![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a social worker.
ঈদ কী : ঈম মুসলিম উম্মাহ’র একটি অন্যতম ধর্মীয় উৎসব। যা প্রতি বছর মুসলিম বিশ্বে ফিরে আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। ঈদ শব্দটি আরবি। যার অর্থ প্রস্থান করা, ফিরে আসা বা বার বার আসা । এমন দিনকে ঈদ বলা হয় যে দিন মানুষ একত্র হয় ও দিনটি বার বার ফিরে আসে। কোন কোন আরবি ভাষা বিজ্ঞানী বলেন এটা আরবি শব্দ আদত বা অভ্যাস থেকে উৎপত্তি হয়েছে। কেননা মানুষ ঈদ উদযাপনে অভ্যস্ত। এ শব্দ দ্বারা এ দিবসের নাম রাখার তাৎপর্য হলো আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ দিবসে তার বান্দাদের নেয়ামত ও অনুগ্রহ দ্বারা বার বার ধন্য করেন ও বার বার তার এহসানের দৃষ্টি দান করেন। যেমন রমজানে পানাহার নিষিদ্ধ করার পর আবার পানাহারের আদেশ প্রদান করেন। ছদকায়ে ফিতর, হজ-জিয়ারত, কোরবানির গোশত ইত্যাদি নেয়ামত তিনি বার বার ফিরিয়ে দেন। আর এ সকল নেয়ামত ফিরে পেয়ে ভোগ করার জন্য অভ্যাসগত ভাবেই মানুষ আনন্দ-ফূর্তি করে থাকে।
ইসলামে ঈদের প্রচলন : ঈদ কখন প্রথম উদযাপন হয় তা নিয়ে কিছু ভিন্ন রেওয়াত থাকলেও প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনে জারীর রাদি আল্লাহু আনহু তার বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, দ্বিতীয় হিজরীতে রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথম ঈদ পালন করেছেন। মুসলিম উম্মাহর প্রতি রহমত হিসেবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঈদ নামক উৎসবটি দান করেছেন। হাদিসে এসেছে-‘রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মদিনাতে আগমন করলেন তখন মদিনাবাসীদের দুটো দিবস ছিল, যে দিবসে তারা খেলাধুলা করত। আনাস রা. বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) জিজ্ঞেস করলেন এ দু’দিনের কি তাৎপর্য আছে? মদিনা বাসীগণ উত্তর দিলেন : আমরা মূর্খতার যুগে এ দু’দিনে খেলাধুলা করতাম। তখন রাসূলে করিম (সা.) বললেন : ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ দু দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটো দিন দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতর’ (সুনান আবু দাউদ:১১৩৪)। শুধু খেলাধুলা, আমোদ-ফুর্তির জন্য যে দুটো দিন ছিল আল্লাহ তাআলা তা পরিবর্তন করে এমন দুটো দিন দান করলেন যে দিনে আল্লাহর শুকরিয়া, তার জিকির, তার কাছে মা প্রার্থনার সাথে সাথে শালীন আমোদ-ফুর্তি, সাজ-সজ্জা, খাওয়া-দাওয়া করা হবে।
ঈদ সংস্কৃতি : আল-কুরআনের সুরা হাশরের ৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও”। সুতরাং ঈদ উদযাপনের নামে আমাদের সমাজে যেসব অপসংস্কৃতি চালু আছে তা মোটেও কাম্য নয়। ঈদের আবেদন হলো ধনী গরিব মিলে মিশে ঈদ করবে, সুখ দু:খগুলো পরষ্পর ভাগাভাগি করে নিবে। পরস্পর পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হবে। ঈদ নিয়ে দুটি তিকর প্রবণতা আমাদের মুসলিম সমাজে পরিলতি হচ্ছে।
এক. অপচয় ও অপব্যয় করা : ঈদে কেনাকাটা হবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু কেনাকাটায় আমাদের মধ্যে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়, যেভাবেই হোক অমুককে এটা-সেটা দিতে হবে, একজনের জন্য অনেক রকমের কাপড়, যার কোনো প্রয়োজন নেই।
দুই. দুর্নীতি করা : ঈদ উপলে অবৈধ আয় : স্ত্রীর দাবির মুখে, সন্তানের আকুতিতে, পরিবারের আবেদনে, পরিবারকর্তা যেভাবেই হোক নিজের সম্মান রাক্ষার্থে অবৈধভাবে অর্থ যোগাড়ে লিপ্ত হন। যা তাকে সাময়িক আনন্দ দিলেও প্রকৃতপে তিনি তাদের সাথে প্রতারণা ছাড়া কিছুই করছেন না। কেন এই আনন্দ? এই আনন্দ দেবার জন্য অপরের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, অন্যকে ঠকানো কি ঈদ সংস্কৃতি! এ সংস্কৃতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। ঈদ একটি ইবাদাত। এই ইবাদাত অবশ্যই ইসলাম নির্দেশিত পথেই পালন করতে হবে। আমাদের প্রিয় নবী আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ঈদ নিয়ে এসেছেন। আর তিনি ঈদ পালনে কী করতে পারবো আর পারবো না তা বলে দিয়েছেন।
ঈদের দিনে বর্জনীয় বিষয়সমূহ :
১. ঈদের দিন সিয়াম : সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। সুতরাং ঈদের দিন সিয়াম পালন করা যাবে না ।
২. বিজাতীয় আচরণ : ঈদ নামক পবিত্র একটি ইবাদতকে আকাশ সংস্কৃতি ও বিজাতীয় আচরণের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে অপসংস্কৃতি ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। পোশাক-পরিচ্ছদে, চাল-চলনে, শুভেচ্ছা বিনিময়ে অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে লিপ্ত হয়ে পড়েছে মুসলমানদের অনেকেই। হাদিসে এসেছে-আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সা-দৃশ্যতা রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে (আবু দাউদ : ৪০৩৩)।
৩. পুরুষ নারীর বেশ ও নারী পুরুষের বেশ : পোশাক-পরিচ্ছদ, চাল-চলন ও সাজ-সজ্জার ক্ষেত্রে পুরুষের নারীর বেশ ধারণ ও নারীর পুরুষের বেশ ধারণ হারাম। ঈদের দিনে এ কাজটি অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি পরিলতি হয়। হাদিসে এসেছে-ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত: রাসূলে করিম (সা.) পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন (আবু দাউদ : ৪০৯৯)।
৪. নারীদের রাস্তাঘাটে বের হওয়া : ঈদের দিনে নারীদের বেপর্দা অবস্থায় রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া যাবে না । এ বিষয়ে কুরআনে বলা হয়েছে,‘আর তোমরা নিজ ঘরে অবস্থান করবে এবং প্রাচীন মূর্খতার যুগের মতো নিজেদের প্রদর্শন করে বেড়াবে না।’ {সূরা আহযাব : ৩৩} নারীগণ পর্দা পালন করে বের হবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : জাহান্নামবাসী দু’ধরনের লোক যাদের আমি এখনও দেখতে পাইনি। একদল লোক যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে প্রহার করবে। আর এক দল এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মতো হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে ও অন্যেরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না, যদিও তার সুগন্ধি বহু দূর থেকে পাওয়া যায় (সহিহ মুসলিম : ৫৭০৪)।
৫. অশ্লীল গান-বাজনা, সিনেমা ও নাটক দেখা : ঈদ উপলে বিশেষ নাটক, সিনেমা ও বিভিন্ন গান বাজনা-যা ইসলাম অনুমোদন করে না, তা থেকে বিরত থাকতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে (সহিহ বুখারী:৫৫৯০)।
৬. অবাধে নারীদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ : দেখা যায় অন্যান্য সময়ের চেয়ে এই গুনাহের কাজটা ঈদের দিনে বেশি করা হয়। নিকট আত্মীয়দের মাঝে যাদের সাথে দেখা-সক্ষাৎ শরিয়ত অনুমোদিত নয়, তাদের সাথে অবাধে দেখা-সাক্ষাৎ করা হয়। উকবাহ ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলে করিম রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন : তোমরা মহিলাদের সাথে দেখা-সাাৎ করা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবে। মদিনার আনসারদের মধ্য থেকে এক লোক প্রশ্ন করল হে আল্লাহর রাসূল ! দেবর-ভাসুর প্রমুখ আত্মীয়দের সাথে দেখা-সক্ষাৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি উত্তরে বললেন : এ ধরনের আত্মীয়-স্বজন তো মৃত্যু [ সহীহ বুখারী : ৫২৩২]।
৭. অপচয় ও অপব্যয় : ঈদের কেনাকাটা থেকে শুরু করে এ উপলে অপচয় ও অপব্যয় করা হয়। অথচ কুরআনে বলা হয়েছে,“ আর তোমরা কোনভাবেই অপব্যয় করো না, নিশ্চই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই” । (সূরা বনি ইসরাঈল-২৬-২৭)। ‘এবং তোমরা খাও, পান করো কিন্তু অপচয় করো না’ [সূরা আরাফ-৩১]।
৮. কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা : অনেকে এ দিনকে কবর জিযারতের জন্য নির্দিষ্ট করে থাকেন, যা রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কিরাম থেকে সাব্যস্ত হয় নি। অতএব ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না ।
৯. জুয়া খেলা ও আতশবাজি : এগুলো শরিয়াত বিরোধী কাজ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (সূরা মায়েদা-৯০)
অনেকে ঈদের আনন্দে মাতওয়ারা হয়ে নতুন জামা-কাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনী ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন, ঈদের সালাত আদায় করার কথা ভুলে যান। অথচ এই দিনে ঈদের সালাত আদায় করা হচ্ছে মূল করণীয় ।
ঈদ একটি ইবাদাত। আনন্দ ও ফুর্তি করার মাধ্যমেও যে ইবাদত পালন করা যায়, ঈদ তার অন্যতম উদাহরণ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের ঈদকে একটি ইবাদত হিসেবে পালন করার তাওফিক দিন। আমীন।
ঈদে করণীয় বিষয়সমূহ : ঈদ যে আমাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার এক বিরাট নেয়ামাত। অথচ আমরা এ দিনকে নেয়ামাত হিসেবে গ্রহণ করিনা। এ দিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকটবর্তী হতে পারি এবং ঈদ উদযাপনও একটি ইবাদতে পরিণত হতে পারে। নিচে ঈদে করণীয়গুলো আলোচনা করা হলো :
১. ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে তাকবীর পাঠ করা : তাকবীর পাঠ করার মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব প্রকাশ করা হয়। কুরআনে এসছে, অল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চাননা, আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তিনি তোমাদের যে, হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। [সূরা বাকারা-১৮৫]। তাকবীর হলো ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ বাক্যটি উচ্চস্বরে পড়া। আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। ঈদের সালাত শেষ হওয়া পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করতেন। যখন সালাত শেষ হয়ে যেত তখন আর তাকবীর পাঠ করতেন না। বিশেষভাবে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে যখন বের হবে ও ঈদগাহে সালাতের অপোয় যখন থাকবে তখন গুরুত্ব সহকারে তাকবীর পাঠ করতে হবে।
২. ঈদের দিন ভোরে ঘুম থেকে জাগা ও ফজরের নামাজ জামায়াতে আদায় করা : মনে রাখা দরকার ঈদের নামাজের চেয়েও ফজরের নামাজের গুরুত্ব বেশি। অথচ আমাদের দেশে অনেকেই ফজরের নামাজ আদায় করে না। ঈদের জমায়াতের জন্য ফজরের নামাজ জামায়াতে পড়ার গুরুত্বও দেয়না। অথচ মুত্তাফাকুন আলাইহি’র মধ্যে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি তারা এশা ও ফজর নামাজের মধ্যে কী আছে তা জানতে পারতো তবে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও এ দুটি নামাজের জামায়াতে শামিল হত।
৩. ঈদের দিন গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা : ঈদের দিন গোসল করার মাধ্যমে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা একান্ত প্রয়োজন। কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। ইবনে উমার (রা.) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন। (সুনান বায়হাকী : ৫৯২০)।
৪. নতুন ও সাধ্যমত পোশাক পরিধান করা : ঈদে উত্তম জামা-কাপড় পরিধান করে ঈদ উদযাপন করা। ইবনে উমার (রা.) থেকে সহি সনদে বর্ণিত যে তিনি দু’ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। [সুনান বায়হাকি] । ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন : নবী করিম (সা.) দু’ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন [যাদুল মায়াদ]। এ দিনে সকল মানুষ একত্রে জমায়েত হয়, তাই প্রত্যেক মুসলিমের উচিত হলো তার প্রতি আল্লাহর যে নেয়ামত তা প্রকাশ করণার্থে ও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় স্বরূপ নিজেকে সর্বোত্তম সাজে সজ্জিত করা। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : ‘আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার বান্দার উপর তার প্রদত্ত নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন’ (সহিহ আল-জামে :১৮৮৭)।
৫. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : আর ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া হলো সুন্নাহ এর অন্তর্ভুক্ত। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : সুন্নত হলো ইদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া (সুনান আত তিরমিযী : ৫৩৩)।
৬. ঈদের সালাত আদায় করা : ঈদের দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঈদের সালাত আদায় করা । প্রকৃতপে একজন ইমানদার বান্দাহ সালাত আদায়ের মাধ্যমে বেশি আনন্দিত হয়ে থাকে। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ঈদুল-ফিতরের দিনে বের হয়ে দু’রাকাত ঈদের সালাত আদায় করেছেন। এর পূর্বে ও পরে অন্য কোনো নামাজ আদায় করেননি (সহীহ বুখারি:৯৮৯) । ঈদের সালাতে মহিলাদেরকে শামিল করানোর বিষয়ে হাদিসে এসেছে, ‘উম্মে আতিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা.) আদেশ করেছেন আমরা যেন মহিলাদের ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহাতে সালাতের জন্য বের করে দেই ; পরিণত বয়স্কা, ঋতুবতী ও গৃহবাসিনী সহ সকলকেই। কিন্তু ঋতুবতী মেয়েরা (ঈদগাহে উপস্থিত হয়ে) সালাত আদায় থেকে বিরত থাকবে তবে কল্যাণ ও মুসলিমদের দোয়া প্রত্য করতে অংশ নিবে। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদের মাঝে কারো কারো ওড়না নেই। (যা পরিধান করে আমরা ঈদের সালাতে যেতে পারে) রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন : সে তার অন্য বোন থেকে ওড়না নিয়ে পরিধান করবে’ (সহীহ মুসলিম : ২০৯৩)।
৭.ঈদের খুতবা শ্রবণ করা : ঈদের খুতবা বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে। এতে মুসলিমদের সামাজিক,রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়ে থাকে । তবে খুতবা ছাড়া সালাত হবে না বা খুতবা কেও না শুনতে চাইলে তাকে জোর কওে খুতবা শুনার জন্য বাধ্য করা যাবে না। আব্দুল্লাহ বিন সায়েব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি নবী করিম (সা.) এর সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের সালাত শেষ করলেন, বললেন : আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভালো লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে। [সুনান আবু দাউদ]
৮. যে পথে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসা : জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী করিম (সা.) ঈদের দিনে পথ বিপরীত করতেন (সহিহ বুখারী : ৯৮৬)। অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন। এটা এ জন্য যে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (যাদুল-মায়াদ)
৯. ঈদের দিনে খাবার গ্রহণ : ঈদুল ফিতরের দিনে ঈদের সালাত আদায়ের পূর্বে খাবার গ্রহণ করা এবং ঈদুল আজহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কোরবানির গোশত খাওয়া সুন্নত। বুরাইদা (রা.) থেকে বর্ণিত নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না (সুনান আত তিরমীযি : ৫৪৫)।
১০. ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময় : ঈদ উপলে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরিয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন : (ক) হাফেজ ইবনে হাজার রহ. বলেছেন : ‘জোবায়ের ইবনে নফীর থেকে সঠিক সূত্রে বর্ণিত যে রাসূলে করিম (সা.) এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন সাাৎকালে একে অপরকে বলতেন : ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা’ অর্থ -আল্লাহ তাআলা আমাদের ও আপনার ভালো কাজগুলো কবুল করুন’ (ফতহুল বারী) (খ) ‘ঈদ মুবারক’ বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। তবে প্রথমে উল্লিখিত বাক্য দ্বারা শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ সাহাবায়ে কেরাম রা. এ বাক্য ব্যবহার করতেন এতে পরস্পরের জন্য কল্যাণ কামনা ও আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া রয়েছে।
১১. দোয়া ও ইস্তিগফার করা : ঈদের দিনে আল্লাহ তায়ালা অনেক বান্দাহকে মা করে দেন। মুয়ারিরক আলঈজলী রাহ. বর্ণনা করেন, ঈদের এই দিনে আল্লাহ তায়ালা একদল লোককে এভাবে মা করে দিবেন, যেমনি তাদের মা তাদের নিষ্পাপ জন্ম দিয়েছিল। নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, তারা যেন এই দিনে মুসলিমদের জামায়াতে দোয়ায় অংশ গ্রহণ করে (লাতাইফুল মায়ারিফ)।
১২. মুসাফাহা ও মুআনাকা করা : মুসাফাহা ও মুআনাকা করার মাধ্যমে পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত. একদা হাসান ইবনে আলী রা. নবী করিম (সা.) এর নিকট আসলেন, তিনি তখন তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং মুআনাকা (কোলাকুলি) করলেন (শারহুস সুন্নাহ)।
১৩. গরিব ও অসহায় মানুষের সাহায্য করা : ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সকলের মধ্যে ভাগ করে নেয়া। প্রতিবেশী ও আতœীয়দের মধ্যে যারা অভাবী তাদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করা। আবু হুুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূল (সা.) অপরের কস্ট দূর করা ও অপরকে সাহায্য করার প্রতি উৎসাহিত করে বলেন, যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের কস্ট দূর করে দেবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে তার কস্ট দূর করে দিবেন (সহীহ মুসলিম ৭০২৮)।
১৪. ফিতরা দেয়া : রমজান মাসের সিয়ামের ত্র“টি- বিচ্যুতির পূরণার্থে এবং অভাবগ্রস্থদের খাবার প্রদানের উদ্দেশ্যে ঈদের সালাতের পূর্বে নির্ধারিত পরিমাণের যে খাদ্য সামগ্রী দান করা হয়ে থাকে- শরীয়াতের পরিভাষায় তাকেই যাকাতুল ফিত্র বা ফিত্রা বলা হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে ইবনে উমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) ফিতরা নির্ধারণ করলেন এক সাআ’ খেজুর বা এক সাআ’ জব। তিনি স্বাধীন, দাস, নারী-পুরুষ সবার উপর ফিতরা ওয়াজিব করলেন। এবং ঈদের সালাতে যাওয়ার পূর্বে তা আদায় করার আদেশ দিলেন (সহীহ বুখারী : ১৫০৩)।
১৫. ইয়াতিমকে খাবার খাওয়ানো : ইয়াতিমের খোঁজ-খবর নেয়া,তাদেরকে খাবার খাওয়ানো এবং সম্ভব হলে তাদের নতুন কাপড়ের ব্যবস্থা করে দেয়া। এটা ইমানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । আল-কুরআনে এসছে, তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতিম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে (সূরা আদ-দাহর : ৮)।
১৬. আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া : ঈদের সময় বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার বিশেষ সুযোগ তৈরি হয়। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে আখিরাতে বিশ্বাস করে, সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখে”( সহীহ বুখারী : ৬১৩৮)।
১৭. প্রতিবেশীর খোঁজ খবর নেয়া : ঈদের সময় প্রতিবেশীর হক আদায়ের সুযোগ তৈরি হয়। আল-কুরআনে বলা হয়েছে, তোমরা ইবাদাত কর আল্লাহর, তাঁর সাথে কোনো কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে, নিকট আত্মীয়ের সাথে, ইয়াতীম, মিসকীন, নিকট আত্মীয়Ñ প্রতিবেশী, অনাত্মীয়Ñ প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সাথে। নিশ্চয় আল্লাহ পছন্দ করেন না তাদেরকে যারা দাম্ভিক, অহঙ্কারী। (সূরা নিসা : ৩৬)।
১৮. মন-মালিন্য দূর করা : জীবন চলার পথে বিভিন্ন পর্যায়ে কারো কারো সম্পর্কের অবনতি হতে পারে । ঈদের সময় পারস্পারিক মন-মালিন্য দূর করা ও সম্পর্ক সুদৃঢ় করার উত্তম সময়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘সোমবার ও বৃহস্পতিবার জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। যে আল্লাহর সাথে শিরক করে তাকে ব্যতীত সে দিন সকল বান্দাকে মা করে দেয়া হয় কিন্তু ঐ দু ভাইকে মা করা হয় না যাদের মাঝে হিংসা ও দ্বন্দ্ব রয়েছে। তখন (ফেরেশতাদের) বলা হয় এ দুজনকে অবকাশ দাও যেন তারা নিজেদের দ্বন্দ্ব-বিবাদ মিটিয়ে মিলে মিশে যায়! এ দুজনকে অবকাশ দাও যেন তারা নিজেদের দ্বন্দ্ব-বিবাদ মিটিয়ে মিলে মিশে যায়!! এ দুজনকে অবকাশ দাও যেন তারা নিজেদের দ্বন্দ্ব-বিবাদ মিটিয়ে মিলে মিশে যায়!!! (তাহলে তাদেরও যেন মা করে দেয়া হয়) (সহীহ মুসলিম : ৬৭০৯)
১৯. আনন্দ প্রকাশ করা : ইসলাম এমন একটি জীবন ব্যবস্থা যেখানে সুস্থ বিনোদনের সুযোগ রয়েছে। শরীয়াহ সম্মতভাবে আনন্দ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কুরআনে এসেছে, বল, আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমতে। সুতরাং এ নিয়েই যেন তারা খুশি হয়। এটি যা তারা জমা করে তা থেকে উত্তম’ (সূরা ইউনুস : ৫৭-৫৮)।
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) বর্ণনা হলো : রাসূলুল্লাহ (সা.) ঈদের দিন আমার ঘরে আগমন করলেন, তখন আমার নিকট দুটি ছোট মেয়ে গান গাইতেছিল। তাদের দেখে নবী করীম (সা.) অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে পড়লেন। ইতোমধ্যে আবু বকর রা. ঘরে প্রবেশ করে এই বলে আমাকে ধমকাতে লাগলেন যে, নবীজির কাছে শয়তানের বাঁশি? রাসূলুল্লাহ (সা.) তার কথা শুনে বললেন : মেয়ে দুটিকে গাইতে দাও হে আবু বকর, প্রত্যেক জাতির ঈদ আছে, আর এটি আমাদের ঈদের দিন (সহীহ বুখারী : ৯৫২)।
ঈদ মুসলিম জাতির গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। আর আমাদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। কিন্তু আমরা ঈদ পালনে অনেকে ইসলাম সমর্থন করে না এমন সব সংস্কৃতিতে নিমজ্জিত হচ্ছি। যা আমাদের বর্জন করা দরকার। আল্লাহ পাক আমাদের এসব অপসংস্কৃতি থেকে দূরে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন। (সমাপ্ত)
রচনা ও সংকলনে-মাওলানা বি.এইচ.মহিনী,
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও শিক্ষক-আকিজ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ, নওয়াপাড়া, যশোর।
০১৯২২-৯৬৮২৯২ [email protected]
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬
বিএইচ মাহিনী বলেছেন: ভাল, চালিয়ে যাও।