: পোস্ট টাকে আমার প্রিয়তে যায়গা করে দিলাম।