নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভুতের আড্ডা

ভুতের আড্ডা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী দিবসের ভাবনা...পুরুষ হিসেবে আমি নিজের কথাই বলবো

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:১৫



ক্যান্সার আক্রান্ত এক নারীর স্বামী হিসেবে আমি জানি উপরের এই কার্টুনটি কতোটা সত্যি কথা বলছে। রোগাক্রান্ত পাঁচটি বছরের তাকে কমপক্ষে ৩৭টি কেমোথেরাপি নিতে হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, গড়ে প্রতি মাসেই একটির বেশি কেমো নিয়েছে। তার পরেও মেয়েকে স্কুলে আনা-নেয়া, রান্নার মেন্যু ঠিক করা, ঘরবাড়ি দেখাশোনা এবং সামাজিক সকল অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে ছেদ পড়েনি। শুধু হাসপাতালে ভর্তি থাকার দিনগুলো আর কেমো নেয়ার পরের দু-একটি দিন, যখন বিছানা থেকে উঠার মতো অবস্থা থাকতোনা শরীরের, সেই দিনগুলো ছাড়া।
২০১০ সালের এপ্রিলে রোগ ধরা পড়ে, পহেলা বৈশাখের পরদিন, অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল অপারেশন হয়। এর পর থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলে প্রাণ রক্ষার সংগ্রাম, কেমোকেরাপি আর শরীর থেকে জীবনী শক্তি শুষে নেয়া ওষুধ সেবন। প্রথম কয়েক মাস চাকরি থেকে বিনা বেতনে ছুটি নিয়েই চলছিলো চিকিৎসা, পরে ডাক্তারদের পরামর্শে চাকরিটা ছাড়তেই হলো। তারপরও স্বপ্ন ছিলো, একদিন আবার ঠিক নতুন কোথাও চাকরি নেবে।
তার অসুস্থ্যতা এবং অপেক্ষাকৃত সুস্থ্যতার দিনগুলোতে আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, একজন নারী বলেই হয়তো এতো প্রবল প্রাণশক্তি। এই পাঁচ বছরে আমরও যে ছোটখাট অসুস্থ্যতা দেখা দেয়নি, তেমনটা নয়, কিন্তু সামান্য জ্বর বা মাথা ব্যথায় কাতর হয়ে বিছানা নিতে রীতিমতো লজ্জা পেতাম আমি। অবাক হয়ে ভাবতাম, এতো বড় যন্ত্রণা শরীরে পুষে কীভাবে দিন যাপন করছে সে?
হাসপাতালে তাকে ভর্তি করে দিয়ে এসেও দিব্যি অফিস করেছি আমি, সহকর্মীদের কেউ বুঝতেই পারেনি, মনে ভেতর কতোটা দু:শ্চিন্তা, কী অধীর উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগে দিন কাটছে! এটি সম্ভব হয়েছে শুধু তার কারণেই। তার অসম্ভব মনের জোর আমাকে অবাক করে দিতো। ডাক্তারদের কপালে চিন্তার রেখাগুলো আমার বুকে তীরের মতো বিঁধতো, দিশেহারা হয়ে পড়তাম আমি। অথচ, তার মনোবল ছিলো সাংঘাতিক। জোর গলায় বলতো, দেখো, সব ঠিক হয়ে যাবে। কেমোথেরাপির এই সাইকেলটা শেষ হলেই সুস্থ্য হয়ে উঠবো।
এখন বুঝতে পারি, নিজেকে নয়, আমাকে প্রবোধ দিতেই ছিলো তার অভিনয়। শরীরের ভেতর যে ভাঙ্গণের সুর, সেটা ভুক্তভোগীর চেয়ে বেশি কে জানে!
আমার মেয়েটাও হয়েছে মায়ের মতোই।
গতবছর ঠিক এই মাসেই, ১৮ মার্চ তার মায়ের মৃত্যুর পর রাতারাতি আমার নয় বছরের মেয়েটা ১৯ বছরের তরুণী হয়ে উঠেছে। এক বছরে তার চিন্তা-চেতনার বয়স বেড়েছে ১০ বছর। স্কুল, পড়াশোনা সব সামলে আমার দেখাশোনা করাটাও এখন তার অন্যতম প্রধান একটি কাজ। অফিসে মাঝে-মধ্যেই তার ফোন পাই, নাস্তা করেছি কিনা, দুপুরের খাবার খাওয়া হয়েছে কিনা....যেমনটি করতো তার মা। চোখের দুকোণ ভিজে উঠে।
প্রতিটি নারীর ভেতরই বাস করে একজন মমতাময়ী মা, বইয়ে পড়া এই বাক্যটির সত্যতা আমার মতো আর কেউ কী এভাবে প্রতিদিন অনুভব করেন?

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:২৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: মনটা খুব ভিজে উঠলো আপনাদের জন্য। আপনারা ভালো থাকুন, পরপারে যিনি আছেন তিনিও ভালো থাকুন।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০

নতুন বলেছেন: আপনারা ভালো থাকুন।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৪১

শায়মা বলেছেন: ভাইয়া ভাবীর রুহের শান্তি কামনা করছি। তুমি আর তোমার বাবুটার জন্য অনেক অনেক ভালোবাসা আর শুভকামনা।

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৮

কানিজ রিনা বলেছেন: The Female of the species is
More Deadly than the male.

নারীর মানবীক ক্ষমতা, পুরুষ থেকেও
অধিক,গুন সম্পন্ন।
আমি এখন বলব পুরুষের বাম পাজরের
দুইটা হাড় দিয়ে নারী বা তার স্ত্রীকে
বানান হইছে। অথচ নারীর সব গুল হাড্ডি
আছে, পুরুষের পাজরের হাড় দুইটা কম।
তাই ।।।।।।।।।।।।।

৫| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:০৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: শুভকামনা রইলো।

৬| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২৫

বিজন রয় বলেছেন: টাচি লেখা।

আপাদের জন্য শুভকামনা রইল।

৭| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৭

আমিই মিসির আলী বলেছেন: শুভ কামনা রইলো ভাই

৮| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:০৭

ভুতের আড্ডা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ

৯| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১০:১১

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: ভালো থাকুন অনেক । অতি অল্প সময়েই সঙ্গিনীকে হারিয়েছেন যা খুবই বেদনাদায়ক । এবং আপনার মেয়ের দায়িত্ববোধ মুগ্ধ করার মতই । নারী বলেই সম্ভব হয়েছে হয়তো ।

১০| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৮

ভুতের আড্ডা বলেছেন: সবাইকে অনেক ধন্যবাদ সহৃদয় শব্দাবলীর জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.