নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালী, আতরাফ মুসলমান ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।রবীন্দ্রনাথ

ইমন জুবায়ের

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]

ইমন জুবায়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

রায়বাড়ির বড়কর্তা

১৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১০:১৪





উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী । তাঁর প্রথম বইয়ের নাম: ‘ছোটদের রামায়ন’ । সেই বইয়ের জন্য তিনি যেসব ছবি এঁকেছিলেন-সেসবের ছাপা তাঁর মনঃপূত হয়নি। ফলত নিজেই ছাপাখানা দেবেন বলে ভাবলেন; বিলেত থেকে যন্ত্রপাতিও আনালেন । সময়টা ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দ। বিলেত থেকে যন্ত্রপাতি আসার পর সেসব নিয়ে রীতিমতো গবেষনা শুরু করলেন উপেন্দ্রকিশোর। অসম্ভব প্রতিভাবান মানুষ ছিলেন; কাজেই, মুদ্রণবিষয়ে কত কী যে আবিস্কার করলেন: নানা রঙের হাফটোন, ডায়াফ্রাম, ব্লক নির্মানের ডায়োটাইপ। ইউরোপেও পর্যন্ত তাঁর আবিস্কারের ভূষসী প্রশংসা হল। লন্ডন থেকে প্রকাশিত ‘পেনরোজেজ পিকটোরিয়াল অ্যানুয়াল’ পত্রিকায় তখন মুদ্রণবিষয়ে তাঁর লেখাও বেরিয়েছিল। ছাপাখানা সংক্রান্ত "ইউ রায় অ্যান্ড সন্স" নামে একটি কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী । এভাবেই বাংলায় তথা ভারতবর্ষে প্রসেস-মুদ্রণ শিল্প বিকাশের সূত্রপাত করলেন বাংলার এই প্রতিভাবান মানুষটি।



১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ১০ মে; উপেন্দ্রকিশোরের জন্ম কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী থানার মসূয়া গ্রামে ।

বাবার নাম কালীনাথ রায়। কালীনাথ রায়ের আরেকটি নাম ছিল: শ্যামসুন্দর মুন্সী। কালীনাথ রায় ছেলের নাম রেখেছিলেন কামদারঞ্জন। তৎকালীন সময়ে মসুয়া গ্রামের জমিদার ছিলেন হরিকিশোর চৌধুরী। তিনি কী রকম যেন আত্মীয় হতেন কালীনাথ রায়ের। জমিদার হরিকিশোর চৌধুরী পাঁচ বছরের টলটলে কামদারঞ্জন দেখে দত্তক নিতে চাইলেন। জমিদার হরিকিশোর চৌধুরী নিঃসন্তান ছিলেন। কালীনাথ রায় রাজী হয়েছিলেন। কালীনাথ রায় ওরফে শ্যামসুন্দর মুন্সীর কি আরও পুত্রসন্তান ছিল? কে জানে। যা হোক। জমিদার হরিকিশোর চৌধুরী পুষ্যির নাম রাখলেন উপেন-উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। উপেনকে দত্তক নেওয়ার পর জমিদার হরিকিশোর চৌধুরীর এক পুত্র সন্তান জন্মেছিল। জমিদার হরিকিশোর চৌধুরী তাঁর সমূদয় সম্পত্তি

উপেন্দ্রকিশোরকে দান করে গেলেও শিল্পমহিমাবশত উপেন্দ্রকিশোর তাঁর সৎ ভাইকে বঞ্চিত করেননি-অর্ধেক সম্পত্তি তাকেও দিয়েছিলেন!

যা হোক। বালক উপেন স্কুলে ভর্তি হল। আর সমানে আঁকঝোঁক চলছিল আশ্চর্য এক উদার পরিবেশে । এ যেন নিয়তি-কেননা তাঁর মধ্য দিয়েই ভবিষ্যতে বাংলার এমন এক পারিবারিক ধারার জন্ম হবে যে- পরিবারের পরবর্তী দু-জন অসামান্য প্রতিভাবান মানুষ গানে ছড়ায় কবিতায় গল্প উপন্যাস চলচ্চিত্রে বাংলাকে প্লাবিত করে জগৎসংসারকেও মুগ্ধ ও হতবাক করে দেব । কাজেই ভাবতে প্রলুব্দ হই-কেমন ছিল সেই রায়চৌধুরীদের জমিদার বাড়ি। একটি পাকা চাতাল ঘিরে তিনতলা ভবন। রেলিং-এ টুনটুনি কি অন্য কোনও পাখি। দুপুরের নীরব অলিন্দে বেড়াল ... এসবই পরবর্তীকালে উঠে এসেছিল উপেন্দ্রকিশোরের লেখায়। এবং এটা কোনও আকস্মিক ঘটনা নয় যে- গান ভালোবাসত কিশোর উপেন্দ্রকিশোর। আদরের জমিদারনন্দন বলেই শিক্ষকের অভাব হয়নি উপেনের। বালক উপেন একে একে শিখল - পাখোয়াজ, হারমোনিয়াম, সেতার, বাঁশি ও বেহালা। তবে বেহালাই পছন্দ করত বেশি। পরে এ নিয়ে আরও বলব।

আর্টের চর্চার পাশাপাশি চলছিল পড়াশোনা।

ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। এই গৌরবময় প্রতিষ্ঠানটিকে যাঁরা যাঁরা ধন্য করে রেখেছে- উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী তাদের মধ্যে অন্যতম। ভালো ছাত্র ছিলেন বলাবাহুল্য। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকেই বৃত্তি নিয়ে প্রবেশিকা পরীক্ষা (আজকালকার এস এস সি) পাস করলেন- সময়টা ১৮৮০ খ্রিষ্টাব্দ।

তখনকার দিনের পূর্ববঙ্গে বনেদি পরিবারের একটি রেওয়াজ ছিল-তাদের ছেলেদের কলকাতায় পড়তে যাওয়া। উপেন্দ্রকিশোরও কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়ে পড়লেন কিছুদিন। কেন জানি ভাল্ লাগল না। তারপর কলকাতা মেট্রোপলিটন কলেজে ভর্তি হন। আঁকা ও গানের পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা চলছিল। শিশুকিশোর পত্রিকায় নিয়মিত লিখতেন। সেকালের কয়েকটি শিশুকিশোর পত্রিকার নাম: সখা, সখা ও সাথী, মুকুল, বালক, সাথী ইত্যাদি। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা একটি শিশুতোষ গল্প পড়ি; গল্পের নাম ‘টুনটুনি আর বিড়ালের কথা’:



গৃহস্থের ঘরের পিছনে বেগুন গাছ আছে। সেই বেগুণ গাছের পাতা ঠোঁট দিয়ে সেলাই করে টুনটুনি পাখিটি তার বাসা বেঁধেছে।বাসার ভিতর তিনটি ছোট্ট-ছোট্ট ছানা হয়েছে। খুব ছোট্ট ছানা, তারা উড়তে পারে না, চোখও মেলতে পারে না। খালি হাঁ করে আর চীঁ-চীঁ করে।

গৃহস্থের বিড়ালটা ভারি দুষ্টু। সে খালি ভাবে ‘টুনটুনির ছানা খাব।’ একদিন সে বেগুন গাছের তলায় এসে বললে, ‘কি করছিস লা টুনটুনি?’

টুনটুনি তার মাথা হেঁট করে বেগুণ গাছের ডালে ঠেকিয়ে বললে, ‘প্রণাম হই, মহারানী!’ তাতে বিড়ালনী ভারি খুশি হয়ে চলে গেল।এমনি সে রোজ আসে, রোজ টুনটুনি তাকে প্রণাম করে আর মহারানী বলে, আর সে খুশি হয়ে চলে যায়।এখন টুনটুনির ছানাগুলি বড় হয়েছে, তাদের সুন্দর পাখা হয়েছে। তারা আর চোখ বুজে থাকে না। তা দেখে টুনটুনি তাদের বললে, ‘বাছা, তোরা উড়তে পারবি?’

ছানারা বললে, ‘হ্যাঁ মা, পারব।’

টুনটুনি বললে, ‘তবে দেখ তো দেখি, ঐ তাল গাছটার ডালে গিয়ে বসতে পারিস কি না।’

ছানারা তখনই উড়ে গিয়ে তাল গাছের ডালে বসল। তা দেখে টুনটুনি হেসে বললে, ‘এখন দুষ্টু বিড়াল আসুক দেখি!’

খানি বাদেই বিড়াল এসে বললে, ‘কি করছিস লা টুনটুনি?’

তখন টুনটুনি পা উঁচিয়ে তাকে লাথি দেখিয়ে বললে, ‘দূর হ, লক্ষ্মীছাড়ী বিড়ালনী!’ বলেই সে ফুডুক করে উড়ে পালাল।

দুষ্টু বিড়াল দাঁত খিঁচিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠে, টুনটুনিকেও ধরতে পারলে না, ছানাও খেতে পেল না। খালি বেগুন কাঁটার খোঁচা খেয়ে নাকাল হয়ে ঘরে ফিরল।



ময়মনসিং থাকতে ছেলেবেলায় যা দেখেছিলেন যা শুনেছিলেন আসলে গল্পের ছলে তাইই লিখেছেন উপেন্দ্রকিশোর । উপেন্দ্রকিশোর বিরাট মানুষ । বিরাট মানুষেরা সহজে ছেলেবেলাকে ভুলে যায় না। বিরাট মানে মহৎ । বাংলার এক পল্লীজনপদের জীবনকে ধরে রেখেছেন মহৎ উপেন্দ্রকিশোর । ঘটনা সামান্যই- বেড়াল আর টুনটুনি তবে তার মূল্য অপরিসীম। ... তখন টুনটুনি পা উঁচিয়ে তাকে লাথি দেখিয়ে বললে, ‘দূর হ, লক্ষ্মীছাড়ী বিড়ালনী!’ বলেই সে ফুডুক করে উড়ে পালাল। দুষ্টু বিড়াল দাঁত খিঁচিয়ে লাফিয়ে গাছে উঠে, টুনটুনিকেও ধরতে পারলে না, ছানাও খেতে পেল না। খালি বেগুন কাঁটার খোঁচা খেয়ে নাকাল হয়ে ঘরে ফিরল।

টুনটুনিকে আমার বাংলা মনে হয়। মানে, বাংলার প্রতীক মনে হয়। বিড়ালনীকে বৈদেশিক শোষক ...কিংবা, টুনটুনিকে আমার মনে হয়: নারী। বিড়ালকে ...অবিবেচক প্রতিপক্ষ ...।

যাগ গে। ১৮৮৩ সালে উপেন্দ্রকিশোরের প্রথম লেখা ছাত্র অবস্থাতেই বেরয়। মনে থাকবার কথা তাঁর প্রথম বইয়ের নাম: ‘ছোটদের রামায়ন’ । ১৮৮৪ সালে বি.এ পরীক্ষা পাস করলেন। এরপর ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন একেশ্বরবাদী উপেন্দ্রকিশোর । তখন বলছিলাম আমি-এটা আকস্মিক নয় যে গান ভালোবাসতেন কিশোর উপেন্দ্রকিশোর। জমিদার নন্দন বলেই শিক্ষকের অভাব হয়নি। একে একে শিখলেন পাখোয়াজ, হারমোনিয়াম, সেতার, বাঁশি ও বেহালা। তবে বেহালাই পছন্দ করতেন বেশি।

ব্রাহ্মসমাজের প্রার্থনাসংগীতে বেহালা সঙ্গত করে কলকাতার বাঙালী একেশ্বরবাদীদের মন জয় করেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর ...এবং তাঁর ফল হয়েছিল সুদূরপ্রশারী।







এবার অন্য প্রসঙ্গে যাই।

দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের ছিলেন কলকাতার একজন বিশিষ্ট সমাজসেবী। ব্রাহ্মসমাজে যোগ দিয়েছিলেন দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় । বিকেলে প্রার্থনাসভায় আসতেন। তরুণ উপেন্দ্রকিশোর তখন ব্রাহ্মসমাজের প্রার্থনাসংগীতে বেহালা সঙ্গত করে একেশ্বরবাদীদের মন জয় করছিলেন। বিস্মিত দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় কী যেন ভাবলেন। তাঁরই জ্যেষ্ঠা কন্যা বিধুমুখী। শ্রীময়ী ও সুলক্ষণা। দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের অতি আদরের। যেনতেন ছেলের কাছে তো মেয়ে অর্পন করা যায় না। তা ছাড়া ... উপেন্দ্রকিশোরেরা পূর্ববঙ্গের রায়চৌধুরী -অসবর্ণ কায়েত তো নয় ...দেখি কী হয় ...সাধারণত জমিদারতনয় উচ্ছন্নে যায়, বউবাজারের রাঢ়বাড়িতে মদ্যপ অবস্থায় পড়ে থাকে ...আর, শিক্ষিত শিল্পপ্রাণ উপেন্দ্র তো নির্ঘাৎ স্বরস্বতীর বর পাওয়া ....

১৮৮৬ সাল। দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের নিগূঢ় তৎপরতায় বিধুমুখীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল উপেন্দ্রকিশোরের।

পরের বছর, অর্থাৎ, ১৮৮৭ সালে ৩০ অক্টোবর বিধুমমুখীর ঘর আলো করে এক ছেলে হল। উপেন্দ্রকিশোর ছেলের নাম রাখলেন সুকুমার- সুকুমার রায়। পদবী মানুষে-মানুষে দূরত্ব বাড়ায়। কাজেই, নামের শেষে পূর্বতন জমিদারসুলভ চৌধুরী ছেঁটে কেবল ‘রায়’ বহাল রাখলেন উপেন্দ্রকিশোর ।

দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় নাতির মুখ দেখে বেহুঁশ।

বাল্য বয়স থেকেই ছড়া-কবিতা লিখে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল সুকুমার। বাঙালির ভীষণই প্রিয় হয়ে উঠেছিল সে ছড়া। একটা প্রমাণ দিই-



এক যে ছিল রাজা -(থুড়ি,

রাজা নয় সে ডাইনি বুড়ি)!

তার যে ছিল ময়ুর -(না না,

ময়ুর কিসের? ছাগল ছানা )।

উঠানে তার থাকত পোঁতা -

-(বাড়িই নেই ,তার উঠান কোথা )?

শুনেছি তার পিশতুতো ভাই -

-(ভাই নয়তো ,মামা -গোঁসাই)।

বল্ত সে তার শিষ্যটিরে -

-(জন্ম -বোবা ,বল্বে কিরে)

যা হোক, তারা তিনটি প্রানী -

-(পাঁচটি তারা, সবাই জানি !)

থও না বাপু খ্যাঁচাখেঁচি

-(আচ্ছা বল ,চুপ করেছি)।

তারপরে যেই সন্ধ্যাবেলা ,

যেম্নি না তার ওষুধ গেলা,

অম্নি তেড়ে জঁটায় ধরা -

-কোথায় জঁটা ? টাক যে ভরা !)

হোক না টেকো তোর তাতে কি?

গোম্ড়ামুখো মুখ্য ঢেঁকি!

ধরব ঠেসে টুটির পরে

পিট্ব তোমার মুন্ডু ধরে।

এখন বাছা পালাও কোথা ?

গল্প বলা সহজ কথা?



দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায় নাতির মুখে ছড়া শুনে বেহুঁশ।

যাক। বাল্যবয়সে কলকাতার সিটি স্কুলে পড়ল সুকুমার। আর্টের লোক হয়েও রসায়নে বিপুল আগ্রহ ছিল সুকুমারের । এখানেও কবিতা আর বিজ্ঞান একাকার। ১৯১১ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে রসায়নের অর্নাসসহ বি এস সি পাস করলেন সুকুমার । উপেন্দ্রকিশোর বললেন, ‘আমি কখনও বিলেত যাইনি, তুমি যাও।’ সুকুমার- কাজেই বিলেত পৌঁছলেন। স্কলারশীপ পেয়েছিলেন। সেটা কাজে লাগল। সুকুমারের পড়ার বিষয়-টেকনোলজি।







রায়বাড়ির দ্বিতীয় কর্তা



বিলেতে পড়াশোনার পাশাপাশি ইউরোপের মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন প্রচার করেছেন সুকুমার। বাবা উপেন্দ্রকিশোর ছবি এঁকেছেন রবীন্দ্রনাথের ‘নদী’ কবিতার। সত্যজিৎ-এঁদেরই ঘরের ছেলে বিভূতিভূষনের একটি উপন্যাসের চলচ্চিত্ররুপ দিয়ে বিশ্বকে চিনিয়েছিলেন রুপসী বাংলার মা-মাটি-মানুষকে ...এই অলীক অপরুপ ধারা ...আমাদেরই স্বীয় উত্তাধিকার ...এই গর্ব ...এই অহংকার ...এখনও আমাদের দাঁড়িয়ে থাকার কারণ ...আমরা যেদিন এইসব ইতিহাস ভুলে যাব ...সেদিন আমরা নিভে যাব ...যে ইতিহাসের শুরুর বাক্যটি এরকম: ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দে ১০ মে; কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদির মসুয়া গ্রামে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর জন্ম। বাবার নাম কালীনাথ রায় ...

যাক। বিলেত থেকে ফিরে এসে বাবার কোম্পানি জয়েন করলেন সুকুমার। ততদিনে উপেন্দ্রকিশোরের ইউ রায় অ্যান্ড সন্স প্রতিষ্ঠানটি ভালো ভাবেই দাঁড়িয়ে গিয়েছিল।

সেই সময় কলকাতায় সুপ্রভা নামে এক কন্ঠশিল্পীর বেশ নাম ছড়িয়েছিল । তাঁরই সঙ্গে বিয়ে হয়ে গেল সুকুমারের। ১৯২১ সালের ২ মে সুপ্রভা রায়ের এক ছেলে হল । ছেলেটি পরে বিশ্বকে জানিয়ে দিয়েছিল: বাঙালিরা কোথায় আলাদা ... সুকুমার ছেলের নাম রাখলেন মানিক। এই মানিককেই পরে বিশ্ব চিনেছিল সত্যজিৎ রায় নামে। ইনিই রায়বাড়ির তৃতীয় পুরুষ ...(সত্যজিত নামটা রেখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ।)

এবার আবার রায়বাড়ির আদিকর্তার কথা বলি।







ব্যবসা করুন আর যতই বেহালা বাজান - আসলে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের দিকপাল । একাধারে ছড়া কবিতা গান গল্প নাটক বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ রুপকথা উপকথা পৌরাণিক কাহিনী বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী লিখে তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যের ভিতটি দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন । তাঁর বহুলপঠিত বইগুলো হল: ছোটদের রামায়ন, ছোটদের মহাভারত, সেকালের কথা, মহাভারতের গল্প, ছোট্ট রামায়ন, টুনটুনির বই, গুপী গাইন বাগা বাইন । মৌলিক রচনা বাদেও অনুবাদ করেচেন বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস। আগেই ভিন্ন প্রসঙ্গে বলেছি-ছবি এঁকেছেন রবীন্দ্রনাথের ‘নদী’ কবিতার। তেলরঙ ছিল উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর পছন্দ। তবে জলরঙেও সমান কুশলী ছিলেন তিনি। আগেই বলেছি একবার নিজের বইতে ছবি নিজেই আঁকতেন উপেন্দ্রকিশোর ।

১৯১৩ সাল। শিশুতোষ মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশ’ প্রকাশিত হল। আজও কলকাতা থেকে প্রকাশ হচ্ছে সন্দেশ। বাঙালি ছেলেমেয়েদের মানসে সন্দেশের শিল্পিত অভিঘাতের কথা বলে শেষ করা যাবে না। বিষয়টি পৃথক পোষ্ট দাবী করে। অপেক্ষায় থাকুন।

এমন কী সংগীত নিয়েও দুটো বই লিখেছিলেন। ‘বেহালা শিক্ষা’ ও ‘হারমোনিয়াম শিক্ষা’।

পাশ্চাত্য সংগীত নিয়েও প্রচুর জ্ঞানার্জন করেছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ।

মাত্র ৫৩ বছর বয়েসে এই বিশাল বিরাট শিল্পমগ্ন মহৎ মানুষটি মৃত্যু ... ২০ ডিসেম্বর ১৯১৫ ...

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১০:২২

শিমুল সালাহ্উদ্দিন বলেছেন: +

১৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১০:২৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১১:০৬

মেহবুবা বলেছেন: খুব ভাল লাগল আমার , আমাদের প্রিয় একজনের জীবন উপস্থাপনায় ।

এই প্রসঙ্গে উপেন্দ্রকিশোরের মহানুভবতার কথা বলতে ইচ্ছে করছে । তার নি:সন্তান পালক পিতা নিজের সব সম্পত্তি তাকে দেবে এমন শর্তে তাকে নিয়েছিলেন । পরবর্তীতে তার ঘরে পুত্র জন্মগ্রহন করে , উপেন্দ্রকিশোর সেই সহোদরকে বঞ্চিত করেনি , সম্পত্তি ভাগ করে দেয় তাকে ।

প্রিয়তে লইল ্

১৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১১:১৩

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অসাধারন মানুষ উপেন্দ্রকিশোর।
আপনাকে ধন্যবাদ আমার জন্য প্রয়োজনীয় অজানা তথ্যটি জানিয়ে দেবার জন্য।
আমার লেখায় এ তথ্যটি যোগ করে নেব।
আবারও ধন্যবাদ।

৩| ১৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১১:১১

নুশেরা বলেছেন: ++++++++++++++++++++++
সন্দেশের পোস্টের জন্য অপেক্ষায় রইলাম।

১৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১১:১৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: দেব।

৪| ১৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১১:২৭

সব্যসাচী প্রসূন বলেছেন: খেলব না ইমন ভাই... :( ... রায় বাড়ি নিয়ে লিখব ভেবেছিলাম আপনি লিখে ফেললেন .. :|... ব্যাকুল হয়ে তাকিয়ে আছি এই পর্বগুলোর দিকে :) ... টপাটপ লিখে ফেলুন... :)

১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:৩১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: আরে আমি একাই লিখব নাকি। অন্যরাও লিখুক।

৫| ১৫ ই মে, ২০০৯ সকাল ১১:৪৫

মোহাম্মদ জাফর সাদেক বলেছেন: ভালো লাগলো। অন্য পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।

১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:৩২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৬| ১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:০১

তারানা_শব্দ বলেছেন: দারুন লাগলো!!

১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৫

ইমন জুবায়ের বলেছেন: হ্যাঁ। বিষয়টা বাঙালির আত্মার যে ...
ধন্যবাদ।

৭| ১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১:৫০

জয় সরকার বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ অসাধারন তথ্যসমৃদ্ধ এই পোষ্টের জন্য।এককথায় দূ্র্দান্ত হয়েছে...............;)

প্লাস সাথে প্রিয়তে।

রায় বাড়ির আরেক কিংবদন্তী সত্যজিৎ রায় এর জীবনইতিহাস নিয়ে লেখা পাবেন এইখানে।

১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ১:৫১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
নতুন লিঙ্কটা দেখছি।

৮| ১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ২:৩৯

পথহারা আমি বলেছেন: +

১৫ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৪:৫১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৯| ১৫ ই মে, ২০০৯ দুপুর ২:৪২

সহেলী বলেছেন: ভাল লাগল এসব পড়তে পেরে নতুন করে ।

১৫ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৪:৫২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। এসব কথা বারবার বলতে হয়। বারবার।

১০| ১৫ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৩:২৪

আকাশ অম্বর বলেছেন: তিনটি প্রজন্ম আর আমার এক নিঃশ্বাসে পড়া। চমৎকার।

আপনার লেখায় ঢুকলে, শেষ হওয়ার আগে বের হয়ে আসা কঠিন।

১৫ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৪:৫১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: তাই?
তোমার প্রথম পাতায় একসেসের খবর কী?

১১| ১৫ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:০৮

আকাশ অম্বর বলেছেন:

সাধারণ করেছে। ক্রমানুসারে পোষ্টে যাবে বলেছে এবং শিন্টো'টা গিয়েছেও দেখলাম গতরাতে।

১৫ ই মে, ২০০৯ রাত ৮:১০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ঠিক হয়ে যাবে আশা করি।

১২| ১৬ ই মে, ২০০৯ ভোর ৪:২৫

হীরক রাজা বলেছেন: +++++++++++++++++

অসম্ভব ভাল একটি পোস্ট...ধন্যবাদ আপনাকে।

শুধুমাত্র মন্তব্য দেয়ার জন্যই আবার লগইন করলাম।

১৬ ই মে, ২০০৯ ভোর ৫:৪৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.