নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন শিক্ষক, লেখালেখি, সম্পাদনা ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। বাংলাদেশ কে ভালবাসি। দেশের জন্য, মানুষের জন্য সামান্য হলেও কিছু করতে চাই।

মা, মাটি ও মানুষকে ভালবাসি। ভালবাসতে চাই।

বিএইচ মাহিনী

I am a social worker.

বিএইচ মাহিনী › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারীর মর্যাদা রক্ষায় ইসলামঃ আজকের বাস্তবতা

০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২৩

নারীর মর্যাদা রক্ষায় ইসলামঃ আজকের বাস্তবতা

মাওলানা বি.এইচ.মাহিনী, সাংবাদিক ও শিক্ষক

নজরুলের সেই কালজয়ী কবিতার চরণ দিয়ে শুরু-

“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার গড়িয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।”

নারীর পরিচয়ঃ

নারী বলতে পৃথিবীর অন্যতম প্রাণী মানুষের স্ত্রী-বাচকতা নির্দেশক রূপটিকে বোঝানো হয়। এর বিপরীত পুরুষ, নর প্রভৃতি। ইংরেজীতে নারীর প্রতিশব্দ করা হয়েছে Female বা Woman. সংস্কৃত নৃ শব্দটি থেকে নারী শব্দটির উৎপত্তি (নৃ+ঈ=নারী)। বিভিন্ন আসমানী কিতাব যেমন বাইবেল, কুরআন ইত্যাদি অনুসারে হাওয়া পৃথিবীর প্রথম নারী বা মানবী। ‘নারী’ শব্দটি সাধারণত প্রাপ্তবয়স্ক স্ত্রী-মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে ইসলাম নারীকে মর্যাদা দিয়েছে তিনভাবে এক মাতা হিসেবে, দুই বঁধু, তিন কন্যা হিসেবে। যেখানে ‘মেয়ে’ শব্দটি ব্যবহৃত হয় স্ত্রী-শিশু বা কিশোরীর ক্ষেত্রে। তাছাড়া বয়সের বাধা ডিঙিয়েও ‘নারী’ শব্দটি সমগ্র স্ত্রী-জাতিকে নির্দেশ করতে ব্যবহৃত হতে পারে, যেমন: ‘নারী অধিকার’ দ্বারা সমগ্র স্ত্রী জাতির প্রাপ্য অধিকারকে বোঝানো হয়।অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে নারীর সংগায় বলা হয়েছে- ‘An adult female human’ এছাড়াও বলা হয়েছে-‘a wife’. আরবিতে নারীর সমার্থক শব্দ ধরা হয় ‘নিসা’ বা ‘নিসাউন’।

পরিসংখ্যানে নারী-পুরুষঃ

উইকিপিডিয়া মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে জানা যায় যে, ‘সিআইএ’ এর ওয়ার্ল্ড ফ্যক্টবুক এর হিসাব অনুযায়ী বর্তমান (জুলাই-২০১৩) বিশ্বের জনসংখ্যা ৭,০৯৫,২১৭,৯৮০। যারমধ্যে নারী পুরুষের অনুপাত হলো ১০০:১০১। অর্থৎ যেখানে পুরুষের সংখ্যা ৩,৫৭১,৩৭৪,০৯৯ জন, সেখানে নারীর সংখ্যা ৩,৫২৩,৮৪৩,৮৮১ জন। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিত আদমশুমারীর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের নারীর সংখ্যা ৭কোটি ১০ লাখ ৬৪ হাজার। পুরুষ ও নারীর সংখ্যার অনুপাত ১০০:১০৩। এদেশে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষের গড় আয়ু ৬৩ বছর।

নারীদের বর্তমান অবস্থাঃ

স্বাস্থ্য ও পুষ্ঠি : বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫০ শতাংশ নারী পুষ্টিহীনতায় ভোগেন। যাদের প্রায় ৪৩ শতাংশের উপর গর্ভকালীন অবস্থায়। বাংলাদেশে প্রতি ঘন্টায় গর্ভ ও প্রসবজনিত জটিলতায় প্রায় ৩ জন মা মৃত্যুবরণ করেন। মাত্র ১৩ শতাংশ বাংলাদেশী নারী প্রসবের সময় দক্ষ ধাত্রীর সহায়তা পায়। বাংলাদেশে গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ৫৭ শতাংশের বয়স ১৯ বছরেরনীচে এদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ নারী পরিপূর্ণ পুষ্টির অভাবে রক্তশূণ্যতায় ভোগে।

বিবাহ : বাংলাদেশের ৬৪ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর পূর্ণ হবার আগেই। যাদের ৯০-৯৫ শতাংশই মা হয়ে যান ১৮ বছর পূর্তির আগেই।

গর্ভপাত : ১৫ থেকে ১৯ বছরেই অন্ত:সত্ত্বা কিংবা মা হয় এক তৃতীয়াংশ। সারাবিশ্বে প্রতি মিনিটে ৩৮০ জন নারী গর্ভবতী হয়, ১৮০ জন নারী অপরিকল্পিত বা অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ করে, ১১০ জন নারী গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতায় ভোগে, ৪০ জন নারী অনিরাপদ গর্ভপাত ঘটায় এবং ১ জন নারী মারা যায়।

শিক্ষা :১৫ ও এর উর্ধ্ববয়সী নারীর স্বাক্ষরতার হার ৪০.৮ শতাংশ। উচ্চ মাধ্যমিক ও তৎপরবর্তী শিক্ষায় নারীর ভর্তি হার মাত্র ৪ শতাংশ। বাল্যবিবাহের কারণে শতকরা ৪১ ভাগ কিশোরীকে স্কুল ত্যাগ করতে হয়।

জ্ঞান-বিজ্ঞানে নারী : ঐতিহাসিকভাবেই নারীকে গৃহপ্রকোষ্ঠে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। পরিবার থেকেই তাদেরকে বিজ্ঞান চর্চায় অংশগ্রহণ কিংবা উদ্বুদ্ধ করা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২৩ সালে সমান অধিকার আইন আকারে গৃহীত হবার পর নারীদেরকে উল্লেখযোগ্য হারে বিজ্ঞান বিষয়ে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। কিন্ত বিজ্ঞানে অংশগ্রহণের হার প্রকৌশল বিদ্যার তুলনায় নিম্নমুখী। বিজ্ঞান ও প্রকৌশলে ডক্টরেট গ্রহণের সংখ্যা ১৯৭০ সালে ৭% থেকে ১৯৮৫ সালে ৩৪%-এ দাড়ায়। তন্মধ্যে প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রীর সংখ্যা যেখানে ছিল ১৯৭৫ সালে ছিল মাত্র ৩৮৫ জন, সেখানে ১৯৮৫ সালে ১১০০০ ছাড়িয়ে যায়। শিক্ষাক্ষেত্রে আইনের মাধ্যমে নারীকে বিশেষায়িত করলেও এখনো এ পেশায় বেশ অসমতা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৯৮৯ সালে বিজ্ঞানী হিসেবে পুরুষের অংশগ্রহণ ছিল ৬৫% এবং মাত্র ৪০% নারী উচ্চ পদে আসীন ছিলেন। যেখানে পূর্ণাঙ্গকালীন একজন বিজ্ঞানীর বার্ষিক আয় $৪৮,০০০; সেখানে নারীর আয় ছিল $৪২,০০০।

নারী নির্যাতন যুগে যুগে: ইতিহাসের দুটি পর্যায়ে নির্যাতিত হয়েছে নারীরা। একবার অন্ধকারাচ্ছন্ন অজ্ঞতার যুগে, আর একবার আমাদের এ আধুনিক যুগে। অজ্ঞতার যুগে নারীদের সীমাহীন অত্যাচার করা হতো, তাদের সঙ্গে করা হতো পশুর মতো আচরণ। ইসলাম এসে তাদেরকে তা থেকে উদ্ধার করেছিল। পরে আবার এ আধুনিক যুগে এসে নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়। আধুনিক যুগে নারী স্বাধীনতা ও নারী মুক্তির ধুয়া তুলে নারীদেরকে তাদের স্বীয় সম্মান ও উচ্চ আসন থেকে টেনে নিচে নামিয়ে আনা হয়, তাদের মর্যাদাকে ভুলন্ঠিত করা হয়’। হ্যাঁ, সমাজদেহের অর্ধাংশ এ নারীরা যুগে যুগে হয়েছেন নির্যাতিত। নারীরা এ নির্যাতন সম্পর্কে কখনো সচেতন ছিলেন আবার কখনোবা তারা নিজেরাই সমাজপতিদের কুটকৌশলে অবচেতনভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। আধুনিক এ বিশ্বেও তারা অন্য এক রূপে নির্যাতনের শিকার হয়ে চলেছেন। আজকের যুগে নারীরা একদিকে প্রকৃত ধর্মের স্বরূপ বিকৃত করে উপস্থাপন করা কুসংস্কার, অপরদিকে আধুনিকতার আড়ালে লালসার শিকারে পরিণত হচ্ছেন। আর বিশ্বকে শোষণ করার জন্য এক সুযোগ নিচ্ছে বিশ্বের পুলিশি ভূমিকায় অবতীর্ণ বৃহৎ শক্তিবর্গ। পুরো ব্যপারটি দর্জির হাতে থাকা কাঁচির সঙ্গে তুলনা করলে দাঁড়ায়, কাঁচির এক ধারে কুসংস্কার আর অপর ধারে তথাকথিত আধুনিকতা, এর হাতল বৃহৎ শক্তিবর্গের হাতে। আর এ ব্যবস্থার মাঝে বলি হচ্ছে নারী সমাজ। আজকের যুগে নারী নির্যাতনের স্বরূপ বিশ্লেষণ করার আগে অন্ধকার যুগে নারী নির্যাতন সম্পর্কে কিছু কথা তুলে ধরলে আমাদের নিকট সুস্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, এ সভ্য যুগে নারী নির্যাতনের সাথে অসভ্য যুগে নারী নির্যাতনের পার্থক্য কতটুকু! ইসলামের আবির্ভাবের আগে নারী নির্যাতনের ইতিহাসকে দুটি পর্যায়ে ভাগ করা যেতে পারে।

পৌত্তলিকতা ও বর্বরতার যুগ : এ যুগে নারীরা ছিল পন্য সদৃশ ক্রয়-বিক্রয়ের সামগ্রী। নিজ স্ত্রীকে বিক্রি করা, স্ত্রীকে অন্যের ভোগের জন্য দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা, সামান্য অপরাধে গাছের সাথে বেঁধে প্রহার করা ইত্যাদি ছিল এ যুগে নারী নির্যাতনের কুখ্যাত দিক। মিশরীয়, পারসিক, গ্রিক ও রোমান সভ্যতার যুগ ঃ এ যুগে মানব চিন্তার উৎকর্ষ সাধিত হয়ে একেশ্বরবাদী বিভিন্ন মানব সভ্যতা জন্মলাভ করেছিল। এ সময় নারীদের ব্যক্তি স্বার্থে মানুষরূপে স্বীকার করা হলেও প্রকৃত যে অধিকার ও মর্যাদা তাদের পাওয়া উচিত তা তাদের দেয়া হয়নি। তাদেরকে পুরুষের জীবন সঙ্গিনী হিসেবে মনে করা হলেও আধ্যাতিœক ও সামাজিকভাবে তাদের কোনো ভূমিকা স্বীকার করা হতো না। তারা ছিল নিছক পুরুষের প্রয়োজন মেটানোর সামগ্রী।প্রাচীন গ্রিসে নারী নির্যাতনের ধরন:প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতার মতো অধিকাংশ প্রাচীন সভ্যতায় নারীদের কোন আইনগত ও সামাজিক অধিকার ছিল না। তাদের মনে করা হতো বাজারে ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য ব্যবসায়িক পণ্য। বিশ্বাস করা হতো যে, নারীদের মধ্যে প্রয়োজনীয় সকল মানবীয় প্রতিভা নেই, তাই তার চেতনাও শাশ্বত নয়। অতএব, স্বামীর মৃত্যুর পর তার জীবনধারণের আর কোনো অধিকার নেই। ইহুদি সমাজে নারী নির্যাতনের ধরন:ইহুদি পরিবারের একজন নারী হচ্ছে সম্পদ ও দাসীর মতো এবং তাকে পিতার উত্তরাধিকারের অংশ বিবেচনা করা হয়। ফলে নারীরা সেখানে সহায়-সম্পত্তি ও ক্রয়-বিক্রয়যোগ্য দাসের মতো। ইহুদি পরিবারে যখন কোন পুত্রের জন্ম হয়, তখন সে উপলক্ষে আনন্দ উৎসব হয়। আর যখন কোন কন্যার জন্ম হয়, তখন সে পরিবারে দুঃখ ও উদ্বেগ পরিলক্ষিত হয় (জেনেসিস, অধ্যায়-৩৫, শ্লোক-১৭)।

খৃস্টান সমাজে নারী নির্যাতনের ধরন: ইটালি ও স্পেনের খৃস্টান সংগঠনগুলো ব্যাপক গবেষণা সমীক্ষার পর এই ধারণায় উপনীত হয় যে, বিশ্বের নারীদের মধ্যে কেবলমাত্র আশীর্বাদপ্রাপ্ত কুমারী মেরিই মানবিক মর্যাদা ও গুণের অধিকারী। এছাড়া অন্য কোন মহিলার মধ্যে মানবিক গুণাবলি নেই। তারা মানুষ ও প্রাণীর মাঝামাঝি পর্যায়ের সৃষ্টি (হকুকে মাদানী জাওজাইন, পৃ-১১)। ভারতবর্ষে নারী নির্যাতনের ধরন:প্রাচীন হিন্দু আইনে বলা হয়েছে রোগ, মহামারি, মৃত্যু, নরক, গরল ও অগ্নি নারী অপেক্ষা উত্তম। ভারতে কোন স্বামীর মৃত্যু হলে স্ত্রীকে স্বামীর চিতায় পুড়িয়ে মারা হতো। আরবে নারী নির্যাতন:ইসলাম পুর্বকালে আরবে মহিলাদের অবস্থা এতই শোচনীয় ছিল যে, বিশ্বের অন্য যে কোন অঞ্চলের চেয়ে তা ছিল মারাতœক। সেখানে কন্যা শিশুদের জীবন্ত কবর দেয়া হতো।ফ্রান্সে নারী নির্যাতনের ধরন:নারীরা আদৌ মানব প্রজাতির অন্তর্ভূক্ত কি না তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য ৫৮৬ খৃস্টাব্দে ফ্রান্সে কতিপয় বিশেষ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সিদ্ধান্ত প্রকাশ করেছিল যে, নারীরা মানুষ বটে, তবে পুরুষের সেবার জন্যই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে।

পশ্চিমা বিশ্বের নারী নির্যাতন

নারী নির্যাতনের সমাধান হিসাবে পশ্চিমা বিশ্ব সমস্ত পৃথিবীব্যাপী ফ্রিডম বা স্বাধীনতার ধ্যানধারণাকে জোরের সাথে প্রচার করলেও, প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার মিথ্যা শ্লোগানে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে পশ্চিমের নারীরা হয়েছে এক অভিনব দাসত্বের শিকার। বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতা, সুপার হিট হলিউড মুভি, নামী-দামী ফ্যাশন ম্যাগাজিন কিংবা চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপনের সাহায্যে তারা মুসলিম বিশ্বেও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করছে তাদের মুক্ত-স্বাধীন নারীদের। তাদের ইলেক্ট্রনিক আর প্রিন্ট মিডিয়াতে আধুনিকা নারীদের দেখলে মনে হয় জীবনের সবক্ষেত্রেই তারা প্রচন্ড রকম স্বাধীন। স্বাধীন সমাজে তাদের ভূমিকা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, স্বাধীন পোশাক পরিধানের ক্ষেত্রে কিংবা স্বাধীন পুরুষের সাথে সম্পর্ক তৈরীর ক্ষেত্রে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাদের শরীরের ওজন, প্রতিটি অঙ্গের মাপ, পোশাক-পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে সাজসজ্জা পর্যন্ত সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত হয় ফ্যাশন, ডায়েট কিংবা কসমেটিকস ইন্ডাস্ট্রীর দ্বারা। সমাজের নির্দেশ মানতে গিয়ে তারা নিজেকে পরিণত করে সস্তা বিনোদনের পাত্রে। আর, মুক্ত স্বাধীন হবার জন্য বাধ্যতামূলক ভাবে কাঁধে তুলে নেয় জীবিকা উপার্জনের মতো কঠিন দায়িত্ব।

নারী নির্যাতনের মূল কারণ :পুঁজিবাদ হচ্ছে মানুষের তৈরী এক জীবনব্যবস্থা, যার মূলভিত্তি ব্যক্তি স্বার্থসিদ্ধি। এ জীবনব্যবস্থায় মানুষের নেই কারো কাছে কোন জবাবদিহিতা। বরং রয়েছে লাগামহীন ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারীতার সুযোগ। তাই, পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত সমাজে জবাবদিহিতারঅনুপস্থিতি আর চূড়ান্ত ব্যক্তি স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে মানুষ, অন্যের চাওয়া-পাওয়া, আবেগঅনুভূতি, অসহায়ত্ব এমনকি নারীকেও পরিণত করে মুনাফা হাসিলের পণ্যে।পুঁজিবাদী সমাজ নারীকে দেখে নিরেট ভোগ্যপণ্য ও মুনাফা হাসিলের উপকরণ হিসাবে।ফলে, নারী সমাজের কোন সম্মানিত সদস্য হিসাবে বিবেচিত না হয়ে, সমাজে প্রচলিত অন্যান্য পণ্যের মতোই পরিণত হয় বিকিকিনির পণ্যে। আর হীন স্বার্থ সিদ্ধির মোহে অন্ধ মানুষ নারীর দৈহিক সৌন্দর্যকে পুঁজি করে চালায় জমজমাট ব্যবসা। বস্তুতঃ নারীর প্রতি এ জঘণ্য দৃষ্টিভঙ্গীর প্রত্যক্ষ ফলাফল হিসাবে স্বেচ্ছাচারী মানুষ শুধুমাত্র লাভবান হবার জন্য শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধনী-দরিদ্র সকল নারীকেই করে নির্যাতিত। মুক্ত সমাজ, মুক্ত মানুষ, মুক্ত অর্থনীতি ইত্যাদি পশ্চিমা পুঁজিবাদী জীবনদর্শনের মূলমন্ত্র হলেও, মুক্ত সমাজের মুক্ত জীবনের ধারণা নারীকে মুক্তি দেয়নি বরং বহুগুনে বেড়েছে তার উপর অত্যাচার আর নির্যাতনের পরিমাণ। বাস্তবতা হলো, ফ্রিডম বা স্বাধীনতার ধারণা পশ্চিমা সমাজের মানুষকে ঠেলে দিয়েছে স্বেচ্ছাচারী ও দায়িত্বজ্ঞানহীন এক জীবনের দিকে। যেখানে স্বাধীনতার অপব্যবহারে নির্যাতিত হচ্ছে নারীসহ সমাজের অগণিত মানুষ। জবাবদিহিতার অনুপস্থিতিতে এক মানুষের স্বাধীনতা হচ্ছে অন্য মানুষের দাসত্বের কারণ। আর, ব্যক্তি স্বাধীনতার চূড়ান্ত অপপ্রয়োগে তাদের সমাজে বাড়ছে খুন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানী ও পারিবারিক সহিংসতাসহ সকল প্রকার নারী নির্যাতন।

এক নজরে পশ্চিমা সমাজে নারী নির্যাতন :



১. ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নির্যাতন: পশ্চিমা সমাজে মূলতঃ তাদের ফ্যাশন, ডায়েট আর কসমেটিকস্ ইন্ডাস্ট্রিগুলোই নির্ধারণ করে নারীর পোশাক, তার সাজ-সজ্জা, এমনকি তার দেহের প্রতিটি অঙ্গের মাপ। স্বাধীনতার মিথ্যা শোগানে নারীকে তারা বাধ্য করে জঘণ্যভাবে দেহ প্রদর্শন করতে। তারপর, অর্ধনগড়ব সেইসব নারীদেহকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয় বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা। ১৯৮৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিগুলো প্রতিবছর ৮.৯ বিলিয়ন পাউন্ড মুনাফা অর্জন করে থাকে। আর, সমস্ত বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিগুলো বছরে অর্জন করে মাত্র ১.৫ হাজার বিলিয়ন ডলারের মুনাফা। অপরদিকে, নামকরা মডেল বা সুপার মডেল হতে গিয়ে নারীকে কমাতে হয় আশঙ্কাজনক পর্যায়ে তার ওজন। পরিণতিতে বন্ধ্যাত্ব, ভয়াবহ নিমড়ব রক্তচাপ, অ্যানোরেক্সিয়া কিংবা বুলেমিয়ার মতো মারাত্মক রোগ হয় তার জীবনসঙ্গী। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেনটাল হেলথ এর প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ২০ জনে ১ জন নারী অ্যানোরেক্সিয়া, বুলেমিয়া কিংবা মারাত্মক ক্ষুধামন্দারশিকার হয়। আর প্রতিবছর ১০০০ জন মার্কিন নারী অ্যানোরেক্সিয়া রোগে মৃত্যুবরণ করে। (সূত্র: আমেরিকান অ্যানোরেক্সিয়া/বুলেমিয়া অ্যাসোসিয়েশন)। বস্তুতঃ ফ্যাশনইন্ডাস্ট্রিগুলোর বেঁধে দেয়া ভাইটাল স্ট্যাটিকটিকস্ অর্জন করতে গিয়েই পশ্চিমে অকালে ঝরে যায় এ সব নারীর জীবন।

২. ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি: নারী-পুরুষের লাগামহীন মেলামেশা আর প্রবৃত্তি পূরণের অবাধ স্বাধীনতার প্রত্যক্ষ ফলাফল স্বরূপ পশ্চিমা সমাজের নারীরা অহরহ হয় ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার। এমনকি এই বিকৃত আচরণ থেকে সে সমাজের নিষ্পাপ শিশুরা পর্যন্ত রেহাই পায় না। নারী স্বাধীনতার অগ্রপথিক যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৪৫ সেকেন্ডে ধর্ষিত হয় একজন নারী, আর বছরে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় সাড়ে সাত লক্ষে। (সূত্র : দি আগলি ট্রুথ, লেখক মাইকেল প্যারেন্টি)। আর, বৃটেনে প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন নারী ধর্ষিত হয় এবং মাত্র ১০০ জনের মধ্যে একজন ধর্ষক ধরা পড়ে।

৩. কর্মক্ষেত্রে হয়রানি: গণমাধ্যম গুলোতে নারীকে প্রতিনিয়ত সেক্স সিম্বল হিসাবেউপস্থাপন করার ফলে নারীর প্রতি সমাজের সর্বস্তরে তৈরী হয় অসম্মানজনক একবিকৃত দৃষ্টিভঙ্গী। আর বিকৃত দৃষ্টিভঙ্গীর ফলাফল হিসাবে শিক্ষিত নারীরাও কর্মক্ষেত্রে তাদের পুরুষ সহকর্মীর কাছে প্রতিনিয়ত হয় যৌন হয়রানির শিকার। মিডিয়া ও সরকারী তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৪০-৬০% নারী কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানির শিকার হয়। আর ইউরোপিয়ান উইমেনস লবির প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী যুক্তরাজ্যেও ৪০-৫০% নারী তার পুরুষ সহকর্মীর কাছ থেকে বিভিনড়ব ধরনের যৌন হয়রানির শিকার হয়।

৪. পারিবারিক সহিংসতা: যে সমাজে নেই কারো কোন জবাবদিহিতা, নেই পরস্পরের প্রতি কোন শ্রদ্ধাবোধ আর সেই সাথে রয়েছে সীমাহীন স্বেচ্ছাচারীতার সুযোগ, সে সমাজে ভয়াবহ পারিবারিক সহিংসতা হয় নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। বস্তুতঃ জীবন সম্পর্কে এ ধরণের ভয়ঙ্কর ভ্রান্তিমূলক ধারণা থেকেই বিয়ের পূর্বে বা পরে সবসময়ই পশ্চিমের নারীরা হয় তার পুরুষসঙ্গীর পাশবিক নির্যাতনের শিকার। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১৮ সেকেন্ডে একজন নারী স্বামী কর্তৃক প্রহৃত হয়। ইউএস জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এর ১৯৯৮ সালে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ৯ লক্ষ ৬০ হাজার পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটে। আর, প্রায় ৪০ লক্ষ নারী তার স্বামী অথবা বয়ফ্রেন্ডের দ্বারা শারীরিকভাবে হয় নির্যাতিত।

৫. কুমারী মায়েদের যন্ত্রনা: নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার প্রধান অসহায় শিকার হয় পশ্চিমের কুমারী অল্পবয়সী নারীরা। আনন্দের পর্ব শেষে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ সঙ্গী আর্থিক বা সামাজিক কোন দায়দায়িত্ব স্বীকার না করায় একাকী নিতে হয় তাকে অনাহুত সন্তানের দায়িত্ব। আর, অপরিণত বয়সে পর্বতসম দায়িত্ব নিয়ে গিয়েতাকে হতে হয় ভয়ঙ্কর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার। যুক্তরাষ্ট্রের গুটম্যাচার ইনস্টিটিউট এর প্রদত্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর ১৫-১৭ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় ৭ লক্ষ ৫০ হাজার অবিবাহিত নারী গর্ভবতী হয়। আর, সেদেশের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে বছরে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কিশোরী মেয়েগর্ভধারণকরে।

৬. কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নির্যাতন: পশ্চিমা সভ্যতা পৃথিবীব্যাপী নারী-পুরুষের সমঅধিকারের বার্তা প্রচার করলেও তাদের নিজেদের সমাজেই নারীরা প্রচন্ড বৈষ্যমের শিকার। শুধু মাত্র নারী হবার জন্য একই কাজের জন্য তাকে পুরুষের চাইতে দেয়া হয় অনেক কম অর্থ। এখন থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে প্রেসিডেন্ট কেনেডি যুক্তরাষ্ট্রে ইকুয়েল পে অ্যাক্ট আইন পাশ করলেও, এখনও ১৫ বছর ও তার উর্ধ্বে কর্মরত নারীরা একই কাজের জন্য পুরুষদের চাইতে প্রতি ডলারে ২৩ সেন্ট কম উপার্জন করে। ইউ.এস গর্ভমেন্ট অ্যাকাউন্টেবিলিটি অফিস এর জরিপ থেকেদেখা যায়, সে দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবস্থাপনা বিভাগের মোট কর্মচারীর প্রায় ৭০ ভাগ নারী হলেও নারী ব্যবস্থাপকরা পুরুষের চাইতে অনেক কম অর্থ পেয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, ১৯৯৫-২০০০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে নারী-পুরুষের উপার্জনের এই বৈষম্য ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। বস্তুতঃ পশ্চিমের দেশগুলোতে নারীরা শুধুমাত্র দুটি পেশায় পুরুষদের চাইতে বেশী উপার্জন করে, তার একটিহচ্ছে মডেলিং আর অন্যটি হচ্ছে পতিতাবৃত্তি।

৭. পর্ণোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির নির্যাতন: পশ্চিমা বিশ্বে নারীরা সবচাইতে জঘন্য ভাবে নির্যাতিত হয় পর্ণোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির মাধ্যমে। যেখানে, ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির মতোই নগড়ব নারীদেহকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলা হয়েছে পৃথিবী ব্যাপী বিস্তৃত মুনাফালোভী এক চক্র। আর, এর জঘন্য শিকার হচ্ছে লক্ষ কোটি অসহায় নারী ও শিশু। শুধু নারী দেহকে উপজীব্য করে এই পৃথিবীতে ৫৭ বিলিয়ন ইউ.এস ডলারের পর্ণোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর্ণোগ্রাফি ইন্ডাস্ট্রির বার্ষিক রাজস্ব সে দেশেরবহুল প্রচারিত ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এ.বি.সি, সি.বি.এস এবং এন.বি.সি-র প্রদত্ত মোট রাজস্বের চাইতেও বেশী (৬.২ বিলিয়ন ডলার)। প্রকৃতপক্ষে, পুঁজিবাদী মন্ত্রে দীক্ষিত মানুষের সীমাহীন লোভ আর চড়ান্ত স্বেচ্ছাচারীতাই বিশ্বব্যাপী পর্ণোগ্রাফি ইন্ডা

বর্তমান মুসলিম সমাজে নারী নির্যাতন: ইসলামের আবির্ভাবের পর নারী যে মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছিল তা-ও ধর্ম সম্পর্কে অগভীর জ্ঞানের অধিকারী এক শ্রেণীর ধর্মীয় ব্যক্তিবর্গের অস্পষ্ট ও ভ্রান্ত ধারণার ফলে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে; নারীরা এ সমাজে পুনরায় নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। যেমন কারো কারো মতে, এ ফেতনার যুগে নারীদের গৃহবন্দি করে রাখা ধর্মীয় কাজ বলে পরিগণিত হয়। স্ত্রী শুধু স্বামীর খেদমত করে যাবে আর স্বামীর নিজ স্ত্রীর প্রতি কোন কর্তব্য নেই। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে হয়, হিজাব বা পর্দা প্রথা এ জন্য যে নারীরা প্রয়োজনে এ ব্যবস্থা অবলম্বনের মাধ্যমে গৃহের বাইরে এসে সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে সক্ষম। ইসলামে মানবিক অধিকার যেমনঃ শিক্ষা, চিকিৎসা, বাক স্বাধীনতা ইত্যাদির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ সমান অধিকার থাকলেও নারীরা তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এক শ্রেণীর সুবিধাবাদী মানুষের জন্য।সে যা-ই হোক না কেন, একদিকে ধর্মের নামে ধর্মান্ধতা, অপরদিকে নারী স্বাধীনতার নামে কামুকতা- এ দুই অবস্থা যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে নারী। এ উভয় অবস্থায়ই নারী সমাজকে পিষ্ট করে লাভবান হচ্ছে পুঁজিবাদী ও উপনিবেশবাদীরা। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের নারী সমাজকে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হতে হবে; জানতে হবে মানুষ হিসেবে তাদের মর্যাদা কোথায়, কিসে তাদের সম্মান- অর্থে না মূল্যবোধে?

নারী নির্যাতনের আরও কিছু কারণ-

আমাদের সমাজে প্রতিনিয়ত নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে। নির্যাতিত হওয়ার কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যৌতুক। যদিও আমরা ঘটা করে প্রচার করছি যৌতুক একটা সামাজিক ব্যাধী। যৌতুক নেওয়া বা দেওয়া দুটোই অপরাধ। কিন্তু আমাদের প্রচার প্রচারণা ব্যার্থ হচ্ছে। অভিভাবকেরা মেয়েকে ভালো ঘরে বিয়ে দিতে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। মেয়ের সুখের জন্য যৌতুক দিতে বাধ্য হচ্ছে বাবা। যৌতুকের টাকা হাতে না পেলে কিছু পশু স্বভাবের পুরুষ স্ত্রীকে বেদম ভাবে প্রহার করছে। কখনও বা হিতাহিত জ্ঞান শুণ্য হয়ে স্ত্রীর মুখে এসিড মারতেও দ্বিধা করছেনা। দ্বিতীয়ত, কারো ভালোবাসার ডাকে সাড়া না দিলেও নারীকে হতে হচ্ছে লাঞ্চিত। সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে আমাদের তরুনেরা প্রতিনিয়ত ড্রাগে আসক্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে তাদের ভেতরের মনুষত্ব মরে গিয়ে জন্ম নিচ্ছে পশু সত্ত্বা এবং নারীকে মা, বোন কিংবা মেয়ে ভাবতে ভুলে যাচ্ছে। অন্ধকার অসভ্যতার যুগের মত নারীকে ভোগ্যপন্য মনে করে যেখানে যেভাবে পাচ্ছে অপমান করে যাচ্ছে। স্কুল কলেজগামী মেয়েরা ইভটিজিং এর শিকার হচ্ছে। পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক এবং ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে এমনটি হচ্ছে। আত্ম অসন্তুষ্টি,হতাশা, কখনোবা ক্ষোভের কারণে নারীকে নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে।

ইসলামে নারীর মর্যাদাঃ ইসলামে নারীরর মর্যাদা কী তা জানতে হলে সর্বপ্রথম আমাদের জেনে নিতে হবে ইসলাম পূর্ব যুগে নারীর অবস্থা কেমন ছিল। এ প্রসংগে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-“সেই সমাজের কাউকে তার কন্যাসন্তান জন্ম হওয়ার সুসংবাদ দিলে সারাদিন তার মুখ কালো হয়ে থাকত।.......সে চিন্তা করত এ অপমান সহ্য করে সে মেয়েকে বাচিয়েঁ রাখবে নাকি মাটির তলায় পুতে ফেলবে। কতই না খারাপ সিদ্ধান্ত তারা গ্রহণ করত।‍” সুরা নাহল-৫৮। অথচ মহানবী স. এর আগমনের পর নারী ফিরে পায় তার সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার। ইসলাম নারীকে প্রধানত চারটি স্তরে সম্মান দেখিয়েছে। এক. নারী সমাজ তথা নারী জাতি হিসেবে। দুই. মাতা হিসেবে, তিন. স্ত্রী/বঁধু হিসেবে, চার. কন্যা বা মেয়ে হিসেবে। আসুন একে একে জেনে নিই সে সকল মর্যাদাগুলো।

এক. নারীসমাজ বা নারীজাতি হিসেবে মর্যাদাঃ এ প্রসংগে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন-“হে মানব সম্প্রদায়! আমি তোমাদের সৃষ্ঠি করেছি এক পুরুষ ও নারী হতে” সুরা আল-হুজরাত-১৩। নারী জাতির অধিকার বর্ণনা করে সুরা আল বাকারায় আল্লাহ তায়ালা বলেন-“নারীদের তেমনই ন্যায়সংগত অধিকার রয়েছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের”। সৎকর্মশীল নারী সওয়াবের ক্ষেত্রেও পুরুষের চেয়ে পিছিয়ে থাকবে না। যেমন আল্লাহ তায়ালা সুরা নিসা’র মধ্যে বলেছেন-“ইমানগ্রহণ করে পুরুষ ও নারীর মধ্যে যেই সৎকর্ম করবে সেই জান্নাতে প্রবেশ করবে। এব্যাপারে কারও প্রতি বিন্দুমাত্র অবিচার করা হবে না। তিনি আরও বলেন-“নিশ্চয়ই আমি নষ্ট করে দেই না তোমাদের মধ্য থেকে কোন আমলকারীর আমলকে, সে পুরুষই হোক বা নারীই হোক” সুরা আলে ইমরান-১৯৫। নারী জাতির প্রতি সম্মান দেখিয়েছেন স্বয়ং রসুলুল্লাহ স. তিনি তাঁর দুধমাতা হালিমার (রা.) সম্মানে দাড়িয়েঁ যেতেন, নিজের চাদর বা রুমাল বিছিয়ে তাকে বসতে দিতেন, তার কুশলাদি জিজ্ঞাস করে তার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতেন।

দুই. মাতা হিসেবে নারীর অধিকার ও মর্যাদাঃ মায়ের মর্যাদা বর্ণানা করতে গিয়ে সুনানু নাসায়ী শরীফের মধ্যে মহানবী স. বলেন-“মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত”। একবার একজন সাহাবি রসুলুল্লাহর স. কাছে এসে বললেন হে রাসুল স. আমি কাকে সেবা করব পিতাকে না মাতাকে? উত্তরে নবীজি বললেন তোমর মায়ের, তোমার মায়ের, তোমার মায়ের অত:পর তোমার পিতার। এ হাদীস থেকে একথা প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে মায়ের মর্যাদা কত বেশি। একথা দিবালোকের ন্যায় সত্য যে, গায়ের চামড়া দিয়ে জুতা বানিয়ে দিলেও মায়ের এক ফোটা দুধের ঋণ শোধ দেয়া যাবে না। পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে সুরা নিসার ৩৬ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “এবং তোমরা পিতা-মাতার সাথে উত্তম আচরণ করবে”। একই কথা সুরা বনিইস্রাইলের মধ্যেও বলা হয়েছে এভবে-“যদি তাদের একজন কিংবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেঁর উদ্দেশ্যে কখনো ‘উপ’ শব্দ উচ্চারণ করবে না। তাদেরকে ধমক দিও না, বরং তাদের সাথে মার্জিত ভাষায় কথা বল”। পিতামাতার মাগফিরাত কামনা করে কীভাবে দোয়া করতে হবে তাও আল্লাহ তায়ালা শিখিয়েছেন এভাবে “হে আমার প্রতিপালক! আমার পিতামাতাকে ক্ষমা করুন” সুরা নুহ-২৮। এছাড়াও সুরা বনী ইস্রাইলের ২৪ নং আয়াতে দোয়া শেখানো হয়েছে এভাবে-“রাব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানির ছগিরা”। আবু উমামা রা. হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ স. কে জিজ্ঞাস করল, হে আল্লাহর রসুল, সন্তানের উপর পিতা-মাতার কী হক আছে? তিনি বললেন, তারা তোমার বেহেশত ও দোজখ”। ইবনে মাজাহ।

তিন. স্ত্রী/বঁধু হিসেবে নারীর মর্যাদাঃ রসুল স. তার স্ত্রীদেরকে সবচেয়ে বেশি ভাল বাসতেন। তিনি বলতেন “আমর কাছে তিনটি জিনিস খুব প্রিয় তা হলো নামাজ, সুগন্ধি ও স্ত্রী”। সুরা আল বাকারায় স্ত্রীর পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে এভাবে-“তারা হচ্ছে তোমাদের জন্য পোষাক এবং তোমরা হচ্ছ তাদের জন্য পোষাক”। আরও বলা হয়েছে-“স্ত্রীদেরও তেমন অধিকার রয়েছে যেমন স্বামীদের রয়েছে তাদের উপর এবং তা যথাযথভাবে আদায় করতে হবে” সুরা বাকারা-২২৮। সুরা নিসার ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে-“তোমরা সন্তুষ্টচিত্তে স্ত্রীগণকে তাদের প্রাপ্য(মহর) দিয়ে দাও”। “নারীদের রয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে (উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে) নির্ধারিত অংশ” সুরা নিসা-৭। হযরত আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, মহানবী স. বলেছেন, “পূর্ণ মুমিন সেই ব্যক্তি, যার চরিত্র উত্তম এবং যে তার পরিবার-পরিজনের(স্ত্রী-পুত্রদের) প্রতি সদয়” তিরমিযি। স্বমীর উপর স্ত্রীর অধিকারের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহানবি স. বলেন, “তার অধিকার হলো যখন তুমি খাবে তখন তাকেও খাওয়াবে, তুমি যখন যে মানের কাপড় পরবে তাকেও সেই মানের কাপড় পরাবে, তার মুখে আঘাত করবে না। অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করবে না” (আবু দাউদ)। মহানবী স. তাঁর স্ত্রীদের নিয়ে চাঁদনী রাতে দৌড় প্রতিযোগীতা করেছেন। একরাতে হয়ত তিনি বিজয়ী হয়েছেন অন্য রাতে তাঁর স্ত্রী। হযরত আয়েশা রা. বলেন, নবীজি আমার হাত থেকে গোশতের টুকরা নিয়ে সেখানে মুখ দিতেন যেখানে আমি মুখ দিয়ে খেয়েছি। তিনি আমার কাছ থেকে পানির পেয়ালা নিয়ে সেখানেই চুমুক দিতেন পেয়ালার যে স্থানে আমি চুমুক দিতাম। রসুলুল্লাহর ঘরে ধন-দৌলত ছিল না তবে মহব্বত দিয়ে ঘরটা ভরা ছিল। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে ঘরে স্বামী-স্ত্রী’র মধ্যে মিল মহব্বত আছে তা জান্নাতের মত, আর যেখানে মিল-মহব্বত নেই তা জাহান্নামের মত।

চার. কন্যা বা মেয়ে হিসেবে নারীর মর্যাদাঃ হযরত আ. ইবনে আব্বাস রা. বলেন, নবী স. বলেছেন, কোন ব্যক্তির ঘরে কন্যা সন্তান ভুমিষ্ঠ হওয়ার পর সে যেন তাকে জাহেলিয়াতের ন্যায় জীবিত কবর না দেয় এবং তাকে তুচ্ছ মনে না করে, আর পুত্র সন্তানকে উক্ত কন্যা সন্তানের উপর প্রাধান্য না দেয় তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন” (আবু দাউদ)। আমরা যখন বাজার থেকে কোন খাদ্য দ্রব্য নিয়ে আসি তখন সর্বপ্রথম মেয়েদের দিয়ে বিতরণ শুরু করব। জাহিলিয়া যুগে যেখনে মেয়েদেরকে জীবন্ত করব দেয়া হতো মহানবী স. সেখান থেকে মেয়েদের তথা কন্যাদের তুলে এনে জান্নাতের রমনী ও সর্দারিনীর আসনে বসিয়ে দিলেন। মাহানবী স. বলেছেন, যদি কারো তিনটি কন্যা সন্তান থাকে আর পিতা যদি সে তিনটি কন্যাকে সুশিক্ষায় তথা ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করে পর্দা-পুশিতার সাথে সৎপাত্রে পাত্রস্থ করতে পারে তবে আমি ও সেই পিতা জান্নাতে পাশাপাশি অবস্থান করব।







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.