নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালী, আতরাফ মুসলমান ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।রবীন্দ্রনাথ

ইমন জুবায়ের

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]

ইমন জুবায়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: অতীত

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:১৯

ইমরান বলল, মা, রান্নাঘরে। চল, এই ফাঁকে তোমাকে হরিণ আর ময়ূর দেখিয়ে আনি ।

লাল রঙের সিরামিক ইটের দোতলা বাড়িটির পিছনে অনেকটা জায়গা জুড়ে বাগান। এই মুহূর্তে নভেম্বরের মিষ্টি রোদে ভরে আছে। দূরে উঁচু দেয়াল ঘেঁষে নাড়িকেল গাছের সারি, একটা আমলকি গাছ, জলপাই গাছ আর জাম গাছ আর মেহেদির ঝোপ; ঝোপের ওপাশে একটা হরিণ উঁকি মারছে। এপাশে সূর্যমূখী ঝাড়, ঝাড়ের ঠিক পাশেই একটা ময়ূর আর ডিম্বাকৃতির একটি সুইমিংপুল, সুইমিংপুলে সবুজ পানি, দোলনা, মার্বেল পাথরের একটা পরীমূর্তি।

ওইদিকে তাকিয়ে মেঘনা অবাক হয়ে যায় ।

এই মুহূর্তে ও দোতলার প্রশস্ত খোলা টেরেসে দাঁড়িয়ে আছে। ওর পাশে ইমরান দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছিল। সাদা রঙের টি-শার্ট আর কালো রঙের প্যান্ট পরে আছে ইমরান। কোঁকড়ানো চুল, ফরসা মুখ, চোখে চশমা। দারুন মিস্টি চেহারা।

মেঘনা উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলল, আশ্চর্য! হরিণ আর ময়ূর একেবারে সত্যি মনে হচ্ছে।

ইমরান হাত নেড়ে হেসে বলে, আরে না! ওসব পাথরের তৈরি। আসলে আমার বাবা ভীষণ সৌখিন মানুষ ছিলেন।

হঠাৎই প্রসঙ্গ পরিবর্তন করে মেঘনা বলল, আমার কেমন ভয় ভয় করছে ইমরান।

ভয় করছে? কেন?

আজ তোমার মায়ের সঙ্গে আমার দেখা হবে।

আহা, মা-ই তো অনুযোগ করে বলল, মেঘনার কথা এত বলিস, মেয়েটাকে একবার দেখালি না।

কথাটা শুনে নিশ্চিন্ত হল মেঘনা । ইমরানের সঙ্গে পড়ছে মেঘনা, ইমরানকে ভালোওবাসে। মেয়েদের ভালোবাসা ঘিরে নানারকম দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগ জড়িয়ে থাকে। ইমরানকে ভালো লাগলেও ওর পরিবারের অন্যরা কেমন কে জানে। আজ ইমরান ওর মায়ের সঙ্গে দেখা করাতে নিয়ে এসেছে । ইমরানদের ছোট সংসার। বাবা নেই, মা আর বড় এক বোন। সে বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, এখন অষ্ট্রেলিয়ায় থাকে। মেঘনা জানে, উত্তরার এই জমি কিনেছিলেন ইমরানের দাদা। তারপর ওর বড় বোনের বিয়ের ঠিক আগে ওর বাবা এই বাড়ি করলেন । ইমরানদের দেশের বাড়ি শিবপুর। অনেক জায়গা জমি আছে, কোল্ডস্টোরেজ আছে, ঢাকা-শিবপুর রুটে চারটা বাসও আছে। এসব ম্যানেজার দেখা শোনা করে। অবশ্য মেঘনাদের এত কৌলিন্যও নেই, এত বৈভবও নেই। ও ফরিদপুরের সাধারণ ঘরের মেয়ে, বাড়ি মধুখালী । বাবা নুরুল আলম মধুখালি সদরের একটি স্কুলের শিক্ষক। তাঁরই একমাত্র কন্যা মেঘনা অত্যন্ত মেধাবী, উচ্চমাধ্যমিকে দূর্দান্ত রেজাল্ট করেছিল। এখন হলে থেকে পড়ছে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ।

মার আসতে দেরি হবে। চল কফি খাই। ইমরান বলল।

চল। মেঘনা বলল।

টেরেসের ওপর একটা নীল রঙের প্লাস্টিকের শেড আছে। ওখানে কয়েকটি বেতের চেয়ার ও একটি টেবিল। ওরা পাশাপাশি বসল। টেবিলের ওপর কফির পট আর কাপ। একটা কাপে কফি ঢালল ইমরান। তারপর কাপটা মেঘনাকে দিল। মেঘনা অন্যমনস্ক হয়ে কফিতে চুমুক দেয়। মেঘনার হাত নিয়ে খেলতে থাকে ইমরান । ঝুঁকে ছোট্ট করে চুমুও খায় মেঘনার কপালে । আফটার শেভ লোশনের মাদক-মাদক গন্ধ পায় মেঘনা, ওর পরনে আজ সাদা রঙের সালোয়ার কামিজ ও নীল ওড়না। ওপাশে দরজার দিকে তাকিয়ে আলতো করে মেঘনার স্তন ছুঁয়ে দেয় ইমরান । দূরন্ত বাতাসে মেঘনার চুল উড়ছিল। লাল রঙের সিরামিক ইটের এই বিশাল সুন্দর বাড়ি, বাগান, বাগানের সুইমিংপুল, পাথরের হরিণ/ময়ূর- এসবই ওর স্বপ্নের মতো লাগছে। মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকায় মেঘনা। আকাশের রং আজ ফিরোজা। বড় সুন্দর শব্দহীন গম্ভীর আকাশ । ওই ফিরোজা রঙের বিরাট আকাশের নীচে বুকটা হিম হয়ে আসে মেঘনার। ইমরান ওর ঠিক পাশে; এই দৃশ্য তো আর মিথ্যে নয়। তা হলে? তা হলে স্বপ্নে প্রায়ই কেন দেখছে ওর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে ইমরান? মেঘনার নিঃশ্বাস আটকে আসে। মেঘনার কত শখ ইমরানকে নিয়ে মধুখালী যাবে। মাসে একবার মধুখালী যায় মেঘনা। মধুখালিতে ওদের ছোট্ট টিনশেডের বাড়িটা রামবিহারী স্কুলের ঠিক পাশে। মধুখালি গেলেই ঘুরে বেড়ায় বোস পাড়া, কালীমন্দির, আমবাগান, চৌধুরী বাড়ির ভাঙা পাঁচিল পেরিয়ে চৌধুরী দীঘির কালো পানি, তার ভাঙা ইটের পুরনো ঘাট ...কিশোরী বয়েসে ওই ঘাটে বসে বাবার সঙ্গে কত গল্প করেছে মেঘনা। বাবার সঙ্গে মেঘনার সম্পর্ক বন্ধুর মতো। একমাত্র মেয়ে বলেই হয়তো। বাবা ইমরানের সঙ্গে সর্ম্পকের ব্যাপারটা জানে। চৌধুরীদের দীঘির পুরনো ঘাটে বসে বাবা কত যে গল্প বলতেন ... চৌধুরী দীঘিতে ডুবে চৌধুরী বাড়ির কোন বউ আত্মহত্যা করেছিল। সে কথা শুনে গা ছমছম করত মেঘনার। কিশোরী মেঘনা চৌধুরীদের মেজ বউয়ের মুখটি ভাবার চেষ্টা করত । মধুখালি শহরে আরেকটি আত্মহত্যার ঘটনা বয়স্করা আজও মনে রেখেছে। হিরণ নামে মেঘনার বাবার একজন খুব প্রিয় বন্ধু ছিল । বোস পাড়ায় থাকত হিরণ কাকা। মেঘনা কখনও হিরণ কাকা কে দেখেনি, দেখার কথাও নয়। তবে বাবা হিরণ কাকার গল্প করে। বাবার সঙ্গে একই স্কুলে পড়ত হিরণ কাকা। হিরণ কাকা স্পর্শকাতর ছিল, ছবি আঁকত। হিরণ কাকার আঁকা অনেক ছবি বাবার কাছে আছে। বাবা এখনও সে ছবি নেড়ে চেড়ে দেখে। আজকাল প্রায়ই একটা স্বপ্ন দেখে মেঘনা। স্বপ্নে কে যেন মেঘনাকে কী বলতে চায় । ওর মনে হয় হিরণ কাকা। স্বপ্নে প্রায়ই দেখে ইমরান ওর জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। স্বপ্নটা কালও একবার দেখল। কে যেন এ বাড়িতে আসতে নিষেধ করল। হিরণ কাকা? মেঘনা ক্ষীন উদ্বেগও বোধ করে। কিশোর বয়েসে হিরণ কাকা চৌধুরী বাড়িরই এক মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছিল। চৌধুরী বাড়ির সেই মেয়ের নাম ছিল আফসানা। মধুখালীর জমিদার বসন্ত নারায়ণ আশ্বিন মাসে বারোয়ারী দূর্গা পূজা করতেন । চৌধুরী বাড়ির মেয়েরা যেত পূজা মন্ডপে। হিরণ কাকা আফসানাকে প্রথম দেখেছিল পূজা মন্ডপে ...

সবুজ পাড় সাদা শাড়ি পরা একজন অভিজাত চেহারার মহিলাকে আসতে দেখে চট করে উঠে দাঁড়িয়ে ওড়না ঠিক করে নেয় মেঘনা । বুকটা ধক করে ওঠে। ইমরানের মা? মহিলার বয়স ষাটের কাছাকাছি ফরসা, চুলে মেহেদি, চোখে সোনালি ফ্রেমের চশমা। নাকে নাকফুল। সম্ভবত হীরের।

আমার মা। ইমরান বলে।

মেঘনা ঝুঁকে সালাম করতে যাবে- তার আগেই মেঘনা কে বুকে টেনে নিলেন মহিলা । বললেন, থাক, থাক। বেঁচে থাক মা, বেঁচে থাক। তারপর মেঘনার থুতনি নেড়ে বললেন, বাহ্, কী সুন্দর দেখতে। যেন রাজ-রাজেশ্বরী।

ইমরান বলল, মেঘনা, তুমি আম্মুর সঙ্গে বসে গল্প কর। আমি একটু গ্যারেজে যাচ্ছি, গাড়িতে সমস্যা হচ্ছে।

মেঘনা আশ্বস্ত হয়ে মাথা নাড়ল। মেঘনা আসলে আলাদা কথা বলে ইমরানের মায়ের মনোভাব বুঝতে চায়; এর কারণ আছে। ইমরানরা বিশাল বড়লোক, এবং সবই ইমরানের মার নিয়ন্ত্রনে। ইমরান মেঘনাকে যতই ভালোবাসুক, এ মহিলা না বাজিয়ে সহজে কাউকে ছেলের বউ করবে না । মেঘনা উদ্বেগ বোধ করে।

ইমরান চলে যায়।

ইমরানের মা বসতে বসতে বলল, আমি এতক্ষণ রান্নাঘরে ছিলাম মা। কাজের মেয়েটার আবার কাল থেকে জ্বর। তুমি মুগডাল খাও তো? অবশ্য রুই মাছের আলাদা তরকারি রেঁধেছি।

আপনি মিছিমিছি এত কষ্ট করতে গেলেন কেন খালাম্মা?

কষ্ট আবার কী-রান্না আমি নিজেই করি। কাজের মেয়েরা শুধু সাহায্য করে । আমি না রাঁধলে ইমরান খেতে পারে না। আমার প্রতি ছেলের আবার খুব টান। মা-ছাড়া থাকবে না বলে ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর বাইরে পড়তে গেল না। আর এত বড় ব্যবসা, ধীরে ধীরে ওকেই তো বুঝে নিতে হবে।

এসব কথা মেঘনা জানে।

আচ্ছা, ইমরান বলল তোমাদের দেশের বাড়ি ফরিদপুর । ফরিদপুরের ঠিক কোথায় বল তো?

ফরিদপুরের মধুখালি।

ইমরানের মা চমকে উঠলেন। মেঘলা অবাক হয়ে যায়।

মধুখালি সদরে?

মেঘনা মাথা নাড়ে।

সদরে কোথায়?

রামবিহারী স্কুলের পাশে।

মেঘলা আবারও অবাক হয়ে ইমরানের মা কে চমকে উঠতে দেখল।

তোমার বাবা কি করেন?

স্কুলে পড়ান।

নাম?

নুরুল আলম ।

ওহ্ । আমিও মধুখালির মেয়ে।

তাই! ইমরান কখনও বলেনি।

তার কারণ আছে। ইমরান জন্মের পর থেকে ওর বাবা-চাচাদের দেখেছে, দাদাকে দেখেছে। জন্মের পর ইমরান কে নিয়ে কখনও মধুখালি যাওয়া হয়নি।

ওহ্ ।

আমি মধুখালির চৌধুরী পরিবারের মেয়ে।

ওহ্ । মেঘনার বুক কেঁপে ওঠে। ওর মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়, আমি বাবার মুখে আপনাদের কথা অনেক শুনেছি।

কি শুনেছ! ইমরানের মায়ের কন্ঠস্বর কেমন শীতল হয়ে ওঠে।

মেঘনা বলল, এই যেমন - চৌধুরী পরিবারের পূর্বপুরুষ জমিদার ছিল। তবে তারা গরীব-দুঃখিদের অনেক দান-খয়রাত করতেন। মধুখালি শহরের আম বাগান আর রেলগেটের দু’পাশের জমি চৌধুরী পরিবারের ছিল। আপনাদের এক পূর্বপুরুষের হাতি পোষার শখ ছিল, তিনি হাতির পিঠে চড়ে জমিদারী দেখতে যেতেন। এসবই বাবার মুখে শুনেছি।

ও বুঝেছি। ভদ্রমহিলাকে এবার নিশ্চিন্ত মনে হল। একটু ঝুঁকে প্রায় ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলেন, চৌধুরী পরিবার সম্পর্কে অন্য রকম কিছু শুনেছ?

অন্যরকম মানে?

মানে নেগেটিভ কিছু?

ওহ্, হ্যাঁ। মেঘনা বলল । নিজের অভিনয় ক্ষমতায় নিজেই মুগ্ধ হয়ে গেল।

কি শুনি! ভদ্রমহিলা ঝুঁকে পড়লেন। চশমার কাচের ওপাশে গভীর কৌতূহলে চোখের মনি দুটি ঝিকমিক করছে।

বলব? আপনি যদি কিছু মনে করেন। মেঘনা বলল।

আমি কিছু মনে করব না। বল।

চৌধুরী পরিবারের কোন্ বউ নাকি চৌধুরী দীঘিতে ডুবে আত্মহত্যা করেছিল।

ওহ্, হ্যাঁ। উনি আমার মেজ চাচী। মেজ চাচা কলকাতায় গিয়ে আরেকটি বিয়ে করেছিলেন-সেই শোকে। এসব কত কাল আগের কথা। এখন এসব কথা ভাবলে আমার যে কেমন লাগে। আমার দাদা, মানে আমার বাবার বাবা তখনও বেঁচে ছিলেন, মেজ চাচী মারা যাওয়ার পর দাদা চাবুক দিয়ে মেরে মেরে আমার মেজ চাচাকে আধমরা করে ফেলেছিলেন । পরে শোনা গেল পুরোটাই গুজব। তার মানে মেজ চাচা কলকাতায় গিয়ে আরেকটি বিয়ে করেননি।

ওহ্ ।

আঁচল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে ইমরানের মা বললেন, চাচী মিছিমিছি ডুবে মরল। মানুষ হিসেবে চাচী এত ভালো ছিল যে কী বলব। দেখতেও ভীষণ সুন্দরী ছিল, নিজের ছেলেমেয়ে ছিল না, আমাদের, মানে আমাদের চাচাতো ভাইবোনদের ভীষণ আদর করত। আশ্বিন মাসে মধুখালীর জমিদার বসন্ত নারায়ণ বারোয়ারী দূর্গা পূজা করতেন । চাচী আমাদের পূজা মন্ডপে নিয়ে যেত । বলে অদ্ভুত চোখে মেঘনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন ইমরানের মা ।

মেঘনার শরীর হিম হয়ে আসে। চোখের সামনে ভেসে উঠল হিরণ কাকার মুখ। বাবার কাছে হিরণ কাকার সেলফ পোট্রেট দেখেছে মেঘনা। কৌশলে সামলে নিয়ে মেঘনা বলল, আপনি এখন আর মধুখালি যান না খালাম্মা?

না রে মা। তখন বললাম না-বিয়ের পর কখনও ইমরানকে নিয়ে যাইনি। আর গিয়ে কি লাভ-মুরুব্বীরা কেউই আর বেঁচে নেই, কে কোথায় ছিটকে পড়েছে। আমাদের পরিবার অনেক বড় ছিল। চাচাতো ভাইবোন মিলে তিরিশ-চল্লিশ জন তো হবেই। ভাইয়েরাও অনেকে ঢাকায় সেটল করেছে।

এরপর কথা আর জমল না। ইমরানের মা বললেন, তুমি বসো মা। ইমরান এলেই খেতে বসব। তুমি কই মাছ খাও তো?

হ্যাঁ, খালাম্মা খাই।

ইমরানের মা চলে গেলেন।

মেঘনাকে একরাশ বিষাদ গ্রাস করে। নীচের বাগানের গাছপালায় সরসর শব্দ তুলে হঠাৎই হাওয়া অস্থির হয়ে উঠতে থাকে। আকাশের ফিরোজা রং মুছে মেঘলা হয়ে এল। এখুনি রোদ মুছে যাবে। যেমন মধুখালির কথায় ইমরানের মার মন মেঘলা হয়ে উঠেছিল, সেরকম এখন ফিরোজা রঙের আকাশটি মুছে যাচ্ছে। নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি। এ সময় একবার শীতের আকাশে মেঘ জমে ওঠে। অজানা আশঙ্কায় বুক হিম হয়ে আসে মেঘনার । রোদ মুছে আকাশ কালো হয়ে উঠেছে। স্বপ্নে হিরণ কাকা এসে বলে ইমরানকে আমি হারিয়ে ফেলব। হিরণ কাকা কেন বলে? বাবা বলেন, সেই যুগের ধনী পরিবারের মেয়েরা যেমন সুন্দরী ছিল তেমনি অহংকারী ছিল। তারপরও হিরণ অনেকটা মরিয়া হয়ে স্বরসতী পূজার সময় আফসানাকে প্রেম নিবেদন করে। আফসানা অহংকারী ছিল। বলেছিল, বামুন হয়ে চাঁদ ধরা শখ! রাগে-দুঃখে-অপমানে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে হিরণ। মেঘনা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নীচের বাগানের রোদ ঝলমলে আমলকি গাছের পাতার দিকে চেয়ে মেঘনা ভাবল: আশ্চর্য! আমি কী সুখি। দু’দিন পর ইমরানের সঙ্গে বিয়ে হতে যাচ্ছে। আর, হিরণ কাকাকে অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করতে হল! পৃথিবীর নিয়ম ভারি অদ্ভূত। ... তখন ইমরানের মা জিজ্ঞেস করলেন, চৌধুরী পরিবার সম্পর্কে অন্য রকম কিছু শুনেছ, মানে নেগেটিভ কিছু? এখন অনেক কিছু যেন পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে। ইমরানের মা চৌধুরী পরিবারের মেয়ে। কিন্তু, কোন্ জন? আফসানা হলে বাবা বিয়েতে কিছুতেই রাজি হবে না। অতীত! অতীত! অতীত তার নখরসহ রোমশ থাবা বাড়িয়েছে নিশ্চিন্ত ভবিষ্যতের দিকে। মেঘনার বুকের ভিতর অতল গহব্বর থেকে উঠে আসে হাহাকার।

সাদা রঙের টি-শার্টে কালিঝুলি মেখে ফিরে এল ইমরান । ওকে দেখে স্বস্তি পেল না, বরং খসখসে কর্কস কন্ঠে জিজ্ঞেস করল, গাড়ি ঠিক হল?

হ্যাঁ। মাকে তোমার কেমন লাগল শুনি? রুমালে হাত মুছতে মুছতে জিজ্ঞেস করল ইমরান।

ভালো। কত গল্প করলেন ... আচ্ছা তোমার মায়ের নাম কি আফসানা?

সেটা মাকে জিজ্ঞেস করলেই পারতে। বলে হাসল ইমরান । তারপর ঝুঁকে মেঘনার কপালে চুমু খেল । মেঘনার বিচ্ছিরি অনুভূতি হয়, যেন একদলা দুর্গন্ধময় উষ্ণ লালা ছড়িয়ে পড়ে কপালে , তারপর গড়িয়ে চোখের পাঁপড়িতে জড়িয়ে যায়।

আহা, বলই না। তোমার মায়ের নাম কি আফসানা? মেঘনার প্রায় চেঁচিয়ে ওঠে। ওর বুক ভীষণ কাঁপছে।

হ্যাঁ।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +১৩/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:৩৩

আকাশচুরি বলেছেন: বরাবরের মতোই ভালো লাগলো ইমন ভাই:)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক দিন পর। কী খবর?

২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৪

শ্রাবনের ফুল বলেছেন: অতীত! ইমন জুবায়েরের লেখা নিয়ে কমেন্ট করা চলে না, অসাধারন গল্পের গাঁথুনি আপনার, শুভ কামনা :)

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: শুভ কামনা। অনেক দিন পর।

৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৫

সোহরাব সুমন বলেছেন: মেয়েদের ভালোবাসা ঘিরে নানারকম দুশ্চিন্তা আর উদ্বেগ জড়িয়ে থাকে।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: হুমম।

৪| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৭

রেজোওয়ানা বলেছেন: পূর্বপুরুষদের পাপের ভার কেন পরবর্তী প্রজন্ম ভোগ করবে?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৮

ইমন জুবায়ের বলেছেন: তাই তো।

৫| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৪:৪৯

মু.ই.মা ইমন বলেছেন: দারুন...চমৎকার। এরচেয়ে বেশি কিছু বলার নেই - থাকতে পারে না ।

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৭

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৬| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ বিকাল ৫:৪৫

তাজা কলম বলেছেন: এক কথায় চমৎকার। ++++

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:০৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৪৭

মাহী ফ্লোরা বলেছেন: মাগো!

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:১৮

ইমন জুবায়ের বলেছেন: :|

৮| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ সন্ধ্যা ৭:৫৬

তুষারকনা বলেছেন: শ্রাবনের ফুল বলেছেন: অতীত! ইমন জুবায়েরের লেখা নিয়ে কমেন্ট করা চলে না...

চমৎকার...বরাবরের মতোই...

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:১৭

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৯| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:০০

মঈনউদ্দিন বলেছেন: চমৎকার
+++++++++++

তারপর কি বিয়েহল?

২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ৮:১৮

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।
এরপর বিয়ে হওয়ার তো কথা না।

১০| ২৮ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১১:২৬

দীপান্বিতা বলেছেন: ভাল লাগল...এত প্লট পান কি ভাবে!:)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ৭:১৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: প্লট তো আসেপাশেই ঘুরছে। :)

১১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১০:২৮

জিসান শা ইকরাম বলেছেন: অন্য লেখা গুলোর মত কি এটা হয়েছে ?
কি জানি ?
ভাল লাগল তারপরও ;)

জানি আমার মন্তব্য টা আপনাকে আহত করবে।
এই লেখকের কাছে - আমার চাহিদা হয়েছে- আকাশ সম।
আমি কি করব ? ;)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১১:০১

ইমন জুবায়ের বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.