নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালী, আতরাফ মুসলমান ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।রবীন্দ্রনাথ

ইমন জুবায়ের

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]

ইমন জুবায়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: কুকুর

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:২৮

Feminism is the radical notion that women are people.



Cheris Kramarae and Paula Treichler



ফোন অফ করে অনেক ক্ষণ স্তব্দ হয়ে বসে থাকলেন নাসরিন রিয়াজ। তখন শহরের উপকন্ঠে সন্ধ্যা নামছিল। অন্ধকার দ্রুত এ ঘরটায় ছড়িয়ে পড়ছিল। জানালার কাছে বাতাসের দাপাদাপি। অস্থির বাতাসের গন্ধটাও কেমন নোনা। কাছেই টঙ্গি খাল। উত্তরার সেক্টর ১০ এর এই জায়গাটা এখনও অনেক নিরিবিলি। সদ্য বাড়ির কাজ শেষ হয়েছে। লাল রঙের সিরামিক ইটের দোতলা বাড়িটির নাম শখ করে রেখেছেন ‘বহ্নিশিখা’ । একতলা একটা কোরিয়ান ফার্ম ভাড়া নিয়েছে । ওরা বাইং হাউজ করবে। একতলা এখনও ফাঁকা।

সালমা ঘরে ঢুকল। টিউব লাইট জ্বালাল। ওর হাতে চায়ের মগ। মগটা টেবিলের ওপর রেখে চলে যায় সালমা । কথাবার্তা খুবই কম বলে মেয়েটা। সারাদিন এ সংসারে কেমন ছায়ার মতো ঘুরে। অন্যমনস্ক হয়ে চায়ের মগ তুলে নিয়ে চায়ে চুমুক দিলেন নাসরিন রিয়াজ । মাঝ বয়েসী চশমা পরা ভরাট ফরসা মুখে গভীর দুশ্চিন্তার গাঢ় ছায়া জমেছে। এতকাল ধরে সোসাল ওয়ার্ক করছেন - এই প্রথম প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি বিরোধ বাঁধল। এটিই দুশ্চিন্তার কারণ। কিছুক্ষণ আগে পুলিসের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে ফোনে কথা হল। ভদ্রলোক নিজেই ফোন করেছিলেন। বললেন, ম্যাডাম, আমরা যখন বিষয়টি দেখছি, আপনি কেন খামাখা আমাদের না জানিয়ে মেয়েটিকে নিয়ে গেলেন?

কেন? আমার কি মেয়েটিকে প্রটেক্ট করার অধিকার নেই?

আছে। স্বীকার করছি। তবে একটা ক্রাইম যখন হয়েছে ...মানে বলছিলাম মামলাও যখন দায়ের করা হয়েছে। এসব এখন থানার এক্তিয়ার নয় কি?

নাসরিন রিয়াজ-এর মাথায় রক্ত চেপে গিয়েছিল; কেননা তিনি জানেন, থানা-পুলিশ ইন্টারফিয়ার করলে ধর্ষিতা মেয়ের হেনস্থা আরও বেড়ে যায়।

আসমা এখন থেকে আমার হেফাজতে থাকবে । বলে ফোন রেখে দিয়েছিলেন।

শরীর ভীষণ কাঁপছিল। সেই সঙ্গে মাথায় নানা ভীতিকর ভাবনা ভর করছিল। একা একা এই যুদ্ধটা করতে পারব তো? ইস্, এ সময় যদি কণার বাবা পাশে থাকত। একটা আর্ন্তজাতিক সেমিনারে যোগ দেওয়ার জন্য নাসরিন রিয়াজ-এর স্বামী ড. রিয়াজ রহমান এখন ফিলিপাইনে আছেন । দু-এক দিনের মধ্যেই ফেরার কথা।

ছেলেমেয়েরাও ওদের বাবার ফেরার জন্য অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে। নাসরিন রিয়াজ-এর এক ছেলে এক মেয়ে। বড় মেয়ে কণা- প্রাইভেট মেডিক্যালে পড়ছে। ছোট ছেলে রোমেল- এ বছরই উত্তরার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হল। দু’দিন আগে বন্ধুদের সঙ্গে খাগড়াছড়ি বেড়াতে গেছে রোমেল ।

অন্যমনস্ক হয়ে চায়ে চুমুক দিলেন নাসরিন রিয়াজ। স্বাদটা তেতো ঠেকছে। এমন হওয়ার কথা নয়। সালমা বেশ ভালো চা বানায়। আজ কি হল ওর? আসলে আসমা এ বাড়িতে আসার পর থেকেই এ বাড়ির সবকিছু উলোটপালোট হয়ে যাচ্ছে ...

নাসরিন রিয়াজ দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।

ফোন বাজল। নম্বর দেখে অবাক হলেন। মিজানুর রহমান বাদল। ভদ্রলোক স্থানীয় সংসদ সদস্য। এখন অবশ্য বিরোধী দলের। মাঝে মধ্যে টিভির টক শো কিংবা মানববন্ধন অথবা সভাসমিতিতে দেখা হয় মিজানুর রহমান বাদল-এর সঙ্গে। মোটামুটি পরিচয় আছে।

আসসালামালাকুম আপা। আছেন কেমন?

এই আছি ভাই। আপনি কেমন আছেন? মৃদু উদ্বেগ বোধ করেন নাসরিন রিয়াজ।

আমি ভালো আছি। ... আপা ?

জ্বী। বলুন।

হক সাহেব একটু আগে আমাকে ফোন করেছিলেন।

কে? কার কথা বলছেন আপনি?

আরে হক সাহেব। সরকারি দলের মাননীয় সংসদ সদস্য জাহিদুল হক মামুন।

ওহ্ । নাসরিন রিয়াজের ভ্রুঁ কুঞ্চিত হয়ে ওঠে।

আপা?

বলেন।

মামুন ভাই বললেন ফুলবাড়িয়া বস্তির কোন মেয়ে কে নাকি আপনি তুলে এনেছেন ...

নাসরিন রিয়াজের হৃৎকম্পনের গতি বেড়ে যায়। কোনওমতে বললেন, দেখুন ভাই, মেয়েটাকে রেপ করা হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিল।

বুঝলাম। সে জন্য তো দেশে আইন-আদালত আছে আপা। নাকি?

নাসরিন রিয়াজ ক্ষেপে উঠলেন। প্রায় চেঁচিয়ে বললেন, আইন-আদালতই কি সব? মেয়েটার মানসিক অবস্থা একবার বিবেচনা করবেন না আপনারা ? ওর এখন রেস্ট দরকার। ওর ট্রিটমেন্ট চলছে। ও আগে সুস্থ হোক, তারপর যা করার করব।

না, না। আমি ওসব শুনব না। আমার ওপর প্রেসার আছে। মিজানুর রহমান বাদল বললেন। লোকটার গলার স্বর মুহূর্তেই কেমন বদলে গেছে। আমি লোক পাঠাচ্ছি। আপনি মেয়েটিকে ওদের কাছে বুঝিয়ে দিবেন। মিজানুর রহমান বাদল ফোন অফ করে দিলেন।

নাসরিন রিয়াজ-এর মনে হল কে যেন গালে চড় মেরেছে। হাতের মোবাইল ফোনটাকে মনে হচ্ছে এক খন্ড বরফ। কপালের বাঁ পাশে দপদপ করছে। গলার কাছে ঘাম জমেছে।

মায়ের চিৎকার শুনেই মনে হয় কণা দরজা খুলে উঁকি দিল। সাদা রঙের সালোয়ার-কামিজ পরা চশমা পরা ফরসা মুখ। পড়াশোনা করছিল হয়তো। চোখেমুখে কেমন ঘোর-ঘোর ভাব। হাত নেড়ে মেয়েকে চলে যেতে বললেন নাসরিন রিয়াজ । কণা চলে যায়। কণা কখনও আসমার মতো বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়বে না ...কারণ, কণা নিরাপদ। কণাকে ঘিরে আছে নিরাপদ সামাজিক বেস্টনী ...আসমার সামাজিক অবস্থান ভিন্ন ...

নাসরিন রিয়াজ দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেললেন।

আসমা পাশের ঘরে ঘুমিয়ে আছে। ১৪/১৫ বছর বয়েসি ফুটফুটে রূপবতী একটা মেয়ে। এই রূপই হয়েছে মেয়েটির ‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ ; আসমার মা নেই। ফুলবাড়িয়া বস্তিতে থাকত বাবার সঙ্গে। আসমার বাবা হাকিম আলী রিকশাওয়ালা। দু’দিনের জ্বরে হাকিম আলী মারা যাওয়ার পর আসমার মাথার ওপর যে যৎসামান্য আশ্রয় ছিল- সেটিও সরে যায়। প্রশাসনের নাকের ডগায়, রাজনৈতিক শক্তির ছত্রছায়ায় ফুলবাড়িয়া বস্তিতে দীর্ঘকাল ধরে চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। ওই বস্তির ছেলেবুড়ো অনেকেই মাদকব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ওদেরই কেউ সম্ভবত আসমাকে ধর্ষন করে। গত মঙ্গলবার রাতে । কী কারণে খবরটা কোনও পত্রিকায় ছাপা হয়নি। ভোরের কাগজ-এর ফটো সাংবাদিক আজাহারউদ্দীন- সেই নাসরিন রিয়াজ কে ফোন করে সব জানাল । নাসরিন রিয়াজ নিজেই উদ্যেগী হয়ে ফুলবাড়িয়া বস্তি থেকে আসমাকে নিয়ে এসেছেন । এ ধরণের কাজ আগেও করতে হয়েছে। নাসরিন রিয়াজ একটা মহিলা কলেজে পড়ান; পাশাপাশি দীর্ঘদিন ধরে নারী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত। ‘বহ্নিশিখা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ফটো সাংবাদিক আজাহার উদ্দীন ও এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত; ঢাকার বাইরেও কয়েকটি জেলায় ‘বহ্নিশিখা’ সংক্রিয়। শাহিন আরা কে ফোন করেছিলেন নাসরিন রিয়াজ । শাহিন আরা ডাক্তার এবং ‘বহ্নিশিখা’ -র একজন সক্রিয় সদস্য। ওই আসমার প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট যা করার করেছে। কাল সকালেও একবার আসার কথা শাহিনের।

সোফার ওপর সিদে হয়ে বসে ছিলেন নাসরিন রিয়াজ। ভীষণ ক্লান্ত বোধ করছেন। এখন হেলান দিলেন। ঠিকই তখনই সেল ফোনটা বাজল। ডিসপ্লে তে অচেনা নাম্বার। বুকটা ধক করে উঠল। রিয়াজ নয় তো? হ্যালো?

হ্যালো। আমি। তোমাদের খবর ভালো তো? স্বামীর কন্ঠস্বরে স্বস্তি পেলেন। উদ্বেগ চেপে রেখে বললেন, আমরা ভালো আছি। তুমি কেমন আছ?

আমি ভালো আছি। এই মাত্র হোটেলে ফিরলাম। শোন, আমি বুধবার দুপুরের মধ্যেই ফিরছি। ড. রিয়াজ বললেন।

খাওয়াদাওয়া সব ঠিকঠাক হচ্ছে তো?

হ্যাঁ। ওসব নিয়ে তুমি ভেব না। রোমেল এখনও চিটাগাঙ ফেরেনি না?

না। শোন। তখন কণা বলছিল ... ওর ল্যাপটপের কথা তোমার মনে আছে তো?

হ্যাঁ, হ্যাঁ। আমার মনে আছে, মনে আছে। কাল মনে হয় সময় পাব, কাল শপিং করব।

ওকে।

এবার বল আসমা কেমন আছে?

আসমা এখন ভালো। মনে হচ্ছে প্রাইমারি ট্রমা কাটিয়ে উঠেছে। আর শোন। এখন আমার কাছে ওর কেসটা পরিস্কার। আমি এখন জানি কারা আসমাকে রেপ করেছে এবং কেন করেছে?

কারা?

কারা আবার? এ শহরেরই একদল ভাড়াটে সস্ত্রাসী - যারা আসমার মতো ‘অ-নিরাপদ’ গরীব সুন্দরী মেয়েদের ধনীদের প্রমোদকুঞ্জে তোলে। তার আগে ওদের রেপ করে বা অন্য কোনও উপায়ে ব্যবহারযোগ্য করে নেয়। যে প্রমোদকুঞ্জে মিজানুর রহমান বাদল আর জাহিদুল হক মামুন -রা রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে বসে মদ পান করে, স্বাদ নেয় কিশোরীর কোমল মাংশের ।

মিজানুর রহমান বাদল আর জাহিদুল হক মামুন? করা এরা?

নাসরিন রিয়াজ সব খুলে বললেন। স্পস্ট টের পেলেন শরীরের সমস্ত রক্ত চলাচল কেমন অশান্ত হয়ে উঠেছে।

সাবধানে থেকো। ড. রিয়াজ বললেন।

থাকব।

ফোন অফ করে সালমা কে ডাকলেন নাসরিন রিয়াজ ।

সালমা এল। রান্নাঘরে ছিল মনে হয়।

একবার নীচে যা তো। কালেপসআবল গেটটা বন্ধ করে দিয়ে আয়, যা ।

সালমা চলে যায়। ভীষণ উদ্বেগ বোধ করছেন। তখন মিজানুর রহমান বাদল-এর গলার স্বর কেমন নিমিষে বদলে গেল। বললেন, আমি লোক পাঠাচ্ছি। আপনি মেয়েটিকে ওদের কাছে বুঝিয়ে দিবেন। নাসরিন রিয়াজ শিউরে উঠলেন। আসমাকে কি ফিরিয়ে দিতে হবে? সম্ভবত। নইলে এরা ‘বিশিষ্ট সমাজকর্মী অধ্যাপিকা নাসরিন রিয়াজ নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য’ ...ইত্যাদি বলে ফাঁসিয়ে দেবে। মিডিয়া এদের দখলে-এরা চাইলে যা ইচ্ছে করতে পারে। নইলে আসমার ধর্ষনের খবরটা কোনও পত্রিকায় ছাপা হয়নি কেন? দীর্ঘশ্বাস ফেললেন নাসরিন রিয়াজ । কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ? কীসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ? পুরুষের হা হা লোভই যদি প্রশাসন যন্ত্রে পরিনত হয় তখন ... তখন সেই অসম যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে কে জেতে? অনেক দিন আগে ফরাসি গণিতবিদ পাসকাল বলেছিলেন: “Justice and power must be brought together, so that whatever is just may be powerful, and whatever is powerful may be just.” এই কথাটা আজও বিশ্বের কোনও সমাজেই প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যা হয়েছে তা হল- ক্ষমতার একপাক্ষিক বিস্তার; যে বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণ করে পুরুষতন্ত্র। সেই অশুভ বিস্তারে অনিশ্চিত হয়ে ওঠে সালমা-আসমাসহ অসংখ্য মেয়ের জীবন । এই কারণেই কি Roseanne Barr বলেছেন:The thing women have yet to learn is nobody gives you power. You just take it.

সালমা ফিরে আসে। ভাত খাবে কিনা জিগ্যেস করল। ঘড়ি দেখলেন নাসরিন রিয়াজ । ১১টার মতো বাজে। শরীর ভিজে আছে। গলার কাছে তৃষ্ণা। মাইগ্রেনের সমস্যা আছে। মাথার খুলির সেই ব্যথা ফিরে আসছে।

না রে, এখন আমি কিছু খাব না।

সালমা চলে যায়।

এই মেয়েটিও অল্প বয়েসেই পুরুষের খেয়াল খুশির বলি হয়েছিল। রংপুরের বদরগঞ্জের মেয়ে সালমা । বিয়ের এক বছর পরই স্বামী তাড়িয়ে দেয়। অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পথে পথে ঘুরছিল ... তখনই রওশনের সঙ্গে দেখা। রওশনের শ্বশুরবাড়ি ওখানেই। রওশনই ঢাকায় নিয়ে এসেছিল সালমাকে । নাসরিন রিয়াজ এর ছাত্রী রওশন । ড. শাহিন আরা, ফটো সাংবাদিক আজাহার উদ্দীন -এর মতো রওশনও ‘বহ্নিশিখা’-র একজন সক্রিয় কর্মী ... সালমার শিশুটি ভূমিষ্ট হওয়ার সময়ই মারা যায়। এর পর দীর্ঘকাল সালমা ক্রনিক মেলানকলিতে ভুগেছে। দীর্ঘকাল বিষন্ন ও মৌন ছিল। স্বামী ডাক্তার বলেই চিকিৎসার সুবিধার্থে সালমাকে নিজের কাছে এনে রেখেছেন নাসরিন রিয়াজ । সাধারনত নির্যাতিত মেয়েদের কোথাও থিতু করিয়ে দেয় ‘বহ্নিশিখা’-র সদস্যরা। সালমা কে কোথাও থিতু করানো গেল না। আজও ।

হঠাৎই নীচের রাস্তায় এক সঙ্গে অনেকগুলি কুকুরের ডাক শোনা গেল ।

চমকে উঠলেন নাসরিন রিয়াজ ।

উঠে দাঁড়ালেন। মাথা সামান্য টলে উঠল। সামলে নিয়ে দ্রুত পায়ে জানালায় পাশে এসে দাঁড়ালেন । জানালার কাছে জোলো হাওয়ার মাতামাতি। নীচের রাস্তায় কয়েকটা জিপ আর একটা মাইক্রোবাস থেমে আছে। নাসরিন রিয়াজ এর বুক ধক করে ওঠে। কারা ওরা? মিজানুর রহমান বাদল-এর লোক? আসমাকে নিতে এসেছে? কী করবেন বুঝতে পারছেন না।

রাস্তায় আবছা অন্ধকার। ওধারের কলাঝোপ আর বাউন্ডারি দেওয়া মাঠের ওপর ক্ষীণ চাঁদের আলো ছড়িয়ে আছে। হঠাৎই দৃশ্যটা চোখে পড়তেই নাসরিন রিয়াজ-এর শরীর মুহূর্তেই জমে উঠল। জিপ আর মাইক্রোবাস থেকে পিলপিল করে নামছে এক পাল-পাল কুকুর। মুহূর্তেই আধো-অন্ধকার রাস্তাটি ভরে উঠল কুকুরে-কুকুরে ।

কুকুর কেন? আশ্চর্য!

নীচের ওই গা শিরশিরে দৃশ্য দেখে চাপা চিৎকার বেরিয়ে এসেছিল নাসরিন রিয়াজ এর কন্ঠস্বর থেকে। কণা দৌড়ে এসে মা’র পাশে দাঁড়াল। গা ছমছমে দৃশ্যটা দেখে ‘মা’ বলে আর্ত চিৎকার করে মাকে জড়িয়ে ধরল। টের পেল মা’র শরীর থরথর করে কাঁপছে। যেন বধ্যভূমিতে খাদের কিনারে দাঁড়িয়ে, এখুনি খুনিদের রাইফেলের গুলিতে হৃৎপিন্ডটি ছিঁড়ে যাবে।

নাসরিন রিয়াজ মেয়েকে জড়িয়ে ধরলেন।

ঠিক তক্ষুণি একটি কুকুর বিশাল হয়ে উঠে দোতলা বাড়িটির ঝুঁটি ধরে ঝাঁকি দিল যেন।

বাড়িটি থরথর করে কেঁপে উঠল।

ততক্ষনে সালমাও এসে জানালার কাছে দাঁড়িয়েছে। জানালায় উঁিক দিয়ে নীচে কুকুরগুলি দেখল। মেয়েটি অল্প বয়েসেই জীবনের বিভৎস রূপটি দেখেছিল বলে কঁকিয়ে উঠল না বা চিৎকার করে উঠল না । কেবল আঁচলে মুখচাপা দিয়ে ভৌতিক আলোয় দেখল লেলিহান কুকুর ...কুকুর আর কুকুর ... অজস্র কুকুর ... অজস্র ক্ষুধার্ত কুকুর ...কিশোরীর কোমল মাংশের লোভে এসেছে ... অজস্র কুকুর ... অজস্র ক্ষুধার্ত কুকুর ... পাল -পাল কুকুর ... কুকুর আর কুকুর ...

কোনও কোনও কুকুরের মুখে স্বামীর মুখের আদল দেখেও বিস্মিত হল না সালমা...

পৃথিবীর সর্বশেষ দিনটি আসন্ন জেনে নাসরিন রিয়াজ মেয়েকে আঁকড়ে ধরে চোখ বুজে আছেন। বুঝি, এখুনি ‘বহ্নিশিখা’ নামের বাড়িটি ধ্বসে পড়বে অতিকায় কুকুরগুলির বিষদাঁত আর নখর-আঘাতে ...

মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৫৪

রাজসোহান বলেছেন: কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ? কীসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ?

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:৫৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: হুমম।

২| ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:০৮

অগ্নিলা বলেছেন: The thing women have yet to learn is nobody gives you power. You just take it.

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:১৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: জ্বী।

৩| ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:৫২

শিরীষ বলেছেন: শেষে এসে এরকম একটা উপসংহার এই প্রথম দেখলাম আপনার গল্পে। তীব্রতা বেড়ে গেছে তাতে। কদাকার আমাদের রূপ পালটে গেছে কবে। তার হিসেব আমরা রাখিনি। বর্তমান অবস্থা তো আরো ভয়াবহ! কুকুরময় চারিপাশ। তারপরও ওরা কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম মেনে চলে। আমরা তাও ভংগ করি----

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:৫৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: হুমম।

৪| ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৩:৫৪

জুবেরী বলেছেন:
আপনার পদধুলি কাম্য
Click This Link

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:১০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: এখনই যাচ্ছি।

৫| ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:০৬

আলী আরাফাত শান্ত বলেছেন: দারুন লাগলো ভাইয়া!

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ বিকাল ৪:১০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: :)

৬| ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:১৭

আবদুল্লাহ আল মনসুর বলেছেন: +++

২৮ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৩৮

ইমন জুবায়ের বলেছেন: :)

৭| ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৪২

মাহী ফ্লোরা বলেছেন: আসলে কিছু বলার নেই।পড়ি,পড়তে ভাল লাগে।গল্প যখন শেষ হয় হৃৎপিন্ড স্বাভাবিক হয়ে আসলে মনে হয়,আসলে অনেক সৌভাগ্য নিয়ে জন্ম বলেই এত ভাল আছি।এতভাল থাকা।শুভকামনা রইল।

২৯ শে আগস্ট, ২০১০ ভোর ৬:৩০

ইমন জুবায়ের বলেছেন:

৮| ২৮ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৯:৫১

ইসতিয়াক আহমদ আদনান বলেছেন: অসাধারণ।+++

২৯ শে আগস্ট, ২০১০ ভোর ৬:৩১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৯| ২৯ শে আগস্ট, ২০১০ ভোর ৫:১৩

অন্ধ আগন্তুক বলেছেন: খুব জোরের সাথেই চেচাচ্ছে কুকুরগুলো ।

খুব বেশী তীক্ষ্ণ লাগে ওদের চিৎকার ।

এসব দুপেয়ে জীবগুলো চতুষ্পদী যে কোন কিছুর চেয়ে অনেক বেশী ভয়ংকর ।

অন্য থিমের গল্প , ভালোলাগা ।

২৯ শে আগস্ট, ২০১০ ভোর ৬:৩১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: হ্যাঁ। এসব দুপেয়ে জীবগুলো চতুষ্পদী যে কোন কিছুর চেয়ে অনেক বেশী ভয়ংকর ...

১০| ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:৫১

মাহী ফ্লোরা বলেছেন: + দিতে ভুলে গেছিলাম। /:)
এখন দিয়া গেলাম।আর ফলমুলাদির জন্য ধন্যবাদ। B-)

৩০ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ২:৫৮

ইমন জুবায়ের বলেছেন: :)

১১| ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩২

সোমহেপি বলেছেন: +

১২| ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৯

সকাল রয় বলেছেন:
দারুন

৩০ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক দিন পর।
কেমন আছেন কবি?

১৩| ৩০ শে আগস্ট, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৫৯

জেগে আছি বলেছেন: গল্পে ক্ষোভ ঝরে পড়ছে।

৩০ শে আগস্ট, ২০১০ রাত ৮:৩৭

ইমন জুবায়ের বলেছেন: জ্বী।

১৪| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:৪১

দি ফ্লাইং ডাচম্যান বলেছেন: অতিকায় কুকুরগুলির বিষদাঁত আর নখর ভেঙ্গে দিতে চাই।। নিভে যাবার আগে আর একবার জ্বলে উঠতে চাই...

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ৭:০০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: নিভে যাবার আগে আর একবার জ্বলে উঠতে চাই...
হুমম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.