![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]
রূপক হল কাব্যের অলংকার। কাব্যে রূপকের ব্যবহার কাব্যকে সুন্দর করে। সেরকম, বাউল গানে অনেক শব্দই রূপক। রূপক মানে, এমন একটা শব্দ-যে শব্দের মানে অন্য। যেমন, বাউলগানে (অনেকসময়) বাড়ি মানে শরীর, আরশিনগর মানে শরীরের ভিতর আল্লার ঘর, পড়শি মানে আল্লা। বাউল গানে অনেক শব্দই রূপক বলে অনেক সময়ই গানের প্রকৃতমানে বোঝা যায় না। শ্রোতাকে গানের (বাহ্যিক) কথা সুর তাল ও ছন্দের ব্যাঞ্জনা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। বাউল গান সেভাবেও উপভোগ করা যায়। সেভাবে উপভোগ করলেও ক্ষতি নেই-আসলে তো তাইই হচ্ছে। ‘মিলন হবে কত দিনে আমার মনের মানুষেরও সনে’-লালনের এই গানটিকে অনেকেই মানবমানবীর প্রেম মনে করেন। আসলে তা না। বলা হয় যে বাউলের সাধনা বড় গূঢ়-সাধারণ মানুষ তার মানে বুঝবে সে উপায় কী। তারপরও বাউল দর্শন সম্বন্ধে সামান্য জ্ঞান থাকলে বাউলগানের একরকম মানে করা যেতে পারে বলে মনে করি।
‘বাড়ির কাছে আরশিনগর, সেথায় এক পড়শি বসত করে।’ এই গানটি অসম্ভব জনপ্রিয় একটি গান। তবে আরশিনগর, পড়শি -এই শব্দগুলি রূপক হওয়ায় গানের প্রকৃতমানে বোঝা অনেকের কাছেই কঠিন। লালনের কৃতিত্ব এই-তিনি রূপক না এড়িয়েই গান রচনা করেছেন এবং সে গান বাংলার জনসমাজে অত্যন্ত আদৃতও হয়েছে।
বাউলদর্শন সম্বন্ধে দু-চার কথা বলে ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’ গানটির মানে বোঝার চেষ্টা করা যাক।
বাউলের বিশ্বাস -বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা বাস করেন মানবদেহে। মানবদেহে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব কখনও টের পাওয়া যায়, কখনও যায় না। বাউল মানবদেহে বসবাসরত সৃষ্টিকর্তার নাম দিয়েছে শাঁই, অধরা বা মানুষরতন। লালন বলেছেন,
বাড়ির কাছে (শরীরের ভিতর)আরশিনগর (শরীরের ভিতর সৃষ্টিকর্তা যেখানে বাস করে), সেথায় এক পড়শি (সৃষ্টিকর্তা) বসত করে।
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।
লালন নিজের ভিতরে সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব টের পেয়েছেন। কিন্তু, দেখেননি। কেন? কারণ, আবারও রূপক -
গেরাম বেড়ে অগাধ পানি, তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে।
গেরাম বেড়ে অগাধ পানি- মানে আদিগন্ত অথৈ জল। তার মানে বিস্তর ব্যবধান। যে জলের পারে নৌকা নাই। তার মানে কোথাও যাওয়া যায় না। তার মানে শরীরের ভিতরের শাঁইকে দেখতে পাওয়া অত সহজ নয়। তবে লালন বলেছেন-
বাঞ্ছা করি দেখব তাঁরে কেমনে সেথায় যাইরে।
শাঁইয়ের কাছে এই যাওয়াটাই বাউলের জীবনভর সাধনা।এখানেই বাউলের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য। আমাদের অভ্যেস আছে সাধনা নাই। আমরা সব রেডিমেড পেতে চাই-সাধনায় পেতে চাই না।
কিন্তু, শাঁইয়ের কাছে এই যাওয়াটাই বাউলের জীবনভর সাধনা কেন?
শাঁইয়ের কাছে যাওয়াটাই হচ্ছে আলটিমেট মিস্ট্রি। পরম রহস্য। এরচেয়ে বড় রহস্য আর মহাবিশ্বে নাই যে অনন্তের সৃষ্টিকর্তা মানুষের শরীরের ভিতরে বাস করেন। মানুষের শরীরের ভিতরে বাস করে রহস্য করেন। লীলা করেন।
মহাত্মা লালন এখন শাঁইয়ের কিঞ্চিত পরিচয় দিচ্ছেন।
বলব কী সেই পড়শির কথা, তাঁর হস্তপদ স্কন্ধমাথা নাইরে।
কেন পড়শির (শাঁইর,সৃষ্টিকর্তার) হস্তপদ স্কন্ধমাথা (হাত-পা-ঘাড়-মাথা) নাই?
যেহেতু তিনি নিরাকার। তাই। পৃথিবীর যেকোনও ধর্মেই সৃষ্টিকর্তাকে বলা হয়েছে নিরাকার।
তারপর লালন বলছেন,
(শাঁই) ক্ষণেক ভাসে শূন্যের উপর, ক্ষণেক ভাসে নীরে। (নীরে অর্থ পানি)
এ হচ্ছে তাঁর (শাঁইর) রহস্য-যে তিনি রুপবদল করেন।
তারপর লালন বলছেন,
পড়শি যদি আমায় ছুঁতো, যম যাতনা সকল যেত দূরে।
তখন বলেছিলাম যে, শাঁইয়ের কাছে এই যাওয়াটাই বাউলের জীবনভর সাধনা। বাউল শাঁইর কাছে যেতে চায়। কেন? কৌতূহল মেটানোর জন্য। তাই লালন বলছেন, পড়শি যদি আমায় ছুঁতো, যম যাতনা সকল যেত দূরে। কিন্তু, যম যাতনা কেন? কারণ, বাউল নিজের ভিতরে সৃষ্টিকর্তাকে টের পেলেও দেখতে পাচ্ছে না। কেননা,
সে আর লালন একখানে রয় লক্ষ যোজন ফাঁকরে।
একসঙ্গে থাকলেও দুজনের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। বাউলের যম যাতনা বা মানসিক যন্ত্রনা এজন্যই। বাউল সৃষ্টিকর্তাকে জানতে চায়। কেননা, সৃষ্টিকর্তা হলেন পরমরহস্য। বাউলেরা সৃষ্টিকর্তার আর্শীবাদে জগতে ধনসম্পদের মালিক হতে চায় না। সৃষ্টিকর্তাকে জানার প্রয়োজন তাঁর কেবলি কৌতূহল মেটানোর জন্য, জ্ঞানের প্রয়োজনে-অ্যাকাডেমিক।
বাংলার বাউলের মহত্ত্ব এখানেই।
এখন মনে হয় গানটা শুনলে আর আগের মতন জটিল মনে নাও হতে পারে।
বাড়ির কাছে আরশিনগর, সেথায় এক পড়শি বসত করে।
আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।
গেরাম বেড়ে অগাধ পানি, তার নাই কিনারা নাই তরণী পারে।
বাঞ্ছা করি দেখব তাঁরে কেমনে সেথায় যাইরে।
বলব কী সেই পড়শির কথা, তাঁর হস্তপদ স্কন্ধমাথা নাইরে।
ক্ষণেক ভাসে শূন্যের উপর, ক্ষণেক ভাসে নীরে। (নীরে অর্থ পানি)
পড়শি যদি আমায় ছুঁতো, যম যাতনা সকল যেত দূরে।
সে আর লালন একখানে রয় লক্ষ যোজন ফাঁকরে।
গানটি আবদেল মাননান সম্পাদিত ‘অখন্ড লালনসঙ্গীত’ থেকে নেওয়া হয়েছে।
২৪ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: বাউলের এই আক্ষেপ।
২| ২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:০৯
প্রণব আচার্য্য বলেছেন: +
+
+
২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:১৩
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
৩| ২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:২১
বিষাক্ত মানুষ বলেছেন: আবদেল মাননান সম্পাদিত ‘অখন্ড লালনসঙ্গীত’ প্রথম প্রকাশকাল কবে একটু জানাবেন !!!
২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:২৬
ইমন জুবায়ের বলেছেন: এবছরই। ফেব্রুয়ারি; ২০০৯। অসাধারণ ভূমিকা লিখেছেন মাননান। ধন্যবাদ।
৪| ২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৪১
লাবণ্য প্রভা গল্পকার বলেছেন: পাবে সামান্যে কি তার দেখা
২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ৮:৪৮
ইমন জুবায়ের বলেছেন: তাই তো।
৫| ২৪ শে মার্চ, ২০০৯ রাত ১০:১৪
রাজা সরকার বলেছেন: "রুপক" বানানটা কি ঠিক করা যায় না--"রূপক" রূপে?
ভালো ভালো লেখার জন্য এই সুযোগে জানিয়ে রাখি ধন্যবাদ ।
২৫ শে মার্চ, ২০০৯ ভোর ৬:৩২
ইমন জুবায়ের বলেছেন: হ্যাঁ, রুপক হবে রূপক। ঠিক করব।
ধন্যবাদ।
৬| ২৫ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:১৯
নাজনীন খলিল বলেছেন:
যথারীতি চমৎকার একটি পোস্ট।
তোমার সবগুলো লেখাই তাই।
শুভেচ্ছা।
২৫ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ২:৪১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ। এবং শুভেচ্ছা।
৭| ২৭ শে মার্চ, ২০০৯ দুপুর ১:৪৮
কানা বাবা বলেছেন:
যমযাতনা সকল যেতো দূরে- ...বিয়িং ফ্রি ফ্রম দ্য হুইল অব লাইফ এন্ড ডেথ... হোয়্যার দেয়ার উইল বি নো মোর ডেথ অর সাফারিংস...
পুস্টে পিলাচ্...
৮| ২৭ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৪:১১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক দিন পর। থ্রি কমরেডস এখনও খুঁজছি। আপনার জন্য একটি লিঙ্ক-
http://www.scribd.com/
৯| ২৭ শে মার্চ, ২০০৯ বিকাল ৪:২৪
কানা বাবা বলেছেন:
লিঙ্কের লিগা ত্যাঙ্কুজ, জুবায়ের। মাগার পুস্তকখান পাই নাই...
...ম্যালাদিন বাদে আইজকা ইট্টু টাইম্পাইচি...
১০| ০৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১০:১০
মে ঘ দূ ত বলেছেন: এত্তোদিন বাদে এই গানটার মানে জানলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।
০৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১০:৫১
ইমন জুবায়ের বলেছেন: লালনের অন্যান্য গান বুঝতেও এই লেখাটা সাহায্য করবে।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে মার্চ, ২০০৯ সন্ধ্যা ৭:৫০
কিরিটি রায় বলেছেন:
পড়শি যদি আমায় ছুঁতো, যম যাতনা সকল যেত দূরে।
সে আর লালন একখানে রয় লক্ষ যোজন ফাঁকরে।