নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ব্যার্থ দার্শনিক!!!!!

ব্যার্থ দার্শনিক

এত জেনে কি হবে ?

ব্যার্থ দার্শনিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পড়ে নিতে পারেন নার্গিসকে দেয়া নজরুলের শেষ চিঠি!!

২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ৩:৫০

কাজী নজরুল আমাদের জাতীয় কবি। তিনি প্রেমের কবি, একই সাথে তিনি চির বিদ্রোহী। ২৫ মে তার জন্মদিন ছিল, সেই উপলক্ষে এই পোস্ট। তিনি জীবনে দুটি বিয়ে করেছিলেন। তার প্রথম স্ত্রী ছিলেন নার্গিস। নার্গিসের প্রেমে পড়েছিলেন নজরুল, তারপর ভালবাসা তার পরিনতি বিয়ে। বিয়েটা হয়ে ছিল আমার জেলা কুমিল্লার মুরাদনগরে নার্গিসের বাড়িতে। কিন্তু বিয়ের দিনেই সংসার শেষ হল। নার্গিসের পরিবার থেকে শর্ত দেয়া হয়েছিল নজরুল বিয়ের পর ঘর জামাই থাকতে। কিন্তু ঘর জামাই থাকা তো নজরুলের স্বভাব নয়। তিনি বাঁধন ছাড়া তাকে বেঁধে রাখা যায়না, শর্ত শুনে বাসর রাতেই করলেন বিদ্রোহ চলে এলেন প্রিয়তমা স্ত্রী কে রেখে ঢাকাতে। হল না বাসর কিন্তু শেষ হল ভালবাসা। কোন দিন আর ফিরে যান নাই নার্গিসের কাছে। ইংরেজ কবি কিটস তার প্রিয়তমা ফ্যনি ব্রনের জন্য অপেক্ষা করে ছিলেন সাত বছর তার পর ফ্যনি ঠিকই ফিরে এসেছিল কিন্তু নজরুলের জন্য নার্গিস অপেক্ষা করেছিল সতের বছর কিন্তু নজরুল ফিরে আসেন নাই। এই সতের বছরে নার্গিস তিনটি চিঠি দিয়ে ছিলেন নজরুলকে। তার মধ্যে প্রথম চিঠি উত্তর নজরুল দেন নাই। দ্বিতীয় চিঠির উত্তরে লিখে ছিলেন একটি গান।, আর শেষ চিঠির উত্তরে নজরুল ঢিল দিয়ে ছিলেন একটি বিশাল চিঠি। সেই চিঠিটি হয়ে আছে বাংলা সাহিত্যর অনন্য নিদর্শন। এই চিঠিটি অবশ্য অনেকের পড়া তার পরেও আর একবার পড়লে ক্ষতি হবে না।



কল্যাণীয়াসু,
তোমার পত্র পেয়েছি সেদিন নব বর্ষার নবঘন-সিক্ত প্রভাতে। মেঘ মেদুর গগনে সেদিন অশান্ত ধারায় বারি ঝরছিল। পনের বছর আগে এমনি এক আষাঢ়ে এমনি এক বারিধারায় প্লাবন নেমেছিল, তা তুমিও হয়তো স্মরণ করতে পারো। আষাঢ়ের নব মেঘপুঞ্জকে আমার নমস্কার। এই মেঘদূত বিরহী যক্ষের বাণী বহন করে নিয়ে গিয়েছিল কালিদাসের যুগে, রেবা নদীর তীরে, মালবিকার দেশে, তার প্রিয়ার কাছে। এই মেঘপুঞ্জের আশীর্বাণী আমার জীবনে এনে দেয় চরম বেদনার সঞ্চার।
এই আষাঢ় আমায় কল্পনার স্বর্গলোক থেকে টেনে ভাসিয়ে দিয়েছে বেদনার অনন্ত স্রোতে। যাক, তোমার অনুযোগের অভিযোগের উত্তর দেই। তুমি বিশ্বাস করো, আমি যা লিখছি তা সত্য। লোকের মুখে শোনা কথা দিয়ে যদি আমার মূর্তির কল্পনা করে থাকো,তাহলে আমায় ভুল বুঝবে- আর তা মিথ্যা।
তোমার উপর আমি কোনো ‘জিঘাংসা’ পোষণ করিনা –এ আমি সকল অন্তর দিয়ে বলছি। আমার অন্তর্যামী জানেন তোমার জন্য আমার হৃদয়ে কি গভীর ক্ষত, কি আসীম বেদনা! কিন্তু সে বেদনার আগুনে আমিই পুড়েছি, তা দিয়ে তোমায় কোনোদিন দগ্ধ করতে চাইনি। তুমি এই আগুনের পরশমানিক না দিলে আমি ‘অগ্নিবীণা’ বাজাতে পারতাম না। আমি ধুমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।
তোমার যে কল্যাণ রূপ আমি আমার কিশোর বয়সে প্রথম দেখেছিলাম, যে রূপকে আমার জীবনের সর্বপ্রথম ভালবাসার আঞ্জলি দিয়েছিলাম, সে রূপ আজো স্বর্গের পারিজাত-মন্দারের মতো চির অম্লান হয়েই আছে আমার বক্ষে। অন্তরের সে আগুন-বাইরের সে ফুলহারকে স্পর্শ করতে পারেনি ।
তুমি ভুলে যেওনা আমি কবি, আমি আঘাত করলেও ফুল দিয়ে আঘাত করি। অসুন্দর কুৎসিতের সাধনা আমার নয় । আমার আঘাত বর্বরের কাপুরুষের আঘাতের মতো নিষ্ঠুর নয়। আমার অন্তর্যামী জানেন (তুমি কি জান বা শুনেছ জানিনা) তোমার বিরুদ্ধে আজ আমার কোন অনুযোগ নেই, অভিযোগ নেই, দাবীও নেই।
তোমার আজিকার রূপ কি জানিনা। আমি জানি তোমার সেই কিশোরি মুর্তিকে, যাকে দেবীমূর্তির মতো আমার হৃদয় বেদীতে অনন্ত প্রেম, অনন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। সেদিনের তুমি সে বেদী গ্রহণ করলেনা। পাষাণ দেবীর মতই তুমি বেছে নিলে বেদনার বেদিপাঠ …জীবন ভ’রে সেখানেই চলেছে আমার পূজা আরতি। আজকার তুমি আমার কাছে মিথ্যা,ব্যর্থ ; তাই তাকে পেতে চাইনে। জানিনে হয়ত সে রূপ দেখে বঞ্চিত হব,অধিকতর বেদনা পাব, তাই তাকে অস্বীকার করেই চলেছি।
দেখা? না-ই হ’ল এ ধূলির ধরায়। প্রেমের ফুল এ ধূলিতলে হয়ে যায় ম্লান, দগদ্ধ, হতশ্রী। তুমি যদি সত্যিই আমায় ভালবাস আমাকে চাও ওখান থেকেই আমাকে পাবে। লাইলি মজনুকে পায়নি, শিরি ফরহাদকে পায়নি, তবু তাদের মত করে কেউ কারো প্রিয়তমাকে পায়নি। আত্মহত্যা মহাপাপ, এ অতি পুরাতন কথা হলেও প্রেম সত্য। আত্মা অবিনশ্বর,আত্মাকে কেউ হত্যা করতে পারেনা। প্রেমের সোনার কাঠির স্পর্শ যদি পেয়ে থাকো, তাহলে তোমার মতো ভাগ্যবতী আর কে আছে ? তারি মায়া স্পর্শে তোমার সকল কিছু আলোয় আলোময় হয়ে উঠবে।
দুঃখ নিয়ে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে গেলেই সেই দুঃখের অবসান হয়না। মানুষ ইচ্ছা করলে সাধনা দিয়ে, তপস্যা দিয়ে ভুলকে ফুল রূপে ফুটিয়ে তুলতে পারে। যদি কোনো ভুল করে থাক জীবনে, এই জীবনেই তাকে সংশোধন করে যেতে হবে; তবেই পাবে আনন্দ মুক্তি; তবেই হবে সর্ব দুঃখের অবসান । নিজেকে উন্নত করতে চেষ্টা করো, স্বয়ংবিধাতা তোমার সহায় হবেন। আমি সংসার করছি, তবু চলে গেছি এই সংসারের বাধাকে অতক্রম করে উর্ধ্ব লোকে। সেখানে গেলে পৃ্থিবীর সকল অপূর্ণতা, সকল অপরাধ ক্ষমা সুন্দর চোখে পরম মনোহর মূর্তিতে দেখা যায়।…
হঠাৎ মনে পড়ে গেল পনর বছর আগের কথা। তোমার জ্বর হয়েছিল, বহু সাধনার পর আমার তৃষিত দুটি কর তোমার শুভ্র ললাট স্পর্শ করতে পেরেছিল; তোমার তপ্ত ললাটের স্পর্শ যেন আজো অনুভব করতে পারি। তুমি কি চিয়ে দেখেছিলে? আমার চোখে ছিলো জল, হাতে সেবা করার আকুল স্পৃহা, অন্তরে শ্রীবিধাতার চরণে তোমার আরোগ্য লাভের জন্য করুন মিনতি। মনে হয় যেন কালকের কথা। মহাকাল যে স্মৃতি মুছে ফেলতে পারলেননা। কী উদগ্র অতৃপ্তি, কী দুর্দমনীয় প্রেমের জোয়ারই সেদিন এসেছিল। সারা দিন রাত আমার চোখে ঘুম ছিল না ।
যাক আজ চলেছি জীবনের অস্তমান দিনের শেষে রশ্মি ধরে ভাটার স্রোতে, তোমার ক্ষমতা নেই সে পথ থেকে ফেরানোর। আর তার চেষ্টা করোনা। তোমাকে লিখা এই আমার প্রথম ও শেষ চিঠি হোক। যেখানেই থাকি বিশ্বাস করো আমার অক্ষয় আশির্বাদ কবচ তোমায় ঘিরে থাকবে । তুমি সুখি হও, শান্তি পাও, এই প্রার্থনা। আমায় যত মন্দ বলে বিশ্বাস করো, আমি তত মন্দ নই, এই আমার শেষ কৈফিয়ৎ।
ইতি
নিত্য শুভার্থী
নজরুল ইসলাম

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে মে, ২০১৫ ভোর ৪:১০

চাঁদগাজী বলেছেন:

চিঠি ধুয়ে কি নার্গিসের পানি খাওয়ার দরকার ছিল?

কবি অন্যায় করেছিেন নার্গিসের প্রতি।
ভালো যে, আমাদের জাতি উনার শেষ জীবনটুকু নিশ্চিন্ত করেছিল।

২| ২৬ শে মে, ২০১৫ সকাল ৯:০৩

দিশেহারা আমি বলেছেন: চিঠিটা আগে কখনও পড়া হয়নি।
চিঠিতে কোন আবেগ নেই। :-<

কবি নার্গিসের প্রতি অন্যায় করেছিলেন। আমার নানাবাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগরে। আমি আমার নার্গিস খালার জন্য কবির এই অন্যায়ের তীব্র প্রতিবাদ জানাই। B-)

২৬ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:১২

ব্যার্থ দার্শনিক বলেছেন: ভাই আপনি কি আপনার নার্গিস খালার জন্য ব্যাথিত, তাহলে খুশি হতে পারেন এই ভেবে কবি আগে নার্গিসের প্রেমে পরে ছিল।

৩| ২৬ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
বনে আগুন লাগলে তা শুধু শুকনা পাতা নয়
কঁচি পাতাকেও পোড়ায়। চির বিদ্রোহী, কবিকে
কেন শর্তের বেড়াজালে আবদ্ধ করতে যাওয়া!!
অমন শর্ত আরোপ না করা হয়ে হয়তো এমন
চিঠির প্রয়োজনই হতোনা।

২৬ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১২:১৪

ব্যার্থ দার্শনিক বলেছেন: অবশ্যই তাই।

৪| ২৬ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৩৯

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: চিঠি পড়ে কষ্ট লাগলো --- তারপরও তিনি আমাদের প্রানের কবি
সোজা প্রিয়তে নিয়ে গেলাম

২৬ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৩:০১

ব্যার্থ দার্শনিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।

৫| ২৬ শে মে, ২০১৫ রাত ৮:২৪

মুছাফির বলেছেন: কবিরা কাউকে কষ্ট না দিয়ে ভালবাসতে পারে না।

৬| ২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ২:০৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: মন খারাপ করা চিঠি
ধন্যবাদ শেয়ারের জন্য .।।

৭| ২৭ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:০৩

অলীক মানবী বলেছেন: যদি ব্যাপারটা অন্য রকম হত তাহলে হয়তো বলতাম কবিরই ভুল । কিন্তু ঘরজামাই থাকা কোনো মেরুদন্ডী পুরুষের পক্ষেই সম্ভব নয় । নার্গিস কিন্তু পারতেন স্বামীর হাত ধরে এক অনিশ্চিত রোমঞ্চের দিকে এগিয়ে যেতে । তিনিও তেমনটা করলেন না । এটা নেহাৎই দূর্ভাগ্য যে এত ভালবাসা ধূলায় গড়াগড়ি খেলো ..
ভালো লাগলো পড়ে , শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ .. সোজা প্রিয়তে ..

২৭ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:৫৮

ব্যার্থ দার্শনিক বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।

৮| ২৭ শে মে, ২০১৫ দুপুর ২:৩২

তুষার কাব্য বলেছেন: অনেকবার পড়া প্রিয় একটা চিঠি ! লেখাটার প্রতিটা ভাঁজে ভাঁজে যেন এক অতৃপ্ত কবির ভালবাসার মোহময় প্রকাশ।এ অধ্যায় থেকে কবি হয়তো কোনদিন ই বেরুতে পারেন নি।হয়তো নার্গিসের প্রতি অন্যায় বোধ থেকে পরবর্তীতে কিছু গান ও আমরা পেয়েছি।

৯| ২৭ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৪২

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: নজরুলের চিঠি খুব ভাল লাগলো। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য। তবে একটি ‍ভুল তথ্য দিলেন। নার্গিসের সাথে নজরুলের বিয়ে হয়নি। বিয়ের সব ঠিক ছিল। শর্তগত কারনে কবি বিয়ে না করে চলে আসেন ।

২৭ শে মে, ২০১৫ রাত ১০:১৪

ব্যার্থ দার্শনিক বলেছেন: নজরুলের সাথে নার্গিসের বিয়ে হয়ে ছিল। ১৯৩৬ সালে ভারতের শিলাইদহে তাদের উপস্থিতিতে তারা তালাক নামায় সই করেন।
উইকিপিডিয়া "নার্গিস আসার খানম" নামে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন। ইতিহাসের বেশির ভাগ বইতে এই কথা উল্লেখ আছে।

১০| ২৮ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

নয়ন বিন বাহার বলেছেন: সৈয়দা খাতুন ওরফে নার্গিস এর সাথে নজরুল ইসলামের আক্দ বা বিয়ে একেবারেই হয়নি।(কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা-মুজফর আহমেদ, পৃষ্ঠা নং-৬৭)। প্রায় ১০-১২ বছরের বড় মুজফর আহমদকে(ভারতীয় কমিউনিস্ট আন্দোলনের প্রধানতম ব্যক্তি) নজরুল পিতার মত শ্রদ্ধা করতেন। মুজফর আহমেদ ছিলেন নজরুল ইসলামের একান্ত সুহৃদ ও পৃষ্ঠপোষক। তাই মুজফর আহমেদের কাজী নজরুল ইসলাম সম্পর্কিত কোন তথ্যই ভুল হতে পারেনা। কারন মুজফর আহমেদ রচিত ‘‘কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা’’ কে নজরুল বিষয়ক তাত্ত্বিকরা নজরুলের জীবন সম্পর্কিত যে কোন তথ্যের মূল আকর গ্রন্থ হিসেবে গন্য করে। কাজেই নজরুল-নার্গিসের বিয়ের প্রচলিত উপাখ্যানটি সঠিক নয়।
আরেক অকাট্য প্রমান রয়েছে নজরুলের মাতৃসম কুমিল্লার বিরজা সুন্দরী দেবীর প্রবন্ধে। যার সম্পাদনা কবি নিজে করেছেন। তিনি তার প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন-‘বিয়ে তো ত্রিশঙ্কুর মতন ঝুলতে লাগলো মধ্যপথেই, এখন আমাদের বিদায়ের পালা।’ সুতারাং নার্গিস নজরুলের প্রথম স্ত্রী নন। তিনি নজরুলের বাগদত্তা। প্রমীলাই নজরুলের প্রথম ও একমাত্র স্ত্রী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.