নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্ত্যজ বাঙালী, আতরাফ মুসলমান ...

বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল, পুন্য হউক, পুন্য হউক, পুন্য হউক, হে ভগবান। বাংলার ঘর, বাংলার হাট, বাংলার বন, বাংলার মাঠ, পুর্ন হউক, পূর্ন হউক, পূর্ন হ্‌উক, হে ভগবান।রবীন্দ্রনাথ

ইমন জুবায়ের

জীবন মানে শুধুই যদি প্রাণ রসায়ন/ জোছনা রাতে মুগ্ধ কেন আমার নয়ন। [email protected]

ইমন জুবায়ের › বিস্তারিত পোস্টঃ

একদিন, শাহ আবদুল করিম

২৮ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৫:৪০

মাত্র এক রাতের বিরহ। আর তাতেই শাহ আবদুল করিম-এর পঁয়ষট্টি বছর বয়েসি দেহটি কী রকম বিষন্ন আর কাতর হয়ে উঠেছে। উদাসী মুখে ঘনিয়ে উঠেছে বেদনার কালো মেঘ। ১৯৮০ সাল। শ্রাবণ মাসের সবে শুরু। আকাশের মুখ কখনও হাসিখুশি কখনও-বা ভার-ভার ঠেকে। এই সকালে অবশ্য ফুরফুরে হাওয়া বইছিল; রোদ ঝলমলে হাওরের পানি ঝিকিমিক করছিল।

একটি নৌকা ভেসে যাচ্ছে কাঞ্চা হাওরে। গন্তব্য উজানধল। নৌকায় গলুয়ে বসে আছে রুহি ঠাকুর। সে বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম-এর শিষ্য। নৌকায় বাউল সম্রাটও বসে রয়েছেন। মাঝে-মাঝে আড়চোখে ওস্তাদের মুখের দিকে তাকাচ্ছিল রুহি ঠাকুর । আজ সকাল থেকে ওস্তাদের মুখ ভার । কি কারণ? অস্বস্তি বোধ করে রুহি ঠাকুর। গতকাল উজানীর হাট যাত্রা করার সময় হাসি খুশি ছিলেন ওস্তাদ। ঘাট পর্যন্ত এসে বিদায় দিলেন গুরুমা। নৌকায় নতুন একটি গান বাঁধলেন ওস্তাদ।



বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে

বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ

আমার বাড়ি আসে সই গো

বসন্ত বাতাসে ...



আজ সকালে ওস্তাদের কী হইল? গতকাল রাতেও ওস্তাদ খোশ মেজাজে ছিলেন। উঠানে বসে ওস্তাদের বন্ধু মোকাররম হোসেনের সঙ্গে কত কথা বললেন । শ্রাবণের পূর্ণিমার আলোয় ভরে ছিল উঠান। কাঞ্চি বিলের দিক থেকে ভেসে আসছিল মৃদুমন্দ হাওয়া । সে হাওয়ায় কলাপাতারা কাঁপছিল। কলাপাতায় পিছলে যাচ্ছিল চাঁদের আলো। ওস্তাদ গান ধরলেন:



কোন মেস্তরি নাও বানাইল - কেমন দেখা যায়

আরে ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খী নায় ...




মোকাররম হোসেন বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের বাল্যবন্ধু। তাঁর অসুস্থার খবর পেয়েই গতকাল বিকেলে উজানীর হাট এসেছেন শিষ্য রুহি ঠাকুরকে নিয়ে । দীর্ঘদিন পর এদিকে এলেন বাউল সম্রাট। মোকারম হোসেনের বয়সও ষাট-পঁয়ষট্টি হবে। শীর্ণ। ছোটখাটো গড়নের মানুষ। অসুখেবিসুখে কাহিল শরীর। মোকাররম হোসেন-এর বাঁ পা'টি দীর্ঘ দিন ধরে অসাড়। ঠিক মতন হাঁটতে পারেন না তিনি । সারাদিন বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়। কাল অবশ্য ধবধরে পূর্ণিমার রাতে উঠানে বসেছিলেন। পুরনো বন্ধুকে কাছে পেয়ে মনের জোর কিছু ফিরে পেয়েছিলেন।

মোকাররম হোসেন এর এক ছেলে আর এক মেয়ে। ছোট মেয়ে রাহিলার বিয়ে হয়েছে সল্লা। বড় ছেলে বাহাউদ্দীন-এর উজানীর হাটে শাড়ি-লুঙ্গির দোকান আছে। মোকাররম হোসেন এর স্ত্রী রহিমা বছর পাঁচেক হল মারা গেছেন। ছেলের বউ মালাই সংসার আগলে রাখে। বেশ ফুটফুটে দেখতে মেয়েটি। মালার একটি ছেলে আছে। ছেলের বয়স দু বছর। নাম লোকমান।

মালা মৃদুকন্ঠে বাউল সম্রাটকে বলল, বিয়ের পর থেকে শুনতেছি, আপনে আমার আব্বার বন্ধু। আমার বাড়ির কেউ এই কথায় বিশ্বাস করে না।

মোকাররম হোসেন ক্ষীণ কন্ঠে বললেন, মালা?

বলেন আব্বা। বলে মালা ঘোমটা টেনে দিল। কোলে দু বছরের লোকমান কলকল করে উঠল।

মোকাররম হোসেন বলেন, ১৯৫৭ সালের চৈত্র মাসে তোমার শাশুড়ি আম্মার অসুখ করছিল। করিমে আইসা তখন ২০০০ টাকা দিয়া গেল। সেই টাকায় তোমার মায়ের চিকিৎসা করাইলাম। তোমার মায়ে সুস্থ হইল। সেই টাকা গত তেইশ বছর ধইরা করিমরে ফেরত দিবার চেষ্টায় আসি। করিমে সে টাকায় নেয় না। আইজ মাছ ভালো কইরা রাইন্দো মা।

মালা বাউল সম্রাটের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। দৃষ্টিতে গভীর শ্রদ্ধা। বাউল সম্রাট কিছু না-বলে চুপ করে রইলেন। মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যেন বাল্যবন্ধুর কথায় লজ্জ্বা পেয়েছেন।



১৯৫৭ সাল। ৬ থেকে ১০ ফেব্রুয়ারি টাঙ্গাইল জেলার কাগমারিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ও সাংস্কৃতিক সম্মেলন। সে সম্মেলনে মঞ্চে উঠে জনসমুদ্রের সামনে শাহ আবদুল করিম গেয়েছিলেন: ‘জিজ্ঞাস করি তোমার কাছে বল ওগো সাঁই/ এ জীবনে যত দুঃখকে দিয়াবে বল তাই।’ গান শেষ হওয়ার পর মওলানা ভাসানী গভীর আবেগে জড়িয়ে ধরেছিলেন ভাটি অঞ্চলের বাউলকে। বলেছিলেন: ‘সাধনায় একাগ্র থাকলে তুমি একদিন গনমানুষের শিল্পী হবে।’ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু উপস্থিত ছিলেন। তিনি করিমকে দশ হাজার টাকা সম্মানী দিয়েছিলেন।



মালা এক ফাঁকে বাউল সম্রাটকে বলে, আপনারে আমি আব্বা বলে ডাকব।

আইচ্ছা ডাইকো মা। তারপর বাহাউদ্দীনের দিকে তাকিয়ে বাউল সম্রাট বললেন, আমার মারে একবার উজান ধলে নিয়া যাইবা বাজান।

বাহাউদ্দীন মাথা নাড়ে। বড় মাতৃভক্ত ছেলে বাহাউদ্দীন। বাউল সম্রাটের টাকায় তেইশ বছর আগে মায়ের চিকিৎসা হয়েছে।

মালা স্বামীকে বলল, আপনি একবার হাটে যান।

বাহাউদ্দীন বেরিয়ে যায়।

সামান্য ঝুঁকে লোকমানকে কোল থেকে বাউল সম্রাটের কোলে বসিয়ে দেয় মালা। গভীর শান্তি অনুভব করে । প্রসব যন্ত্রনা এতদিনে সার্থক হল। (নারী আসলে জীবনভর এক কবির অপেক্ষায় থাকে । সেই কবিটি কোলের শিশুটিকে স্পর্শ করলেই নারীর জীবন ধন্য হয় ।)

সে যা হোক। সন্ধ্যার মুখে বাহাউদ্দীন বাঘা আইড় মাছ এনে ফেলল রান্নাঘরের । আর তরি-তরকারি। বাঘা আইড় মাছ কেটেকুটে আলু দিয়ে রান্না করল মালা । মেয়েটির রান্না ভালো। হাজার হলেও সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের মেয়ে মালা। (আসলে বাংলাদেশের সর্বত্রই সুনামগঞ্জের রান্না প্রশংশিত।)

সন্ধ্যার পর ফুটফুটে জোছনা ফুটেছে। উঠানে মাদুর পেতে দিল বাহাউদ্দীন। সে আর রুহি ঠাকুর মোকাররম হোসেনকে দুদিকে ধরে এনে ধীরেসুস্থে বসিয়ে দিল। বাউল সম্রাটও বসলেন। হাওরের পানিতে চাঁদের আলো পড়ে চিকচিক করছিল। যেন তরল দুধের নহর। এলোমেলো দূরন্ত বাতাস বারবার এসে লুটিয়ে পড়ছিল উঠানে।

মালার রান্না শেষ। চকিত পায়ে উঠানে এসে বাউল সম্রাটকে আদুরে গলায় বলল, আব্বা, আমি সেই গানটা শুনব।

কোন গান মা?

বন্ধে, মায়া লাগায়ছে ...

বাউল সম্রাট মৃদু হাসলেন। মাথা নাড়লেন। তারপর গাইতে লাগলেন:



বন্ধে, মায়া লাগায়ছে, পিরিতি শিখাইছে,দেওয়ানা বানাইছে

কী জাদু করিয়া বন্ধে মায়া লাগাইছে ...

বসে ভাবি নিরালায়/ আগে তো জানি না বন্ধুর পিরিতের জ্বালা।

হায় গো নিজের ভাট্টায় কয়লা দিয়া আগুন জ্বালাইছে।



মালার চোখে পানি জমেছে। চাঁদের আলোয় বোঝা যায়। মালা মাদুরের কোণে বসেছিল। এখন উঠে যায়। তারপর দ্রুত পায়ে অন্ধকার-অন্ধকার ঘরে ঢুকে যায় ।



অন্ধকারে কাঁদতে বসে মালা। মোকাররম হোসেন কিংবা বাহাউদ্দীন টের পায়না।



মোকাররম হোসেন ছেলের বউকে ডাকলেন, মালা মালা। করিমরে পান দিয়া যাও।

বাউল সম্রাট বললেন, থাক মোকারম। ওরে এখন ডাইকো না।



আজ সকাল-সকাল ভাত খেয়ে বাউল সম্রাট শিষ্য রুহি ঠাকুরকে নিয়ে রওনা হলেন। ভোররাতে উঠে বাহাউদ্দীন বেতাঙ্গী আর আগুন চোখা নিয়ে এল।



পাঠক, এই মাছ দুটো সুনামগঞ্জের হাওরে বৃথা খুঁজতে যাবেন না। তার কারণ বর্তমানে এই দুই প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই কাহিনীর ঘটনাকাল ১৯৮০ বলেই বিলুপ্তপ্রায় মাছদুটির কথা উল্লেখ করা হল।



মালা বেতাঙ্গী মাছের ঝোল আর আগুন চোখা মাছ ভাজল। রাঁধতে-রাঁধতে কাঁদছিল মালা। বাউলে এ বাড়িত অ কেন আইলেন? আইয়া আমারও এবাম উতলা কইরা দিলেন? আমি ত সব ভুইলা গেছিলাম ...



গতরাত্রে মালা ঘুমাতে পারেনি। অবশ্য বাহাউদ্দীন ওর বউয়ের এসব পরিবর্তন টের পায় না।



সকালে মিষ্টি আলোয় উঠান ভরে ছিল। হাওরের হিজলের পাতা ছুঁয়ে বাতাস এসে লুটিয়ে পড়ছিল কলা গাছের পাতায়। মন দিয়ে বাউল সম্রাটের খাওয়া দেখছিল মালা । কত দুঃখ এই মানুষের মনে। মনের মইধ্যে দুঃখ না-থাকলে গান বান্ধে কেমনে। (আমার স্বামীর সুখও নাই, দুঃখও নাই, তারে দিয়া গান বাঁধা হইব না।) মালা শুনেছে বাউল সম্রাটের ছোট্ট সংসার। এক ছেলে আর স্ত্রী নিয়ে সুখি। তারপরও বাউলের বুকের ভিতরে বাওরের বাতাস হা হা করে।

বাউল সম্রাটের গলা দিয়ে ভাত নামছিলনা। রুহি ঠাকুর কীভাবে যেন টের পায়। তারও খাওয়া ঠিকঠাক হল না। সকাল থেকেই ওস্তাদের মন ব্যাজার। তার কি কারণ?

বিদায় নেবার সময় বন্ধুকে জড়িয়ে ধরলেন বাউল সম্রাট। দুজনেরই বয়েস হয়েছে। এ জীবনে আর দেখা হবে কিনা কে জানে। দুজনেই শিশুর মতন কাঁদলেন। অনেক ক্ষণ।



ভাটি অঞ্চলের হাওরের পারে বিস্তির্ণঘাসের জমি... সে জমিতে এক সময় দুটি বালকের একসঙ্গে কত দিন কেটেছে । গরু চড়াত দুজনে। বালকেরা রাখাল ছিল। বাংলার রাখালের মন মরমী হয়। আজও সে মরমী মন দু বৃদ্ধের ভিতরে বিরাজ করছে।



মালাও কাঁদল ...

উজানীর হাটটি মোকাররম হোসেনের বাড়ির কাছেই । খানিকটা কাদা ভরা ঘুরপথ। পায়জামা গুটিয়ে রাবারের পাম্প শ্যূ হাতে নিয়ে হাঁটতে বড় সুখ হয়। আজ দিনটায় খুব রোদ হবে। আকাশে কদিন হল শ্রাবণী মেঘের দেখা নেই। তবে বলা যায় না। মাসটা শ্রাবণ। মাসটার মনে গতিক বালিকার মনের মন ...

আজ বুধবার। হাটবার। উজানীর হাটে থই থই মানুষ। বাতাসে মাছের গন্ধ । কাদার গন্ধ। তবে হাটের মানুষের চোখেমুখে উদ্বেগ স্পষ্ট। কালনী, বছিরা, কুশিয়ারা এসব নদী বাঁক পরিবর্তন করছে। নদীর তলদেশ ক্রমশ বালি পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের একশ হাত দুইশ হাত নদীগুলি এখন কোথাও দশ হাত, কোথাও বিশ হাত। অগভীর নদী ফুসে উঠলেই হাওরবাসীর জীবনমরণ সমস্যা। এতসব উদ্বেগের পরও হাটের লোকজন বাউল সম্রাটের দিকে তাকাচ্ছিল। বাউল সম্রাট হাওরবাসীকে গান গেয়ে শান্তি দেন।

উজানীর হাটের যেকোনও জায়গায় দাঁড়ালে চোখে পড়ে কাঞ্চা বিলের ধূ ধূ সাদা পানি। জলমগ্ন হিজল গাছ। তার নীচে শ্যওলার বাগান। ওপরে ট্রলার। সে ট্রলার ভটভট শব্দ তুলে যায়। ঘাটে নৌকার ভিড়। তারি মাঝখানে একটি একতলা ছোট লঞ্চ। সাদা রং করা। রেলিংটা লাল রঙের। ওস্তাদ কেন যেন লঞ্চে উঠতে চান না। রুহি ঠাকুর এ কারণটি আজও বুঝে উঠতে পারেনি।

একটি নৌকা উজানধল যাবে । বাহাউদ্দীন সঙ্গে এসেছিল। সেই দরদাম করে দু’জনের ভাড়া ঠিক করল। ( ভাটি অঞ্চলের মাঝিরা শাহ আবদুল করিমের কাছে ভাড়া নেয় না। বাহাউদ্দীন বৈষয়িক মানুষ বলেই এসব খবর সে রাখে না। )



নৌকা ভেসে চলেছে উজানধলের উদ্দেশ্যে ...



মাঝারি আকারের ছই নৌকা।ছইয়ের ভিতরে-বাইরে দশ-বারোজন যাত্রী। পাটাতনে এক ঝাঁকা মাছ। তার আঁশটে গন্ধ ছড়িয়েছে। সে গন্ধের সঙ্গে কাদা ও পচা শ্যাওলার গন্ধ। এসব গন্ধই হাওরবাওরের চিরকালীন গন্ধ। এক বৃদ্ধ বিড়ি ধরিয়েছিল। সেই গন্ধও মিশে যাচ্ছিল চিরকালীন গন্ধের সঙ্গে ।

যাত্রীরা দীর্ঘদেহী শীর্ণ বাউল সম্রাটকে বিলক্ষণ চেনে। গভীর শ্রদ্ধাও করে। তাদের গান শুনতে ইচ্ছে হয়। তবে বাউল সম্রাটকে গান গাইতে বলার সাহস হয় না। বাউল সম্রাটের মুখ ভার, দৃষ্টি উদাস, চোখেমুখে গভীর বিষাদ। যাত্রীদের আশা বুঝি পূর্ণ হবে না আজ। অনেকেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দুঃখেভরা এদের জীবন। এরা হাওরের অধিবাসী । পানির সঙ্গে নিত্য কঠিন জীবনসংগ্রাম। উদ্বেগ আর উৎকন্ঠার ভিতর মারফতি-বাউল গানের সুরে শান্তি খুঁজে পায়। গান আছে বলেই জীবন অর্থহীন মনে হয় না। কেননা সুর স্বর্গীয়। জীবনসংগ্রাম অর্থহীন বলে মনে হয় না। আজ বাউল সম্রাটের গান শোনা হবে না বলে অনেকেই বিষন্ন বোধ করতে থাকে।

রুহি ঠাকুর সহসাই যেন ওস্তাদের উদাস হওয়ার কারণটি বুঝে উঠতে পারে। ওস্তাদ কি স্ত্রীবিরহে কাতর হয়ে উঠেছেন? হ্যাঁ। তাই হবে। গুরুমা আপ্তাবুন্নেছা ভারি মমতাময়ী নারী। ওস্তাদের শিষ্যদের পুত্রসম স্নেহ করেন। গুরুমা আপ্তাবুন্নেছা কে ওস্তাদ ‘সরলা’ বলে ডাকেন । সরলাই ওস্তাদের জীবনের সমস্ত প্রেরণার উৎস। রুহিঠাকুর জানে, তার ওস্তাদ অন্য পুরুষদের মতো নয়।



রুহি ঠাকুর বছর পাঁচেক আগে একবার কুষ্টিয়া গিয়েছিল। সেখানে একজন বৃদ্ধ বাউল রুহি ঠাকুরকে বলেছিলেন, ‘লালন শাঁই বলতেন, নারী হও, নারী ভজ।’ এই কথার কি মানে? রুহি ঠাকুর যে বোঝে না- তা কিন্তু নয়। লালনের নির্দেশ বাউল সম্রাট অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। ওস্তাদ প্রায়ই বলেন, সরলা আমার মুর্শিদ । আমার পথপ্রদর্শক। পুরুষমানুষ সাধারণত এ ধরণের মন্তব্য করে না।




ওস্তাদের আজ সকাল থেকে গুরুমার জন্য মন উচাটন হয়ে আছে। আশ্চর্য! মাত্র এক রাতের বিরহ ...

হঠাৎ রুহি ঠাকুর দেখল, ওস্তাদের বসে থাকার ভঙ্গিতে কেমন পরিবর্তন এসেছে। ওস্তাদ একবার আকাশের দিকে তাকালেন। তারপর ধ্যানস্থ হলেন ওস্তাদের সঙ্গে অনেক বছর ধরে আছে রুহি ঠাকুর। সে বুঝতে পারে ওস্তাদের এখন গান বাঁধার সময় হয়েছে। সে সচেতন হয়ে উঠল।



ওস্তাদ গেয়ে উঠলেন:



কেমনে ভুলিব আমি /কেমনে ভুলিব আমি/ বাঁচি না তারে ছাড়া

আমি ফুল / বন্ধু ফুলে ভ্রমরা/ সখী গো ...



রুহি ঠাকুর ছোট্ট শ্বাস ফেলে। গানটা অচেনা। ওস্তাদ এখনই বাঁধলেন। গানের পদগুলি স্মরণে গেঁথে নিতে লাগল। পরে তো তাকেই গেয়ে শোনাতে হবে।

যাত্রীরা নড়েচড়ে বসে। তাদের মনের আশা পূরণ হতে চলেছে।

মাঝি বৈঠা বাইতে-বাইতে মাথা নাড়ে। মাঝিটিবৃদ্ধ । পরনে ছেঁড়া লুঙ্গি আর গেঞ্জি । মাথায় গামছা। মাঝির মুখেও হাসি ফুটে উঠেছে।

এক রাতের বিরহ সইতে না পেরে আত্মমগ্ন হয়ে গান গাইছেন পঁয়ষট্টি বছরের বাউল :



না আসিলে কালো ভ্রমর

কে হবে যৌবনের দোসর ?

সে বিনে মোর শূন্য বাসর,

সে বিনে মোর শূন্য বাসর ,

আমি জীয়ন্তে মরা ...



হাওরের পানি শ্রাবণ মাসের রোদে ঝিকিমিকি করছিল।

বৃদ্ধ মাঝি আবহমান বাংলায় চিরায়ত হাওরের পরমানন্দে নৌকা বাইতে থাকে ...





উৎসর্গ: মহলদার (বলরামদা) ...যিনি প্রায়ই হাওরের ছবি তুলে আমাদের দেখান।

মন্তব্য ৩৮ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (৩৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:১১

পদ্ম।পদ্ম বলেছেন: তার সংগে দেখা আমার এক জনমে একবারই,এখনো জ্বলজ্বল করে মনে! ভুলবোনা সেই স্পর্শ,সেই আলাপ,সেই চোখ! কি উজ্বল! কি তিব্র!

২৮ শে জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৮

ইমন জুবায়ের বলেছেন: আপনি ভাগ্যবান!

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৪৫

ইশতিয়াক আহমেদ চয়ন বলেছেন: এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম।উনাকে আমি কি পরিমাণ শ্রদ্ধা করি সেটা আমি নিজেও জানি না।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ উনাকে নিয়ে পোষ্ট দেবার জন্য।আপনার পোষ্ট টি পড়ে ব্যস্ত জীবনে কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম।শুভকামনা রইল।

২৮ শে জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:৫০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩৩

চাটিকিয়াং রুমান বলেছেন: চমৎকার পোষ্ট। বেশ ভালো লাগলো। +++++++

২৮ শে জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২৮ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৩২

আকাশ_পাগলা বলেছেন: বস, পুরাটা কী আপনার কল্পনা ?
নাকি কোন বাস্তবতা আছে?

বাস্তবতার কিছু থাকলে যদি সোর্স দিলেন, অনলাইন না হোক এটলিস্ট আপনি জানলেন কোথা থেকে সেটা নিয়ে কিছু যদি বলতেন তাহলে ২ টা জিনিস হত।

পোস্ট গুলার পিছে আপনার প্রচণ্ড পরিশ্রমের একটা ইমেজ পেতাম।
পোস্টগুলা ১০০% নিখুঁত হয়ে যেত।

আর যদি পুরাটাই কল্পনা থাকে, তাহলে ত হলই।


এটা এই সিরিজের সেরা লেখা নিঃসন্দেহে। সোজা প্রিয়তে।

২৮ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৮:৪৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: পুরাটাই কল্পনা ...
তবে সুনামগঞ্জের ম্যাপ দেখতে হয়েছে। হাওরের নামের জন্য। তাছাড়া হাওর এর মাছের নামও নেটে দেখতে হয়েছে। আর কাগমারী সম্মেলনের কথা জেনেছি শাহ আবদুল করিমের ওপর নির্মিত তথ্যচিত্রের মাধ্যমে। ওগুলি অনেকেই দেখেছে। কাজেই এসব তথ্য উল্লেখের প্রয়োজন বোধ করিনি।
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৫| ২৮ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৯:২৩

ফাইরুজ বলেছেন: আমিতো ভেবেছিলাম এটা সত্যি ঘটনা। খুব ভালো লাগলো

২৮ শে জুলাই, ২০১১ রাত ৯:৩০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: কেমনে ভুলিব আমি /কেমনে ভুলিব আমি/ বাঁচি না তারে ছাড়া
আমি ফুল / বন্ধু ফুলে ভ্রমরা/ সখী গো ...

এই গানটা আমার খুব প্রিয়।
এই লেখায় আমি এই গানটার পরিপ্রেক্ষিত কল্পনা করেছি।
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৬| ৩০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১২:২০

মহলদার বলেছেন: দুঃখিত ইমন ভাই। অনেক দেরি করে পড়লাম লেখাটা। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়লাম। আমি ভাষা হারিয়ে ফেললাম একটা মন্তব্যের উত্তর পড়ে; লেখাটা পুরো কাল্পনিক!! পড়ছিলাম আর যেন দৃশ্যগুলো মানসপটে ভেসে উঠছিল....এত বাস্তব, প্রাণবন্ত ও ছুঁয়ে যাওয়ার মত হয়েছে উপস্থাপনা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানবেন। সব শেষের লাইনটা দেখে মনে হয়েছে এই অসাধারণ লেখাটা উৎসর্গ করা হয়েছে অপাত্রে।

বেতাঙ্গী(নানিন/রাণী)* মাছ হাওরে কাজ করতে গিয়ে ৩ বছরে একটির সন্ধান পেয়েছি। আগুনচোখা(কারিস/চিরাইন)* মাঝে মাঝে পাওয়া যায়; অনেক কম। বাঘা আইড়(বাগাড়/বাঘাড়)* ও অনেক কম মেলে আজকাল।

*সুনামগঞ্জের স্থানীয় নাম।

৩০ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৬:১৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: লেখাটার উৎসর্গ অপাত্রে হয়নি। হাওরের ছবি আর কে এভাবে দেখায়।যাইহোক, সম্প্রতি এক গবেষনাপত্রে দেখলাম প্রায় হাওরের প্রায় ৫০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে! ভাবলে কি যে খারাপ লাগে!
অনেক ধন্যবাদ।

৭| ৩০ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১২:৩৪

মহলদার বলেছেন: বেতাঙ্গী রাণী মাছের একটি আলাদা প্রজাতি। সচারচর আমরা যে রাণী দেখি এটি তার থেকে কিছুটা আলাদা, বিশেষ করে গায়ের রংয়ের বিন্যাস।

৩০ শে জুলাই, ২০১১ ভোর ৬:২০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: রানী মাছ! কি সুন্দর নাম। খাওয়া হয়নি কখনও।
ধন্যবাদ।

৮| ৩০ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৩:১১

জুবেরী বলেছেন: অসাধারন ...............................................................

৩০ শে জুলাই, ২০১১ বিকাল ৪:১৬

ইমন জুবায়ের বলেছেন: কবি ছাড়া আর কে বোঝে ...

৯| ৩১ শে জুলাই, ২০১১ রাত ১০:৫৭

তৌফিক জোয়ার্দার বলেছেন: লেখাটাতে কি ছিল জানিনা; নিজের অজান্তেই চোখের কোণ ভিজে গেল। কোন তারটা স্পর্শ করলেন বুঝলাম না; শুধু সুরটা যেন অস্তিত্বকে ছুঁয়ে গেল।

০১ লা আগস্ট, ২০১১ ভোর ৬:৪০

ইমন জুবায়ের বলেছেন: আমি বাকরুদ্ধ।
কৃতজ্ঞতা রইল।

১০| ০১ লা আগস্ট, ২০১১ সকাল ১০:৪১

রেজোওয়ানা বলেছেন: বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে
বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ
আমার বাড়ি আসে সই গো
বসন্ত বাতাসে ...



একদমই কাল্পনিক মনে হয়ে হয়নি, প্রতিটা গানের সৃষ্টির সাথে অনুষাঙ্গিক ঘটনা গুলোর খুব চমৎকার সমন্বয় করেছেন। অভিনন্দন :)

শাহ আবদুল করিমের জন্য শ্রদ্ধা রইলো......

০১ লা আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:১৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অভিনন্দন গৃহিত হইল। :)

১১| ০১ লা আগস্ট, ২০১১ সকাল ১০:৪৬

পাগলমন২০১১ বলেছেন: কেমনে ভুলিব আমি গানটা খুব ভাল লাগে আমার কাছে।পোস্টের জন্য ++++++
ভাল থাকা হয় যেন ভাইয়া। :)

০১ লা আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:১৫

ইমন জুবায়ের বলেছেন: গানটা আমারও খুব ভালো লাগে।
মনের কথা খুলে লিখতে পারলেই ভালো লাগে।
!:#P

১২| ০১ লা আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:৩৯

গানচিল বলেছেন: লোকজ গানের জন্য সিলেটের একটা নাম ডাক আছে। সেই হাসন রাজা, রাধারমন থেকে শুরু করে দুরবীন শাহ,শাহ আব্দুল করিম,অন্নদা রঞ্জন দাস, শফিকুন্নুর, প্রমুখ বাউলরা যুগে যুগে এসে গান শুনিয়ে সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন।যাদের নাম বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের লোকরা জীবনে হয়ত শুনেও নাই। কিন্তু হাসন রাজা/রাধারমন পরবর্তী সময়ে যে লোকটা ছোট-বড় সব শ্রোতার মাঝে ক্রেজ হয়ে উঠেছিলেন,(এবং এখনও যিনি স্হানীয় লোকদের কাছে সর্বাধিক জনপ্রিয়) তার নাম ক্বারী আমির উদ্দীন আহমেদ।যার নাম সিলেটের বাইরে ছড়ায় নাই বললেই চলে। শাহ আব্দুল করিমের ক্রেজটা সিলেটের লোকদের কাছে তখন গৌনই ছিল। যাইহোক, প্যাকেজ নাটকের যুগ (১৯৯৪ সাল) যখন শুরু হয় তখন হুমায়ুন আহমেদ শাহ আব্দুল করিমকে নিয়ে "রঙের বাড়ৈ" নামক একটা তথ্যচিত্র নির্মান করেন।(বলাবাহুল্য,হুমায়ুন যেখানে হাত দেবেন সেখানে পিতলও সোনা হয়ে যাবে।) তাই, আর যায় কোথায়! নাগরিক লোকদের কাছে শাহ আব্দুল করিম জীবনের শেষ পর্যায়ে হয়ে উঠলেন হাইলাইটেড। সবাই আব্দুল করিম,আব্দুল করিম নামের জপমালা উচ্চারন করতে লাগলো।বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে আব্দুল করিম গত এক যুগে প্রচণ্ড পরিচিতি পেলেও সিলেটের স্হানীয় লোকরা কিন্তু এখনও ক্বারী আমির উদ্দীন নামেই অস্হির।তারও কারন আছে।বাউল গানের প্রতি আমিরের চিন্তাধারা ও স্বতন্ত্র গায়কী।তার একটা গানের কথা উল্লেখ করছি।

জায়নামাজে বন্ধু সেজে
ধ্যানে পাবে খোদা
হুজুরী কলবে কর সজিদা !!

২৪ হাজার ৬ শত বার
কেরাতে রাখিয়া শুমার
পান করে লও নামেরই শুধা
সাক্ষাতে জানিয়া মাবুদ
ঈমানে রাখিয়া সাবুদ
পুলছিরাতের উপরেতে
আলিফের মত হও সিধা !!

অবিশ্বাস করিয়া কাতল
মাটির দেহ কর বদল
ভুলাইয়া রাখ মনের তৃষ্ণা ক্ষুধা
ভুলিয়া যাও আপনারে
হৃদয়ে অনুরাগ ভরে
অহঙ্কারী শয়তানেরে
তোমার থেকে রাইখো জুদা !!

সাকার খোদা মক্কায়ও নাই
কোরান পড়ে দেখরে ও ভাই
আদমপূরে মোকামে মাহমুদা
মুর্শিদ রুপে সেজদা কর
আশিকী নামাজ পড়
আমির উদ্দীন কয় তা না হলে
নামাজ হবে বেহুদা !!

Click This Link

Click This Link
যাইহোক,পোস্টের সাথে আমার এই মন্তব্য সম্পুর্ন অপ্রাসঙ্গিক। সেজন্য ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।তবে, আপনার বিভিন্ন লেখা পড়ে যেটা বুঝতে পারছি সেটা হল- প্রাচীন মিথ কিংবা বাউলদের নিয়ে আপনার জানার প্রচণ্ড কৌতুহল। তাই ভাবলাম,আপনার কাছে অনাবিস্কৃত আরেকজন বাউলকে পরিচয় করিয়ে দেই। ষেটা করতে গিয়ে বিশাল একটা মন্তব্য দাড়িয়ে গিয়েছে।

০১ লা আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১২:৫৪

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ক্বারী আমির উদ্দীন এর একটি গান শুনেছি। ওই গান থেকেই তাঁর হৃদয়টি মেপে নিয়েছি। সমস্যা হল আপনি যাদের যাদের নাম বললেন এঁদের সম্বন্ধে তেমন তথ্যাদি পাওয়া যায় না। কিছু তথ্য না-হলে লেখক যে অচল।
অনেক ধন্যবাদ।

১৩| ০৫ ই আগস্ট, ২০১১ সকাল ১১:৩৪

েরজা , বলেছেন:

এক কথায়- অ সা ধা র ন

শাহ আবদুল করিম কে নিয়ে একটা মন্চ ( বাননটা লিখতে পারছিনা ) নাটক দেখছিলাম এ বছরের শুরুতে ।
নাটকের নাম বা গ্রুপের নাম কোনটাই মনে করতে পারছি না ।

ঐ নাকটিও আমার কাছে খুব ভাল লেগেছিল।
নাটকের সংলাপ , উপস্হাপনা ছিল অসাধারন ।

ভাল কথা - আমি যখন আপনার লেখাটি পড়ছিলাম তখন মনে হচ্ছিল চোখের সামনে ঐ সব ঘটনা দেখতে পাচ্ছি ।

লেখাটা অনেক অনেক অনেক ভাল হয়েছে । ( জানিনা বুঝাতে পারলাম কিনা লেখাটা কত ভাল হয়েছে )

০৫ ই আগস্ট, ২০১১ দুপুর ১:১৫

ইমন জুবায়ের বলেছেন: কৃতজ্ঞতা রইল।

১৪| ২২ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১০:৩৪

সোমহেপি বলেছেন: রাণী মাছটি সিলেটে এখনো পাওয়া যায়।আম,ার কাছে খেতে খুব ভালো লাগে।রানী রাণীর মতই শরীরে রং বেরঙের নকশা।

হাওর বেলাকার মানুষ ইমন ভাই অনেক ভালো।মানে মানুষ বলতে যা বোঝায় তাই।আপনার গল্পটা অনেক দিন আগে প্রিয়তে এনে ছিলাম পড়ব বলে।আজকে পড়লাম।আমার এলাকা ও বষাকালে প্লাবিত থাকে মোটামোটি ৪-৫ মাস।ছেলেবেলায় ডিঙা ভাসাতাম।জ্যোৎস্না রাতে নৌকায় গানের আসর বসাতাম।চলে যেতাম গ্রাম থেকে গ্রামে।

সুনামগঞ্জের হাওরে আমি এখনো যাই।এর বাতাসের তুলনা নাই।এর গন্ধের তুলনা নাই।টাঙ্গুয়ার হাওর নিয়ে একটা গল্প লিখছি।দুটো পাখি বাস করে হাওরেরর একটা হিজল গাছে।তাদের প্রেম বিরহের গল্প।কিন্ত্ত গল্পে টাঙুয়ার হাওরের যে বর্ণনা আছে সেটা যে কেমন না গেলে বুঝতে পারমু না।সিলেট থেকে ওখানে যাওয়া কিছু মুসকিল।তাও মনে হচ্ছে ওখানের বর্ণনাটা ভুল হবে না।

আপনার গল্পের আবহে মনে হচ্ছিল ওই নায়ে আমিও ছিলাম।দিরাই ,জগন্নাথপুর,ধর্মপাশা,করিমগঞ্জ ,জামালপুর এসব এলাকায় অনেকবার গিয়েছি।যাতায়াত করাটা অনেক কষ্টের।তাঁরা বিত্তে ধনী না হলেও হৃদয় অনেক ধনী।তাদের কথাগুলো এমন যে একজনকে অনেক আপন করে নেয় সহজেই।বষাকালে অনেক মানুষ হাস পালে ।২ হাজার ৩ হাজার ১০হাজার আর তাদের প‌্যাক প‌্যাক শব্দে হাওর পুরা আসমানে উইঠা থাহে।

২২ শে আগস্ট, ২০১১ রাত ১১:২৩

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

১৫| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:৪৬

অদ্ভুত সেই ছেলে বলেছেন: আমি সিলেটি ফুয়া(ছেলে) ভাই, সিলেটি ভাষায় মাত্ততাম(কথা বলতে) ফারি(পারি)। আপনার লেখাটি হৃদয়স্পর্শী এতে কোন সন্দেহ নেই। বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিম যেসব গান লিখেছেন তার সবই আধ্যাত্মিক। তিনি বাংলার বাউলদের মধ্যে সম্রাট উপাধি পান যার জন্য তাকে বাউল সম্রাট বলা হয়। তাছাড়া সিলেটের আরো কয়েকজন মরমি গায়ক যাদের কথা না বললেই নয়। দেওয়ান হাছন রাজাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার মত কিছু নয়। কিন্ত ক্বারি আমির উদ্দিনকে অনেকেই চেনেন না যিনি অনেক আধ্যাত্মিক গান গেয়েছেন। তার গানে খোদার আসল পরিচয় পাওয়া যায় যে, আল্লাহ কাকে কখন দয়া করবেন তা কোন মানুশ,ফেরেশতা,শাস্ত্র কেউ বলতে পারবেনা। এরপর আরেক সূফী গায়ক দূরবীন শাহ্‌, যার একটা গানের কিছু লাইন না বললেই নয়..

"বন পুড়িলে সবাই দেখে চাইয়া,
মন পুড়িলে কেউ দেখেনা অন্তরে ডুবিয়া,
যার অন্তরে জ্বলে আগুন সে জানে কি হইলো,
জ্বালাইয়া পুড়াইয়া আঙ্গারা বানাইলো।

সোনা বন্দে কি আগুন জ্বালাইলো গো,
জ্বালাইয়া পুড়াইয়া আঙ্গারা বানাইলো।"

এসব মহান ব্যাক্তিদের গানগুলো শুধু গান নয়, বাংলার মানুষের জীবনের পুরো অংশ এসব গানের কথার সাথে মিল। যতই আমরা নতুন/পুরোনো হিন্দী ইংলিশ গানকে পছন্দ করিনা কেন, তারপরও এইসব গান একবার শুনলেই সব ভুলে যাবেন কেননা এই গান আমাদের অন্তরআত্মাকে স্পর্শ করে। আমার কথাগুলো এলোমেলো ভাবে উপস্থাপন করার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত। আপনার লেখাটা এক কথায় অসাধারণ হয়েছে। সিলেটে আসার আমন্ত্রণ জানি আপনাদের সবাইকে।

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৭:২২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৬| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ ভোর ৬:৪৯

অদ্ভুত সেই ছেলে বলেছেন: সিলেটে আসার নিমন্ত্রণ রইলো আপনাদের

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৭:২২

ইমন জুবায়ের বলেছেন: অবশ্যই সিলেট যাব। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

১৭| ০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৭:৩২

ঘটলা বলেছেন: অসাধারণ!!

০৯ ই অক্টোবর, ২০১১ সকাল ৭:৪৩

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৮| ১১ ই মে, ২০১২ রাত ১১:৩৯

একজন ঘূণপোকা বলেছেন: ভাই ওনার গানের লিঙ্ক দেওন যায় না?

১২ ই মে, ২০১২ ভোর ৫:৩৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: গানের লিঙ্ক ?
Click This Link
ধন্যবাদ।

১৯| ১১ ই মে, ২০১২ রাত ১১:৫৫

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন: দূর্দান্ত পোস্টে মন ভরে উঠলো।
ধন্যবাদ।

১২ ই মে, ২০১২ ভোর ৫:৩৯

ইমন জুবায়ের বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.